somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় বন্ধু - আদনান

২৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদনানের সাথে আমার পরিচয় ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় । একটু ভুল হল, পূনর্পরিচয় বলা যেতে পারে । যখন আমরা দুই জনেই ‘শিশু’ তখন আমাদের দেখা হয়েছিল, আমরা একই বিল্ডিং-এ থাকতাম । সে যাই হোক , স্কুলে ওর সাথে আমার পরিচয়ের শুরুটা খুব একটা শুভ ছিল না ।


স্কুলে তখন ভীষণ ‘মাইন্ড গেম’ চলত । এক্কেবারে সাইকোলজিকাল ওয়্যারফেয়ার । আদনান ছিল অন্য দলে । প্রথমেই বুঝতে পারলাম , ও ভিন্ন ‘জিনিস’ । বিন ক্লিনটনের একটা সাক্ষ্যাৎকার পড়েছিলাম, ‘যে জিনিস কে আমি জয় করতে পারি না, তাকে বন্ধুতে পরিণত করার নীতিতে আমি বিশ্বাসী’ । কথাটা আমার ভাল লেগেছিল ।


কিছুদিনের মাঝেই ওর সাথে আমার খাতির হয়ে গেল । আর কিছুদিন যেতেই আবিষ্কার করলাম আমাদের মাঝে অমিলের চাইতে আসলে মিল-ই বেশি ।


বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমার সেরা বন্ধুদের একজন হয়ে উঠল আদনান । খুব জোরে বল করতে পারত ও । ফুটবলও ভাল খেলত । আমার মতই বই পড়তে ভালবাসত , যদিও বই নিয়ে আমার মত ‘ফ্যানাটিক’ ছিল না ও । আমরা দুই জনেই হাঁটতে আর আড্ডা দিতে ভালবাসতাম । লম্বা আর ফিজিক্যালি অনেক শক্ত হওয়াতে ওকে আশে পাশে পাওয়াটা অনেক কাজেও দিত [ কি কাজে দিত, সে আর না বলি ] । আমরা তখন তিন গোয়েন্দার অন্ধ ভক্ত । আদনান আমাদের চোখে ‘মুসা আমানে’র বাস্তব চরিত্র ।


সেদিন গ্যালারীতে বসে আড্ডা দিচ্ছি দু’জনে । হঠাৎ ও বলে উঠল, ‘তুই অনেক বড় হবি, অনেক দূর যাবি । you have a shine inside.’


তখন পড়ি বড়োজোর ক্লাস সেভনে । ওকে ছেড়ে আসি SSC এর পরে । কিন্তু ওর কথাটা মনের ভিতরে এক্কেবারে গেথে গিয়েছিল । I have a shine inside ~ ঠিক এভাবে ওর আগে কেউ বলে নি । হয়ত আদনানও অত ভেবে কিছু বলে নি । অথচ ওর ওই কথাটা আমার সারা জীবনের inspiration হয়ে থাকল ।


বুয়েটে চান্স পাবার পরে সবার আগে যাদের ফোন করি তাদের মাঝে আদনান একজন । ওকে ফোন করে বললাম, Yes, I have reached someplace! I am home!


উচ্ছসিত হয়ে আমাকে শুভকামনা জানাল আদনান । খুব স্বাভাবিক কিছু কথা হল । ওকে জানালাম, তন্ময় [আমাদের mutual বেস্ট ফ্রেন্ড ] – আমার সাথেই আছে, ইলেক্ট্রিকাল – বিপুও [ আমরা তিন জন স্কুল থেকে নটরডেম পড়তে এসেছিলাম ] চান্স পেয়েছে বুয়েটে । বার বার congratulate করে ফোন রাখল ও ।


এখানে একটু বলে রাখি । ইন্টারে আদনানের রেজাল্ট ভয়াবহ রকমের খারাপ হয়েছিল । বুয়েটে-কুয়েটের পয়েন্ট আসে নি । চুয়েটে পরীক্ষা দিবে – বলেছিল আমাকে ।


মাঝে ওর সাথে বেশ কিছুদিন যোগাযোগ হয় নি । শেষ পর্যন্ত জানলাম, ও SUST এ ভর্তি হয়েছে , প্রশাসন বিভাগে । মনটা খারাপ হল, ও এর চাইতে অনেক ভাল কিছুর যোগ্যতা রাখে ।


সিলেটে আমরা বুয়েটের ১১ জন । SUST এ গেলাম । ওখানে স্কুলের আরো বন্ধুরা আছে । অসাধারন একটা ভার্সিটি । শহীদ মিনার টা তো সেরকম । সন্ধ্যার পরে সেখানে বসে আদনানের কাছে জানলাম ওর ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা ।


ওর তো বুয়েট –কুয়েট এর পয়েন্ট আসেনি । হাতে ছিল চুয়েট আর ঢাকা ভার্সিটি । কিন্তু কপাল এত খারাপ, সেবার ঢাকা ভার্সিটি ক ইউনিট আর চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে । সে জন্যে আদনান চুয়েটের ফর্ম-ই তুলে নি , ঢাকা ভার্সিটির ক ইউনিট টার্গেট ।


ফর্ম জমা দিতে গিয়ে আদনান shock-of –his-life দশা । ২০ তারিখে আসলে গ ইউনিটের ফর্ম জমা দেবার শেষ দিন, ক-ইউনিটের সময় শেষ আরো ৯ দিন আগেই । ও দিশা হারিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে । কি করবে বুঝতে না পেরে এলোমেলো হাটতে শুরু করল ও রাস্তায় ।


ঠিক তখনি , এক্কেবারে তখুনি আমি ওকে ফোন করে জানাই আমি বুয়েটে চান্স পেয়েছি ।


সেদিন রেজাল্ট জানাতে গিয়ে কত কথা হল - ও আমাকে একটুও বুঝতে দেয় নি , কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে । আমাদের বন্ধুদের মাঝে একটা বিষয় খুব মিল – আমদের কষ্ট গুলো আমরা লুকোতে পারি খুব সহজে ।


SUST এর শহীদ মিনারে বসে ওর কষ্টটা অনুভব করলাম । বললাম, আমাকে কেন বলেনি তখন । বলল, আমার এই আনন্দের সময়ে ওর কষ্টের কথা বলে আমার আনন্দ মাটি করতে চায় নি ।


এই বন্ধুত্বের ঋণ কি কোন দিন শোধ করতে পারব !



অফ-টপিকঃবন্ধুত্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৩:৫১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×