somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাড়িঃ 'পৃথিবীর সবচেয়ে যৌনাবেদনপূর্ণ অথচ শালীন পোশাক'!

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিমুখ: শাহানা হোসেন রাণী, ছবিয়াল: আমি নিজে।

'তুমি যেদিন শাড়ি পরে নারী হলে, সেদিন আমি প্রেমিক হলাম'। এটি আমার একটি কবিতা। এক লাইনের কবিতা। :)

শাড়ি বাঙালি নারীর প্রধান পরিধেয় অনুষঙ্গ। নারীর সৌন্দর্য বিকাশে, তার নারীত্ব এবং ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে 'শাড়ি' নামক এই বস্ত্র খন্ডের কোন তুলনা নেই। কিছু বিকল্প পোশাক থাকলেও শাড়িতেই বাঙালি নারী রমণীয়, মোহনীয়। শাড়িতেই সে অনন্যা, অপরূপা। বাঙালি নারীর শারিরীক গঠন বা দেহ সৌষ্টবের সঙ্গে শাড়ি যতোটা মানানসই, অন্য পোশাক ততোটা নয়।

আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর নিজস্বতার ধারক এই শাড়ি। বারো হাত দীর্ঘ এই বস্ত্রখন্ড- রঙে, নকশায়, বুননে বাঙালি নারীর নিজস্ব পোশাক। এই পোশাক বাঙালি নারীকে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে আলাদা পরিচিতি। করেছে অনবদ্য।

একেকটা শাড়ি- শুধু শাড়ি নয়, এক টুকরো কাপড় নয়, অঙ্গ ঢাকার অনুষঙ্গ নয়, এক একটি শাড়ি যেন একেকটি নান্দনিক কবিতা, একেকটি গল্প। আনন্দ বেদনার উপখ্যান।

নারীর শাড়ির আঁচলে জমে থাকে কতো না বলা ব্যথা, দুঃখ- শোক অশ্রুগাথা। অসংযত আবেগ, বাঁধ ভাঙ্গা হাসি, চো‌খের উপ‌চে পড়া অশ্রু কিংবা লজ্জায় আরক্ত চেহারা লুকাতে নারী শাড়ির আঁচলেই মুখ ঢাকে, শা‌ড়ি‌তেই আশ্রয় খুঁ‌জে। নারীর শাড়ির নান্দনিক ভাঁজে স্থির হয়ে জমে থাকে কতো নিশ্চুপ দুপুরের নিস্তরঙ্গ নির্জনতা, নিঝুম সন্ধার বেদনা বিষাদ, নির্ঘুম রাত্রির নিঃসঙ্গতা। নারীর শাড়ির মমতা জড়ানো সুশীতল আঁচলতল সন্তানের পরম আশ্রয়। শাড়ি... যাকে জড়িয়ে নিজের হাসি-কান্না, প্রেম ভালোবাসা, আবেগ আর বেদনাকে নিয়ন্ত্রণ করে বাঙালি মেয়েরা। শাড়ি তাই অনন্য।

'আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর' আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্প্রতি প্রথম আলোতে 'শাড়ি' বিষয়ক একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি লিখেছেন....শাড়ি পৃথিবীর সবচেয়ে যৌনাবেদনপূর্ণ অথচ শালীন পোশাক। শুধু শালীন নয়, রুচিসম্পন্ন, সুস্মিত ও কারুকার্যময় পোশাক। নারী শরীরকে যতটুকু অনাবৃত রাখলে তা সবচেয়ে রহস্যচকিত হয়ে ওঠে, পোশাক হিসেবে শাড়ি তারই উপমা। শরীর আর পোশাকের ওই রমণীয় এলাকা বিভাজনের অনুপাতে শারীর রচয়িতারা কি জেনে না–জেনে খুঁজে পেয়েছিলেন, সে কথা বলা না গেলেও এর পেছনে যে গভীর সচেতন ও মুগ্ধ শিল্পবোধ কাজ করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই। আধুনিক শাড়ি পরায় নারীর উঁচু-নিচু ঢেউগুলো এমন অনবদ্যভাবে ফুটে ওঠে, যা নারীকে করে তোলে একই সঙ্গে রমণীয় ও অপরূপ। শাড়ি তার রূপের শরীরে বইয়ে দেয় এক অলৌকিক বিদ্যুৎ হিল্লোল।'

তিনি শাড়ি প্রসঙ্গে আরো লিখেছেন... 'আমাদের সোনালি ধানখেতগুলো যেন গোটা বাংলাদেশকে নানান বাঁকে জড়িয়ে দেশজুড়ে বয়ে যায়, শাড়িও তেমনি নারীর শরীরে সৌন্দর্যের প্রতিটি ঢেউ আর সরণিকে আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু ভঙ্গিতে বিন্যস্ত করে আঁচলের কাছে এসে একঝাঁক সাদা পায়রার মতো নীল আকাশে উড়তে থাকে।' শাড়ি নিয়ে অন্য কেউ লিখলেও এমন শিল্পীত উপমা চলেই আসতো। আমিতো রীতিমতো অভিভূত।

আমার মাও শাড়ি পড়েন। আবার কখনো কখনো বউও পড়েন। শাড়িতে মাকে মমতাময়ী লাগে। বউকে লাগে আকর্ষনীয়া। হুম, 'যৌনাবেদনপূর্ণ' শব্দটি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। তবে কেউ যদি এমন পাতলা শাড়ি পরেন, যেটা শাড়ি না মশারী নির্ণয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তলপেট দেখা যায়, নাভিমূল প্রদর্শিত হয়। স্লিভলেস অথবা শর্ট ব্লাউজ। এমন যদি হয়, তব‌ে শাড়িতে সেই নারীকে 'যৌনাবেদনপূর্ণ' মনে হতেই পারে।

কিন্তু শাড়ি বিষয়ে লিখতে গিয়ে তিনি যেভাবে নারীর চেহারা, উচ্চতা, শারীরিক আকৃতি নিয়ে যে স্পর্শকাতর মন্তব্য করেছেন, সেটা মোটেও ভালো লাগেনি। আবার বিষয়টি নিয়ে তথাকথিত 'নারীবাদী'গণ তাঁকে যেভাবে, যে ভাষায় তুলোধুনা করেছেন, সে ব্যাপারটাও আমার ভালো লাগেনি, বরং বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয়েছে।

এই বিষয়ে চমৎকার মন্তব্য করেছেন নাট্য নির্দেশক ও অভিনেত্রী Nuna Afroz।
তিনি তার ফেইসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “শাড়ী নিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যা লিখেছেন আমার কাছে ঠিকই লেগেছে। শাড়ী নিয়ে উনি ভুল কিছুতো লেঁখেননি। শাড়ী নিয়ে আমাকে কিছু লিখতে হলে আমিও হয়ত এমনটাই লিখতে চেষ্টা করতাম।
“শাড়ী নিয়ে লিখতে গিয়ে মেয়েদের মেধা-বুদ্ধির পরিচয় দেবার দরকার নেইতো কিংবা এখানে মেয়েদের মেধা-বুদ্ধির প্রসঙ্গ আনবারও কোনো প্রয়োজন নেই। সব কিছু এত পারসোনালি নেই কেন আমরা? এতো নারীবাদী হবারও কিছু নেই ভাই। সবার আগে মানুষ হই।”

তিনি আরও লিখেছেন, “হে নারী, এমন করোনা লেখকের লেখা থেমে যাবে। কবির কবিতা থমকে যাবে। তুমি রূপসী, তোমার দেহ পৃথিবীর সেরা পেইন্টিং তাই তোমার তোমার রূপের প্রশংসা হবেই। প্রশংসাইতো... প্রশংসার চেয়ে মধুর বাণী আর কি আছে বলো?”

জয়তু শাড়ি, জয়তু নারী// :)


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×