ইবনে তায়মিইয়াহ (রহেমাহুল্লাহ) বলেন (মাজমূউ ফাতাওয়া, ২৭/৭৯), ‘বিদ্বানগণ একমত পোষণ করেছেন, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববর বা অন্য কোনো নবী (‘আলাইহিস্সালাম)-এর ক্ববর ও নেককারদের কবর যেমন, ছাহাবায়ে কেরাম ও আহলুল বাইতসহ অন্য কোন সৎমানুষের ক্ববর যিয়ারত করবে, সে তাঁদের ক্ববর স্পর্শ করবে না এবং চুমুও খাবে না। বরং দুনিয়াতে হাজারে আসওয়াদ ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো জড়পদার্থ চুম্বন করা শরী‘আতসম্মত নয়। ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আল্লাহ্র কসম! আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি যেমন কোনো ক্ষতি করতে পারো না, তেমনি কোনো উপকারও করতে পারো না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না’। সেকারণে বিদ্বানগণের ঐক্যমতের ভিত্তিতে বলা যায়, কারো জন্য কা‘বার হিজ্রের নিকটবর্তী কোণাদ্বয়, কা‘বার দেওয়াল, মাক্বামে ইবরাহীম, বায়তুল মাক্বদেসের পাথরখণ্ড এবং কোন নবী ও সৎমানুষের ক্ববর চুম্বন বা স্পর্শ করা বৈধ নয়।
৮. ত্বওয়াফের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দো‘আ নেই। সুতরাং ত্বওয়াফকারী তার সহজসাধ্য যে কোনো দো‘আর মাধ্যমে তার প্রভুর নিকটে প্রার্থনা করবে এবং কুরআন তেলাওয়াত করবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত দো‘আসমূহ পাঠ করা উত্তম। ত্বওয়াফকারী রুকনে ইয়ামানী এবং হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে বলবে,
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি দুনিয়াতে আমাদেরকে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন’ [সূরা আল-বাকারাহ:২০১] (আহমাদ, হা/১৫৩৯৮; আবূ দাঊদ, হা/১৮৯২, সনদ হাসান)।
কিছু কিছু মানুষ প্রত্যেক চক্করে আলাদা আলাদা দো‘আ পড়ে থাকে, শরী‘আতে যার কোনো দলীল নেই। এটি নবাবিষ্কৃত আমলসমূহের মধ্যে একটি।
৯. শুধুমাত্র ত্বওয়াফের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন বা স্পর্শ করা উচিৎ এবং রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা উচিৎ; অন্য সময়ে নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ত্বওয়াফ ছাড়া অন্য সময়ে এগুলি চুম্বন বা স্পর্শ করার কথা আসে নি। তবে জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছে বিদায় হজ্জে ত্বওয়াফের দুই রাক‘আত ছালাত অন্তে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক হাজারে আসওয়াদ স্পর্শের কথা এসেছে (মুসলিম, হা/২৯৫০)। অতএব, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হওয়ায় এটি উত্তম কাজ। অনুরূপভাবে কেউ যদি ত্বওয়াফের বাইরে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে, তবে তা জায়েয রয়েছে। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে সাব্যস্ত আছে,
«أَنَّهُ كَانَ لاَ يَخْرُجُ مِنَ الْمَسْجِدِ حَتَّى يَسْتَلِمَ، كَانَ فِي طَوَافٍ، أَوْ في غَيْرِ طَوَافٍ»
‘তিনি ত্বওয়াফের সময় বা ত্বওয়াফের বাইরে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ না করা পর্যন্ত মসজিদ থেকে বের হতেন না’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, আ/১৩৫৭১, ইবনু আবী শায়বাহ বুখারী ও মুসলিমের ওস্তাদ, হাদীছটি তাঁদের উভয়ের শর্ত সাপেক্ষ)।
১০. ওমরার ত্বওয়াফে এবং ক্বিরান ও ইফরাদ হজ্জ পালনকারীর ত্বওয়াফে ক্বুদূমে ‘ইযত্বেবা’ করা উত্তম। ইযত্বেবা হচ্ছে, গায়ের চাদর ডান বগলের নীচ দিয়ে বাম কাঁধের উপরে উঠিয়ে দিয়ে ডান কাঁধ খালি রাখা। ত্বওয়াফকারী সাত চক্করেই ইযত্বেবা অবস্থায় থাকবে। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَأَصْحَابَهُ اعْتَمَرُوا مِنَ الْجِعْرَانَةِ فَرَمَلُوا بِالْبَيْتِ وَجَعَلُوا أَرْدِيَتَهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ قَدْ قَذَفُوهَا عَلَى عَوَاتِقِهِمُ الْيُسْرَى»
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম জে‘রানাহ থেকে ওমরা করেন। তাঁরা রমল করেন এবং তাঁদের গায়ের চাদর বগলের নীচ দিয়ে বাম কাঁধের উপরে উঠিয়ে দেন’ (আবূ দাঊদ, হা/১৮৮৪, সনদ ছহীহ)। ইয়া‘লা ইবনে উমাইয়া (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন,
«أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- طَافَ بِالْبَيْتِ مُضْطَبِعًا وَعَلَيْهِ بُرْدٌ»
‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ডোরা-কাটা চাদরে ইযত্বেবা অবস্থায় বায়তুল্লাহ্র ত্বওয়াফ করেন’ (তিরমিযী, হা/৮৫৯, তিনি হাদীছটিকে ‘হাসান-ছহীহ’ বলেছেন)।
শুধুমাত্র উল্লেখিত ত্বওয়াফেই ইযত্বেবা করতে হবে। ইযত্বেবার অবস্থা ব্যতীত ইহরামের বাক্বী সব অবস্থায় চাদর উভয় কাঁধের উপর থাকবে।
১১. ওমরার ত্বওয়াফ এবং ক্বিরান ও ইফরাদ হজ্জ পালনকারীর ত্বওয়াফে ক্বুদূমের প্রথম তিন চক্করে পুরুষদের জন্য ‘রমল’ করাও উত্তম। রমল হচ্ছে, ঘন ঘন ধাপে একটু জোরে চলা। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম ‘উমরাতুল ক্বাযা’-তে রমল করেছিলেন (বুখারী, হা/১৬০২; মুসলিম, হা/৩০৫৯)। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا طَافَ فِى الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ أَوَّلَ مَا يَقْدَمُ فَإِنَّهُ يَسْعَى ثَلاَثَةَ أَطْوَافٍ بِالْبَيْتِ ثُمَّ يَمْشِى أَرْبَعَةً»
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমন করে হজ্জ এবং ওমরার প্রথম ত্বওয়াফের প্রথম তিন চক্করে জোরে হাঁটতেন এবং পরের চার চক্করে স্বাভাবিক হাঁটতেন’ (বুখারী, হা/১৬০৩; মুসলিম, হা/৩০৪৯)। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, «حَتَّى إِذَا أَتَيْنَا الْبَيْتَ مَعَهُ اسْتَلَمَ الرُّكْنَ فَرَمَلَ ثَلاَثًا وَمَشَى أَرْبَعًا» ‘আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যখন বায়তুল্লাহতে পৌঁছলাম, তখন তিনি রুকন (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন। অতঃপর ত্বওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করলেন এবং পরের চার চক্করে স্বাভাবিক হাঁটলেন’ (মুসলিম, হা/২৯৫০)।
তবে মহিলাদের জন্য রমল নেই। ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, মহিলাদের জন্য কোন রমল নেই; না বায়তুল্লাহ্র ত্বওয়াফের সময়, না ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈর সময়’ (আল-ইজমা/৬১)।
১২. রমল করার কারণ হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) ৭ম হিজরীতে ‘উমরাতুল ক্বাযা’ আদায় করতে আসলে মুশরিকরা তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বলে, إِنَّهُ يَقْدَمُ عَلَيْكُمْ وَفْدٌ وَهَنَهُمْ حُمَّى يَثْرِبَ ‘তোমাদের নিকট এমন এক সম্প্রদায় আগমন করেছে, যাদেরকে ইয়াছরিবের জ্বর দুর্বল করে ফেলেছে’। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কে কাফেরদের সামনে তাঁদের শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে প্রথম তিন চক্করে রমল করার আদেশ করেন’ (বুখারী, হা/১৬০২; মুসলিম, হা/৩০৫৯)। ঘটনাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত হাদীছটির বাস্তব প্রয়োগ: «الْحَرْبُ خَدْعَةٌ» ‘একটি মাত্র ধোঁকা দ্বারাই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়’ বা ‘যুদ্ধ ধোঁকা দেয়’ বা ‘যুদ্ধে ধোঁকা চলে’ (বুখারী, হা/৩০৩০; মুসলিম, হা/৪৫৩৯)। তবে বিদায় হজ্জে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) রমল করার কারণে এই হুকুমটি স্থায়ী হয়ে যায়। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) এবং জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছে এমর্মে বর্ণিত হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আমরা কেন এখন রমল করি? আমরাতো (সেদিন) মুশরিকদেরকে দেখানোর জন্য রমল করেছিলাম; কিন্তু আল্লাহতো তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন’। অতঃপর তিনি বললেন,
«شَيْءٌ صَنَعَهُ النَّبِيُّ صَلى الله عَليْهِ وَسَلمَ فَلا نُحِبُّ أَنْ نَتْرُكَهُ»
‘যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি করেছেন, সেহেতু আমরা তা ছেড়ে দেওয়া পছন্দ করি না’ (বুখারী, হা/১৬০৪)।
১৩. কেউ যদি চক্কর সংখ্যা ভুলে যায়, তাহলে প্রবল ধারণার উভর নির্ভর করবে। অন্যথায় কম সংখ্যার উপর নির্ভর করবে। যেমনঃ যদি পাঁচ চক্কর দেয়, কিন্তু পঞ্চম চক্কর নিয়ে সন্দেহ হয়: সেটি কি পঞ্চম চক্কর নাকি ষষ্ঠ! এক্ষেত্রে যদি তার সন্দেহ প্রবল হয় যে, সেটি ষষ্ঠ, তাহলে সেটিকে ষষ্ঠ ধরে নিয়ে এরপরে আরেকটি চক্কর দিবে। পক্ষান্তরে যদি কোনো দিকেই তার সন্দেহ প্রবল না হয়, তাহলে কম সংখ্যকটা ধরে নিয়ে এরপরে আর দু’টি চক্কর দিবে।
ত্বওয়াফরত অবস্থায় যদি ছালাতের ইক্বামত দিয়ে দেয়, তাহলে সে আগে ছালাত আদায় করে নিবে এবং যেখানে ছালাত আদায় করেছে, সেখান থেকে ত্বওয়াফের বাক্বী অংশ পূরণ করবে। ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে ‘ইজমা’ উল্লেখ করেছেন (আল-ইজমা/৬২)।
১৪. ত্বওয়াফ শেষে সহজ হলে ত্বওয়াফকারীর জন্য মাক্বামে ইবরাহীমের পেছনে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাছ দিয়ে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা উত্তম। আর সহজ না হলে মসজিদের যে কোনো স্থানে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছে এর প্রমাণ এসেছে (মুসলিম, হা/২৯৫০)। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«قَدِمَ النَّبِىُّ - صلى الله عليه وسلم - فَطَافَ بِالْبَيْتِ سَبْعًا وَصَلَّى خَلْفَ الْمَقَامِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّفَا»
‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমন করে বায়তুল্লাহ্র সাতটি ত্বওয়াফ করলেন এবং মাক্বামে ইবরাহীমের পেছনে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর ছাফা পাহাড়ের দিকে গেলেন’ (বুখারী, হা/১৬২৭; মুসলিম, হা/২৯৯৯)।
যমযম পানি পান
১. যমযম পানি পান করা উত্তম। মহান আল্লাহ এই পানি ইসমাঈল (‘আলাইহিস্সালাম) এবং তাঁর মা হা-জার (هَاجَرُ) এর জন্য প্রবাহিত করেন; যেটি আল্লাহ্র ইচ্ছা এবং অশেষ কৃপায় অদ্যাবধি চালু রয়েছে। ঘটনাটি ছহীহ বুখারীতে এসেছে (হা/৩৩৬৪)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে ত্বওয়াফ এবং মাক্বামে ইবরাহীমের পেছনে ছালাত অন্তে যমযম পানি পান করেন এবং মাথায় দেন (আহমাদ, হা/১৫২৪৩, মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটির সনদ ছহীহ)। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসের শেষে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে এই পানি পান করেন (মুসলিম, হা/২৯৫০)।
২. যমযম পানির ফযীলত বর্ণনায় ছহীহ মুসলিমে আবূ যার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে একটি দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,
«إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ»
‘এটি বরকতময়। এটি খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ’ (মুসলিম, হা/৬৩৫৯)। আবূ দাঊদ ত্বয়ালাসী তাঁর ‘মুসনাদ’-এ মুসলিমের সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেন এবং তিনি নিম্নোক্ত বাক্যটি উল্লেখ করেন, «وشِفاءُ سقْمٍ» ‘আর এটি ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ’ (হা/৪৫৯)।
জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটিও এই পানির ফযীলত বর্ণনা করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ» ‘যমযম পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হবে, সে উদ্দেশ্যই পূরণ হবে’ (ইবনে মাজাহ, হা/৩০৬২, হাদীছটিকে কেউ কেউ ‘হাসান’, আবার কেউ কেউ ‘ছহীহ’ বলেছেন; দেখুন: (ইরওয়াউল গালীল, হা/১১২৩)।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যমযম পানি হচ্ছে পানির সরদার। এটি যেমন সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পানি, তেমনি তা মানুষের নিকটে প্রিয়তর। এটি মানুষের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান পানি’ (যাদুল মা‘আদ, ৪/৩৯২)।
৩. হজ্জ ও ওমরা পালনকারী পান করার, আরোগ্য লাভ করার এবং অন্যকে উপহার দেওয়ার জন্য বেশী করে যমযম পানি সঙ্গে নিতে পারে। এই পানি সবচেয়ে মূল্যবান উপহার। কেননা এটি বরকতময় এবং ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ পানি। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) সঙ্গে করে যমযম পানি নিয়ে আসতেন। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও এই পানি সঙ্গে করে আনতেন (তিরমিযী, হা/৯৬৩, সনদ ‘হাসান’)।
ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ
১. ওমরাকারী ওমরার ত্বওয়াফ শেষে ছাফা-মারওয়ায় ত্বওয়াফ করতে যাবে। অনুরূপভাবে ক্বিরান ও ইফরাদ হজ্জ আদায়কারী ত্বওয়াফে ক্বুদূমের পরে সা‘ঈ করবে। তবে তারা ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পর পর্যন্ত এই সা‘ঈ পিছিয়ে দিতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিরান হজ্জ করেন এবং ত্বওয়াফে ক্বুদূমের পরে ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করেন (মুসলিম, হা/২৯৫০, জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত)। হজ্জ ও ওমরার রুকনসমূহ আলোচনার সময় আমরা সা‘ঈর হুকুম বর্ণনা করেছি। ত্বওয়াফ এবং সা‘ঈ অবিচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন করা উত্তম। তবে কোন প্রয়োজনে ত্বওয়াফের পরে সা‘ঈকে বিলম্বিত করা যাবে।
২. ছাফা এবং মারওয়ায় সাতবার সা‘ঈ করতে হবে। ছাফা থেকে শুরু হবে এবং মারওয়াতে গিয়ে শেষ হবে। ছাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত এক চক্কর এবং মারওয়া থেকে ছাফা পর্যন্ত আরেক চক্কর। সেজন্য ছাফা থেকে যে চক্করগুলি হবে, সেগুলি সব হবে বিজোড়। আর সেগুলি হচ্ছে চার চক্কর, যথা: ১ম, ৩য়, ৫ম এবং ৭ম। পক্ষান্তরে মারওয়া থেকে যে চক্করগুলি হবে, সেগুলি হবে জোড়। সেগুলি হচ্ছে তিন চক্কর, যথা: ২য়, ৪র্থ এবং ৬ষ্ঠ। সা‘ঈ শুরু করার জন্য যখন ছাফার নিকটবর্তী হবে, তখন পড়বে,
﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٥٨]
‘নিঃসন্দেহে ছাফা ও মারওয়া আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের অন্যতম’ (বাক্বারাহ ১৫৮) এবং বলবে, ‘যা দিয়ে আল্লাহ শুরু করেছেন, তা দিয়ে আমরাও শুরু করছি। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন (মুসলিম, হা/২৯৫০, জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত)। এর অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ছাফা ও মারওয়ার কথা উল্লেখ করার সময় আগে ছাফার কথা উল্লেখ করেছেন। অতএব, আল্লাহ যেটিকে আগে উল্লেখ করেছেন, আমরা সেখান থেকেই আমাদের সা‘ঈ শুরু করব। প্রত্যেকটি চক্করের সময় ছাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী পুরো এলাকা জুড়ে চক্কর হতে হবে। সবুজ বাতির মধ্যবর্তী জায়গা, যেখানে পূর্বে উপত্তকার কোল ছিল, সেখানে জোরে চলতে হবে এবং বাক্বী সবখানে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে হবে (মুসলিম, হা/২৯৫০)। সা‘ঈ সম্পাদনকারী প্রত্যেক চক্করে ছাফা এবং মারওয়ার উপরে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র একত্ববাদ ও বড়ত্ব বর্ণনা করবে। সে বলবে,
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كَلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ»
‘শরীকবিহীন এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক্ব মা‘বূদ নেই। তাঁরই সকল রাজত্ব এবং তাঁর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক্ব মা‘বূদ নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয়ী করেছেন এবং তিনি একাই শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন’। এরপর যত ইচ্ছা দো‘আ করবে। এভাবে তিনবার করবে (মুসলিম, হা/২৯৫০)।
মনে রাখতে হবে, সা‘ঈর জন্য নির্দিষ্ট কোনো দো‘আ নেই। বরং সা‘ঈ সম্পাদনকারী তাঁর প্রভুর নিকটে প্রাণ খুলে প্রার্থনা করবে এবং কুরআন পড়বে। যেমনটি পূর্বে ত্বওয়াফের ব্যাপারেও বর্ণিত হয়েছে।
৩. ছাফা-মারওয়ার সা‘ঈর জন্য অযু অবস্থায় থাকা শর্ত নয়। কেননা এমর্মে কোনো দলীল পাওয়া যায় না। ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, অযূবিহীন অবস্থায় ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করলে তা শুদ্ধ হবে’ (আল-ইজমা/৬৩)।
৪. সা‘ঈ মূলতঃ ইসমাঈল (‘আলাইহিস্সালাম)-এর মা হা-জারের কর্ম থেকেই শুরু হয়েছে। ঘটনাটি ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে; ঘটনা বর্ণনা শেষে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَذَلِكَ سَعْيُ النَّاسِ بَيْنَهُمَا»
‘আর এটিই হচ্ছে এই পাহাড়দ্বয়ে লোকদের সা‘ঈ করার ইতিহাস’ (হা/৩৩৬৪)।
৫. হজ্জ ও ওমরা ছাড়া অন্য সময়ে সা‘ঈ করা যাবে না। আমরা আগেই বলেছি যে, এটি হজ্জ ও ওমরার একটি রুকন। কোনো নফল সা‘ঈ করা যাবে না। কেননা এমর্মে কোনো দলীল পাওয়া যায় না। তবে নফল ত্বওয়াফ করা যাবে। প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে নীচের আয়াতাংশের অর্থ কি?
﴿وَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَإِنَّ ٱللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ ١٥٨ ﴾ [البقرة: ١٥٨]
‘কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মূল্য দিবেন’। জবাব হল, এখানে স্বেচ্ছায় নেকীর কাজ বলতে নফল সা‘ঈ বুঝানো হয় নি; বরং নফল হজ্জ বা ওমরা বুঝানো হয়েছে। ইবনে জারীর (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আয়াতের অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি তার ওয়াজিব হজ্জ সম্পাদন করার পর নফল হজ্জ বা ওমরা করে, তাহলে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য নফল কাজ করার কারণে তিনি তাকে এর যথাযথ পুরষ্কার দিবেন এবং তিনি তার নফল ইবাদতের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত আছেন’। হাফেয ইবনে হাজার ইমাম ত্বহাবীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,
﴿وَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا﴾ [البقرة: ١٥٨]
‘আয়াত দ্বারা যে ব্যক্তি বলতে চায় যে, সা‘ঈ মুস্তাহাব, এতে তার পক্ষে কোনো দলীল নেই। কেননা আয়াতটি মূল হজ্জ ও ওমরাকে বুঝিয়েছে; এককভাবে সা‘ঈকে বুঝায় নি। কারণ সকল মুসলিম একমত পোষণ করেছেন যে, হজ্জ ও ওমরা পালনকারী ব্যতীত অন্যের জন্য সা‘ঈ করা শরী‘আতসম্মত নয়। আল্লাহই ভাল জানেন’ (ফাতহুল বারী, ৩/৪৯৯)। ইমাম নববী (রহেমাহুল্লাহ) জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “অনুচ্ছেদ: ‘সা‘ঈ বারবার করা যাবে না” জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর বাণী, ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম ছাফা-মারওয়ায় একটির বেশী সা‘ঈ করেন নি’। অর্থাৎ প্রথম সা‘ঈ। উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, হজ্জ বা ওমরায় সা‘ঈর পুনরাবৃত্তি করা যাবে না; বরং একবার করেই ক্ষান্ত করতে হবে। সা‘ঈর পুনরাবৃত্তি করা বৈধ নয়। কেননা ইহা বিদ‘আত (শারহু ছহীহি মুসলিম, ৯/২৪)।
আবার কেউ কেউ উক্ত ﴿وَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا﴾ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে স্বেচ্ছায় নেকীর কাজ করা বলতে যেসব ক্ষেত্রে নফল ইবাদত বৈধ করা হয়েছে, সেগুলিকে বুঝানো হয়েছে। যেমন: ছালাত, দান, ছিয়াম, হজ্জ, ওমরা, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি। শায়খ আব্দুর রহমান সা‘দী (রহেমাহুল্লাহ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় এই অর্থ করার পর বলেন, ‘এটা প্রমাণ করে যে, বান্দা যতবেশী আল্লাহ্র আনুগত্য করতে পারবে, ঈমান বাড়ার কারণে আল্লাহ্র নিকট তার কল্যাণ, পূর্ণতা এবং মর্যাদা ততবেশী বৃদ্ধি পাবে। আর ‘কল্যাণকর কাজ স্বেচ্ছায় করা’ এর শর্তটি জুড়ে দেয়া প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অননুমোদিত বিদ‘আতী কর্মকাণ্ডে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করবে, সে পরিশ্রম বৈ কোন কল্যাণই অর্জন করতে পারবে না। বরং যদি এমন কর্মের অবৈধতা জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে তা করে, তাহলে তা তার জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে’।
মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটা
১. মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছেটে ফেলা হজ্জ ও ওমরার ওয়াজিবসমূহের একটি। আমরা ‘হজ্জ ও ওমরার ওয়াজিবসমূহ’ আলোচনার সময় দলীল-প্রমাণসহ এ বিষয়ে কথা বলেছি।
২. হজ্জ থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডন করা চুল ছাটার চেয়ে উত্তম। অনুরূপভাবে তামাত্তু হজ্জ পালনকারীর ওমরা ব্যতীত অন্য ওমরা থেকে হালাল হওয়ার জন্যও মাথা মুণ্ডন করা উত্তম। তবে তামাত্তু হজ্জ পালনকারী যদি এমন সময় ওমরা থেকে হালাল হয়, যখন মাথা ন্যাড়া করলে হজ্জের পূর্বে তার মাথার চুল আবার গজানোর সুযোগ পাবে, তাহলে তার ক্ষেত্রে মাথা মুণ্ডনই উত্তম। আর হজ্জের খুব কাছাকাছি সময়ে ওমরা থেকে হালাল হলে চুল ছাটাই উত্তম। কেননা কিছু চুল তার মাথায় অবশিষ্ট থাকলে হজ্জ থেকে হালাল হওয়ার সময় সে তা চেঁছে ফেলতে পারবে। তামাত্তু হজ্জ পালনকারী ছাহাবীগণ ৪ যুল-হিজ্জায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যখন মক্কায় পৌঁছেন, তখন তাঁরা ওমরা থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডন না করে চুল ছেটে ফেলেন। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছে বলা হয়েছে,
«فَحَلَّ النَّاسُ كُلُّهُمْ وَقَصَّرُوا إِلاَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- وَمَنْ كَانَ مَعَهُ هَدْىٌ»
‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ যাঁদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তাঁরা ব্যতীত সবাই চুল ছেটে হালাল হয়ে গেলেন’ (মুসলিম, হা/২৯৫০)। হাদীছে উল্লেখিত উক্ত অবস্থা ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে মাথা মুণ্ডন করা উত্তম হওয়ার কারণ হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের মাগফেরাতের জন্য তিনবার দো‘আ করেছেন এবং কর্তনকারীদের জন্য একবার দো‘আ করেছেন (বুখারী, হা/১৭২৮; মুসলিম, হা/৩১৪৮)। তাছাড়া চুল ছেটে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য শোভাবর্ধন বর্জনের বিষয়টিতো রয়েছেই।
৩. মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটার ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে সম্পূর্ণ মাথার চুল মুণ্ডন করতে হবে অথবা ছেটে ফেলতে হবে। মাথার কিছু অংশের চুল ছাটলে এবং কিছু অংশের চুল ছেড়ে দিলে তা যথেষ্ট হবে না। অনুরূপভাবে কিছু অংশের চুল ন্যাড়া করে অবশিষ্টাংশের চুল ছেড়ে দিলে তাও যথেষ্ট হবে না। কাঁচি বা ইলেক্ট্রিক যন্ত্র দ্বারা চুল ছাটবে; আর ক্ষুর বা ব্লেড দ্বারা মাথা মুণ্ডন করবে।
মহিলারা চুলের মাথা থেকে আঙ্গুলের অগ্রভাগ পরিমাণ কেটে ফেলবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «لَيْسَ عَلَى النِّسَاءِ حَلْقٌ إِنَّمَا عَلَى النِّسَاءِ التَّقْصِيرُ» ‘মহিলাদের জন্য মাথা মুণ্ডনের বিধান নেই। বরং তাদেরকে চুল ছেটে ফেলতে হবে’ (আবূ দাঊদ, হা/১৯৮৫, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, সনদ ‘ছহীহ’)। ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত যে, মহিলাদের জন্য মাথা মুণ্ডনের বিধান নেই’ (আল-ইজমা/৬৬)।
৪. মুহরিম ব্যক্তি হজ্জ বা ওমরা থেকে হালাল হওয়ার সময় নিজে যেমন নিজের মাথার চুল ছাটতে পারে বা মুণ্ডন করতে পারে, তেমনি হালাল হওয়ার জন্য অন্যের মাথার চুলও ছেটে দিতে পারে বা মুণ্ডন করে দিতে পারে। কেননা মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটা হজ্জ বা ওমরার ওয়াজিবসমূহের একটি। সুতরাং এ সময় এটি ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে না।
৮ তারিখে মক্কা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধা এবং মিনায় গমন
১. মক্কাবাসীরা এবং মক্কায় অবস্থানরত অন্যান্যরা যুল-হিজ্জাহ মাসের ৮ তারিখে অর্থাৎ তারবিয়ার দিন তাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকেই হজ্জের ইহরাম বাঁধবে। অতঃপর মিনায় গিয়ে সেখানে যোহর, আছর, মাগরিব, এশা এবং ফজরের ছালাত ক্বছর করে আদায় করবে; জমা করে নয়। যে সকল ছাহাবী ওমরা থেকে হালাল হয়েছিলেন, তাঁরা এবং অন্যান্য মক্কাবাসীরা এমনটিই করেছিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যাঁদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল, তাঁরা ইহরাম অবস্থাতেই ছিলেন।
যে ব্যক্তি ৮ তারিখের পূর্বে মিনায় যাবে, সে মিনা থেকেই ইহরাম বাঁধবে; ইহরাম বাঁধার জন্য তাকে মক্কায় যেতে হবে না।
২. মক্কাবাসী বা অন্যান্য যারাই মক্কা থেকে ইহরাম বাঁধবে, তাদেরকে যেমন ইহরাম বাঁধার জন্য মসজিদে হারামে যেতে হবে না, তেমনি হজ্জে যাওয়ার জন্য বায়তুল্লাহ থেকে বিদায় স্বরূপ ত্বওয়াফও করতে হবে না। অনুরূপভাবে হজ্জের সা‘ঈও আগেভাগে করে নিবে না। বরং ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পর সা‘ঈ করবে। কেননা যে সকল ছাহাবী মক্কা থেকে হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন, তাঁরা কেউ এমনটি করেন নি; বরং তাঁরা ইহরাম বেঁধে মিনায় চলে গিয়েছিলেন।
৩. হজ্জে ছালাত ক্বছর এবং জমা করে আদায়ের ক্ষেত্রে বহিরাগত এবং মক্কাবাসী হাজী সবাই সমান। কেননা যেসব মক্কাবাসী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ করেছিলেন, তাঁদেরকে তিনি ছালাত পূর্ণ করতে বলেন নি। যায়েদ ইবনে আসলাম তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) মক্কায় ছালাতের ইমামতি করেন এবং দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি বলেন, হে মক্কাবাসী! তোমরা তোমাদের ছালাত পূর্ণ কর। কেননা আমরা মুসাফির। অতঃপর তিনি মিনায় গিয়ে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করেন। কিন্তু সেখানে তিনি মক্কাবাসীদেরকে এমন কিছু বলেছিলেন মর্মে আমাদের কাছে কোন বর্ণনা আসেনি’ (মালেক, মুওয়াত্ত্বা, ১/৪০৩, সনদ ‘ছহীহ’)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তিনি মক্কায় থাকা অবস্থায় মক্কাবাসীদেরকে ছালাত পূর্ণ করার আদেশ সম্বলিত মারফূ হাদীছটির সনদ দ্বঈফ বা দুর্বল (আবূ দাঊদ, হা/১২২৯)।
হজ্জে মক্কাবাসীদের জন্য ছালাত ক্বছর এবং জমা করে আদায়ের বিধান হজ্জের কারণে; সফরের কারণে নয়। সেজন্য কোনো মক্কাবাসী যদি ইহরামবিহীন অবস্থায় হাজীদের সাথে বের হয়, তাহলে সে ক্বছর বা জমা কোনোটিই করতে পারবে না।
৪. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের মধ্যে কেউ যদি হজ্জের ইহরাম বাঁধে, অতঃপর তার স্মরণ হয় যে, সে ওমরার ত্বওয়াফ বা সা‘ঈ করে নি অথবা ত্বওয়াফ বা সা‘ঈর এক বা একাধিক চক্কর ছেড়ে দিয়েছে, তাহলে সে ক্বিরান হজ্জ পালনকারীতে পরিণত হবে। কেননা হজ্জের কার্যাবলী শুরু করার কারণে তার পক্ষে আর ওমরা পূর্ণ করা সম্ভব নয়। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) ঋতুগ্রস্ত হওয়ার কারণে হজ্জের পূর্বে ওমরা করতে সক্ষম না হওয়ায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হজ্জের ইহরাম বাঁধতে বলেন। আর এর মাধ্যমে তিনি ক্বিরান হজ্জ আদায়কারিণীতে পরিণত হন (বুখারী, হা/৩০৫; মুসলিম, হা/২৯১৯)।
তবে তামাত্তু হজ্জ আদায়কারী ওমরার ত্বওয়াফ ও সা‘ঈ করার পর মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটার আগে যদি হজ্জের ইহরাম বেঁধে ফেলে, তাহলে সে তামাত্তু হজ্জ আদায়কারীই থাকবে। তবে ওমরার একটি ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার কারণে তাকে ফিদ্ইয়া দিতে হবে। এক্ষেত্রে ফিদ্ইয়া হচ্ছে, একটি ছাগল কুরবানী করা অথবা একটি উট বা একটি গরুতে সাতজনের এক অংশ হিসেবে অংশগ্রহণ করা। ফিদ্ইয়ার গোশত হারাম এলাকার দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে, তা থেকে সে নিজে একটুও খাবে না।
৫. আরাফার রাতে মিনায় রাত্রিযাপন করা মুস্তাহাব। এ রাতে কেউ যদি মিনায় না থাকে, তাহলে তার কোনো গোনাহ হবে না মর্মে ইবনুল মুনযির ‘ইজমা’ উল্লেখ করেছেন (আল-ইজমা/৬৪)।
আরাফায় অবস্থান
১. আরাফার দিবসে সূর্য উঠার পরে মিনা থেকে আরাফায় যাওয়া উত্তম (মুসলিম, হা/২৯৫০)। আরাফায় যাওয়ার সময় হাজীরা ‘আল্লাহু আকবার’ এবং তালবিয়া পড়তে পড়তে যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«غَدَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مِنْ مِنًى إِلَى عَرَفَاتٍ مِنَّا الْمُلَبِّى وَمِنَّا الْمُكَبِّرُ»
‘আমরা ভোরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিনা থেকে আরাফায় গিয়েছিলাম; আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তালবিয়া পড়ছিলেন, আবার কেউ কেউ ‘আল্লাহু আকবার’ বলছিলেন’ (মুসলিম, হা/৩০৯৫)। আনাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আপনারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এই দিনে কি করছিলেন? জবাবে তিনি বলেন,
«كَانَ يُهِلُّ مِنَّا الْمُهِلُّ فَلاَ يُنْكِرُ عَلَيْهِ، وَيُكَبِّرُ مِنَّا الْمُكَبِّرُ فَلاَ يُنْكِرُ عَلَيْهِ»
‘আমাদের কেউ কেউ তালবিয়া পড়ছিলেন, কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন না। আবার কেউ কেউ ‘আল্লাহু আকবার’ বলছিলেন, কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন না’ (বুখারী, হা/১৬৫৯; মুসলিম, হা/৩০৯৭)।
২. আরাফায় পৌঁছে অবস্থান গ্রহণ করবে। হাজী ছাহেবের অবস্থান আরাফার সীমানার মধ্যে হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত যরূরী। আরাফার সীমানা নিরূপক সাইনবোর্ডগুলির মাধ্যমে সে তার অবস্থান জানতে পারবে। মনে রাখতে হবে, আরাফায় অবস্থান হজ্জের একটি রুকন, যা ছেড়ে দিলে হজ্জই সম্পন্ন হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «الْحَجُّ عَرَفَةُ» ‘আরাফায় অবস্থানই হচ্ছে হজ্জ’। হজ্জ ও ওমরার রুকনসমূহ আলোচনার সময় এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।
৩. আরাফার দিন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে কুরবানীর রাতের ফজর (সুবহে সাদিক) উদয় হওয়া পর্যন্ত আরাফায় অবস্থানের সময়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে আরাফায় অবস্থান করেছেন (মুসলিম, হা/২৯৫০)। আবার কেউ কেউ বলছেন, আরাফার দিন ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে আরাফায় অবস্থানের সময় শুরু হয়। উরওয়াহ ইবনে মুদ্বাররিস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন,
«أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- بِالْمَوْقِفِ -يَعْنِى بِجَمْعٍ- قُلْتُ جِئْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ جَبَلِ طَيِّئٍ أَكْلَلْتُ مَطِيَّتِى وَأَتْعَبْتُ نَفْسِى وَاللَّهِ مَا تَرَكْتُ مِنْ جَبَلٍ إِلاَّ وَقَفْتُ عَلَيْهِ فَهَلْ لِى مِنْ حَجٍّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مَنْ أَدْرَكَ مَعَنَا هَذِهِ الصَّلاَةَ وَأَتَى عَرَفَاتٍ قَبْلَ ذَلِكَ لَيْلاً أَوْ نَهَارًا فَقَدْ تَمَّ حَجُّهُ وَقَضَى تَفَثَهُ»
‘আমি মুযদালিফায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি ত্বাই গোত্র থেকে এসেছি, আমি আমার বাহনটিকে দুর্বল করে ফেলেছি এবং আমার নিজেকে করে ফেলেছি ক্লান্ত। আল্লাহ্র কসম! আমি এমন কোনো পাহাড় বা টিলা ছেড়ে আসি নি, যেখানে অবস্থান করি নি। তাহলে কি আমার হজ্জ হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমাদের সাথে এই ছালাত (ফজর) পেল এবং এর পূর্বে রাতে বা দিনে আরাফায় আসল, তার হজ্জ পূর্ণ হল এবং হালাল হওয়ার পর যা করা যায়, সে যেন তা করল’ (আবূ দাঊদ, হা/১৯৫০, সনদ ‘ছহীহ’)। যদিও আরাফার দিন সূর্য ঢলে যাওয়ার আগে আরাফায় অবস্থান করলে চলবে, তথাপিও কেউ যেন উক্ত অবস্থানকেই যথেষ্ট মনে না করে; বরং সূর্য ঢলে যাওয়ার পরও অবস্থান করে।
৪. যে ব্যক্তি দিনের বেলায় আরাফায় অবস্থান করবে, সে সূর্যাস্তের পরে সেখান থেকে প্রস্থান করবে; সূর্যাস্তের আগে নয় (মুসলিম, হা/২৯৫০)। হজ্জ ও উমরার ওয়াজিব বর্ণনায় তার আলোচনা চলে গেছে।
৫. হাজীরা আরাফায় যোহরের প্রথম ওয়াক্তে এক আযান ও দুই এক্বামতে জমা-ক্বছর করে যোহর এবং আছরের ছালাত আদায় করবে (মুসলিম, হা/২৯৫০)। ছালাতের পূর্বে ইমাম বা তাঁর প্রতিনিধি কর্তৃক জনগণের উদ্দেশ্যে খুৎবা দেওয়া উত্তম। এই খুৎবায় তিনি হজ্জের অবশিষ্ট বিধিবিধান এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা রাখবেন (মুসলিম, হা/২৯৫০)।
৬. আরাফায় হাজীদের ছওম পালন না করাই ভাল। কেননা এর মাধ্যমে তারা এই মহান দিনে বেশী বেশী দো‘আ ও যিকর-আযকার করার শারীরিক শক্তি অর্জন করতে পারবে। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও এদিনে ছওম পালন করেন নি। উম্মুল ফাদ্বল বিনতে হারেছ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন,
«أَنَّ نَاسًا تَمَارَوْا عِنْدَهَا يَوْمَ عَرَفَةَ فِي صَوْمِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ هُوَ صَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَيْسَ بِصَائِمٍ فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ بِقَدَحِ لَبَنٍ وَهُوَ وَاقِفٌ عَلَى بَعِيرِهِ فَشَرِبَهُ»
‘একদল লোক তাঁর নিকটে আরাফার দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছওম নিয়ে মতভেদ করছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ বলছিলেন, তিনি ছওমরত অবস্থায় আছেন। আবার কেউ কেউ বলছিলেন, তিনি ছওমরত অবস্থায় নন। অতঃপর তিনি (উম্মুল ফাদ্বল) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে আরোহী থাকা অবস্থায় তাঁর নিকটে এক পেয়ালা দুধ দিয়ে পাঠালেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেন’ (বুখারী, হা/১৯৮৮; মুসলিম, হা/২৬৩২)।
তবে হাজীরা ব্যতীত অন্যান্যদের জন্য এদিন ছওম পালন করাই উত্তম; বরং নফল ছওমের এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। আবূ ক্বাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার দিনে ছওম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, «يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَ» ‘ইহা পূর্বের এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের (ছগীরাহ) গোনাহসমূহের কাফফারাহ হয়’ (মুসলিম, হা/২৭৪৭)। ছহীহ মুসলিমের অন্য শব্দে হাদীছটি এসেছে এভাবে,
«صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ»
‘আমি আল্লাহ্র নিকট আশা করি, তিনি আরাফার ছওমের মাধ্যমে এই দিনের পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের (ছগীরাহ) গোনাহসমূহ মাফ করে দিবেন’ (হা/২৭৪৬)।
৭. ক্বিবলামুখী হয়ে আরাফার ময়দানের যে কোনো স্থানে অবস্থান করলেই চলবে। এই মহান দিবসে বেশী বেশী করে তালবিয়া, দো‘আ ও যিকর-আযকার করতে হবে। দো‘আ করার সময় মহান আল্লাহ্র নিকট কাকুতি-মিনতি পেশ করতে হবে এবং দুনিয়া ও আখেরাত উভয় যিন্দেগীর সার্বিক কল্যাণ প্রার্থনা করতে হবে। হাজীরা যাবতীয় পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ্র নিকট খাটিঁ তওবার মাধ্যমে তাঁকে সন্তুষ্ট করবে। পক্ষান্তরে এর মাধ্যমে শয়তানকে করবে পরাস্ত, লাঞ্ছিত এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই মহান দিবসে আরাফার ময়দানে ঘুরাফেরা করে এবং ‘জাবালে রহমত’ নামক পাহাড়ে উঠার চেষ্টা করে সময় নষ্ট করা উচিৎ নয়। কেননা এই পাহাড়ে উঠার কোনো দলীল নেই।
৮. ইবাদতের উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দানের অবস্থান হচ্ছে মুসলিমদের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা। এই অবস্থানের মাধ্যমে একজন মুসলিম ক্বিয়ামত দিবসে হাশরের ময়দানে পূর্ব ও পরের সকল মানুষের সমাবেশের কথা স্মরণ করবে এবং সৎআমল দ্বারা সেই দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
৯. আরাফায় অবস্থান এবং এই দিবসের ফযীলত বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِى بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ»
‘আরাফার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিনে মহান আল্লাহ এতবেশী সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন না। তিনি এই দিন কাছাকাছি চলে আসেন এবং বান্দাদেরকে নিয়ে গর্ব করে ফেরেশতামণ্ডলীকে বলেন, ওরা কি চায়?’ (মুসলিম, হা/৩২৮৮, আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) হতে বর্ণিত)।
এই দিনে দো‘আ করার ফযীলত বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي: لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
‘সর্বশ্রেষ্ঠ দো‘আ হচ্ছে আরাফার দিবসের দো‘আ। আমি এবং নবীগণ সর্বোত্তম যে দো‘আটি করেছি, তা হচ্ছে এই, «لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ» (উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আলা কু্ল্লি শাইয়িন ক্বদীর), অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মা‘বূদ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই। যাবতীয় রাজত্ব তাঁরই এবং তাঁর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান’ (তিরমিযী, হা/৩৫৮৫, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, হাদীছটি ‘হাসান লিগায়িরিহী’, আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) প্রণীত ‘সিলসিলাহ ছহীহাহ্র ১৫০৩ নং হাদীছ দ্রষ্টব্য)।
আরাফায় দো‘আ করার সময় দুই হাত উঠিয়ে দো‘আ করার কথা হাদীছে এসেছে। উসামা ইবনে যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,
«كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَفَاتٍ فَرَفَعَ يَدَيْهِ يَدْعُو، فَمَالَتْ بِهِ نَاقَتُهُ فَسَقَطَ خِطَامُهَا، فَتَنَاوَلَ الْخِطَامَ بِإِحْدَى يَدَيْهِ وَهُوَ رَافِعٌ يَدَهُ الأُخْرَى»
‘আরাফায় (উটের পিঠে) আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে ছিলাম। তিনি দুই হাত উঠিয়ে দো‘আ করেন। তাঁর উটটি একটু ঝুঁকে পড়লে উটের লাগাম পড়ে যায়। অতঃপর তিনি এক হাত উত্তোলিত অবস্থায় অপর হাত দিয়ে লাগামটি উঠান’ (নাসা‘ঈ, হা/৩০১১, সনদ ‘ছহীহ’)।
আরাফায় দো‘আ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন দো‘আ নেই। হজ্জ পালনকারী তার প্রভুর যিকর-আযকার করবে, তালবিয়া পাঠ করবে, তার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করবে, কুরআন তেলাওয়াত করবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত দো‘আসমূহ পড়া উচিৎ। কেননা এই দো‘আগুলি যেমন ব্যাপক অর্থবোধক, তেমনি এগুলিতে রয়েছে দো‘আয় ভুল-ভ্রান্তি থেকে বাঁচার উপায়।
এখানে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ থেকে কতিপয় দো‘আ উল্লেখ করা যথোপযুক্ত মনে করছি। আরাফা ও মুযদালিফায় অবস্থানকালে, ত্বওয়াফ ও সা‘ঈতে এবং সর্বাবস্থায় উক্ত দো‘আসমূহের মাধ্যমে একজন মুসলিমের প্রার্থনা করা উচিৎ। এসব দো‘আর মাধ্যমে সে ছালাতের সেজদাতে এবং সালাম ফিরানোর আগে প্রার্থনা করতে পারে। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«أَلاَ وَإِنِّى نُهِيتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِى الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ»
‘সাবধান! রুকূ এবং সেজদারত অবস্থায় আমাকে কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তবে রুকূতে তোমরা আল্লাহ্র বড়ত্ব বর্ণনা কর এবং সেজদায় বেশী বেশী দো‘আ করার চেষ্টা কর। কেননা এটি তোমাদের দো‘আ ক্ববূলের বেশি উপযুক্ত’ (মুসলিম, হা/১০৭৪)। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত তাশাহ্হুদের বিবরণ সম্বলিত হাদীছের শেষাংশে এসেছে,
«ثُمَّ لِيَتَخَيَّرْ مِنْ اَلدُّعَاءِ أَعْجَبُهُ إِلَيْهِ, فَيَدْعُو»
‘অতঃপর সে তার পছন্দমত দো‘আ চয়ন করে তা দিয়ে দো‘আ করবে’ (বুখারী, হা/৮৩৫; মুসলিম, হা/৮৯৮)। ইমাম আবূ দাঊদ (রহেমাহুল্লাহ) ‘ছালাতে দো‘আ’ অনুচ্ছেদের ৮৮৪ নং হাদীছের পরে বলেন, ‘ইমাম আহমাদ বলেছেন, ফরয ছালাতে কুরআনের দো‘আ সংক্রান্ত আয়াতসমূহ দ্বারা দো‘আ করা আমার নিকট পছন্দনীয়’। ইহা রুকূ ও সেজদায় নিষিদ্ধ কুরআন তেলাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে না; বরং তা দো‘আ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কেউ যদি সেজদায় পড়ে,
﴿ قَالَ رَبِّ ٱشۡرَحۡ لِي صَدۡرِي ٢٥ ﴾ [طه: ٢٥]
অথবা
﴿ قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمۡتُ نَفۡسِي فَٱغۡفِرۡ لِي﴾ [القصص: ١٦]
তাহলে তাকে তেলাওয়াতকারী বলা হবে না; বরং সে দো‘আকারী হিসাবে গণ্য হবে।
নীচে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত কতিপয় যিক্র-আযকার ও দো‘আ উল্লেখ করা হল, যেগুলির মাধ্যমে আরাফাসহ অন্যান্য যেকোন স্থানে দো‘আ করা যাবেঃ
• ﴿ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُلۡ حَسۡبِيَ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُۖ وَهُوَ رَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ ١٢٩ ﴾ [التوبة: ١٢٩]
(উচ্চারণ: হাসবিয়াল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুওয়া রব্বুল আরশিল আযীম),
অর্থ: ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত আর কোনো (হক্ব) মা‘বূদ নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের রব্ব’ (তওবাহ ১২৯)।
• ﴿ فَتَعَٰلَى ٱللَّهُ ٱلۡمَلِكُ ٱلۡحَقُّۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡكَرِيمِ ﴾ [المؤمنون: ١١٦]
(উচ্চারণ: ফাতা‘আ-লাল্লা-হুল মালিকুল হাক্ব, লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়া, রব্বুল আরশিল কারীম)
অর্থ: ‘অতএব, শীর্ষ মহিমায় আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোন (হক্ব) মা‘বূদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের রব্ব’ (আল-মুমিনূন ১১৬)।
• ﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ وَسَلَٰمٌ عَلَىٰ عِبَادِهِ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَىٰٓۗ ﴾ [النمل: ٥٩]
(উচ্চারণ: আল-হামদু লিল্লা-হি ওয়া সালা-মুন ‘আলা- ইবা-দিহিল্লাযীনাছ্ত্বফা-)
অর্থ: ‘সকল প্রশংসাই আল্লাহ্র এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাগণের প্রতি’ (নামল ৫৯)।
• ﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي لَهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَهُ ٱلۡحَمۡدُ فِي ٱلۡأٓخِرَةِۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِيمُ ٱلۡخَبِيرُ ١ ﴾ [سبا: ١]
(উচ্চারণ: আল-হামদু লিল্লা-হিল্লাযী লাহূ মা- ফিস্সামাওয়া-তি ওয়ামা- ফিল-আরযি, ওয়ালাহুল হাম্দু ফিলআ-খিরতি, ওয়াহুওয়াল হাকীমুল খাবীর),
অর্থ: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি আসমান ও যমীনের সব কিছুর মালিক। তাঁরই প্রশংসা পরকালে। তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত’ (সাবা ১)।
• ﴿حَسۡبِيَ ٱللَّهُۖ عَلَيۡهِ يَتَوَكَّلُ ٱلۡمُتَوَكِّلُونَ ٣٨ ﴾ [الزمر: ٣٨]
(উচ্চারণ: হাসবিয়াল্লা-হু ‘আলাইহি ইয়াতাওয়াক্কালুল মুতাওয়াক্কিলূন),
অর্থ: ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ভরসাকারীরা তাঁরই উপর ভরসা করে’ (যুমার ৩৮)।
• ﴿ قُلۡ هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ءَامَنَّا بِهِۦ وَعَلَيۡهِ تَوَكَّلۡنَاۖ ﴾ [الملك: ٢٩]
(উচ্চারণ: হুওয়ার্ রহমা-নু আ-মান্না- বিহী ওয়া ‘আলাইহি তাওয়াক্কালনা-),
অর্থ: ‘তিনিই পরম করুণাময়। আমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনি এবং তাঁরই উপর ভরসা করি’ (মুলক ২৯)।
• «لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ»
(উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হাম্দু, ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর),
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোন (হক্ব) মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তাঁরই এবং তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’।
• «لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ»
(উচ্চারণ: লা- হাওলা ওয়ালা- ক্বুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ),
অর্থ: ‘নেই কোন ক্ষমতা এবং নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত’।
• «حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ»
(উচ্চারণ: হাসবুনাল্লা-হু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল),
অর্থ: ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না চমৎকার রক্ষাকারী’।
• «سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ»
(উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম),
অর্থ: ‘আমি আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তাঁর প্রশংসা আদায় করছি। আমি মহান আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি’।
• «سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ»
(উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি, ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার),
অর্থ: ‘আমি আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই নিমিত্তে। আল্লাহ ব্যতীত কোন (হক্ব) মা‘বূদ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়’।
• «سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ»
(উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী ‘আদাদা খল্ক্বিহী ওয়া রিযা- নাফসিহী ওয়া যিনাতা আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহ্), অর্থ: ‘আমি আল্লাহ্র পবিত্রতা ও প্রশংসা জ্ঞাপন করছি তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমপরিমাণ, তাঁর সত্ত্বার সন্তুষ্টির সমতুল্য এবং তাঁর আরশের ওযন ও কালেমাসমূহের ব্যাপ্তি সমপরিমাণ’।
• «لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ، اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَارْزُقْنِيْ»
(উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকা লাহূ, আল্লা-হু আকবারু কাবীরান, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাছীরান, সুবহা-নাল্লা-হি রব্বিল ‘আলামীন, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্বুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল আযীযিল হাকীম, আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহ্দিনী ওয়ারযুক্বনী),
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোন (হক্ব) মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। যাবতীয় এবং অগণিত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। সমগ্র সৃষ্টিকুলের রব্ব আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নেই কোন ক্ষমতা এবং নেই কোন শক্তি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ ব্যতীত। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন এবং আমাকে রিযিক্ব দান করুন’।
• «رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً»
(উচ্চারণ: রযীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দ্বীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসূলা),
অর্থ: ‘আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম আল্লাহকে রব্ব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদকে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করে’।
• «سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»
(উচ্চারণ: সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আ-লা- জাদ্দুকা ওয়ালা ইলা-হা গয়রুক্),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। আপনার নাম অতি বরকতময় এবং আপনার সম্মান সুমহান। আপনি ছাড়া কোন (হক্ব) মা‘বূদ নেই’।
• «لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ»
(উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল আযীমুল হালীম, লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রব্বুল আরশিল আযীম, লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রব্বুস্সামাওয়া-তি ওয়া রব্বুল আরযি ওয়া রব্বুল ‘আরশিল কারীম),
অর্থ: ‘মহান এবং পরম সহিষ্ণু আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো (হক্ব) মা‘বূদ নেই। মহান আরশের প্রতিপালক আল্লাহ ব্যতীত আর কোন (হক্ব) মা‘বূদ নেই। সম্মানিত আরশের প্রতিপালক এবং আসমান ও যমীনের প্রতিপালক আল্লাহ ব্যতীত কোনো (হক্ব) মা‘বূদ নেই’।
• ﴿رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ١٢٧ ﴾ [البقرة: ١٢٧]
(উচ্চারণ: রব্বানা- তাক্বাব্বাল মিন্না- ইন্নাকা আনতাস্ সামী‘উল ‘আলীম),
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে ক্ববূল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ১২৭)।
• ﴿ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
(উচ্চারণ: রব্বানা- আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাহ ওয়া ফিলআ-খিরতি হাসানাহ ওয়া ক্বিনা- ‘আযা-বান্না-র),
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে দুনিয়া ও পরকাল উভয় জীবনে কল্যাণ দান করুন। আর আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন’ (বাক্বারাহ ২০১)।
• ﴿رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢٨٦ ﴾ [البقرة: ٢٨٦]
(উচ্চারণ: রব্বানা- লা-তুআ-খিয্না- ইন নাসীনা- আও আখত্বা’না-, রব্বানা- ওয়ালা- তাহমিল ‘আলাইনা- ইছরান কামা- হামাল্তাহূ ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা-, রব্বানা- ওয়ালা- তুহাম্মিল্না- মা- লা- ত্ব-ক্বাতা লানা- বিহ্, ওয়া‘ফু আন্না- ওয়াগফির লানা- ওয়ার হামনা-, আনতা মাওলা-না- ফানছুরনা- ‘আলাল ক্বওমিল কাফিরীন),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর এমন কিছু চাপিয়ে দায়িত্ব অর্পণ করবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছেন। হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদের উপর এমন বোঝা চাপাবেন না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। অতএব, আপনি আমাদের পাপ মোচন করে দিন। আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আপনি আমাদেরকে সাহায্য করুন’ (বাক্বারাহ ২৮৬)।
• ﴿رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوبَنَا بَعۡدَ إِذۡ هَدَيۡتَنَا وَهَبۡ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحۡمَةًۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡوَهَّابُ ٨ ﴾ [ال عمران: ٨]
(উচ্চারণ: রব্বানা- লা-তুযিগ্ ক্বুলূবানা- বা‘দা ইয্ হাদায়তানা-, ওয়া হাব্ লানা- মিল্লাদুনকা রহমাহ্, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহ্হা-ব),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে বক্র করবেন না এবং আপনি আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি বড় দাতা’ (আলে ইমরান ৮)।
• ﴿رَبَّنَآ إِنَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ١٦ ﴾ [ال عمران: ١٦]
(উচ্চারণ: রব্বানা- ইন্নানা- আ-মান্না- ফাগফির্ লানা- যুনূবানা-, ওয়া ক্বিনা- ‘আযা-বান্না-র),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব, আপনি আমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন। আর আমাদেরকে আপনি জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন’ (আলে ইমরান ১৬)।
• ﴿قَالَ رَبِّ هَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةٗ طَيِّبَةًۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ﴾[ال عمران: ٣٨]
(উচ্চারণ: রব্বি হাব্ লী মিল্লাদুন্কা যুর্রিইয়াতান ত্বইয়্যেবাহ, ইন্নাকা সামী‘উদ্ দু‘আ-),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’ (আলে ইমরান ৩৮)।
• ﴿ رَبَّنَآ ءَامَنَّا بِمَآ أَنزَلۡتَ وَٱتَّبَعۡنَا ٱلرَّسُولَ فَٱكۡتُبۡنَا مَعَ ٱلشَّٰهِدِينَ٥٣﴾ [ال عمران: ٥٣]
(উচ্চারণ: রব্বানা- আ-মান্না- বিমা- আন্যালতা, ওয়াত্তাবা‘নার্ রসূলা ফাকতুবনা- মা‘আশ্শা-হিদীন),
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা সে বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছি, যা আপনি নাযিল করেছেন। আর আমরা রাসূলের আনুগত্য করেছি। অতএব, আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করে নিন’ (আলে ইমরান ৫৩)।
• ﴿ رَّبَّنَآ إِنَّنَا سَمِعۡنَا مُنَادِيٗا يُنَادِي لِلۡإِيمَٰنِ أَنۡ ءَامِنُواْ بِرَبِّكُمۡ فََٔامَنَّاۚ رَبَّنَا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرۡ عَنَّا سَئَِّاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ ٱلۡأَبۡرَارِ ١٩٣ ﴾ [ال عمران: ١٩٣]
(উচ্চারণ: রব্বানা- ইন্নানা- সামি‘না মুনা-দিইয়াই্ ইউনা-দী লিল্ঈমা-নি আন আ-মিনূ বিরব্বিকুম ফাআ-মান্না-, রব্বানা- ফাগ্ফির লানা- যুনূবানা-, ওয়া কাফ্ফির আন্না- সাইয়্যেআ-তিনা-, ওয়া তাওয়াফ্ফানা- মা‘আল আবরা-র, রব্বানা- ওয়া আ-তিনা- মা- ওয়াদ্তানা- ‘আলা- রুসুলিকা ওয়ালা- তুখযিনা- ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ, ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী‘আদ),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের প্রতি এভাবে আহ্বান করতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন। ফলে আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের গোনাহসমূহ মাফ করে দিন এবং আমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিন। আর আপনি আমাদেরকে নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত অবস্থায় মৃত্যু দান করুন। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের জন্য আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে যার ওয়াদা করেছেন, তা আমাদেরকে দান করুন এবং ক্বিয়ামতের দিন আপনি আমাদেরকে অপমানিত করবেন না। নিশ্চয়ই আপনি ভঙ্গ করেন না অঙ্গীকার’ (আলে ইমরান ১৯৩-১৯৪)।
• ﴿رَبَّنَا ظَلَمۡنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٢٣﴾[الاعراف: ٢٣]
(উচ্চারণ: রব্বানা- যলামনা- আনফুসানা-, ওয়া ইল্লাম তাগফির্ লানা- ওয়া তারহাম্না- লানাকূনান্না মিনাল খ-সিরীন),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি যুলম করেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তাহলে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (আ‘রাফ ২৩)।
• ﴿رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ٤٧ ﴾ [الاعراف: ٤٧]
(উচ্চারণ: রব্বানা- লা- তাজ‘আল্না- মা‘আল ক্বওমিয্ য-লিমীন),
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে যালেমদের সঙ্গী করবেন না’ (আ‘রাফ ৪৭)।
• ﴿ أَنتَ وَلِيُّنَا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَاۖ وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلۡغَٰفِرِينَ ١٥٥ ۞وَٱكۡتُبۡ لَنَا فِي هَٰذِهِ ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ﴾ [الاعراف: ١٥٥، ١٥٦]
(উচ্চারণ: আনতা ওয়ালিই্য়ুনা- ফাগফির্ লানা- ওয়ার্হাম্না-, ওয়া আনতা খয়রুল গ-ফিরীন, ওয়াক্তুব্ লানা- ফী হা-যিহিদ্ দুন্ইয়া হাসানাহ ওয়া ফিল্আ-খিরাহ),
অর্থ: ‘আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন। আপনিইতো সর্বোত্তম ক্ষমাকারী। আর দুনিয়াতে এবং আখেরাতে আমাদের জন্য কল্যাণ লিখে দিন’ (আ‘রাফ ১৫৫-১৫৬)।
• ﴿ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلۡنَا رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا فِتۡنَةٗ لِّلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٥ ﴾ [يونس: ٨٥]
(উচ্চারণ: ‘আলাল্লা-হি তাওয়াক্কাল্না-, রব্বানা- লা-তাজ‘আল্না- ফিতনাতান লিল্ক্বওমিয্ য-লিমীন, ওয়া নাজ্জিনা- বিরহমাতিকা মিনাল ক্বওমিল কাফিরীন),
অর্থ: ‘আমরা আল্লাহ্র উপর ভরসা করেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে অত্যাচারীদের উৎপীড়নের পাত্র বানাবেন না। আর আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহ দ্বারা কাফেরগোষ্ঠীর কবল থেকে উদ্ধার করুন’ (ইউনুস ৮৫-৮৬)।
• ﴿ رَبِّ ٱجۡعَلۡنِي مُقِيمَ ٱلصَّلَوٰةِ وَمِن ذُرِّيَّتِيۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ دُعَآءِ ٤٠ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١ ﴾ [ابراهيم: ٤٠، ٤١]
(উচ্চারণ: রব্বিজ্‘আল্নী মুক্বীমাছ্ ছলা-তি ওয়া মিন যুর্রিইয়াতি, রব্বানা- ওয়া তাক্বাব্বাল্ দু‘আ-, রব্বানা-গ্ফির্ লী ওয়া লিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা ইয়াওমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ছালাত ক্বায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি দো‘আ ক্ববূল করুন। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল মুমিনকে হিসাব-নিক্বাশের দিন ক্ষমা করুন’ (ইবরাহীম ৪০-৪১)।
• ﴿رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا﴾ [الاسراء: ٢٤]
(উচ্চারণ: রব্বির্হামহুমা- কামা- রব্বাইয়া-নী ছগীরা),
অর্থ: ‘হে আমার রব! আপনি তাদের উভয়ের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’ (ইসরা ৩৪)।
• ﴿ رَبَّنَآ ءَاتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحۡمَةٗ وَهَيِّئۡ لَنَا مِنۡ أَمۡرِنَا رَشَدٗا ١٠ ﴾ [الكهف: ١٠]
(উচ্চারণ: রব্বানা- আ-তিনা- মিল্লাদুন্কা রহমাহ, ওয়া হাইয়ি’ লানা- মিন আমরিনা- রশাদা),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন’ (কাহ্ফ ১০)।
• ﴿ رَبِّ ٱشۡرَحۡ لِي صَدۡرِي ٢٥ وَيَسِّرۡ لِيٓ أَمۡرِي ٢٦ ﴾ [طه: ٢٥، ٢٦]
(উচ্চারণ: রব্বিশ্রহ লী ছদ্রী ওয়া ইয়াস্সির লী আমরী),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন’ (ত্ব-হা ২৫-২৬)।
• ﴿ رَّبِّ زِدۡنِي عِلۡمٗا ﴾[طه: ١١٤]
(উচ্চারণ: রব্বি যিদ্নী ‘ইলমা),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন’ (ত্ব-হা ১১৪)।
• ﴿لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبۡحَٰنَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ﴾ [الانبياء: ٨٧]
(উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ য-লিমীন),
অর্থ: ‘আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয় আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (আম্বিয়া ৮৭)।
• ﴿رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنۡ هَمَزَٰتِ ٱلشَّيَٰطِينِ ٩٧ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحۡضُرُونِ ٩٨ ﴾ [المؤمنون: ٩٧، ٩٨]
(উচ্চারণ: রব্বি আ‘ঊযুবিকা মিন হামাযা-তিশ্ শায়া-ত্বীন, ওয়া আ‘ঊযুবিকা রব্বি আইইয়াহ্যুরূন),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানদের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ (মুমিনূন ৮৭-৮৮)।
• ﴿رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ﴾ [المؤمنون: ١٠٩]
(উচ্চারণ: রব্বানা- আ-মান্না- ফাগফির্ লানা- ওয়ার্হামনা- ওয়া আনতা খয়রুর্ র-হিমীন),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব, আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের প্রতি রহম করুন। আপনিইতো সর্বোত্তম দয়ালু’ (মুমিনূন ১০৯)।
• ﴿رَّبِّ ٱغۡفِرۡ وَٱرۡحَمۡ وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ﴾ [المؤمنون: ١١٨]
(উচ্চারণ: রব্বিগ্ফির্ ওয়ার্হাম্ ওয়া আনতা খয়রুর্ র-হিমীন),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি ক্ষমা করুন ও রহম করুন। আপনিইতো সর্বোত্তম দয়ালু’ (মুমিনূন ১১৮)।
• ﴿ رَبَّنَا ٱصۡرِفۡ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا ٦٥ ﴾ [الفرقان: ٦٤]
(উচ্চারণ: রব্বানাছ্রিফ্ ‘আন্না-‘আযা-বা জাহান্নামা, ইন্না ‘আযা-বাহা কা-না গরা-মা),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি সরিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এর শাস্তি অপ্রতিহত’ (ফুরক্বান ৬৫)।
• ﴿رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ﴾ [الفرقان: ٧٤]
(উচ্চারণ: রব্বানা- হাব্ লানা- মিন আয্ওয়া-জিনা- ওয়া যুর্রিইয়া-তিনা- ক্বুর্রাতা আ‘য়ুন, ওয়াজ্‘আলনা- লিলমুত্তাক্বীনা ইমা-মা),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রী এবং আমাদের সন্তান-সন্ততির পক্ষ থেকে আমাদেরকে চোখ জুড়ানো আনন্দ প্রদান করুন। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের জন্য আদর্শস্বরূপ করুন’ (ফুরক্বান ৭৪)।
• ﴿ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَدۡخِلۡنِي بِرَحۡمَتِكَ فِي عِبَادِكَ ٱلصَّٰلِحِينَ﴾ [النمل: ١٩]
(উচ্চারণ: রব্বি আওযি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী আন‘আমতা ‘আলাইয়া ওয়া ‘আলা- ওয়া-লিদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা ছ-লিহান তারযা-হু, ওয়া আদ্খিলনী বিরহমাতিকা ফী ইবা-দিকাছ্ ছ-লিহীন),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে সামর্থ্য দান করুন, যাতে আমি আমার প্রতি এবং আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনার প্রদত্ত নে‘মতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি এবং যাতে আমি আপনার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি। আপনি আমাকে নিজ অনুগ্রহে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন’ (নামল ১৯)।
• ﴿رَبِّ إِنِّي ظَلَمۡتُ نَفۡسِي فَٱغۡفِرۡ لِي﴾ [القصص: ١٦]
(উচ্চারণ: রব্বি ইন্নী যলামতু নাফসী ফাগফির লী),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আমিতো নিজের উপর যুলম করে ফেলেছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন’ (ক্বাছাছ ১৬)।
• ﴿ رَبِّ هَبۡ لِي مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ﴾ [الصافات: ١٠٠]
(উচ্চারণ: রব্বি হাব্ লী মিনাছ্ ছ-লিহীন),
অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সৎসন্তান দান করুন’ (ছফ্ফা-ত ১০০)।
• ﴿رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ﴾ [الاحقاف: ١٥]
(উচ্চারণ: রব্বি আওযি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী আন‘আমতা ‘আলাইয়া ওয়া ‘আলা- ওয়া-লিদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা ছ-লিহান তারযা-হু, ওয়া আছলিহ্ লী ফী যুর্রিইয়াতি, ইন্নী তুবতু ইলাইকা, ওয়া ইন্নী মিনাল মুসলিমীন),
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে সামর্থ্য দান করুন, যাতে আমি আমার প্রতি এবং আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনার প্রদত্ত নে‘মতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি এবং যাতে আমি আপনার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি। আপনি আমাকে আমার সন্তানদের ক্ষেত্রে সৎকর্মপরায়ণ করুন, আমি আপনার নিকট তওবা করলাম এবং আমি মুসলিমদের অন্যতম’ (আহক্বাফ ১৫)।
• ﴿ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠ ﴾ [الحشر: ١٠]
(উচ্চারণ: রব্বানাগ্ফির্ লানা- ওয়া লিইখ্ওয়া-নিনাল্লাযীনা সাবাক্বূনা- বিলঈমা-ন, ওয়ালা- তাজ‘আল ফী ক্বুলূবিনা- গিল্লাল্ লিল্লাযীনা আ-মানূ রব্বানা- ইন্নাকা রঊফুর রহীম),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে আমাদের অগ্রবর্তী ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন। ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ আপনি রাখবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই আপনি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়’’ (হাশর ১০)।
• ﴿رَّبَّنَا عَلَيۡكَ تَوَكَّلۡنَا وَإِلَيۡكَ أَنَبۡنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٤ رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا فِتۡنَةٗ لِّلَّذِينَ كَفَرُواْ وَٱغۡفِرۡ لَنَا رَبَّنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٥﴾[الممتحنة: ٤، ٥]
(উচ্চারণ: রব্বানা- ‘আলাইকা তাওয়াক্কাল্না- ওয়া ইলাইকা আনাব্না- ওয়া ইলাইকাল্ মাছীর, রব্বানা- লা-তাজ‘আল্না- ফিতনাতাল্ লিল্লাযীনা কাফারূ, ওয়াগ্ফির্ লানা- রব্বানা-, ইন্নাকা আনতাল আযীযুল হাকীম),
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা আপনার উপরই ভরসা করেছি, আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছি এবং আপনার নিকটেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে কাফেরদের পরীক্ষার পাত্র বানাবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (মুমতাহানাহ ৩-৪)।
• «اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা ওয়া আনা ‘আলা-‘আহ্দিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্ব‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি মা ছনা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ লাকা বিযাম্বী ফাগফির লী, ফাইন্নাহু লা-ইয়াগ্ফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ব্যতীত আর কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর সাধ্যানুযায়ী আমি আপনার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমি আপনার কাছে আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার প্রতি আপনার প্রদত্ত নে‘মতের স্বীকৃতি প্রদান করছি এবং আপনার নিকট আমার গোনাহ স্বীকার করে নিচ্ছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা আপনি ব্যতীত আর কেউ গোনাহসমূহ মার্জনা করতে পারে না’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাছীরান, ওয়ালা- ইয়াগ্ফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা, ফাগফির লী মাগফিরাতাম্ মিন ‘ইনদিকা ওয়ার্হামনী, ইন্নাকা আনতাল গফূরুর্ রহীম),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের প্রতি অনেক যুলম করেছি, আর আপনি ব্যতীত অন্য কেউ ঐসব গোনাহ ক্ষমা করতে পারে না। অতএব, আপনার পক্ষ থেকে আপনি আমাকে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আয্জি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুব্নি ওয়াল বুখ্লি ওয়া যলাইদ্ দাইনি ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে (ঘটিত কোনো বিষয়ে) দুশ্চিন্তা, (আগত কোনো বিষয়ে) চিন্তা-ভাবনা, অপারগতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা এবং ঋণের বোঝা ও দুষ্ট লোকের প্রাধান্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখ্লি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা আন উরাদ্দা ইলা- আরযালিল্ উমুর, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ্ দুন্ইয়া-, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বব্র),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কৃপণতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, জরাজীর্ণ বয়স থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, দুনিয়ার ফেৎনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং ক্ববরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْكَسَلِ وَالْهَرَمِ وَالْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ النَّارِ وَعَذَابِ النَّارِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْغِنَى وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْفَقْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ اللَّهُمَّ اغْسِلْ عَنِّي خَطَايَايَ بِمَاءِ الثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّ قَلْبِي مِنْ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنْ الدَّنَسِ وَبَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মা’ছামি ওয়াল মাগরামি, ওয়া মিন ফিতনাতিল ক্বব্রি ওয়া ‘আযা-বিল ক্বব্র, ওয়া মিন ফিতনাতিন্ না-রি ওয়া ‘আযা-বিন না-র, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল গিনা-, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল ফাক্বরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল। আল্লা-হুম্মাগ্সিল ‘আন্নী খত্বা-ইয়া-ইয়া বিমা-ইছ্ ছালজি ওয়াল বারাদ, ওয়া নাক্বি ক্বলবী মিনাল খত্বা-ইয়া- কামা নাক্কায়তাছ্ ছাওবাল আবইয়াযা মিনাদ্ দানাস, ওয়া বা-‘ইদ বায়নী ওয়া বায়না খত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আদ্তা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অলসতা, অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা, পাপ ও ঋণ থেকে এবং ক্ববরের ফেৎনা, ক্ববরের আযাব, জাহান্নামের ফেৎনা, জাহান্নামের আযাব ও ধন-সম্পদের ফেৎনার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার নিকট দরিদ্রতার ফেৎনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার নিকট আরো প্রার্থনা করছি দাজ্জালের ফেৎনা থেকে। হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপরাশিকে বরফ ও শিশিরের পানি দিয়ে ধুয়ে দিন। আপনি আমার অন্তরকে পাপরাশি থেকে এমনভাবে ছাফ করে দিন, যেমনিভাবে ময়লা থেকে সাদা কাপড়কে ছাফ করে দেন। আপনি আমার এবং পাপরাশির মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমনিভাবে আপনি পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন’।
• «رَبِّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي وَجَهْلِي وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي كُلِّهِ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطَايَايَ وَعَمْدِي وَجَهْلِي وَهَزْلِي وَكُلُّ ذَلِكَ عِنْدِي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
(উচ্চারণ: রব্বিগ্ফির্ লী খত্বীআতী ওয়া জাহ্লী ওয়া ইসরা-ফী ফী আমরী কুল্লিহী ওয়ামা- আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আল্লা-হুম্মাগ্ফির লী খত্বা-ইয়া-ইয়া ওয়া ‘আম্দী ওয়া জাহ্লী ওয়া হায্লী ওয়া কুল্লু যা-লিকা ‘ইনদী, আল্লা-হুম্মাগ্ফির লী মা- ক্বদ্দামতু ওয়ামা- আখ্খারতু ওয়ামা- আসরারতু ওয়ামা- আ‘লানতু, আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু ওয়া আনতা ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর),
অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার পাপ, আমার অজ্ঞতা, সর্ব বিষয়ে আমার সীমালংঘন এবং যে পাপ সম্পর্কে আপনি আমার চেয়ে বেশী জানেন, তা ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপরাশি, আমার ইচ্ছাকৃত পাপ, অজ্ঞতা ও হালকামিবশতঃ ঘটিত পাপ এবং আমার যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আমার পূর্বে কৃত, ভবিষ্যতে ঘটিতব্য, গোপনীয় এবং প্রকাশ্য যাবতীয় পাপ আপনি ক্ষমা করে দিন। আপনিই অগ্রসরকারী এবং পশ্চাতকারী এবং আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান’।
• «اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ وَرَبَّ الأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَىْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَىْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ اللَّهُمَّ أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَىْءٌ اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রব্বাস্ সামাওয়া-তি ওয়া রব্বাল আরযি ওয়া রব্বাল ‘আরশিল আযীম, রব্বানা- ওয়া রব্বা কুল্লি শাই, ফা-লিক্বাল হাব্বি ওয়ান্ নাওয়া-, ওয়া মুনযিলাত তাওরা-তি ওয়াল ইনজীলি ওয়াল ফুরক্বা-ন, আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি কুল্লি শাইয়িন আনতা আ-খিযুন বিনা-ছিয়াতিহী। আল্লা-হুম্মা আনতাল আওওয়ালু ফালায়সা ক্ববলাকা শাই, ওয়া আনতাল আ-খিরু ফালায়সা বা‘দাকা শাই, ওয়া আনতায্ য-হিরু ফালায়সা ফাওক্বাকা শাই, ওয়া আনতাল বা-ত্বিনু ফালায়সা দূনাকা শাই, ইক্বযি ‘আন্নাদ্ দায়না ওয়া আগ্নিনা- মিনাল ফাক্বর),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আকাশমণ্ডলীর প্রভু, পৃথিবীর প্রভু, মহান আরশের প্রভু, আমাদের প্রভু এবং সবকিছুর প্রভু! বীজ এবং আঠি থেকে চারা অঙ্কুরিতকারী! তাওরাত, ইনজীল এবং কুরআন অবতীর্ণকারী! আমি আপনার কাছে ঐসবকিছুর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেগুলি আপনারই হস্তগত। হে আল্লাহ! আপনিই আদি, আপনার পূর্বে কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না; আপনিই অন্ত, আপনার পরে কোন কিছুই নেই বা থাকবে না; আপনিই প্রকাশমান ও সবকিছুর উপর বিজয়ী, আপনার উপরে কিছুই নেই; আপনিই অপ্রকাশমান, আপনি ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। আপনি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং আপনি আমাকে দারিদ্র্যমুক্ত করুন’।


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




