somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের সমালোচনা ও তার জবাব ৪

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


• «اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি মা ‘আমিলতু ওয়া মিন শাররি মা লাম আ‘মাল),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! যা আমি করেছি, তার অনিষ্ট থেকে এবং যা করিনি, তার অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।
• «اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِى دِينِىَ الَّذِى هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِى وَأَصْلِحْ لِى دُنْيَاىَ الَّتِى فِيهَا مَعَاشِى وَأَصْلِحْ لِى آخِرَتِى الَّتِى فِيهَا مَعَادِى وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِى فِى كُلِّ خَيْرٍ وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِى مِنْ كُلِّ شَرٍّ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আছলেহ্‌ লী দ্বীনিয়াল্লাযী হুওয়া ‘ইছমাতু আমরী, ওয়া আছলেহ্‌ লী দুন্‌ইয়া-ইয়াল্লাতী ফীহা মা‘আ-শী, ওয়া আছলেহ্‌ লী আ-খেরতিল্লাতী ফীহা মা‘আ-দী, ওয়াজ্‌‘আলিল হায়া-তা যিয়া-দাতান লী ফী কুল্লি খায়ের, ওয়াজ্‌‘আলিল মাওতা রা-হাতান লী মিন কুল্লি শার্র),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার দ্বীনকে সঠিক করে দিন, যা আমার সবকিছুর উপায়। আর আপনি আমার জন্য আমার দুনিয়াকে সঠিক করে দিন, যাতে রয়েছে আমার জীবিকা। আমার জন্য আমার আখেরাতকেও শুদ্ধ করে দিন, যেখানে হবে আমার প্রত্যাবর্তন। আপনি আমার জীবনকালকে প্রত্যেক কল্যাণকর কাজে বৃদ্ধি করুন এবং আমার মৃত্যুকে সকল অনিষ্টতা থেকে প্রশান্তি লাভের উপায় করে দিন’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত্‌ তুক্বা ওয়াল আফা-ফা ওয়াল গিনা-),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সৎপথের নির্দেশনা, আল্লাহভীরুতা, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা এবং সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِى تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল আজ্‌যি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল ক্ববরি, আল্লা-হুম্মা আ-তি নাফসী তাক্বওয়া-হা- ওয়া যাক্কিহা- আনতা খয়রু মান যাক্কা-হা- আনতা ওয়ালিইয়ুহা- ওয়া মাওলা-হা, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘ইলমিন লা- ইয়ান্‌ফা‘ ওয়া মিন ক্বলবিন লা- ইয়াখ্‌শা‘ ওয়া মিন নাফসিন লা- তাশবা‘ ওয়া মিন দা‘ওয়াতিন লা- য়ুসতাজা-বু লাহা),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অপারগতা, অলসতা, ভীরুতা, দরিদ্রতা, অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা এবং ক্ববরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার আত্মাকে আপনি তাক্বওয়া প্রদান করুন এবং ইহাকে করুন কলুষমুক্ত। ইহাকে নিষ্কলুষ করার সর্বোত্তম সত্ত্বাতো আপনিই এবং আপনিই এর অভিভাবক ও মুনিব। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন ইলম থেকে, যা কল্যাণ বয়ে আনে না; এমন হৃদয় থেকে, যা আল্লাহ্‌র ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয় না; এমন অন্তর থেকে, যা কোন কিছুতেই পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দো‘আ থেকে, যা ক্ববূল হয় না’।
• «اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِعِزَّتِكَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَنْ تُضِلَّنِى أَنْتَ الْحَىُّ الَّذِى لاَ يَمُوتُ وَالْجِنُّ وَالإِنْسُ يَمُوتُونَ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আ-মানতু ওয়া ‘আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু ওয়া বিকা খ-ছামতু, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিইয্‌যাতিকা, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা আন তুযিল্লানী, আনতাল হাইয়ুল্লাযী লা-ইয়ামূত ওয়াল জিন্নু ওয়াল ইনসু ইয়ামূতূন),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনারই বশ্যতা স্বীকার করেছি, আপনার প্রতিই ঈমান এনেছি, আপনার উপরই ভরসা করেছি, আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছি এবং আপনার জন্যই আপনার দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা বিবাদ-লড়াইয়ে প্রবৃত্ত হয়েছি। হে আল্লাহ! আমাকে পথভ্রষ্ট করা থেকে আপনার ইয্‌যতের দোহাই দিয়ে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি ব্যতীত কোনো হক্ক ইলাহ নেই। আপনি এমন এক চিরঞ্জীব সত্ত্বা, যার কোন মৃত্যু নেই; কিন্তু মানব এবং জিন জাতি মরণশীল’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি‘মাতিকা ওয়া তাহাওউলি ‘আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী‘ই সাখাত্বিকা),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনার নে‘মত বিলুপ্ত হওয়া থেকে, আপনার দেওয়া সুস্থতার পরিবর্তন থেকে, আপনার শাস্তির আকস্মিক আক্রমণ থেকে এবং আপনার সকল ক্রোধ-অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।
• «اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা মুছার্রিফাল ক্বুলূব ছর্রিফ ক্বুলূবানা- ‘আলা- ত্ব-‘আতিক),
অর্থ: ‘হে অন্তরসমূহের পরিবর্তন সাধনকারী আল্লাহ! আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে আপনার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দিন’।
• «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى ذَنْبِى كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَعَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগ্‌ফির লী যাম্বী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওওয়ালাহু ওয়া আ-খেরাহু ওয়া ‘আলানিয়াতাহু ওয়া সির্রাহু),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার ছোট-বড়, আগের-পরের এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় গোনাহ ক্ষমা করে দিন’।
• «اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِى لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِى مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রব্বা জিবরা-ঈল ওয়া মীকা-ঈল ওয়া ইসরা-ফীল, ফা-তিরাস সামাওয়া-তি ওয়াল আরযি, ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ শাহা-দাহ, আনতা তাহকুমু বায়না ‘ইবা-দিকা ফীমা- কা-নূ ফীহি ইয়াখ্‌তালিফূন, ইহ্‌দিনী লিমাখ্‌তুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বি বিইযনিকা, ইন্নাকা তাহদী মান তাশা-উ ইলা- ছিরা-তিম মুস্তাক্বীম),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! জিবরীল, মীকাঈল এবং ইসরাফীলের প্রভু! আসমানসমূহ এবং যমীনের সৃষ্টিকর্তা! গায়েব ও উপস্থিত সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ! আপনার বান্দারা যেসব বিষয়ে মতানৈক্য করত, আপনি সেসব বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়ছালা দিবেন। হক্বের যে ক্ষেত্রে মতানৈক্য হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনি আমাকে সঠিক পথটি প্রদর্শন করুন। নিশ্চয়ই আপনি যাকে ইচ্ছা সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করে থাকেন‌’।
• «اللَّهُمَّ أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِى ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আ‘ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিক ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন উক্বূবাতিক, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনকা লা- উহ্‌ছী ছানা‘আন ‘আলাইকা, আনতা কামা আছনায় ‘আলা- নাফসিক),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার অসন্তুষ্টি থেকে এবং আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আপনার শাস্তি ও ক্রোধ থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি আপনার থেকে আপনারই কাছে। আমি আপনার গুণ-গান করে শেষ করতে পারব না। যেরূপ প্রশংসা আপনি আপনার নিজের জন্য বর্ণনা করেছেন, আপনি ঠিক তদ্রুপ’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আ‘ঊযুবিকা মিন জাহ্‌দিল বালা- ওয়া দারাকিশ শাক্বা- ওয়া সূইল ক্বাযা- ওয়া শামা-তাতিল আ‘দা-),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কঠিন বালা-মুছীবত, চরম কষ্ট, ফয়সালার অনিষ্ট এবং (আমার বিরুদ্ধে) শত্রুদের মনতুষ্টি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।
• «اللَّهُمَّ اجْعَلْ لِى فِى قَلْبِى نُورًا وَفِى لِسَانِى نُورًا وَفِى سَمْعِى نُورًا وَفِى بَصَرِى نُورًا وَمِنْ فَوْقِى نُورًا وَمِنْ تَحْتِى نُورًا وَعَنْ يَمِينِى نُورًا وَعَنْ شِمَالِى نُورًا وَمِنْ بَيْنِ يَدَىَّ نُورًا وَمِنْ خَلْفِى نُورًا وَاجْعَلْ فِى نَفْسِى نُورًا وَأَعْظِمْ لِى نُورًا»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাজ্‌‘আল লী ফী ক্বলবী নূরান, ওয়া ফী লিসা-নী নূরান, ওয়া ফী সাম‘ঈ নূরান, ওয়া ফী বাছারী নূরান, ওয়া মিন ফাওক্বী নূরান, ওয়া মিন তাহ্‌তী নূরান, ওয়া ‘আন ইয়ামীনী নূরান, ওয়া ‘আন শিমা-লী নূরান, ওয়া মিন বাইনি ইয়াদাইয়া নূরান, ওয়া মিন খলফী নূরান, ওয়াজ্‌‘আল ফী নাফসী নূরান, ওয়া আ‘যিম লী নূরা),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর দিন, যবানে নূর দিন, শ্রবণ শক্তিতে নূর দিন, দৃষ্টি শক্তিতে নূর দিন, আমার উপরে নূর দিন ও নীচে নূর দিন, আমার ডানে নূর দিন ও বামে নূর দিন, আমার সামনে নূর দিন ও পেছনে নূর দিন এবং আমার আত্মায় আপনি নূর দিন। আপনি আমার জন্য জ্যোতিকে অনেক বৃদ্ধি করে দিন’।
• «اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ, اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ছল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা ছল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীম ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা বা-রকতা ‘আলা- ইবরাহীম ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ (তাদেরকে ভালো হিসেবে স্মরণ) করুন, যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি মহা প্রশংসিত, মহা সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের উপর, যেমনিভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীমের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয়ই আপনি মহা প্রশংসিত, মহা সম্মানিত’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَاذَ بِهِ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ، وَأَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ كُلَّ قَضَاءٍ قَضَيْتَهُ لِي خَيْرًا»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিনাল খয়রি কুল্লিহী ‘আ-জিলিহী ওয়া আ-জিলিহ্‌, মা ‘আলিমতু মিনহু ওয়ামা- লাম আ‘লাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাশ শার্রি কুল্লিহী ‘আ-জিলিহী ওয়া আ-জিলিহ্‌, মা ‘আলিমতু মিনহু ওয়ামা- লাম আ‘লাম, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন খয়রি মা- সাআলাকা ‘আব্দুকা ওয়া নাবিইয়ুক, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা- ‘আ-যা বিহী ‘আব্দুকা ওয়া নাবিইয়ুক, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়ামা- ক্বর্রাবা ইলাইহা- মিন ক্বওলিন ওয়া আমাল, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনান্না-রি ওয়ামা- ক্বর্রাবা ইলাইহা- মিন ক্বওলিন ওয়া আমাল, ওয়া আসআলুকা আন তাজ্‌‘আলা কুল্লা ক্বাযা-ইন ক্বাযাইতাহূ লী খয়রা),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জানা-অজানা সকল কল্যাণ প্রার্থনা করছি। পক্ষান্তরে আমি আপনার কাছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জানা-অজানা সকল অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এমন কল্যাণ প্রার্থনা করছি, যা আপনার বান্দা ও নবী আপনার কাছে প্রার্থনা করেছেন। হে আল্লাহ! আমি এমন অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, যা থেকে আপনার বান্দা ও নবী আপনার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে জান্নাত এবং যে কথা বা কাজ জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেয়, তা প্রার্থনা করছি। পক্ষান্তরে আমি আপনার কাছে জাহান্নাম এবং যে কথা বা কাজ জাহান্নামের নিকটবর্তী করে দেয়, তা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি যে, আপনি যা কিছু আমার জন্য নির্ধারণ করেন, তা যেন আমার জন্য কল্যাণকর করেন’।
• «اللَّهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبِ وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ أَحْيِنِي مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِي، اللَّهُمَّ وَأَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، وَأَسْأَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ فِي الرِّضَا وَالْغَضَبِ، وَأَسْأَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنَى، وَأَسْأَلُكَ نَعِيمًا لَا يَنْفَد،ُ وَأَسْأَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ لَا تَنْقَطِعُ، وَأَسْأَلُكَ الرِّضَاءَ بَعْدَ الْقَضَاءِ، وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ، وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ، وَالشَّوْقَ إِلَى لِقَائِكَ فِي غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ وَلَا فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ، اللَّهُمَّ زَيِّنَّا بِزِينَةِ الْإِيمَانِ، وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُهْتَدِينَ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা বি‘ইলমিকাল গয়বি ওয়া ক্বুদরাতিকা ‘আলাল খলক্বি আহ্‌ইনী মা- ‘আলিমতাল হায়া-তা খয়রান লী, ওয়া তাওয়াফ্‌ফানী ইযা- ‘আলিমতাল ওয়াফা-তা খয়রান লী, আল্লা-হুম্মা ওয়া আসআলুকা খশ্‌ইয়াতাকা ফিল গয়বি ওয়াশ শাহা-দাহ, ওয়া আসআলুকা কালিমাতাল হাক্কি ফির্‌রিযা-ই ওয়াল গযাব, ওয়া আসআলুকাল ক্বছদা ফিল ফাক্বরি ওয়াল গিনা-, ওয়া আসআলুকা না‘ঈমান লা- ইয়ান্‌ফাদ, ওয়া আসআলুকা ক্বুর্রাতা ‘আইনিন লা- তানক্বাতে‘, ওয়া আসআলুকার রিযা- বা‘দাল ক্বাযা-, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘দাল মাউত, ওয়া আসআলুকা লাযযাতান্‌ নাযারি ইলা- ওয়াজ্‌হিক, ওয়াশ শাওক্বা ইলা- লিক্বা-ইকা ফী গয়রি যর্রা-ইন মুযির্রাহ্ ওয়ালা- ফিতনাতিন মুযিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা যাইয়্যিন্না- বিযীনাতিল ঈমা-ন, ওয়াজ্‌‘আলনা- হুদা-তান মুহতাদীন),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার গায়েবের জ্ঞান এবং সৃষ্টিকুলের উপর আপনার সার্বভৌম ক্ষমতার মাধ্যমে আপনার নিকট এমর্মে প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমাকে ততদিন জীবিত রাখুন, যতদিনের জীবনকাল আপনি আমার জন্য কল্যাণকর মনে করেন। পক্ষান্তরে আপনি আমাকে এমন সময় মৃত্যু দান করুন, যে সময়ের মৃত্যু আপনি আমার জন্য কল্যাণকর মনে করেন। হে আল্লাহ! গোপনে এবং প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আমি আপনার নিকট আপনার ভীতি প্রার্থনা করছি। সন্তুষ্ট এবং ক্রোধান্বিত উভয় অবস্থায় আমি আপনার নিকট হক্ব কথা বলার তাওফীক্ব প্রার্থনা করছি। দরিদ্রতা এবং ধনাঢ্যতার ক্ষেত্রে আমি আপনার নিকট মধ্যমপন্থা অবলম্বনের তাওফীক্ব প্রার্থনা করছি। আমি আপনার নিকট অফুরন্ত নে‘মত প্রার্থনা করছি। আমি আপনার নিকট অবিচ্ছিন্ন চোখ জুড়ানো বস্তু প্রার্থনা করছি। আপনার নিকট আমি তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্টি প্রার্থনা করছি। আমি আপনার নিকট মৃত্যুর পরে সুখসমৃদ্ধ জীবন প্রার্থনা করছি। অনিষ্টকারীর অনিষ্টতা এবং পথভ্রষ্টকারীর ফেৎনা ছাড়াই আমি আপনার নিকট আপনার চেহারা দর্শনের স্বাদ এবং আপনার সাক্ষাত লাভের আকাঙ্খা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ঈমানের শোভায় সুশোভিত করুন এবং আমাদেরকে একদিকে করুন সঠিক পথের দিশারী, অন্যদিকে করুন সুপথপ্রাপ্ত’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِى دِينِى وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِى وَمَالِى، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِى، وَآمِنْ رَوْعَاتِى، اللَّهُمَّ احْفَظْنِى مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِى وَعَنْ يَمِينِى وَعَنْ شِمَالِى وَمِنْ فَوْقِى، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِى»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্‌ দুন্‌ইয়া- ওয়াল আ-খেরাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওয়া দুন্‌ইয়া-ইয়া ওয়া আহ্‌লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাস্‌তুর ‘আওরা-তী, ওয়া আ-মিন রও‘আ-তী, আল্লা-হুম্মাহ্‌ফায্‌নী মিন বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খলফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া ‘আন শিমা-লী ওয়া মিন ফাওক্বী, ওয়া আ‘ঊযু বিআযামাতিকা আন উগ্‌তা-লা মিন তাহ্‌তী),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি দুনিয়া ও আখেরাতে আপনার ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার দ্বীন ও দুনিয়ায়, আমার পরিবারে ও ধন-সম্পদে আপনার ক্ষমা এবং নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপনীয়তা রক্ষা করুন এবং ভয়-ভীতিকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করুন। আপনি আমাকে আমার সামনের-পেছনের, ডানের-বামের এবং উপরের সকল বিপদাপদ থেকে হেফাযত করুন। আপনার মহত্ত্বের দোহাই দিয়ে আপনার নিকট আমার নিম্নদেশ থেকে মাটি ধ্বসে আকস্মিক মৃত্যু হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।
• «اللَّهُمَّ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّ كُلِّ شَىْءٍ وَمَلِيكَهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِى وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ শাহা-দাহ, ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি রব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি নাফসী ওয়া মিন শাররিশ্‌ শায়ত্বা-নি ওয়া শিরকিহী),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! দৃশ্য এবং অদৃশ্য সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ! আসমানসমূহ এবং যমীনের সৃষ্টিকর্তা! সবকিছুর প্রভু এবং মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া আর কোন হক্ব মা‘বূদ নেই। আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তান ও তার শির্কের অনিষ্ট থেকে আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।
• «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الثَّبَاتَ فِي الأَمْرِ, وَالْعَزِيمَةَ عَلَى الرُّشْدِ، وَأَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ, وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ شُكْرَ نِعْمَتِكَ, وَحُسْنَ عِبَادَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ قَلْبًا سَلِيمًا, وَلِسَانًا صَادِقًا، وَأَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا تَعْلَمُ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا تَعْلَمُ، إِنَّكَ أَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাছ ছাবা-তা ফিল আমরি, ওয়াল আযীমাতা ‘আলার রুশদি, ওয়া আসআলুকা মূজিবা-তি রহমাতিক ওয়া ‘আযা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়া আসআলুকা শুকরা নি‘মাতিকা ওয়া হুসনা ‘ইবা-দাতিক, ওয়া আসআলুকা ক্বলবান সালীমান ওয়া লিসা-নান ছ-দিক্বান, ওয়া আসআলুকা মিন খয়রি মা- তা‘লাম, ওয়া আস্তাগফিরুকা লিমা- তা‘লাম, ইন্নাকা আনতা আল্লা-মুল গুয়ূব),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দ্বীনের ব্যাপারে দৃঢ়তা এবং হক্বের উপরে ঋজুতা প্রার্থনা করছি। আমি আপনার কাছে এমন আমল প্রার্থনা করছি, যা আপনার রহমত লাভ নিশ্চিত করবে এবং যা আমার জন্য আপনার নিশ্চিত ক্ষমা বয়ে আনবে। আমি আপনার নিকট নিষ্কলুষ অন্তর এবং সত্যবাদী যবান প্রার্থনা করছি। আমি আপনার জানা কল্যাণ প্রার্থনা করছি। অপরপক্ষে আপনার জানা অকল্যাণ থেকে পানাহ চাচ্ছি। আমার সম্পর্কে আপনার জানা ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আমি আপনার ক্ষমা ভিক্ষা করছি। নিশ্চয়ই আপনি গায়েবী বিষয়সমূহ সম্পর্কে সম্যক অবগত’।
• «اللَّهُمَّ اكْفِنِى بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِى بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিক, ওয়া আগনিনী বিফাযলিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হারাম থেকে রক্ষা করে আপনার হালালের মাধ্যমে পরিতুষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ভিন্ন অন্য সবার থেকে আমাকে মুখাপেক্ষীহীন করুন’।
• «اللَّهُمَّ عَافِنِى فِى بَدَنِى اللَّهُمَّ عَافِنِى فِى سَمْعِى اللَّهُمَّ عَافِنِى فِى بَصَرِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম‘ঈ, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাছারী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাক্বরি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্ববরি, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে শারীরিক সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার কানের সুস্থতা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার চোখের সুস্থতা দান করুন। আপনি ছাড়া আর কোন হক্ব মা‘বূদ নেই। হে আল্লাহ! কুফরী এবং দারিদ্র্য থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! ক্ববরের আযাব থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি ব্যতীত আর কোন হক্ব মা‘বূদ নেই’।
• «رَبِّ أَعِنِّى وَلاَ تُعِنْ عَلَىَّ وَانْصُرْنِى وَلاَ تَنْصُرْ عَلَىَّ وَامْكُرْ لِى وَلاَ تَمْكُرْ عَلَىَّ وَاهْدِنِى وَيَسِّرِ الْهُدَى لِى وَانْصُرْنِى عَلَى مَنْ بَغَى عَلَىَّ رَبِّ اجْعَلْنِى لَكَ شَكَّارًا لَكَ ذَكَّارًا لَكَ رَهَّابًا لَكَ مِطْوَاعًا لَكَ مُخْبِتًا إِلَيْكَ أَوَّاهًا مُنِيبًا رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِى وَاغْسِلْ حَوْبَتِى وَأَجِبْ دَعْوَتِى وَثَبِّتْ حُجَّتِى وَسَدِّدْ لِسَانِى وَاهْدِ قَلْبِى وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ صَدْرِى»
(উচ্চারণ: রব্বি আ‘ইন্নী ওয়ালা- তু‘ইন ‘আলাইয়া, ওয়ানছুরনী ওয়ালা- তানছুর ‘আলাইয়া, ওয়ামকুর লী ওয়ালা- তামকুর ‘আলাইয়া, ওয়াহ্‌দিনী ওয়া ইয়াস্‌সিরিল হুদা- লী, ওয়ানছুরনী ‘আলা- মান বাগা- ‘আলাইয়া। রব্বিজ‘আলনী লাকা শাক্কা-রান, লাকা ‌যাক্কা-রান, লাকা রাহ্‌হা-বান, লাকা মিত্বওয়া-‘আন, লাকা মুখবিতান, ইলাইকা আওওয়া-হান মুনীবান। রব্বি তাক্বাব্বাল তাওবাতী ওয়াগসিল হাওবাতী ওয়া আজিব দা‘ওয়াতী ওয়া ছাব্বিত হুজ্জাতী ওয়া সাদ্দিদ লিসা-নী ওয়াহ্‌দি ক্বলবী ওয়াস্‌লুল সাখীমাতা ছদ্‌রী),
অর্থ: ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে সাহায্য করুন; আমার বিরুদ্ধে কাউকে আপনি সাহায্য করবেন না। আপনি আমাকে বিজয়ী করুন; আমার বিরুদ্ধে কাউকে আপনি বিজয়ী করবেন না। আপনি আপনার কৌশল দ্বারা আমাকে সাহায্য করুন; আমার বিরুদ্ধে কাউকে আপনার কৌশল দ্বারা সাহায্য করবেন না। আপনি আমাকে হেদায়াত দান করুন এবং হেদায়াতের পথকে আমার জন্য সহজ করে দিন। আমার প্রতি যে ব্যক্তি অবিচার করে, তার বিরুদ্ধে আপনি আমাকে সহযোগিতা করুন। হে আমার রব! আপনি আমাকে আপনার অধিক কৃতজ্ঞ, অধিক যিক্‌রকারী, অধিক ভীত-সন্ত্রস্ত, অধিক আনুগত্যশীল, অধিক নম্র এবং আপনার দিকে অধিক প্রত্যাবর্তনকারী বান্দায় পরিণত করুন। হে আমার রব! আপনি আমার তওবা ক্ববূল করুন, আমার পাপ ধুয়ে-মুছে ছাফ করে দিন, আমার প্রার্থনা ক্ববূল করুন, আমার প্রমাণাদি দৃঢ় করুন, আমার যবানকে সঠিক বলার তাওফীক্ব দিন, আমার হৃদয়কে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন এবং আমার মনের কালিমা দূর করে দিন’।
• «اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كُلُّهُ، اللهُمَّ لَا قَابِضَ لِمَا بَسَطْتَ، وَلَا بَاسِطَ لِمَا قَبَضْتَ، وَلَا هَادِيَ لِمَا أَضْلَلْتَ، وَلَا مُضِلَّ لِمَنْ هَدَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُقَرِّبَ لِمَا بَاعَدْتَ، وَلَا مُبَاعِدَ لِمَا قَرَّبْتَ، اللهُمَّ ابْسُطْ عَلَيْنَا مِنْ بَرَكَاتِكَ وَرَحْمَتِكَ وَفَضْلِكَ وَرِزْقِكَ، اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ النَّعِيمَ الْمُقِيمَ الَّذِي لَا يَحُولُ وَلَا يَزُولُ، اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ النَّعِيمَ يَوْمَ الْعَيْلَةِ وَالْأَمْنَ يَوْمَ الْخَوْفِ، اللهُمَّ إِنِّي عَائِذٌ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا أَعْطَيْتَنَا وَشَرِّ مَا مَنَعْتَ، اللهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْإِيمَانَ وَزَيِّنْهُ فِي قُلُوبِنَا، وَكَرِّهْ إِلَيْنَا الْكُفْرَ، وَالْفُسُوقَ، وَالْعِصْيَانَ، وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِينَ، اللهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ، وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ غَيْرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِينَ، اللهُمَّ قَاتِلِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ يُكَذِّبُونَ رُسُلَكَ، وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ، وَاجْعَلْ عَلَيْهِمْ رِجْزَكَ وَعَذَابَكَ، اللهُمَّ قَاتِلِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَهَ الْحَقِّ»
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু কুল্লুহূ, আল্লা-হুম্মা লা- ক্ব-বিযা লিমা- বাসাত্ত্বা ওয়ালা- বা-সেত্বা লিমা- ক্ববাযতা, ওয়ালা- হা-দিয়া লিমা- আযলালতা ওয়ালা- মুযিল্লা লিমান হাদায়তা, ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা ওয়ালা- মা-নে‘আ লিমা আ‘ত্বয়তা, ওয়ালা- মুক্বর্রিবা লিমা- বা-‘আদতা ওয়ালা- মুবা-‘ইদা লিমা- ক্বররাবতা, আল্লা-হুম্মাবসুত্ব ‘আলাইনা- মিন বারাকা-তিকা ওয়া রহমাতিকা ওয়া ফাযলিকা ওয়া রিয্‌ক্বিক, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকান না‘ঈমাল মুক্বীমাল্লাযী লা- ইয়াহূলু ওয়ালা- ইয়াযূল, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকান না‘ঈমা ইয়াওমাল ‘আয়লাহ্‌ ওয়াল আমনা ইয়াওমাল খয়ফি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী ‘আ-ইযুন বিকা মিন শাররি মা- আ‘ত্বয়তানা- ওয়া শাররি মা- মানা‘তা, আল্লা-হুম্মা হাব্বিব্‌ ইলাইনাল ঈমা-না ওয়া যাইয়্যিন্‌হু ফী ক্বুলূবিনা-, ওয়া কাররিহ্‌ ইলাইনাল কুফরা ওয়াল ফুসূক্বা ওয়াল ‘ইছ্‌ইয়া-ন, ওয়াজ্‌‘আলনা- মিনার রা-শিদীন, আল্লা-হুম্মা তাওয়াফফানা- মুসলিমীন ওয়া আহ্‌ইনা- মুসলিমীন, ওয়া আল্‌হিক্বনা- বিছ্‌ছ-লেহীন গয়রা খযা-ইয়া ওয়ালা- মাফতূনীন, আল্লা-হুম্মা ক্ব-তিলাল কাফারাতাল্লাযীনা ইউকায্‌যিবূনা রুসুলাক ওয়া ইয়াছুদ্দূনা ‘আন সাবীলিক, ওয়াজ্‌‘আল ‘আলাইহিম রিজ্‌যাকা ওয়া ‘আযা-বাক, আল্লা-হুম্মা ক্ব-তিলাল কাফারাতাল্লাযীনা উতুল কিতা-বা ইলা-হাল হাক্ব),
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা আপনার জন্য। হে আল্লাহ! আপনি যাকে প্রসারিত করেছেন, তার সংকোচনকারী কেউ নেই আর আপনি যাকে সংকোচন করেছেন, তার প্রসারকারী কেউ নেই। আপনি যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার পথপ্রদর্শনকারী কেউ নেই আর আপনি যাকে পথপ্রদর্শন করেছেন, তার পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই। আপনি যাকে মাহরূম করেছেন, তাকে দানকারী কেউ নেই আর আপনি যাকে দান করেছেন, তাকে মাহরূমকারী কেউ নেই। আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে নিকটবর্তীকারী কেউ নেই আর আপনি যাকে নিকটবর্তী করেছেন, তাকে দূরবর্তীকারী কেউ নেই। হে আল্লাহ! আপনার বরকত, রহমত, অনুগ্রহ এবং রিযিক্ব থেকে আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে দান করুন। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এমন স্থায়ী নে‘মত চাচ্ছি, যা পরিবর্তিত হয় না এবং শেষ হয়েও যায় না। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রয়োজনের দিনে আপনার নে‘মত এবং ভয়ের দিনে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন, তার অনিষ্ট থেকে এবং যা দেননি, তার অনিষ্ট থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! ঈমানকে আপনি আমাদের নিকট প্রিয় করে দিন এবং ইহাকে আপনি আমাদের অন্তরের শোভা করে দিন। পক্ষান্তরে কুফরী, ফাসেক্বী এবং নাফরমানীকে আপনি আমাদের নিকটে ঘৃণিত করে দিন; আর আপনি আমাদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন। হে আল্লাহ! মুসলিম অবস্থায় আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন এবং মুসলিম অবস্থায় আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখুন। আর কোনরূপ লাঞ্ছনা-বিভ্রান্তি ছাড়াই আপনি আমাদেরকে নেককারগণের সঙ্গে মিলিত করুন। আপনার রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী এবং আপনার পথ থেকে বাধাদানকারী কাফের সম্প্রদায়কে নিধনকারী হে আল্লাহ! আপনি তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন। কিতাবধারী কাফের সম্প্রদায়কে নিধনকারী হে আল্লাহ! হে সত্য মা‘বূদ!’।

মুযদালিফায় রাত্রি যাপন
১. আরাফার দিন সূর্যাস্তের পর হাজীরা পরস্পর পরস্পরকে কষ্ট না দিয়ে শান্তশিষ্টভাবে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হবে। মুযদালিফায় পৌঁছে সেখানে অবস্থান গ্রহণ করবে। হাজীদেরকে মুযদালিফা সীমানায় পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। কেননা সকাল পর্যন্ত মুযদালিফার বাইরে কাটালে সেটি হবে চরম অবহেলার পরিচায়ক। আজকাল মুযদালিফার সীমানা নির্দেশক সাইনবোর্ড এবং সেখানকার উচ্চ শক্তি সম্পন্ন লাইট দেখে খুব সহজেই এই এলাকা চেনা যায়।
২. মুযদালিফায় হাজীরা মাগরিবের সময় পৌঁছাক বা এশার সময় পৌঁছাক সেখানে অবস্থান গ্রহণের পর তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, এক আযান ও দুই এক্বামতে মাগরিব এবং এশার ছালাত জমা-ক্বছর করে আদায় করা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করেছেন।
মুযদালিফায় পৌঁছে অনেক হাজীকে কংকর সংগ্রহে ব্যস্ত হতে দেখা যায়, যেটি ভুল। কেননা মুযদালিফা থেকে মিনাতে রওয়ানা হওয়ার আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কংকর কুড়ানো হয় নি।
৩. হাজীরা মুযদালিফাতে সকাল পর্যন্ত অবস্থান করবে, যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। অতএব, কেউ যদি মধ্যরাতের আগে মুযদালিফা ত্যাগ করে, তাহলে তাকে দম (دم) দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মধ্যরাতের পূর্বে ত্বওয়াফে ইফাদ্বা যেমন জায়েয নয়, তেমনি কংকর নিক্ষেপও জায়েয নয়। মুযদালিফার রাত্রির জন্য ছালাত বা অন্য কোনো ইবাদত নির্দিষ্ট নেই। তবে বছরের অন্য রাত্রিতে একজন মুসলিম যেমন বিতর ছালাত আদায় করে থাকে, এ রাতেও সে তা আদায় করতে পারে।
৪. ফজর উদয় হওয়ার পর প্রথম ওয়াক্তে ফজরের ছালাত আদায় করবে। অতঃপর সকাল খুব পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত যিক্‌র-আযকার এবং দো‘আয় মশগূল থাকবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন। আর মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِۖ وَٱذۡكُرُوهُ كَمَا هَدَىٰكُمۡ وَإِن كُنتُم مِّن قَبۡلِهِۦ لَمِنَ ٱلضَّآلِّينَ ١٩٨ ﴾ [البقرة: ١٩٨]
‘অতঃপর যখন ত্বওয়াফের জন্য আরাফাত থেকে ফিরে আসবে, তখন মাশ‘আরে হারামের নিকটে আল্লাহ্‌র যিক্‌র কর। আর তাঁর যিক্‌র কর তেমনি করে, যেমন তোমাদেরকে তিনি হেদায়াত করেছেন। যদিও ইতোপূর্বে তোমরা ছিলে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত’ (বাক্বারাহ ১৯৮)। এখানে ‘মাশ‘আরে হারাম’ বলতে মুযদালিফাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা এটি হারাম এলাকার মধ্যে অবস্থিত। আর আরাফা হচ্ছে ‘মাশ‘আরে হালাল’। কেননা এটি হারাম এলাকার বাইরে অবস্থিত।
৫. দুর্বল নারী, শিশু এবং এজাতীয় হাজীরা শেষ রাতে মুযদালিফা থেকে মিনায় যেতে পারে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন (বুখারী, হা/১৬৭৬; মুসলিম, হা/৩১৩০, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হতে বর্ণিত। বুখারী, হা/১৬৭৮; মুসলিম, হা/৩১২৭, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হতে বর্ণিত। বুখারী, হা/১৬৭৯; মুসলিম, হা/৩১২২, আসমা বিনতে আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) হতে বর্ণিত। বুখারী, হা/১৬৮১; মুসলিম, হা/৩১১৮)।


কুরবানীর দিনের কাজসমূহ
১. কুরবানীর দিন চারটি কাজ, যথাঃ ক. জামরাতুল আক্বাবায় কংকর নিক্ষেপ করা, খ. হাদঈ যবাই বা নাহর করা, গ. মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছেটে ফেলা এবং ঘ. ত্বওয়াফে ইফাদ্বা করা এবং যে ব্যক্তি সা‘ঈ করে নি, তার জন্য এই ত্বওয়াফের পর সা‘ঈ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই কাজগুলি করেছেন। কেননা তিনি প্রথমে কংকর নিক্ষেপ করেছেন, অতঃপর হাদঈ নহর/যবেহ করেছেন, অতঃপর মাথা মুণ্ডন করেছেন, অতঃপর ত্বওয়াফ করেছেন। আরবী ভাষায় এই চারটি কাজের প্রত্যেকটির প্রথম অক্ষরের সমন্বয়ে ‘রানহাত’ (رنحط) শব্দটি গঠন করা হয়েছে। শব্দটি মনে রাখলেই হাজীদের জন্য উক্ত চারটি কাজের ধারাবাহিকতা রপ্ত করা সহজ হবে। ر =رمي (কংকর নিক্ষেপ), ن = نحر (হাদঈ নাহর/যবেহ করা, ح= حلق (মাথা মুণ্ডন করা), ط= طواف (ত্বওয়াফ করা)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মত এই দিনের কাজগুলিকে উক্ত ধারাবাহিকতা অনুযায়ী করাই উত্তম।
২. কতিপয় ছাহাবী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্ত ধারাবাহিকতা বজায় না রেখে কাজগুলি করে ফেললে তাঁরা এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন; রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বলেন, কোন সমস্যা নেই। তাঁদের জিজ্ঞাসিত বিষয়গুলি ছিল নিম্নরূপঃ কুরবানীর আগে মাথা মুণ্ডন, কংকর নিক্ষেপের আগে কুরবানী, কংকর নিক্ষেপের আগে মাথা মুণ্ডন, কংকর নিক্ষেপের আগে ত্বওয়াফে ইফাদ্বা, বিকালে কংকর নিক্ষেপ; কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে চাশতের সময় কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। অনুরূপভাবে (তাদের আরও জিজ্ঞাসিত বিষয় ছিল) ত্বওয়াফের আগে সা‘ঈ; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্বওয়াফে ক্বুদূমের পরে সা‘ঈ করেছিলেন। তাছাড়া যেসব ছাহাবী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর উপর সা‘ঈ ছিল, তাঁরা ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে তা আদায় করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - وَقَفَ فِى حَجَّةِ الْوَدَاعِ، فَجَعَلُوا يَسْأَلُونَهُ، فَقَالَ رَجُلٌ: لَمْ أَشْعُرْ فَحَلَقْتُ قَبْلَ أَنْ أَذْبَحَ؟ قَالَ: «اذْبَحْ وَلاَ حَرَجَ». فَجَاءَ آخَرُ فَقَالَ: لَمْ أَشْعُرْ فَنَحَرْتُ قَبْلَ أَنْ أَرْمِىَ؟ قَالَ: «ارْمِ وَلاَ حَرَجَ». فَمَا سُئِلَ يَوْمَئِذٍ عَنْ شَىْءٍ قُدِّمَ وَلاَ أُخِّرَ إِلاَّ قَالَ: افْعَلْ وَلاَ حَرَجَ»
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের দিন দাঁড়ালে ছাহাবায়ে কেরাম তাঁকে প্রশ্ন করতে লাগলেন; একজন বললেন, আমি না বুঝেই হাদঈ যবাই করার আগে মাথা মুণ্ডন করে ফেলেছি? তিনি বললেন, কোন সমস্যা নেই, এখন হাদঈ প্রদান কর। আরেকজন এসে বললেন, আমি না বুঝে কংকর নিক্ষেপের আগেই হাদঈ যবাই করে ফেলেছি? তিনি বললেন, কোন সমস্যা নেই, এখন কংকর নিক্ষেপ কর। সেদিন আগে-পিছে ঘটে যাওয়া আমল সংক্রান্ত প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাবেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, কোনো সমস্যা নেই, এখন কর’ (বুখারী, হা/১৭৩৬; মুসলিম, হা/৩১৫৬)। ছহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘নাহরের দিন (১০ ই যিল-হজ্জ) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় দণ্ডায়মান থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি কংকর নিক্ষেপের আগেই মাথা মুণ্ডন করে ফেলেছি? তিনি বলেন, কোনো সমস্যা নেই, এখন কংকর নিক্ষেপ কর। আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, আমি কংকর নিক্ষেপের আগে হাদঈ যবাই করে ফেলেছি? তিনি বলেন, কোনো সমস্যা নেই, এখন কংকর নিক্ষেপ কর। আরেকজন এসে বললেন, কংকর নিক্ষেপের আগেই ত্বওয়াফে ইফাদ্বা করে ফেলেছি? তিনি বললেন, কোনো সমস্যা নেই, এখন কংকর নিক্ষেপ কর। আমি সেদিন তাঁকে প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাবে বলতে শুনেছি, কোনো সমস্যা নেই, এখন কর’ (হা/৩১৬৩)। ইমাম বুখারী (রহেমাহুল্লাহ) একই ধরনের হাদীছ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণনা করেছেন (হা/১৭২২)। তিনি ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে আরো বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘নাহরের দিন (১০ই যিল-হজ্জ) মিনাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল আর তিনি বলছিলেন, কোনো সমস্যা নেই। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হাদঈ প্রদান করার আগেই আমি মাথা মুণ্ডন করে ফেলেছি? তিনি বললেন, কোনো সমস্যা নেই, এখন হাদঈ প্রদান কর। লোকটি বললেন, দুপুরের পরে কংকর নিক্ষেপ করেছি? তিনি বললেন, সমস্যা নেই’ (হা/১৭৩৫)। উসামা ইবনে শারীক (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন,
«خَرَجْتُ مَعَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- حَاجًّا فَكَانَ النَّاسُ يَأْتُونَهُ، فَمَنْ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ سَعَيْتُ قَبْلَ أَنْ أَطُوفَ؟ أَوْ قَدَّمْتُ شَيْئًا أَوْ أَخَّرْتُ شَيْئًا؟ فَكَانَ يَقُولُ: لاَ حَرَجَ، لاَ حَرَجَ إِلاَّ عَلَى رَجُلٍ اقْتَرَضَ عِرْضَ رَجُلٍ مُسْلِمٍ وَهُوَ ظَالِمٌ، فَذَلِكَ الَّذِى حَرِجَ وَهَلَكَ»
‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ করতে গেলাম। লোকজন তাঁর কাছে আসছিলেন; যারা জিজ্ঞেস করছিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ত্বওয়াফের আগে সা‘ঈ করে ফেলেছি? অথবা অমুক কাজটি আগে বা পরে করে ফেলেছি?, তাঁদের জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলছিলেন, কোনো সমস্যা নেই, কোনো সমস্যা নেই। তবে যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের সম্মানে আঘাত হানে, তার জন্য সমস্যা রয়েছে এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো’ (আবূ দাঊদ, হা/২০১৫, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটির সনদ ‘ছহীহ’)।
৩. উক্ত চারটি কাজের মধ্যে তিনটির মাধ্যমে হালাল হওয়া যায়। সেগুলি হচ্ছে, কংকর নিক্ষেপ, মাথা মুণ্ডন এবং ত্বওয়াফ। কেননা এই তিনটি কাজ তামাত্তু, ক্বিরান এবং ইফরাদ তিন প্রকার হজ পালনকারীদেরকেই করতে হয়। অতএব, ‘হালাল হওয়ার সাথে হাদঈ প্রদান করার কোনরূপ সম্পর্ক নেই’ (وَأَمّا النَّحْرُ فَلاَ عَلاَقَةَ لَهُ بِالتَّحَلُّلِ)। কেননা হাদঈ প্রদান করা শুধুমাত্র ক্বিরান ও তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদেরকে করতে হয়, ইফরাদ হজ্জ পালনকারীদেরকে করতে হয় না।
যে ব্যক্তি উক্ত তিনটি কাজ করে ফেলবে, সে পরিপূর্ণভাবে হালাল হয়ে যাবে। তার জন্য স্ত্রী সহবাসসহ সবকিছু হালাল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তিনটির মধ্যে দু’টি করবে, সে প্রাথমিক হালাল হবে। স্ত্রী সহবাস ব্যতীত সবকিছু তার জন্য হালাল হয়ে যাবে। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন,
«كُنْتُ أُطَيِّبُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لإِحْرَامِهِ قَبْلَ أَنْ يُحْرِمَ وَلِحِلِّهِ قَبْلَ أَنْ يَطُوفَ بِالْبَيْتِ»
‘ইহরাম বাঁধার সময় ইহরামের উদ্দেশ্যে এবং ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার উদ্দেশ্যে ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পূর্বে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গায়ে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম’ (বুখারী, হা/১৫৩৯; মুসলিম, হা/২৮৪১)। উল্লেখ্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ত্বওয়াফ ছিল কংকর নিক্ষেপ এবং মাথা মুণ্ডনের পরে। তিনটি কাজের যে কোন দু’টি করলে প্রাথমিক হালাল হবে একারণে বলা হয়েছে যে, সেগুলি আগ-পাছ করে সম্পাদন করা জায়েয।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল খুব পরিষ্কার হলে সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে মুযদালিফা ত্যাগ করেন। পথিমধ্যে ফাদ্বল ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সাতটি কংকর কুড়িয়ে দেন, সকালে যেগুলি তিনি জামরাতুল আক্বাবায় নিক্ষেপ করেন। নাহরের দিন (১০ই যিলহজ্জ) সারা দিন জামরাতুল আক্বাবায় কংকর নিক্ষেপ করা যায়। তবে সূর্যোদয়ের পরে নিক্ষেপ করা উত্তম। পূর্বে বর্ণিত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর হাদীছে আমরা দেখেছি, যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি দুপুরের পরে কংকর নিক্ষেপ করেছি?, জবাবে তিনি বলেছিলেন, কোনো সমস্যা নেই। ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ফজর উদয় হওয়ার পরে এবং সুর্যোদয়ের আগে কংকর নিক্ষেপ করলে তা আদায় হয়ে যাবে’ (আল-ইজমা/৬৫)।
কেউ যদি সূর্যাস্তের পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করতে সক্ষম না হয়, তাহলে সে সূর্যাস্তের পরে নিক্ষেপ করতে পারবে। নাফে (রহেমাহুল্লাহ) বলেন,
«أَنَّ ابْنَةَ أَخٍ لِصَفِيَّةَ بِنْتِ أَبِي عُبَيْدٍ نُفِسَتْ بِالْمُزْدَلِفَةِ، فَتَخَلَّفَتْ هِيَ وَصَفِيَّةُ حَتَّى أَتَتَا مِنًى بَعْدَ أَنْ غَرَبَتِ الشَّمْسُ مِنْ يَوْمِ النَّحْرِ، فَأَمَرَهُمَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ أَنْ تَرْمِيَا الْجَمْرَةَ حِينَ أَتَتَا وَلَمْ يَرَ عَلَيْهِمَا شَيْئًا»
‘ছফিইয়া বিনতে আবূ উবাইদের ভাতিজি মুযদালিফায় প্রসূতি অবস্থায় পতিত হলে তিনি এবং ছফিইয়া বিলম্ব করে সূর্যাস্তের পরে মিনায় আসেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ঐসময় তাঁদেরকে কংকর নিক্ষেপ করতে বলেন, কিন্তু তাঁদের উপর কোনো কিছু বর্তায় বলে তিনি মনে করেন নি’ (মুওয়াত্ত্বা, ১/৪০৯)।
যাদেরকে শেষ রাতে মুযদালিফা ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তারা মিনায় পৌঁছেই জামরাতুল আক্বাবায় কংকর নিক্ষেপ করতে পারে। আসমা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর মুক্ত দাস আব্দুল্লাহ বলেন, «فَارْتَحَلْنَا، وَمَضَيْنَا حَتَّى رَمَتِ الْجَمْرَةَ، ثُمَّ رَجَعَتْ فَصَلَّتِ الصُّبْحَ فِى مَنْزِلِهَا» ‘আমরা (মুযদালিফা থেকে) রওয়ানা করলাম, অতঃপর আমরা (মিনায়) পৌঁছলে তিনি (আসমা) জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি তাঁর অবস্থান স্থলে ফজরের ছালাত আদায় করলেন’ (বুখারী, হা/১৬৭৯; মুসলিম, হা/৩১২২)। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন,
«وَدِدْتُ أَنِّى كُنْتُ اسْتَأْذَنْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَمَا اسْتَأْذَنَتْهُ سَوْدَةُ فَأُصَلِّى الصُّبْحَ بِمِنًى فَأَرْمِى الْجَمْرَةَ قَبْلَ أَنْ يَأْتِىَ النَّاسُ»
‘সাউদার মত আমিও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মিনায় যেয়ে ফজরের ছালাত আদায় করতঃ লোকজনের মিনায় আসার আগেই জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করে নেওয়ার আকাঙ্খা করেছিলাম’ (মুসলিম, হা/৩১২০)।
৫. হাদঈর পশু উট হলে নাহরের দিনে (১০ই যিল-হজ্জ) এবং তাশরীক্বের তিন দিনে রাত বা দিনের বেলায় যে কোনো সময় তাকে নহর করতে হবে , আর গরু বা ছাগল হলে যবেহ করতে হবে। তামাত্তু, ক্বিরান বা মানতের কারণে পশু যবেহ করা ওয়াজিব হোক কিংবা এমনিতেই নফল হোক একই বিধান প্রযোজ্য হবে।
স্বাভাবিক কুরবানীর পশু যেমন কমপক্ষে একটি ছাগল অথবা উট বা গরুর সাত ভাগের এক ভাগ হতে হবে, হজ্জের হাদঈর ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়ম বলবৎ থাকবে। মেষ বা ভেড়া হলে ৬ মাস বয়স পূর্ণকারীকে কুরবানী করা যাবে। ছাগলের অন্য জাতের পশু হলে কমপক্ষে এক বছর বয়স পূর্ণকারীকে কুরবানী করতে হবে। গরুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হতে হবে। আর উটের বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে।
যবেহ মিনা এবং মক্কায় সম্পন্ন হতে হবে। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مِنًى كُلُّهَا مَنْحَرٌ، وَكُلُّ فِجَاجِ مَكَّةَ طَرِيقٌ وَمَنْحَرٌ»
‘মিনার সম্পূর্ণ এলাকা কুরবানীর স্থান। অনুরূপভাবে মক্কার প্রত্যেকটি এলাকা চলার পথ এবং কুরবানীর স্থান’ (ইবনে মাজাহ, হা/৩০৪৮, সনদ ‘ছহীহ’)।
ক্বিরান বা তামাত্তু হজ্জ পালনকারী হাদঈ দিতে না পারলে হজ্জে তিনটি ছওম পালন করবে এবং বাড়ী ফিরে সাতটি ছওম পালন করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِۖ وَٱذۡكُرُوهُ كَمَا هَدَىٰكُمۡ وَإِن كُنتُم مِّن قَبۡلِهِۦ لَمِنَ ٱلضَّآلِّينَ ١٩٨ ﴾ [البقرة: ١٩٨]
‘বস্তুতঃ যারা কুরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জের দিনগুলির মধ্যে তিনটি ছওম পালন করবে আর সাতটি ছওম পালন করবে ফিরে যাবার পর’ (বাক্বারাহ ১৯৬)। হজ্জের দিনগুলির তিনটি ছওম এবং বাড়ীতে এসে সাতটি ছওম যেমন ধারাবাহিকভাবে আদায় করা যায়, তেমনি বিচ্ছিন্নভাবেও আদায় করা যায়। হজ্জের দিনগুলির তিনটি ছওম আরাফার দিবসের পূর্বে হজ্জের নিকটতম সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করা উত্তম। যে ব্যক্তি এই তিনটি ছওমের সবগুলি অথবা এক বা একাধিক হজ্জের পূর্বে পালন করবে না, সে তাশরীক্বের দিনগুলিতে সেগুলি পালন করবে। ইবনে ওমর ও আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«لَمْ يُرَخَّصْ فِي أَيَّامِ التَّشْرِيقِ أَنْ يُصَمْنَ إِلَّا لِمَنْ لَمْ يَجِدِ الْهَدْيَ»
‘যে ব্যক্তি হাদঈ দিতে সক্ষম হবে না, সে ছাড়া অন্য কারো জন্য তাশরীক্বের দিনগুলিতে ছওম পালনের অনুমতি দেওয়া হয় নি’ (বুখারী, হা/১৯৯৭)।
হাদঈদাতার জন্য হাদঈর পশুর গোশত খাওয়া এবং ছাদাক্বা করা উত্তম। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ ٢٨ ﴾ [الحج: ٢٨]
‘অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্তকে খাওয়াও’ (হজ্জ ২৮)। হাদঈদাতা তার হাদঈর গোশত থেকে কাউকে হাদিয়া দিতে পারে; এমনকি হাদিয়া গ্রহণকারী ধনী হলেও কোনো সমস্যা নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদঈর গোশত থেকে খেয়েছেন এবং ঝোল পান করেছেন। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন,
«ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ ثَلاَثًا وَسِتِّينَ بِيَدِهِ ثُمَّ أَعْطَى عَلِيًّا فَنَحَرَ مَا غَبَرَ وَأَشْرَكَهُ فِى هَدْيِهِ ثُمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِى قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلاَ مِنْ لَحْمِهَا وَشَرِبَا مِنْ مَرَقِهَا»
‘অতঃপর তিনি কুরবানীর স্থানে এসে নিজ হাতে ৬৩টি (উট) নাহর করেন আর আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বাক্বীগুলি নাহর করার দায়িত্ব দেন এবং তাঁকে তাঁর হাদঈতে শরীক করে নেন। অতঃপর প্রত্যেকটি উট থেকে এক টুকরা করে গোশত পাতিলে একত্রিত করে রান্না করতে বলেন। অতঃপর তাঁরা উভয়েই উক্ত গোশত থেকে খান এবং ঝোল পান করেন’ (মুসলিম, হা/২৯৫০)।
অবশ্য হাদঈর গোশত খাওয়া হাদঈদাতার জন্য যরূরী নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নাহরকৃত ১০০টি হাদঈ উটের প্রত্যেকটির গোশত খান নি। তাছাড়া তিনি মদীনা থেকে মক্কায় হাদঈর পশু পাঠাতেন, ঐ পশুর গোশত মক্কায় বণ্টন করে দেওয়া হত; তাত্থেকে তিনি মোটেও খেতেন না। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يُهْدِى مِنَ الْمَدِينَةِ فَأَفْتِلُ قَلاَئِدَ هَدْيِهِ ثُمَّ لاَ يَجْتَنِبُ شَيْئًا مِمَّا يَجْتَنِبُ الْمُحْرِمُ»
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে কুরবানীর পশু পাঠাতেন; আমি উহার গলায় ফিতা পরিয়ে দিতাম। কিন্তু মুহরিম ব্যক্তি যেসব বিষয় থেকে বিরত থাকে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব বিষয় থেকে বিরত থাকতেন না ’ (বুখারী, হা/১৬৯৮; মুসলিম, হা/৩১৯৪)।
৬. কুরবানীর দিনের তৃতীয় কাজ হচ্ছে, মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছেটে ফেলা। ওমরার কাজসমূহ সম্পর্কে আলোচনার শেষের দিকে এ বিষয়ে আলোচনা গত হয়ে গেছে।
৭. কুরবানীর দিনের চতুর্থ কাজ হচ্ছে, ত্বওয়াফে ইফাদ্বা করা। এই ত্বওয়াফ হজ্জের রুকনসমূহের মধ্যে অন্যতম; এটি ব্যতীত হজ্জ পূর্ণ হবে না। হজ্জের রুকনসমূহ সম্পর্কে আলোচনার সময় এটি রুকন হওয়ার দলীল আলোচনা করা হয়েছে। ত্বওয়াফে ইফাদ্বা তাশরীক্বের দিনগুলিতে বা তার পরেও সম্পাদন করা যায়। ক্বিরান বা ইফরাদ হজ্জ পালনকারী যদি ত্বওয়াফে ক্বুদূমের পরে সা‘ঈ না করে থাকে অথবা আরাফায় অবস্থানের পরে ছাড়া যদি মক্কায় না এসে থাকে, তাহলে ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে সা‘ঈ করে নিবে। কেননা ক্বিরান ও ইফরাদ হজ্জ পালনকারীকে একটি সা‘ঈ করতে হয় আর এই সা‘ঈ দুই সময়ে করা যায়: ১. ত্বওয়াফে ক্বুদূমের পরে, ২. ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে। অতএব, যে ব্যক্তি প্রথম সময়ে তা সম্পাদন করে না, তাকে দ্বিতীয় সময়ে তা সম্পাদন করতে হয়।
পক্ষান্তরে তামাত্তু হজ্জ পালনকারীর জন্য ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে সা‘ঈ করা আবশ্যক। কেননা তার উপরে দু’টি ত্বওয়াফ এবং দু’টি সা‘ঈ ওয়াজিব। একটি ত্বওয়াফ এবং একটি সা‘ঈ ওমরার জন্য আর অপর সা‘ঈ এবং ত্বওয়াফটি হজ্জের জন্য। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে তামাত্তু হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বিদায় হজ্জে মুহাজির, আনছার ও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ ইহরাম বাঁধলেন এবং আমরাও ইহরাম বাঁধলাম। অতঃপর আমরা মক্কায় পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«اجْعَلُوا إِهْلَالَكُمْ بِالْحَجِّ عُمْرَةً إِلَّا مَنْ قَلَّدَ الْهَدْي»
‘যারা হাদঈর পশুর গলায় ফিতা পরিয়েছে, তারা ব্যতীত তোমরা সবাই তোমাদের হজ্জের ইহরামকে ওমরায় পরিণত কর’। আমরা বায়তুল্লাহ্‌র ত্বওয়াফ করলাম এবং ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করলাম। অতঃপর আমাদের স্ত্রীদের কাছে এসে সাধারণ পোষাক পরলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন,
«مَنْ قَلَّدَ الْهَدْىَ فَإِنَّهُ لاَ يَحِلُّ لَهُ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْىُ مَحِلَّهُ»
‘যারা হাদঈর পশুর গলায় ফিতা পরিয়েছে, তারা ঐ পশু তার যথাস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত হালাল হবে না’ । অতঃপর তারবিয়ার দিন সকালে তিনি আমাদেরকে হজ্জের ইহরাম বাঁধতে বললেন। অতঃপর হজ্জের কার্যাবলী সম্পন্ন করে আমরা ত্বওয়াফ এবং সা‘ঈ করতে আসলাম (বুখারী, হা/১৫৭২, ইমাম বুখারী হাদীছটি ‘মু‘আল্লাক্ব’ভাবে, তবে শক্তিশালী শব্দে (صيغة الجزم) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আবূ কামেল ফুযাইল ইবনে হুসাইন বাছরী বলেন...’)। তবে ইমাম বায়হাক্বী হাদীছটি ছহীহ সনদে এবং ‘মাউছূল’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন (সুনান, ৫/২৩)। ছহীহ বুখারী (হা/১৫৫৬) এবং ছহীহ মুসলিম (হা/২৯১০)-এ আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর সূত্রেও হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। মুসলিমের শব্দগুলি এরূপঃ
«فَطَافَ الَّذِينَ أَهَلُّوا بِالْعُمْرَةِ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ حَلُّوا ثُمَّ طَافُوا طَوَافًا آخَرَ بَعْدَ أَنْ رَجَعُوا مِنْ مِنًى لِحَجِّهِمْ وَأَمَّا الَّذِينَ كَانُوا جَمَعُوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَإِنَّمَا طَافُوا طَوَافًا وَاحِدًا»
‘যারা ওমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, তারা ত্বওয়াফ এবং সা‘ঈ করে হালাল হয়ে গেলেন। অতঃপর মিনা থেকে ফিরে হজ্জের জন্য তারা আরেকটি ত্বওয়াফ করলেন। কিন্তু যারা ক্বিরান হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন, তারা একটিমাত্র সা‘ঈ করলেন’। হাদীছে তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের জন্য নির্দিষ্ট ‘হজ্জের আরেকটি ত্বওয়াফ’ বলতে সা‘ঈ বুঝানো হয়েছে। কেননা ত্বওয়াফে ইফাদ্বা সর্বপ্রকার হাজীদের জন্যই রুকন, আর তা তাঁরা ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন। তবে জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত নীচের হাদীছ এবং ইবনে আব্বাস ও আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর হাদীছের মধ্যে বাহ্যতঃ বৈপরীত্য মনে হতে পারে। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ছাহাবীগণ ছাফা-মারওয়ায় একবারের বেশী সা‘ঈ করেন নি’ (মুসলিম, হা/২৯৪২)। সমাধান হচ্ছে, জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছে ঐসকল ছাহাবী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর কথা বুঝানো হয়েছে, যাঁরা সঙ্গে করে কুরবানীর পশু এনেছিলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কুরবানীর দিন ছাড়া হালাল হতে পারেন নি। কেননা তাঁরা ত্বওয়াফে ক্বুদূমের পরে একটিমাত্র সা‘ঈই করেছিলেন। কিন্তু তামাত্তু হজ্জ পালনকারী ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) দু’টি সা‘ঈ করেছিলেন: একটি ওমরার জন্য এবং অপরটি হজ্জের জন্য। বাহ্যতঃ বিপরীত হাদীছদ্বয়ের সমাধানে আরো বলা যায়, ইবনে আব্বাস এবং আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর হাদীছ তামাত্তু হজ্জ পালনকারী ছাহাবীগণের জন্য আরেকটি সা‘ঈ সাব্যস্ত করে; পক্ষান্তরে জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছ তা সাব্যস্ত করে না। আর নিয়ম হচ্ছে, কোনো কিছু সাব্যস্তকারী বক্তব্য তার বিপরীতমুখী না-সূচক বক্তব্যের উপর প্রাধান্য পাবে। আমাদের শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রহেমাহুল্লাহ) তাঁর হজ্জের বইয়ে বিষয়টি খুব স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।

তাশরীক্বের দিনগুলিতে মিনায় রাত্রি যাপন
১. সকল হাজী ১১ এবং ১২ তারিখ রাতে মিনায় রাত্রি যাপন করবে। যে ব্যক্তি তাড়াহুড়া করে চলে আসতে চায়, সে ১২ তারিখ অপরাহ্নে কংকর নিক্ষেপের পর সূর্যাস্তের আগেই মিনা ত্যাগ করবে। পক্ষান্তরে যে বিলম্ব করতে চায়, সে ১৩ তারিখ রাতেও মিনায় রাত্রিযাপন করবে এবং ১৩ তারিখ অপরাহ্নে কংকর নিক্ষেপের পর মিনা ত্যাগ করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوۡمَيۡنِ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِۖ لِمَنِ ٱتَّقَىٰۗ﴾ [البقرة: ٢٠٣]
‘আর তোমরা নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে আল্লাহ্‌র যিক্‌র কর। অতঃপর যে ব্যক্তি প্রথম দুই দিনে তাড়াহুড়া করে চলে যাবে, তার জন্য কোন পাপ নেই। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাড়াহুড়া না করে থেকে যাবে, তাঁর উপর কোনো পাপ নেই। অবশ্য যারা ভয় করে’ (বাক্বারাহ ২০৩)। মিনায় যে দু’দিনের কাজ শেষ করতঃ তাড়াহুড়া করে মিনা ত্যাগ করা যায়, সে দু’দিন হচ্ছে, ১১ এবং ১২ তারিখ; নাহরের দিনটি ঐ দু’দিনের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা হাদঈ/কুরবানী যবেহ/নাহর করার দিন হচ্ছে চারটিঃ ১. কুরবানীর দিন, ২. ১১ তারিখ, ইহাকে ‘ইয়াওমুল ক্বার্র’ (يوم القرّ) বা ‘অবস্থান গ্রহণ বা শান্ত হওয়ার দিন’ বলা হয়। কেননা এই দিনে সবাই মিনাতে অবস্থান গ্রহণ করে থাকে। ৩. ১২ তারিখ, ইহাকে ‘ইয়াওমুন নাফারিল আওওয়াল’ (يوم النفر الأول) বা ‘প্রথম মিনা ত্যাগের দিন’ বলা হয়। ৪. ১৩ তারিখ, যাকে ‘ইয়াওমুন নাফারিছ ছানী’ (يوم النفر الثاني) বা ‘দ্বিতীয় মিনা ত্যাগের দিন’ বলা হয়।
২. রাতের শুরুর দিক থেকে হোক বা শেষের দিক থেকে হোক, হাজী জেগে থাকুক বা ঘুমিয়ে থাকুক রাতের বেশীর ভাগ সময় মিনায় কাটালেই সেটাকে মিনায় রাত্রিযাপন ধরা হবে।
রাতের অর্ধেকের বেশী সময় মিনায় অবস্থানের মাধ্যমে রাতের বেশীর ভাগ সময় মিনায় কাটানো সম্পন্ন হবে। নিয়ম হচ্ছে, মাগরিব থেকে ফজর পর্যন্ত সময়কে দুইভাগে ভাগ করতে হবে। হাজীরা প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগের কিছু অংশ অথবা দ্বিতীয় ভাগ এবং প্রথম ভাগের কিছু অংশ মিনায় কাটাবে। অতএব, কোন হাজী ত্বওয়াফ বা অন্য কোন কাজে মক্কায় যেতে চাইলে অর্ধরাত্রি অতিবাহিত হওয়ার পরে যাবে। অর্ধরাতে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলে মিনায় রাত্রিযাপন ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
৩. ১২ তারিখে তাড়াহুড়ো করে মিনা থেকে চলে আসার চাইতে ১৩ তারিখ পর্যন্ত বিলম্ব করাই উত্তম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাড়াহুড়া না করে বিলম্বই করেছেন। এছাড়া বিলম্ব করলে কিছু অতিরিক্ত আমল করা যাবে এবং এর মাধ্যমে হাজী বেশী নেকী প্রাপ্ত হবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত আমল হচ্ছে, ১৩ তারিখে মিনায় রাত্রিযাপন এবং ঐদিন অপরাহ্নে কংকর নিক্ষেপ। বিলম্ব করার আরেকটি উপকারিতা হচ্ছে, ১২ তারিখের ভীড় থেকে হাজী নিরাপদে থাকতে পারবে।
৪. মিনায় দুই বা তিন রাত যাপন করা হজ্জের অন্যতম ওয়াজিব কাজ। এবিষয়ে প্রমাণাদি গত হয়ে গেছে।
৫. ১২ তারিখে কারো মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে গেলে তাকে মিনাতেই রাত কাটাতে হবে এবং ১৩ তারিখ অপরাহ্নে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। তবে মিনা থেকে রওয়ানা করা অবস্থায় অথবা রওয়ানা হওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকায় সূর্য ডুবে গেলে এই রাত্রিযাপন এবং কংকর নিক্ষেপ যরূরী হবে না। বরং সে মিনা ত্যাগ করতে পারবে। নাফে বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলতেন,
«مَنْ غَرَبَتْ لَهُ الشَّمْسُ مِنْ أَوْسَطِ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ وَهُوَ بِمِنًى فَلاَ يَنْفِرَنَّ حَتَّى يَرْمِىَ الْجِمَارَ مِنَ الْغَدِ»
‘তাশরীক্বের দিনগুলির মধ্যবর্তী দিনে কারো মিনায় থাকা অবস্থায় যদি সূর্য ডুবে যায়, তাহলে সে পরের দিন কংকর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত মিনা ত্যাগ করবে না’ (মালেক, মুওয়াত্ত্বা, ১/৪০৭)।

তাশরীক্বের দিনগুলিতে কংকর নিক্ষেপ
১. কুরবানীর দিন পূর্বাহ্নে শুধুমাত্র জামরাতুল আক্বাবায় এবং তাশরীক্বের দিনগুলিতে অপরাহ্নে সবগুলি জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা হজ্জের ওয়াজিব আমলসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এবিষয়ে প্রমাণাদি গত হয়ে গেছে।
২. জামরাতসমূহে নিক্ষেপের কংকর কুড়ানোর নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। সেজন্য মুযদালিফা, মিনা বা মক্কা থেকে তা কুড়ানো যাবে। তাড়াহুড়া করে মিনা ত্যাগকারীদের জন্য ৪৯টি এবং বিলম্বকারীদের জন্য ৭০টি কংকর প্রয়োজন হয়। হাজী নিজে যেমন নিজের কংকর কুড়াতে পারে, তেমনি তার জন্য অন্য কেউও কুড়িয়ে দিতে পারে। অনুরূপভাবে কেউ কংকর বিক্রি করলে তা কিনে নেওয়াও জায়েয রয়েছে। হাজী ছাহেব সবগুলি কংকর যেমন একদিনে কুড়াতে পারে, তেমনি প্রত্যেক দিনের কংকর প্রত্যেক দিনেও কুড়াতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফা থেকে জামরাতুল আক্বাবায় আসার পথে তাঁর জন্য মিনা থেকে ৭টি কংকর সংগ্রহ করা হয়েছিল। ফাদ্বল ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনার মুহাস্‌সার এলাকায় প্রবেশ করে বলেন, তোমরা জামরাতুল আক্বাবায় নিক্ষেপের কংকর সংগ্রহ কর’ (মুসলিম, হা/৩০৮৯)। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, আমাকে ফাদ্বল ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বর্ণনা করেন, ‘নাহরের দিন (১০ই যিল-হজ্জ) সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন, আমার জন্য কংকর কুড়াও। অতঃপর আমি ছোলার দানার চেয়ে একটু বড় সাইজের কংকর কুড়িয়ে তাঁর হাতে দেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা এ জাতীয় কংকর সংগ্রহ কর। এক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে’ (বায়হাক্বী, সুনান, ৫/১২৭, সনদ ‘হাসান’)। সুনানে ইবনে মাজাহ (হা/৩০২৯)-তে ছহীহ সনদে ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। সেখানে সংগৃহীত কংকরের সংখ্যা ৭টি বলা হয়েছে। তবে এই হাদীছটি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর ‘মুরসাল’ হাদীছসমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা ফাদ্বল ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কংকর কুড়িয়েছিলেন এবং জামরাতে আসার পথে তিনিই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে আরোহী ছিলেন। পক্ষান্তরে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগেই দুর্বলদের সাথে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যার বর্ণনা মুযদালিফায় রাত্রি যাপন সংক্রান্ত হাদীসে চলে গেছে।
৩. কংকরসমূহ ছোলার দানার চেয়ে একটু বড় সাইজের হতে হবে; এর চেয়ে বড় হওয়া জায়েয নয়। কেননা এর চেয়ে বড় হলে তা দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি হিসাবে বিবেচিত হবে।
কংকর ব্যতীত কাঠ, মাটি, লোহা, কাঁচ, হাড় ইত্যাদির টুকরা দিয়ে নিক্ষেপ করা যাবে না। অনুরূপভাবে কংকর ধৌত করাও যাবে না। কেননা এমর্মে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। হাজী ছাহেব প্রয়োজনে জামরাতসমূহের আশেপাশে পড়ে থাকা কংকর দিয়েও নিক্ষেপ করতে পারে। কেননা হয় সেগুলি হাজীদের হাত থেকে পড়ে গেছে, আর না হয় কেউ দূর থেকে নিক্ষেপ করতে গিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করে ফেলেছে। সুতরাং শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলিকে নিক্ষিপ্ত কংকর গণ্য করা হবে না।
৪. হাজীকে নিশ্চিত হতে হবে অথবা বেশীরভাগ ধারণা হতে হবে যে, তার নিক্ষিপ্ত কংকরটি নিক্ষেপের যথাস্থানে গিয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি কংকর আলাদাভাবে নিক্ষেপ করতে হবে এবং প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে। সবগুলি কংকর একসঙ্গে নিক্ষেপ করলে হবে না। অনুরূপভাবে কংকরগুলিকে নিক্ষেপের যথাস্থানে রেখে দিলেও হবে না। কেননা রেখে দেওয়া এবং নিক্ষেপ করা এককথা নয়।
৫. নাহরের দিনের (১০ই যিলহজ্জ এর) আমলসমূহ আলোচনার সময় ঐদিন জামরাতুল আক্বাবায় কংকর নিক্ষেপের সময়সীমা সম্পর্কে আলোচনা গত হয়ে গেছে। তবে তাশরীক্বের দিনগুলিতে প্রত্যেকদিন অপরাহ্নে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে; এর পূর্বে নিক্ষেপ করা জায়েয নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীক্বের দিনগুলিতে প্রত্যেকদিন অপরাহ্নে কংকর নিক্ষেপ করেছেন। আর তিনি বলেছেন, ‘তোমরা (আমার কাছ থেকে) হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখ। আমি জানি না, সম্ভবতঃ আমার এই হজ্জের পরে আমি আর হজ্জ করব না’ (মুসলিম, হা/৩১৩৭, জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত)। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘কুরবানীর দিন সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করেন। কিন্তু এর পরে নিক্ষেপ করেন অপরাহ্নে’ (মুসলিম, হা/৩১৪১)। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, সূর্য ঢলে গেলেই কংকর নিক্ষেপ করতাম’ (বুখারী, হা/১৭৪৬)। নাফে‘ বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলতেন, ‘তাশরীক্বের তিন দিনে সূর্য ঢলে না যাওয়া পর্যন্ত কংকর নিক্ষেপ করা যাবে না’ (মালেক, মুওয়াত্ত্বা, ১/২৮৪)। ইমাম তিরমিযী জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছ (হা/৮৯৪) উল্লেখ করার পর বলেন, ‘উক্ত হাদীছের উপর ভিত্তি করে অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, কুরবানীর দিনের পরের দিনগুলিতে অপরাহ্নে ছাড়া কংকর নিক্ষেপ করা যাবে না’।
কেউ যদি সূর্যাস্তের আগে কংকর নিক্ষেপ করতে সক্ষম না হয়, তাহলে রাতে নিক্ষেপ করবে। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) তাঁর স্ত্রী ছফিইয়া এবং আরেক জন মহিলাকে সূর্যাস্তের পরে কংকর নিক্ষেপের অনুমতি দেন (মালেক, মুওয়াত্ত্বা, ১/২৮৪)। আর যেহেতু তাশরীক্বের দিনগুলিতে কংকর নিক্ষেপের সময়ের তুলনায় কুরবানীর দিনে কংকর নিক্ষেপের সময় বেশী প্রশস্ত, সেহেতু এই দিনগুলিতে রাতে কংকর নিক্ষেপ অধিক যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশু দেখাশুনায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে রাতে কংকর নিক্ষেপের অনুমতি দিয়েছেন (বায়হাক্বী, ৫/১৫১, সনদ ‘হাসান’ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত; হাদীছটির কয়েকটি ‘শাহেদ’ও রয়েছে (শায়খ আলবানী প্রণীত ‘সিলসিলাহ ছহীহাহ’-এর ২৪৭৭ নং হাদীছ দ্রষ্টব্য)।
তবে ১৩ তারিখে সূর্যাস্তের সাথে সাথে কংকর নিক্ষেপের সময় শেষ হয়ে যায়। অতএব, এই দিনে সূর্যাস্তের পরে কংকর নিক্ষেপ করা জায়েয নয়। সেজন্য এই দিন সূর্যাস্তের পূর্বে কেউ কংকর নিক্ষেপ না করে থাকলে তাকে ফিদ্‌ইয়া দিতে হবে। এক্ষেত্রে ফিদ্‌ইয়া হচ্ছে, একটি ছাগল অথবা উট বা গরুর সাত ভাগের এক ভাগ।
৬. তাশরীক্বের দিনগুলিতে হাজী ছাহেব জামরাতগুলিতে ধারাবাহিকভাবে কংকর নিক্ষেপ করবে। শুরুতে প্রথম জামরাত দিয়ে আরম্ভ করবে; আর এটি হচ্ছে মক্কা থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী এবং মসজিদে খায়েফের নিকটবর্তী জামরাত। অতঃপর মধ্য জামরাত, এরপর জামরাতুল আক্বাবায় কংকর নিক্ষেপ করবে। এই ধারাবাহিকতার খেলাফ করা জায়েয নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক দিন এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই কংকর নিক্ষেপ করেছেন। প্রথম এবং দ্বিতীয় জামরাতে কংকর নিক্ষেপের পর দাঁড়িয়ে দুই হাত উঠিয়ে দো‘আ করবে। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনার মসজিদের নিকটবর্তী জামরাতে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন; প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলেন। অতঃপর একটু সামনের দিকে অগ্রসর হন এবং ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত উঠিয়ে দো‘আ করেন। তিনি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দো‘আ করেন। অতঃপর দ্বিতীয় জামরায় এসে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন এবং প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলেন। অতঃপর একটু বাম দিকে এসে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ান এবং দুই হাত উঠিয়ে দো‘আ করেন। অতঃপর জামরাতুল আক্বাবায় এসে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন এবং প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলেন। এরপর তিনি না দাঁড়িয়ে চলে আসেন’ (বুখারী, হা/১৭৫৩)।
৭. হাজী ছাহেব যে কোনো দিক থেকে কংকর নিক্ষেপ করতে পারে। তবে মিনাকে ডান দিকে এবং মক্কাকে বাম দিকে রেখে কংকর নিক্ষেপ করা উত্তম। আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সাথে হজ্জ করেন। তিনি ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বায়তুল্লাহকে বামে এবং মিনাকে ডানে রেখে বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করতে দেখেন। অতঃপর ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, এখানেই সূরা বাক্বারাহ অবতীর্ণ হয়েছে (বুখারী, হা/১৭৪৯; মুসলিম, হা/৩১৩৪)। সম্ভবতঃ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বিশেষতঃ সূরা বাক্বারাহ উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, সূরাটি হজ্জের অনেকগুলি আমল ধারণ করেছে। যেমন: কংকর নিক্ষেপ করা। কেননা কংকর নিক্ষেপ নিম্নোক্ত আয়াতে নির্দেশিত আল্লাহ্‌র যিক্‌রের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوۡمَيۡنِ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِۖ لِمَنِ ٱتَّقَىٰۗ﴾ [البقرة: ٢٠٣]
‘আর তোমরা নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে আল্লাহ্‌র যিক্‌র কর। অতঃপর যে ব্যক্তি প্রথম দুই দিনে তাড়াহুড়া করে চলে যাবে, তার জন্য কোন পাপ নেই। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাড়াহুড়া না করে থেকে যাবে, তাঁর উপর কোন পাপ নেই। অবশ্য যারা ভয় করে’ (বাক্বারাহ ২০৩)।
৮. ইহরামের আলোচনার সময় আমরা ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) কর্তৃক উল্লেখিত ইজমার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছি, ছোট বাচ্চা কংকর নিক্ষেপে সক্ষম না হলে তার পক্ষ থেকে নিক্ষেপ করে দেওয়া যাবে। অনুরূপভাবে অসুস্থতা, বার্ধক্য বা গর্ভধারণ সম্পর্কিত সমস্যার কারণেও একই বিধান বলবৎ থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ﴾ [التغابن: ١٦]
‘অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬)। তাছাড়া তাদের পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করে না দিলে কংকর নিক্ষেপের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাবে, আর নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে গেলে কংকর নিক্ষেপের কোনো সুযোগ বাক্বী থাকবে না। হজ্জের কার্যাবলীর মধ্যে শুধুমাত্র এই একটি কাজে স্থলাভিষিক্ততা চলে; অন্য কাজে নয়। অতএব, আরাফায় অবস্থান, মুযদালিফা ও মিনায় রাত্রি যাপনের ক্ষেত্রে অসুস্থ ব্যক্তিকে সেখানে উপস্থিত হতে হবে। আর ত্বওয়াফ এবং সা‘ঈ কুরবানীর দিনগুলিতে অথবা এরপরে হজ্জের মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে বা হজ্জের মাসের পরেও সম্পাদন করতে পারবে। কংকর নিক্ষেপে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রত্যেক জামরায় প্রথমে নিজের পক্ষ থেকে, অতঃপর অন্যের পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করবে। তবে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই হজ্জ পালনকারী হতে হবে। হজ্জ পালনকারী ব্যতীত অন্য কেউ কংকর নিক্ষেপ করলে তা গৃহীত হবে না। কেননা হাজী ব্যতীত অন্য কারো জন্য যেমন তার নিজের পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করা জায়েয নয়, তেমনি অন্যের পক্ষ থেকে নিক্ষেপ করাও জায়েয নয়।
৯. কংকর নিক্ষেপের মূল কাহিনী হচ্ছে, শয়তান জামরাত এলাকার কয়েকটি স্থানে ইবরাহীম (‘আলাইহিস্‌সালাম)-এর সামনে আসলে তিনি তাকে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ‘মারফূ’ সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘ইবরাহীম (‘আলাইহিস্‌সালাম) যখন হজ্জ করতে আসেন, তখন জামরাতুল আক্বাবায় শয়তান তাঁর মুখোমুখি হয়। অতঃপর তিনি তাকে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলে সে মাটিতে গেড়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় জামরাতেও সে তাঁর মুখোমুখি হলে তিনি তাকে সাতটি কংকর মারেন। ফলে সে মাটিতে গেড়ে যায়। একইভাবে তৃতীয় জামরাতেও শয়তান তাঁর মুখোমুখি হয়। ফলে তিনি তাকে সাতটি কংকর মারেন এবং সে মাটিতে গেড়ে যায়’। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘তোমরা শয়তানকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে থাক এবং তোমাদের জাতির পিতার অনুসরণ করে থাক’ (হাকেম, ১/৪৬৬, তিনি হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন এবং হাফেয যাহাবী তাঁকে সমর্থন করেছেন; আলবানী প্রণীত ‘ছহীহুত তারগীব ওয়াত-তারহীব’ গ্রন্থের ১১৫৬নং হাদীছ দ্র:; হাকেমের সনদে বর্ণনাকারী হাফ্‌ছ ইবনে আব্দুল্লাহ-এর নাম পরিবর্তন হয়ে জা‘ফর ইবনে আব্দুল্লাহ হয়ে গেছে। কিন্তু বায়হাক্বী হাকেমের সনদে নামটি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছেন (৫/১৫৩)।
হাদীছটিতে কংকর মারার মূল কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। সা‘ঈর আলোচনার সময় সা‘ঈর মূল কাহিনী গত হয়ে গেছে এবং ত্বওয়াফের আলোচনার সময় রমল করার মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। সা‘ঈ মূলতঃ ইসমাঈল (‘আলাইহিস্‌সালাম)-এর মায়ের কর্ম থেকে এসেছে। আর উমরাতুল ক্বাযায় রমলের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) মূলতঃ কাফেরদের সামনে মুসলিমদের শক্তি দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হজ্জ এবং ওমরাতে উক্ত কাজগুলি করার কারণে সেগুলি সুন্নাতে পরিণত হয়েছে। সুতরাং মুসলিমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণের উদ্দেশ্যে সেগুলি করে থাকে; কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে তারা শয়তানকে মারে না- যেমনটি কেউ কেউ মনে করে থাকে। আর সেকারণেই তারা বলে, জামরায় কংকর নিক্ষেপ; শয়তানকে নয়।

বিদায়ী ত্বওয়াফ
১. হজ্জ শেষ করে মক্কা ত্যাগের সময় হাজীরা যে ত্বওয়াফ করে থাকে, তাকে বিদায়ী ত্বওয়াফ বলে। এই ত্বওয়াফ হজ্জের অন্যতম একটি ওয়াজিব। ঋতুবতী এবং প্রসূতি অবস্থায় পতিত মহিলা ছাড়া অন্য কাউকে এই ত্বওয়াফ ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নি। হজ্জ ও ওমরার ওয়াজিবসমূহ আলোচনার সময় এই ত্বওয়াফ ওয়াজিব হওয়ার দলীল গত হয়ে গেছে।
২. ওমরাকারীর জন্য বিদায়ী ত্বওয়াফ ওয়াজিব নয়; বরং তার জন্য মুস্তাহাব বা উত্তম। কেননা বিদায়ী ত্বওয়াফ ওয়াজিব সাব্যস্তকারী সবগুলি হাদীছ এসেছে হজ্জের ক্ষেত্রে। সুতরাং ওমরা শেষে কেউ বিদায়ী ত্বওয়াফ না করেই যদি মক্কা ত্যাগ করে, তাহলে তার উপর ফিদ্‌ইয়া আবশ্যক হবে না।
৩. কোনো হাজী যদি মক্কা ত্যাগের সময় পর্যন্ত ত্বওয়াফে ইফাদ্বাকে বিলম্বিত করে এবং এই ত্বওয়াফ করেই মক্কা ত্যাগ করে, তাহলে এই ত্বওয়াফই তার জন্য যথেষ্ট হবে, তাকে আর বিদায়ী ত্বওয়াফ করতে হবে না। কেননা এক্ষেত্রে ত্বওয়াফে ইফাদ্বা-ই হচ্ছে তার জন্য বায়তুল্লাহ্‌র সর্বশেষ কাজ। ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে যদি তাকে সা‘ঈও করতে হয়, তথাপিও কোন অসুবিধা নেই। কেননা সা‘ঈ ত্বওয়াফের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর ত্বওয়াফ এবং সা‘ঈ উভয় কাজেই আল্লাহ্‌র যিক্‌র এবং দো‘আ রয়েছে।
৪. বিদায়ী ত্বওয়াফ শেষে সামনের দিকে মুখ করে স্বাভাবিকভাবে মসজিদ থেকে বের হবে, কা‘বার দিকে মুখ করে পশ্চাৎগামী হয়ে বের হবে না- যেমনটি কতিপয় অজ্ঞ মানুষ করে থাকে। কেননা এমর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না; বরং এটি নবাবিষ্কৃত বিদ‘আতসমূহের একটি।

মসজিদে নববী যিয়ারত
মসজিদে নববী যিয়ারত করা মুস্তাহাব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى»
‘তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও (নেকীর উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না: মসজিদে হারাম, মসজিদ নববী এবং মসজিদে আক্বছা’ (বুখারী, হা/১১৮৯, শব্দগুলি ইমাম বুখারীর; মুসলিম, হা/৩৩৮৪)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«صَلاَةٌ فِى مَسْجِدِى هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلاَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ»
‘মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে ছালাত আদায়ের নেকীর তুলনায় আমার এই মসজিদে ছালাত আদায় করলে এক হাযার গুণ বেশী নেকী হয়’ (বুখারী, হা/১১৯০; মুসলিম, হা/৩৩৭৫)।
একজন মুসলিম মসজিদে নববীতে ছালাত আদায় ছাড়াও মদীনায় শরী‘আতসম্মত অন্যান্য কাজও করবে। যেমন: মসজিদে ক্বুবায় ছালাত আদায় করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের ক্ববর যিয়ারত করা, বাক্বী নামক ক্ববরস্থান যিয়ারত করা এবং উহুদে শহীদগণের ক্ববরস্থান যিয়ারত করা। মদীনাতে শুধুমাত্র এই পাঁচটি স্থান যিয়ারত করাই শরী‘আত সম্মত; দলীল না থাকায় অন্যান্য স্থান যিয়ারত করা শরী‘আতসম্মত নয়। ক্ববরস্থানগুলি যিয়ারতের সময় শরঈ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, তাহলে এই যিয়ারতের মাধ্যমে যিয়ারতকারী মৃত্যুকে স্মরণ এবং তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের উপকার লাভ করতে পারবে। আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ»
‘তোমরা ক্ববর যিয়ারত কর। কেননা তা (তোমাদেরকে) মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়’ (মুসলিম, হা/২২৫৯)। শরঈ পদ্ধতিতে ক্ববর যিয়ারত করলে যিয়ারতকারীর দো‘আর মাধ্যমে ক্ববরবাসীরাও উপকৃত হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্বী নামক ক্ববরস্থান যিয়ারত করতেন এবং ক্ববরবাসীদের জন্য দো‘আ করতেন।
বিদ‘আতী ক্ববর যিয়ারত থেকে সাবধান থাকতে হবে। যে ক্ববর যিয়ারতের মাধ্যমে ক্ববরবাসীদের নিকট প্রার্থনা করা হয় এবং তাদের সাহায্য চাওয়া হয়, তাকেই বিদ‘আতী ক্ববর যিয়ারত বলে। কেননা দো‘আ বা প্রার্থনা একটি ইবাদত; আর কোনো ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]
‘আর মসজিদসমূহ আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে ডেকো না’ (জিন ১৮)। অতএব, একমাত্র আল্লাহ্‌র নিকট দো‘আ করতে হয়। পক্ষান্তরে অন্যের নিকট দো‘আ করতে হয় না; বরং তার জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দো‘আ করতে হয়।
হজ্জ, ওমরা এবং যিয়ারত একটির সাথে আরেকটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়। অতএব, একজন মুসলিম একই সফরে হজ্জ, ওমরা এবং যিয়ারত তিনটির উদ্দেশ্যেই আসতে পারে। আবার শুধু হজ্জ এবং ওমরার জন্যও আসতে পারে। অনুরূপভাবে হজ্জ ও ওমরা ছাড়াই শুধু যিয়ারতের জন্যও আসতে পারে। আমি ‘ফাযলুল মাদীনাহ ওয়া আদাবু সুকনাহা ওয়া যিয়ারতিহা’ নামক পৃথক এক পুস্তিকায় মদীনা যিয়ারতের বিষয়টি সবিস্তারে আলোচনা করেছি।
পরিশেষে, মহান আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করি, তিনি হাজীদেরকে এমনভাবে হজ্জ করার তাওফীক্ব দান করুন, যেভাবে হজ্জ করলে তা তাঁকে সন্তুষ্ট করবে। তিনি তাদের হজ্জকে ক্ববূল করুন, গোনাহখাতা মাফ করুন এবং তাদের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের উত্তম প্রতিদান দান করুন। তিনি প্রত্যেকটি হাজীকে হজ্জের পরে হজ্জের পূর্বের অবস্থার তুলনায় উত্তম অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। যে ভাল ছিল, সে আরো ভাল হয়ে যাক আর যে খারাপ ছিল, সে ভাল হয়ে যাক। ১৪২৮ হিজরীর ১২ই জুমাদাল আখেরায় এই পুস্তিকা লেখার কাজ শেষ হয়। মহান রব্বুল আলামীনের জন্যই যাবতীয় প্রশংসা। আল্লাহ তাঁর বান্দা ও রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সকল ছাহাবীর উপর দরূদ, সালাম এবং বরকত বর্ষণ করুন।


সূচীপত্র
• ভূমিকা
• হজ্জ ও ওমরা পালনকারীর যেসব আদব-আখলাক্ব থাকা উচিৎ
• হজ্জ ও ওমরার ফযীলত
• হজ্জ ও ওমরা পালন ওয়াজিব
• হজ্জ ও ওমরা ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী
• হজ্জ ও ওমরার রুকনসমূহ
• হজ্জ ও ওমরার ওয়াজিবসমূহ
• হজ্জ ও ওমরার মুস্তাহাবসমূহ
• হজ্জ ও ওমরার ইহরাম বাঁধার সময়-কাল এবং মীক্বাতসমূহ
• ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ
• হজ্জ ও ওমরার সংক্ষিপ্ত এবং বিস্তারিত নিয়ম
• ইহরামের প্রস্তুতি গ্রহণ
• ইহরাম
• তালবিয়া
• মসজিদে হারামে প্রবেশ
• ত্বওয়াফ
• যমযম পানি পান
• ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ
• মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটা
• ৮ তারিখে মক্কা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধা এবং মিনায় গমন
• আরাফায় অবস্থান
• কুরআন ও ছহীহ হাদীছে উল্লেখিত কতিপয় যিক্‌র-আযকার এবং দো‘আ, যেগুলির মাধ্যমে আরাফাসহ অন্যান্য যেকোন স্থানে দো‘আ করা যাবেঃ
• মুযদালিফায় রাত্রি যাপন
• কুরবানীর দিনের কাজসমূহ
• তাশরীক্বের দিনগুলিতে মিনায় রাত্রি যাপন
• তাশরীক্বের দিনগুলিতে কংকর নিক্ষেপ
• বিদায়ী ত্বওয়াফ
• মসজিদে নববী যিয়ারত
• সূচীপত্র

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×