somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হজ্জ ও ওমরা পালনকারীকে এতদুভয়ের বিধিবিধান সম্পর্কে অবগতকরণ ১

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হজ্জ ও ওমরা পালনকারীকে এতদুভয়ের বিধিবিধান সম্পর্কে অবগতকরণ
কুরআন, সুন্নাহ ও আছারের আলোকে
শাইখ আব্দুল মুহসিন ইবনে হামাদ আল-বাদ্‌র
অনুবাদ : আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
দু’টি যরূরী কথা
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। দরূদ এবং সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। আরবী ভাষায় হজ্জের উপর অসংখ্য বই-পুস্তক, লিফলেট প্রণীত হয়েছে, আমাদের বাংলা ভাষাও সেক্ষেত্রে খুব একটা পিছিয়ে নেই। এ ভাষায় হজ্জের উপর যেমন রচিত হয়েছে কয়েক ডজন বই, তেমনি আরবী থেকে অনূদিত হয়েছে অসংখ্য বই, লীফলেট। বাংলা দৈনিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল এবং হজ্জের লাইসেন্সধারী প্রায় সবগুলি হজ্জ কাফেলা পৃথক পৃথক হজ্জ ও ওমরা নির্দেশিকা বের করেছে। কিন্তু এত লেখনী থাকা সত্ত্বেও আল্লামা শায়খ আব্দুল মুহসিন ইবনে হামাদ আল-বাদ্‌র (হাফেযাহুল্লা-হ) প্রণীত تَبْصِيْرُ النَّاسِكِ بِاَحْكَامِ الْمَنَاسِكِ (হজ্জ ও ওমরা পালনকারীকে এতদুভয়ের বিধিবিধান সম্পর্কে অবগত করণ) বইটি অনুবাদে কেন আগ্রহী হলাম? জবাবে এক কথায় বলা যায়, বইটি হজ্জের উপর আমার দেখা সবচেয়ে ভাল বই। কেননা বইটিতে স্বতন্ত্র বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটেছে, যেগুলি অন্য কোন বইয়ে মিলা ভার। যেমনঃ
১. সম্মানিত লেখক বর্তমান বিশ্বের হাদীছ বিশারদগণের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং আক্বীদার ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদার এক অতন্দ্র প্রহরী। সেজন্য বইটিতে বিভ্রান্তিপূর্ণ এবং আক্বীদা বিরোধী কোন প্রকার বক্তব্যের গন্ধও নেই।
২. বইটিতে হাজীদের হজ্জ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যরূরী ছোট-বড় প্রত্যেকটি বিধিবিধান এবং মাসআলা-মাসায়েল সন্নিবেশিত হয়েছে।
৩. ছোট-বড় কোন মাসআলাই দলীলবিহীন উল্লেখ করা হয় নি; বরং প্রত্যেকটি বক্তব্যের পেছনে পবিত্র ক্বুরআন, ছহীহ হাদীছ বা ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর আছার থেকে এক বা একাধিক দলীল পেশ করা হয়েছে।
৪. বইটির বিন্যাস অত্যন্ত চমৎকার এবং সাবলীল, যা অন্য কোনো বইয়ে আমি দেখি নি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কুরআন এবং হাদীছের ভাষা আরবী হওয়া সত্ত্বেও বাংলা ভাষাভাষী অনেক মুসলিম আরবী পড়তে পারে না! কেবল তাদের প্রতি লক্ষ্য করে বইটির যরূরী দো‘আ এবং যিক্‌র—আয্‌কার বাংলায় উচ্চারণ করে দেওয়া হয়েছে; যদিও আরবী বর্ণসমূহকে বাংলা ভাষায় সঠিক এবং পরিপূর্ণভাবে উচ্চারণ করা আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।
অত্র বইয়ের দো‘আ/যিকরের উচ্চারণ পদ্ধতি
আরবী অক্ষর বাংলা অক্ষর/চিহ্ন উদাহরণ
সুকূনযুক্ত হামযা ءْ أْ ؤْ ’ হাইয়ি’ (هَيِّئْ)
ع ‘ আন‘আমতা (أَنْعَمْتَ), নি‘মাতাকা (نِعْمَتَكَ)
ث, ص ছ ছাবা-তা (الثَّبَاتَ), ছদ্‌রী (صَدْرِي)
ج জ মূজিবা-তি (مُوجِبَاتِ), ওয়াজ্‌‘আল (وَاجْعَلْ)
ذ, ز, ض, ظ য আ-খিযুন (آخِذٌ), আওযি‘নী (أَوْزِعْنِي), ফাযলিকা (فَضْلِكَ), যলামনা- (ظَلَمْنَا)
س স হুসনা (حُسْنَ), সালীমান (سَلِيمًا)
ش শ শাক্কা-রান (شَكَّارًا)
ط ত্ব ত্বইয়্যেবাহ (طَيِّبَةً)
ق ক্ব ক্বলবী (قَلْبِي)


টেনে পড়ার জন্য - রব্বানা- (رَبَّنَا), ‘আযা-বি (عَذَابِ)
ঈ না‘ঈমান (نَعِيمًا)
ী খত্বীআতী (خَطِيئَتِي)
ঊ আ‘ঊযুবিকা (أَعُوذُ بِكَ)
ূ সাবাক্বূনা- (سَبَقُونَا)
পরিশেষে, অনুবাদকের কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহপাক তাঁদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। মহান আল্লাহ হাজীদেরকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে হজ্জ করার তাওফীক্ব দান করুন এবং তাদের হজ্জকে ‘ক্ববূল হজ্জ’ হিসাবে মঞ্জুর করুন। আমীন!
বিনীত
আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার
[email protected]

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
ভূমিকা
যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি ফরযসমূহ ফরয করেছেন, যথাযথভাবে নানা বিধিবিধান প্রণয়ন করেছেন এবং তাঁর সম্মানিত ঘরের হজ্জকে ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ ও বৃহৎ স্থাপনা হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, শরীক বিহীন এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন হক্ব মা‘বূদ নেই, যিনি অনুগ্রহ, মহত্ত্ব এবং মহাসম্মানের অধিকারী। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র বান্দা এবং রাসূল, যিনি মানব ও জিন জাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ এবং যিনি ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, হজ্জ ও ওমরা পালনের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব। হে আল্লাহ! আপনি দরূদ, সালাম ও বরকত বর্ষণ করুন, তাঁর প্রতি, তাঁর সম্মানিত পরিবার-পরিজনের প্রতি, মানব ও জিন জাতির পথপ্রদর্শক, অন্ধকারের মশাল ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি এবং তাঁদের পথের পথিকদের প্রতি, যারা তাদের পরে আগমণ করেছে, অন্তর ও বাক্যকে বিশুদ্ধ ও ভালো রাখতে সক্ষম হয়েছে,
﴿يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴾ [سورة الحشر: 10]
‘তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে আমাদের অগ্রবর্তী ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন। ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ আপনি রাখবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই আপনি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়’ (হাশ্‌র ১০)।
অতঃপর,
মহান আল্লাহ মানব এবং জিন জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ প্রদর্শনের জন্য তাদের নিকট মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। তিনি তাঁর উম্মতকে কল্যাণকর যাবতীয় পথ বাৎলে দিয়েছেন, যাবতীয় অকল্যাণ থেকে তাদেরকে সতর্ক করেছেন এবং রিসালাতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। শেষ যামানায় আল্লাহ কর্তৃক মানব এবং জিন জাতিকে প্রদত্ত নে‘মতসমূহের মধ্যে এটিই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট নে‘মত। মহান আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন; সেগুলি হচ্ছে: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-এর সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দেওয়া, রামাযানের ছিয়াম পালন করা এবং হজ্জ করা। প্রসিদ্ধ হাদীছ ‘হাদীছে জিবরীল’-য়ে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীছে জিবরীল ‘আলাইহিস্‌সালাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলাম, ঈমান, ইহসান, ক্বিয়ামত এবং ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন; আর সবশেষে তিনি বলেছিলেন, “এই হচ্ছে জিবরীল, তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছেন”।
তন্মধ্যে ইসলাম সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,
«الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِىَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً»
‘আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মা‘বূদ নেই ও মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা এবং সামর্থ্য থাকলে কা‘বায় হজ্জ করা-ই হচ্ছে ইসলাম’ (মুসলিম,হা/৯৩, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে হাদীছটি বর্ণিত)।
অনুরূপভাবে ছহীহ বুখারী (হা/৮) এবং মুসলিমে (হা/১১৩) ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجِّ الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ»
‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: ‘আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মা‘বূদ নেই ও মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ করা এবং রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা’।
এই পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বূদ নেই ও মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল’-একথার সাক্ষ্য দেওয়া। আর একথার সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করা চলবে না এবং ইবাদত হতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায়। অতএব, কোন ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্‌র জন্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত তরীক্বায় না হলে তা ইবাদতকারীর সামান্যতম কোনো কাজে আসবে না।
এরপরের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে, ছালাত ক্বায়েম করা। ছালাতকে ‘ইসলামের মূল খুঁটি’ এবং ‘যাবতীয় অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে বাধাদানকারী’ বলা হয়েছে। দুনিয়াতে দ্বীন ইসলামের সর্বশেষ যে ইবাদতটি হারিয়ে যাবে, তা হচ্ছে ছালাত। আর ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিষয়ে বান্দার হিসাব নেওয়া হবে, তা হচ্ছে এই ছালাত। দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে হয় বলে এটি বান্দা এবং তার প্রভুর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মাধ্যম।
এরপর যাকাতের অবস্থান। মহান আল্লাহ এই যাকাতকে পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে ছালাতের সাথে একত্রে উল্লেখ করেছেন। যাকাতের নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে; এর মাধ্যমে যাকাত আদায়কারী যেমন অনেক নেকী লাভে ধন্য হয়, তেমনি ফক্বীর-মিসকীনও অনেক উপকৃত হয়। আল্লাহ ধনীদের সম্পদে প্রত্যেক বছর সামান্য পরিমাণ সম্পদ যাকাত হিসাবে ফরয করেছেন। সেজন্য যাকাত আদায় করলে ধনী ব্যক্তি মোটেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, কিন্তু দরিদ্র মানুষ খুব উপকৃত হয়।
যাকাতের পরে ছিয়ামের অবস্থান। প্রত্যেক বছর রামাযান মাসে এই ছিয়াম পালন করতে হয়।
অতঃপর আসে হজ্জের অবস্থান, যা জীবনে একবার ফরয।
অগ্রবর্তী এবং পরবর্তী আলেমগণ কর্তৃক হজ্জ ও ওমরার বিধিবিধান সংক্রান্ত ছোট-বড় বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। অধিক উপকারী গ্রন্থসমূহের মধ্যে আমাদের শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রহেমাহুল্লাহ) বিরচিত ‘আত-তাহক্বীক্ব ওয়াল ঈযাহ লিকাছীরিন মিন মাসাইলিল হাজ্জি ওয়াল ওমরাতি ওয়ায যিয়ারাহ আলা যওইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ’ নামক পুস্তিকাটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। অনেকবার এই পুস্তিকাটি ছাপা হয়েছে এবং বহু ভাষায় সেটি অনূদিত হয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে ব্যাপক উপকার সাধিত হয়েছে এবং জ্ঞান পিপাসুদের নিকট তা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ১৩৬৩ হিজরীতে বাদশাহ আব্দুল আযীয (রহেমাহুল্লাহ)-এর অর্থায়নে বইটি প্রথম প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে শায়খ এতে কিছু মাসআলা-মাসায়েল সংযোজন করেন। তিনি ১৪২০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
দীর্ঘদিন থেকে হজ্জ ও ওমরার উপর একটি ছোট্ট পুস্তিকা রচনার প্রতি আমি আগ্রহী ছিলাম। অবশেষে, ১৪২৮ হিজরীতে এই ছোট্ট পুস্তিকা প্রণয়নের মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমার আগ্রহ বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেন। আমি এই পুস্তিকার নাম দিয়েছি: ‘তাবছীরুন নাসেক বিআহকামিল মানাসেক আলা যওইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাতি ওয়াল মা’ছূরি আনিছ ছহাবাহ’।
আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করি, তিনি আমার এই প্রয়াসটুকু ক্ববূল করুন, দয়া করে তিনি আমাকে এর বিনিময়ে নেকী দান করুন, জ্ঞান পিপাসু ছাত্রবৃন্দ এবং আল্লাহর সম্মানিত ঘরের ইচ্ছাপোষণকারী (হজ্জ ও উমরাপালনকারী) কে এর মাধ্যমে উপকৃত করুন। বইটি যিনি প্রকাশক করবেন, বা প্রকাশে সহযোগিতা করবেন আল্লাহ তাকে সওয়াবের ভাগীদার করুন, আর সমস্ত মুসলিমকে তিনি দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং তাদেরকে হক্বের উপর অবিচল রাখুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বস্রোতা এবং দো‘আ ক্ববূলকারী।


হজ্জ ও ওমরা পালনকারীর যেসব আদব-আখলাক্ব থাকা উচিৎ
১. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, হজ্জ ও ওমরা কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে; লোক দেখানো এবং জনশ্রুতির নিয়্যত থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তাহলে হজ্জ ও ওমরা পালনকারী এতদুভয়ের মাধ্যমে নেকী লাভ করতে পারবে। ছহীহ মুসলিমে (হা/৭৪৭৫) এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, শির্ককারীর শির্ক থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন আমল করতে গিয়ে আমার সাথে কারো অংশী স্থাপন করে, আমি তাকে তার শির্কযুক্ত আমলসহ পরিত্যাগ করি’। অনুরূপভাবে সুনানে ইবনে মাজাহতে (হ/২৮৯০) যঈফ সূত্রে আনাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! এই হজ্জ লোক দেখানোর জন্য নয় এবং নয় জনশ্রুতি অর্জনের জন্য’। শায়খ আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) ‘সিলসিলাহ ছহীহাহ’ (হা/২৬১৭)-তে হাদীছটির আরো কয়েকটি ‘সনদ’ উল্লেখ করেছেন, যার সবগুলি মিলে হাদীছটি ‘হাসান লিগায়রিহী’-এর পর্যায়ে পৌঁছে।
২. জাগ্রত জ্ঞান সহকারে হজ্জ ও ওমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে হাজী ছাহেবকে এতদুভয়ের বিধিবিধান জেনে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য তাকে এ বিষয়ে প্রণীত ভাল একটি বই সংগ্রহ করতে হবে। আমাদের শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রহেমাহুল্লাহ) প্রণীত একটু আগে বর্ণিত পুস্তিকাটি অধিক উপকারী হওয়ায় হাজী ছাহেব এটি সংগ্রহ করতে পারেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ভুলে পতিত হওয়ার কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে হজ্জ ও ওমরার কোনো কাজ শুরু করার আগেই সে সম্পর্কে বিজ্ঞ কোন আলেমকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।
৩. হজ্জের সফরে ভাল মানুষদের সাহচর্য লাভের চেষ্টা করতে হবে, তাহলে তাদের কাছ থেকে জ্ঞান এবং আদব উভয় ক্ষেত্রেই উপকৃত হওয়া যাবে। ছহীহ বুখারী (হা/৫৫৩৪) এবং মুসলিমে (হা/৬৬৯২) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً»
‘সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে আতর বিক্রেতা এবং কামারের মত। আতর বিক্রেতা হয় তোমাকে আতর প্রদান করবে, না হয় তুমি তার কাছ থেকে আতর কিনে নিবে, আর না হয় তুমি অন্ততঃ তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ পাবে। পক্ষান্তরে কামার হয় তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে, আর না হয় তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে’।
৪. অন্যের কাছে যাতে হাত পাততে না হয়, সেজন্য হজ্জের সফরে প্রয়োজনীয় অর্থ সঙ্গে নিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللَّهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ»
‘যে ব্যক্তি হারাম এবং অন্যের কাছে হাত পাতা থেকে পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করবেন’ (বুখারী, হা/১৪৬৯; মুসলিম, হা/২৪২৪, আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত)।
৫. উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবে এবং অন্যের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ»
‘তুমি যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহ সচেতনতা অবলম্বন করবে। মন্দ কিছু ঘটে গেলে তারপরে ভাল কাজ করবে, তাহলে এই ভাল কাজ ঐ মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে। আর মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে’(তিরমিযী, হা/১৯৮৭, আবূ যার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে ‘হাসান’ সূত্রে বর্ণিত)।
অনুরূপভাবে ছহীহ মসুলিমে (হা/৪৭৭৬) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে ‘মারফূ’ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,
«فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ وَيَدْخُلَ الْجَنَّةَ فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِى يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ»
‘যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায় এবং জান্নাতে প্রবেশের আকাঙ্খা পোষণ করে, সে যেন আল্লাহ্‌র প্রতি, শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করে, যেমন ব্যবহার সে তাদের কাছ থেকে আশা করে’।
৬. হাজী ছাহেব যিক্‌র-আযকার, দো‘আ, আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকবে। মন্দ কথা থেকে জিহ্বাকে সংরক্ষণ করবে, ভাল কথা ছাড়া বলবে না। দুনিয়া এবং আখেরাতে প্রশংসনীয় ফলাফল বয়ে আনে এমন কর্মকাণ্ডে তার সময়কে কাজে লাগাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ»
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি এবং পরকালের প্রতি ঈমান আনে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’ (বুখারী, হা/৬৪৭৫; মুসলিম, হা/৭৪, আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সূত্রে বর্ণিত)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ : الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ»
‘দুই ধরণের নে‘মতের কাছে বেশীর ভাগ মানুষ প্রবঞ্চিত হয়: সুস্থতা এবং অবসর’ (বুখারী, হা/৬৪১২, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত)।
৭. কথা বা কর্ম দ্বারা অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে সতর্ক থাকবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ»
‘মুসলিম সে-ই ব্যক্তি, যার মুখ এবং হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদে থাকে’ (বুখারী, হা/১০; মুসলিম, হা/৬৪)।
অনুরূপভাবে কারো ধূমপানের বদাভ্যাস থাকলে সে সিগারেটের দুর্গন্ধের মাধ্যমে অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে সাবধান থাকবে; বরং সম্পূর্ণরূপে ধূমপান বর্জন করে আল্লাহ্‌র নিকট তার তওবা করা ওয়াজিব। কেননা ধূমপানে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, অন্যদিকে তেমনি অর্থ নষ্ট হয়।
জীবনের সর্বক্ষেত্রে উপরোক্ত সুন্দর আদবগুলি বাস্তবায়ন করা উচিৎ। তবে হজ্জ ও ওমরার সফরে সেগুলির গুরুত্ব আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
হজ্জ ও ওমরার ফযীলত
হজ্জ ও ওমরার ফযীলত বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে; তন্মধ্যে কয়েকটি নীচে উল্লেখ করা হলঃ
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ»
‘এক ওমরা থেকে আরেক ওমরা পালন এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের ছগীরা গোনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ। আর ক্ববূল হজ্জের বিনিময় জান্নাত বৈ কিছুই নয়’ (বুখারী, হা/১৭৭৩; মুসলিম, হা/৩২৮৯, হাদীছটি আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সূত্রে বর্ণিত)।
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ»
‘তোমরা হজ্জ ও ওমরা পালনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখ। কেননা এতদুভয় দরিদ্রতা এবং গোনাহ দূর করে দেয়, যেমনিভাবে হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। আর ক্ববূল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত বৈ কিছুই নয়’ (তিরমিযী, হা/৮১০; ইবনে খুযায়মা, হা/২৫১২; নাসা‘ঈ, হা/২৬৩১, ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে হাদীছটি বর্ণিত এবং হাদীছটি ‘হাসান’। ইমাম নাসা‘ঈ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে ‘ছহীহ’ সূত্রেও হাদীছটি বর্ণনা করেছেন (হা/২৬৩০), তবে সেখানে ‘সোনা-রূপার’ কথা আসে নি এবং শেষ বাক্যটিও বর্ণিত হয়নি)।
৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন,
«يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرَى الْجِهَادَ أَفْضَلَ الْعَمَلِ، أَفَلَا نُجَاهِدُ؟»
‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল! জিহাদকে আমরা উত্তম আমল মনে করি, তাহলে কি আমরা জিহাদ করব না?’ জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا، لكُنَّ أَفْضَلُ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ»
‘না! তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হচ্ছে, ক্ববূল হজ্জ’ (বুখারী, হা/১৫২০)। হাফেয ইবনে হাজার (রহেমাহুল্লাহ) ফতহুল বারীতে (৩/৩৮২) বলেন, ‘অধিকাংশ বিদ্বান (لكُنَّ)-এর ‘কাফ’ (كُ) বর্ণে পেশ দিয়ে পড়েছেন। শব্দটি মহিলাদের সম্বোধন সূচক পদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ‘কাফ’ (كِ) বর্ণে জের দিয়ে এবং ‘কাফ’-এর পূর্বে একটি অতিরিক্ত আলিফ যোগেও শব্দটি পড়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটি ‘ইস্তিদরাক’ (استدراك) বা প্রতিকার অর্থে ব্যবহৃত হবে’। অতঃপর ইবনে হাজার বলেন, ‘পেশ দিয়ে পড়লে শব্দটি বেশী ফায়দা দেয়। কেননা এক্ষেত্রে শব্দটি একদিকে যেমন হজ্জের ফযীলত সাব্যস্ত করে, অন্যদিকে তেমনি আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর জিহাদ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবও শামিল করে’। তাছাড়া শব্দটি ‘ইস্তিদরাক’ অর্থে ব্যবহৃত হলে হাদীছটি থেকে এও বুঝা যেতে পারে যে, হজ্জ জিহাদের চেয়ে উত্তম। আর এমন অর্থ আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত আগত হাদীছের বিরোধী। অতএব, এই যুক্তিও ইবনে হাজার (রহেমাহুল্লাহ)-এর অভিমতকে শক্তিশালী করে।
ইবনে মাজাহ (হা/২৯০১) এবং ইবনে খুযায়মা (হা/৩০৭৪) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، هَلْ عَلَى النِّسَاءِ مِنْ جِهَادٍ؟»
‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! মহিলাদের উপর কি জিহাদ আছে?’ তিনি বললেন,
«عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لاَ قِتَالَ فِيهِ: الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ»
‘তাদের উপর জিহাদ আছে, তবে তাতে লড়াই নেই। আর তা হচ্ছে, হজ্জ ও ওমরা’।
৪. আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সর্বোত্তম কাজ কোন্‌টি? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান আনা’। তাঁকে বলা হয়েছিল, এরপর কি? তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা’। তাঁকে আবার বলা হয়েছিল, এরপর কি? তিনি বলেছিলেন, ‘ক্ববূল হজ্জ’ (বুখারী, হা/২৬; মুসলিম, হা/২৪৮)।
৫. আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»
‘যে ব্যক্তি হজ্জ করল এবং স্ত্রী সহবাস, যাবতীয় অশ্লীল কর্ম ও গালমন্দ থেকে বিরত থাকল, সে ঐদিনের মত হয়ে প্রত্যাবর্তন করল, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন’ (বুখারী, হা/১৫২১; মুসলিম, হা/৩২৯১)।
৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনুল আছ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কে বলেছিলেন,
«أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ»
‘হে আমর! তুমি কি জানো না যে, ইসলাম তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মোচন করে দেয়? হিজরত তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মোচন করে দেয়? হজ্জ তার পূর্ববর্তী সকলগেোনাহ মোচন ধ্বংস করে দেয়?’ (মুসলিম, হা/৩২১)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতিতে যে হজ্জ সম্পন্ন করা হয়, যাতে অশ্লীল কর্ম ও কথার সংমিশ্রণ না থাকে এবং ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকা হয়, সেটিই হচ্ছে ‘ক্ববূল হজ্জ’। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ فَإِنِّى لاَ أَدْرِى لَعَلِّى لاَ أَحُجُّ بَعْدَ حَجَّتِى هَذِهِ» ‘তোমরা (আমার কাছ থেকে) হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখ। আমি জানি না, সম্ভবতঃ আমার এই হজ্জের পরে আমি আর হজ্জ করব না’ (মুসলিম, হা/৩১৩৭)। ইমাম নাসা‘ঈ (হা/৩০৬২) বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা (আমার কাছ থেকে) হজ্জের পদ্ধতি শিখ। আমি জানি না, সম্ভবতঃ এই বছর পরে আমি আর হজ্জ করব না’।
আর ক্ববূল হজ্জের নিদর্শন হচ্ছে, হজ্জ থেকে ফিরে হাজী ছাহেব সুন্দর থেকে সুন্দরতর এবং মন্দ থেকে ভালোর পথে পা বাড়াবে। কেউ যদি হজ্জের পূর্বে কোন পাপাচারে পতিত হয়ে থাকে, তাহলে হজ্জে গিয়ে তাকে খাঁটি তওবা করতে হবে; পাপকাজ বর্জনের অঙ্গীকার করতে হবে, ঘটিত পাপের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করতে হবে এবং পুনরায় ঐপাপে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। তবে তার পাপ যদি কোন মানুষের সাথে সম্পর্কিত হয়, তবে তা মিটিয়ে নেওয়ার কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে: যদি তা অর্থনৈতিক কোনো বিষয় হয় এবং যার সাথে লেনদেন, সে তা মাফ না করে, তাহলে অর্থ পরিশোধ করে দিতে হবে। আর মুখ এবং হাত দ্বারা যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। উল্লেখ্য যে, কাউকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়টি তার সামনে উল্লেখ করতে গেলে যদি হিংসা-বিদ্বেষ এবং দ্বন্দ্ব আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সে বিষয়টি তাকে না বলে সাধারণভাবে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, তার যথোপযুক্ত প্রশংসা করতে হবে এবং তার জন্য দো‘আ করতে হবে। উক্ত বিষয়গুলি মেনে চলতে পারলে হজ্জ তার সামনে কল্যাণের দুয়ার উম্মুক্ত করে দিবে এবং সে আল্লাহ্‌র ভীতিপূর্ণ ও সরল পথে প্রতিষ্ঠিত নতুন জীবন শুরু করতে পারবে। কিন্তু হজ্জের পূর্বে তিনি যদি মন্দ কাজে লিপ্ত থাকেন এবং হজ্জের পরেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন, তাহলে বুঝতে হবে, তার হজ্জ ক্ববূল হয় নি।
ছালাত, হজ্জসহ অন্যান্য সৎ আমল যেসব গোনাহ্‌র কাফফারাহ হয়, সেগুলি হচ্ছে, ছগীরা বা ছোট গোনাহ। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِن تَجۡتَنِبُواْ كَبَآئِرَ مَا تُنۡهَوۡنَ عَنۡهُ نُكَفِّرۡ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ﴾ [النساء: ٣١]
‘যেসব বড় গোনাহ থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, সেগুলি থেকে যদি তোমরা বেঁচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ক্রটি-বিচ্যুতিগুলি ক্ষমা করে দেব’ (নিসা ৩১)। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ অপর জুম‘আর সময় পর্যন্ত এবং এক রামাযান অপর রামাযানের সময় পর্যন্ত ছোট গোনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ, যদি বড় গোনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়’ (মুসলিম, হা/৫৫২, আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সূত্রে বর্ণিত)। তবে কাবীরাহ বা ছোট গোনাহসমূহ তওবা ছাড়া মোচন হয় না।
সুতরাং ছোট-বড় যাবতীয় গোনাহ থেকে তওবা করে একজন হাজী সদ্য প্রসূত নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে হজ্জ থেকে ফেরার মহা সাফল্য অর্জন করতে পারে। পক্ষান্তরে কেউ তওবা না করে যদি পাপ করে অথবা পাপ করার সংকল্প করে, তাহলে সে অপরাধী এবং নিন্দিত হিসাবে গণ্য হবে। এরশাদ হচ্ছে,
﴿ مَن جَآءَ بِٱلۡحَسَنَةِ فَلَهُۥ عَشۡرُ أَمۡثَالِهَاۖ وَمَن جَآءَ بِٱلسَّيِّئَةِ فَلَا يُجۡزَىٰٓ إِلَّا مِثۡلَهَا وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ١٦٠ ﴾ [الانعام: ١٦٠]
‘যে ব্যক্তি একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি যুলম করা হবে না’ (আন‘আম ১৬০)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে কাছীর (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পাপ কাজ পরিত্যাগকারী তিন ধরনেরঃ প্রথম শ্রেণীর পাপ পরিত্যাগকারী আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্যই পাপ বর্জন করে। আর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য পাপ বর্জনের কারণে তার আমলনামায় নেকী লেখা হবে। কেননা এক্ষেত্রে আমল এবং নিয়্যত উভয়ই বিদ্যমান রয়েছে। সেজন্য ছহীহ হাদীছে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘সে আমার জন্য পাপ বর্জন করেছে’। দ্বিতীয় শ্রেণীর পাপ বর্জনকারী ভুলবশতঃ এবং অন্যমনস্ক হয়ে পাপ বর্জন করে। আর এই শ্রেণীর পাপ বর্জনকারীর নেকী বা পাপ কোনটিই হবে না। কেননা সে কল্যাণেরও নিয়্যত করে নি, আবার মন্দ কাজও সম্পাদন করে নি। আরেক শ্রেণীর পাপ বর্জনকারী পাপ কাজের প্রচেষ্টা করার পর অপারগতা এবং অলসতাবশতঃ তা ত্যাগ করে। এই শ্রেণীর পাপ বর্জনকারী পাপ সম্পাদনকারীর মতই। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দু’জন মুসলিম তরবারী নিয়ে লড়াইয়ে লিপ্ত হলে হত্যাকারী এবং নিহত উভয়ই জাহান্নামে যাবে।” ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! হত্যাকারীর বিষয়টিতো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তি কেন জাহান্নামে যাবে? তিনি বললেন, কারণ নিহত ব্যক্তিও হত্যাকারীকে হত্যার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল’ (বুখারী, হা/৩১; মুসলিম, হা/৭২৫৩, আবূ বাকরা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত)।
হজ্জ ও ওমরা পালন ওয়াজিব
হজ্জ ও ওমরা ফরয হওয়ার পর দ্রুত সম্পাদন করা জীবনে একবার ওয়াজিব। একবারের বেশী হলে তা নফল হিসাবে গণ্য হবে। তবে হজ্জ বা ওমরার মানত করলে তা সম্পাদন করা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে কেউ নফল হজ্জ বা ওমরা পালন শুরু করলে তা পূর্ণ করাও ওয়াজিব হবে। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,
﴿ وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِۚ﴾ [البقرة: ١٩٦]
‘আর তোমরা আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পূর্ণ কর’ (বাক্বারাহ ১৯৬)।
হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণে পবিত্র কুরআন, ছহীহ সুন্নাহ এবং ইজমা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ال عمران: ٩٧]
‘আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, তার উপর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য এ ঘরের হজ্জ করা ফরয। কিন্তু যে ব্যক্তি তা মানে না; আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টি জগৎ থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ (আলে ইমরান ৯৭)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجِّ الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ»
‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: ‘আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মা‘বূদ নেই ও মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ করা এবং রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা’ (বুখারী, হা/৮; মুসলিম, হা/১১৩, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত)।
হাদীছে জিবরীলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِىَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً»
‘আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মা‘বূদ নেই ও মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা এবং সামর্থ্য থাকলে কা‘বায় হজ্জ করাই হচ্ছে ইসলাম’ (মুসলিম, হা/৯৩, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে হাদীছটি বর্ণিত)।
আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন,«أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فُرِضَ عَلَيْكُمُ الْحَجُّ فَحُجُّوا» ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করা হয়েছে। অতএব, তোমরা হজ্জ কর’। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল? প্রত্যেক বছর হজ্জ আদায় করা কি ফরয? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। লোকটি তিনবার একই কথা জিজ্ঞেস করলেন; অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, «لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ» ‘আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে প্রত্যেক বছর তা ফরয হয়ে যেত এবং তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হতে না’ (মুসলিম, হা/৩২৫৭)।
তাছাড়া যার মধ্যে হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তসমূহ বিদ্যমান থাকবে, তার উপর হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত পোষণ করেছেন।
নিম্নোক্ত হাদীছসমূহ ওমরা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করেঃ
১. আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! নারীদের উপর কি জিহাদ আছে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ তাদের উপর জিহাদ আছে; তবে তাতে লড়াই নেই। আর তা হচ্ছে, হজ্জ এবং ওমরা’ (আহমাদ, হা/২৫৩২২; ইবনে মাজাহ, হা/২৯০১; ইবনে খুযায়মা, হা/৩০৭৪)। ইমাম আহমাদ এবং ইবনে মাজাহ্‌র নিকটে হাদীছটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত বিশিষ্ট, আর ইবনে খুযায়মা হাদীছটি বর্ণনার পর বলেন, নারীদের উপর লড়াইবিহীন জিহাদ আছে’ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে চেয়েছেন যে, হজ্জের মত ওমরাও ওয়াজিব। কেননা (عليهن) ‘তাদের উপর জিহাদ আছে’ বাক্যটি ওয়াজিব সাব্যস্ত করে। কারণ নফল কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয় না।
২. ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীছে জিবরীলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَأَنْ تُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَحُجَّ وَتَعْتَمِرَ وَتَغْتَسِلَ مِنَ الْجَنَابَةِ وَأَنْ تُتِمَّ الْوُضُوءَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ»
‘আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মা‘বূদ নেই ও মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ ও ওমরা করা, বীর্যপাত অথবা সহবাস জনিত কারণে অপবিত্র হলে গোসল করা, পূর্ণরূপে অযূ করা এবং রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা-ই হচ্ছে ইসলাম’ (ইবনে খুযায়মা, হা/৩০৬৫, সনদ ‘ছহীহ’, বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত (ثقات); দারাক্বুতনী, ২/২৮২, তিনি এর সনদকে ‘ছহীহ’ বলেছেন)।
৩. আবূ রাযীন উক্বায়লী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেন,
«إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ، لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ، وَلَا الْعُمْرَةَ، وَلَا الظَّعْنَ، قَالَ: حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ»
‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার পিতা বৃদ্ধ মানুষ। তিনি হজ্জ, ওমরা বা সফর কোনটিই করতে সক্ষম নন’। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ এবং ওমরা আদায় করো’ (তিরমিযী, হা/৯৩০, তিনি বলেন, হাদীছটি ‘হাসান-ছহীহ’; হাদীছটি মুসলিমের শর্তবিশিষ্ট)।
৪. ছুবাই ইবনে মা‘বাদ ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি বেদুঈন খৃষ্টান ছিলাম; তবে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি জিহাদ করতে আগ্রহী, কিন্তু আমার উপর হজ্জ ও ওমরা ফরয। আমার সম্প্রদায়ের একজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তুমি হজ্জ ও ওমরা একসাথে আদায় করে নাও এবং কুরবানী কর। ফলে আমি একসাথে হজ্জ ও ওমরার ইহরাম বেঁধেছি। তখন ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) আমাকে বললেন, ‘তুমি তোমার নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত মোতাবেক আমল করেছ’ (আবূ দাঊদ, হা/১৭৯৯, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটির সনদ ‘ছহীহ’)।
হজ্জ ও ওমরা ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী
প্রত্যেকটি মুসলিম, বোধশক্তি সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়ষ্ক, স্বাধীন এবং সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ ও ওমরা ফরয। মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬ষ্ঠ শর্ত যুক্ত হবে; আর তা হচ্ছে, তাদের সাথে মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।
* অতএব, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কোন কাফের হজ্জ এবং ওমরার আদেশে আদিষ্ট নয়; বরং কাফের অবস্থায় কেউ তা আদায় করলেও শুদ্ধ হবে না। কেননা কাফের সর্বপ্রথম শরী‘আতের উছূল (أصول) বা ঈমান আনয়নে আদিষ্ট। তবে উছূল বা মৌলিক বিষয়ের সাথে শরী‘আতের অন্যান্য ফুরূ বা শাখা-প্রশাখায় তারা আদিষ্ট কিনা সে ব্যাপারে মতানৈক্য থাকলেও সঠিক কথা হচ্ছে, তারা মূল উছূলের অনুগামী হয়ে শরী‘আতের অন্যান্য ফুরূ বা শাখা-প্রশাখা প্রতিপালনেও আদিষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَوَيۡلٞ لِّلۡمُشۡرِكِينَ ٦ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُم بِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ كَٰفِرُونَ ٧﴾ [فصلت: ٦، ٧]
‘আর মুশরিকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে’ (ফুছছিলাত, ৬-৭)।
অনুরূপভাবে জাহান্নামে কাফেরদের বক্তব্য তুলে ধরে আল্লাহ বলেন,
﴿ قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ ٤٣ وَلَمۡ نَكُ نُطۡعِمُ ٱلۡمِسۡكِينَ ٤٤ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ ٱلۡخَآئِضِينَ ٤٥ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤٦ حَتَّىٰٓ أَتَىٰنَا ٱلۡيَقِينُ ٤٧ ﴾ [المدثر: ٤٣، ٤٧]
‘তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায় করতাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না। আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। আর আমরা মৃত্যুবধি প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম’ (মুদ্দাছছির ৪৩-৪৭)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلَّىٰ ٣١ وَلَٰكِن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ ٣٢ ﴾ [القيامة: ٣١، ٣٢]
‘সে বিশ্বাস করেনি এবং ছালাত আদায় করেনি; পরন্তু মিথ্যারোপ করেছে ও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে’ (ক্বিয়ামাহ ৩১-৩২)। শরী‘আতের ‘ফুরূ’ (فروع) বা শাখা-প্রশাখাতে তাদেরকে সম্বোধন করার অর্থ হল, উছূল এবং ফুরূ ত্যাগ করার কারণে তাদেরকে অতিরিক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। আর এ কারণেই মুসলিমগণ যেমন জান্নাতে মর্যাদার দিক দিয়ে সমান হবে না, তেমনি কাফেররাও জাহান্নামের নিম্ন স্তরে অবস্থানের দিক দিয়ে সমান হবে না। আর কুফরীর ধরন বিভিন্ন হওয়ার কারণে জাহান্নামে তাদের অবস্থানও বিভিন্ন হবে। যেমনঃ একজন মুনাফিক্ব, অগ্নিপূজক ও ইয়াহুদী-খৃষ্টানের স্বাভাবিক কুফর এবং তাদের অন্য আরেক জন কর্তৃক কোনো মুসলিমকে আল্লাহ্‌র রাস্তা থেকে বাধা প্রদানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আর সেজন্যই মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَصَدُّواْ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ زِدۡنَٰهُمۡ عَذَابٗا فَوۡقَ ٱلۡعَذَابِ بِمَا كَانُواْ يُفۡسِدُونَ ٨٨ ﴾ [النحل: ٨٨]
‘যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহ্‌র পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করত’ (নাহ্‌ল ৮৮)। হাফেয ইবনে কাছীর (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অর্থাৎ তাদের কুফরীর কারণে শাস্তি দেওয়া হবে, আর লোকদেরকে হক্বের পথ থেকে বাধা দানের কারণে দ্বিগুণ শাস্তি দেওয়া হবে’। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بَعۡدَ إِيمَٰنِهِمۡ ثُمَّ ٱزۡدَادُواْ كُفۡرٗا لَّن تُقۡبَلَ تَوۡبَتُهُمۡ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلضَّآلُّونَ ٩٠ ﴾ [ال عمران: ٩٠]
‘যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে এবং কুফরীতে বৃদ্ধি ঘটিয়েছে, কস্মিনকালেও তাদের তওবা ক্ববুল করা হবে না। আর তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট’ (আলে ইমরান ৯০)। অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَظَلَمُواْ لَمۡ يَكُنِ ٱللَّهُ لِيَغۡفِرَ لَهُمۡ وَلَا لِيَهۡدِيَهُمۡ طَرِيقًا ١٦٨ إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ﴾ [النساء: ١٦٨، ١٦٩]
‘যারা কুফরী করেছে এবং যুলম করেছে, আল্লাহ কখনও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং সরল পথ দেখাবেন না। তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের পথ। সেখানে তারা বাস করবে অনন্তকাল’ (নিসা ১৬৮-১৬৯)।
* অনুরূপভাবে কোনো পাগলও হজ্জ ও ওমরার নির্দেশের আওতাভুক্ত নয়। সেজন্য কোনো পাগল হজ্জ ও ওমরা আদায় করলেও হতবুদ্ধি হওয়ার কারণে তা তার পক্ষ থেকে শুদ্ধ হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِىِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ»
‘তিন শ্রেণীর ব্যক্তির উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে: ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত, অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়ষ্ক না হওয়া পর্যন্ত এবং পাগল বিবেক-বুদ্ধি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৪০৩, হাদীছটি আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী ছহীহ সূত্রে বর্ণিত; আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) এবং ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকেও এ মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে)।
অনুরূপভাবে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালক-বালিকা এবং দাসের উপরেও হজ্জ-ওমরা ওয়াজিব নয়। তবে তারা যদি এতদুভয়টি আদায় করে, তাহলে তা তাদের পক্ষ থেকে শুদ্ধ হবে এবং যারা তাদেরকে হজ্জ ও ওমরা করিয়েছে, তারা সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«رَفَعَتِ امْرَأَةٌ صَبِيًّا لَهَا فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِهَذَا حَجٌّ قَالَ نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ»
‘এক মহিলা তার বাচ্চাকে উঁচু করে ধরে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এর কি হজ্জ হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আর তুমি নেকী পাবে’ (মুসলিম, হা/৩২৫৪)। ইমাম বুখারী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«حُجَّ بِى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - وَأَنَا ابْنُ سَبْعِ سِنِينَ»
‘সাত বছর বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমাকে নিয়ে হজ্জ করা হয়েছিল’ (হা/১৮৫৮)। তবে তাদের পক্ষ থেকে হজ্জ-ওমরা শুদ্ধ হলেও প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পরে এবং দাসমুক্তির পরে সামর্থ্যবান হলে তাদেরকে আবার তা আদায় করতে হবে। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«احْفَظُوا عَنِّي، وَلاَ تَقُولُوا: قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ، أَيُّمَا عَبْدٍ حَجَّ بِهِ أَهْلُهُ، ثُمَّ أُعْتِقَ فَعَلَيْهِ الْحَجُّ، وَأَيُّمَا صَبِيٍّ حَجَّ بِهِ أَهْلُهُ صَبِيًّا، ثُمَّ أَدْرَكَ فَعَلَيْهِ حَجَّةُ الرَّجُلِ»
‘আমার পক্ষ থেকে তোমরা মুখস্থ করে নাও, তবে তোমরা বলো না যে, ইবনে আব্বাস বলেছেন, (তা হচ্ছে এই যে): কোনো দাসকে তার পরিবার-পরিজন হজ্জ করালে, দাসমুক্তির পর তার উপর আবার তা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে যে কোনো অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে-মেয়েকে তার পরিবার-পরিজন বাল্যাবস্থায় হজ্জ করাল, প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পর তার উপর তা আবার ওয়াজিব হবে’ (ইবনু আবী শায়বাহ, হা/১৪৮৭৫, সনদ ‘ছহীহ’, উল্লেখ্য যে, ইবনু আবী শায়বাহ ইমাম বুখারী ও মুসলিমের উস্তাদ এবং তাঁর সনদ তাঁদের শর্তের অনুরূপ; বায়হাক্বী মারফূ সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেন, ৪/৩২৫)। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর উক্তি ‘আমার পক্ষ থেকে তোমরা মুখস্থ করে নাও, তবে তোমরা বলো না যে, ইবনে আব্বাস বলেছেন’ প্রমাণ করে যে, হাদীছটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত।
হজ্জ ও ওমরার ক্ষেত্রে সামর্থ্যবান বলতে দৈহিক ও আর্থিক উভয় সামর্থ্যকে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ ﴾ [ال عمران: ٩٧]
‘আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, তার উপর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য এ ঘরের হজ্জ করা ফরয’ (আলে ইমরান ৯৭)। অতএব, বার্ধক্য জনিত কারণে অথবা সুস্থ হওয়ার আশা করা যায় না এমন অসুস্থতার কারণে কেউ হজ্জ ও ওমরা আদায়ে অপারগ হলে তা তার উপর ওয়াজিব নয়। অনুরূপভাবে শারীরিক সামর্থ্য আছে কিন্তু অর্থ নেই এমন ব্যক্তির উপরেও হজ্জ-ওমরা ওয়াজিব নয়। তবে শারীরিকভাবে অপারগ ব্যক্তির নিকটে অর্থ থাকলে তাকে অবশ্যই কারো মাধ্যমে বদলী হজ্জ করিয়ে নিতে হবে। উল্লেখ্য যে, বদলী হজ্জ বা ওমরা আদায়কারীকে আগে নিজের পক্ষ থেকে তা আদায় করতে হবে। আবূ রাযীন উক্বায়লী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার পিতা বৃদ্ধ মানুষ। তিনি হজ্জ, ওমরা বা সফর কোনটিই করতে সক্ষম নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ এবং ওমরা আদায় করে দাও’ (হাদীছটি ‘হজ্জ ও ওমরা ওয়াজিব’ অনুচ্ছেদে গত হয়ে গেছে)। ফাযল ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘বিদায় হজ্জের বছরে খাছ‘আম গোত্রের এক মহিলা এসে বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার বৃদ্ধ পিতার উপর হজ্জ ফরয হয়েছে; কিন্তু তিনি সফর করতে সক্ষম নন। এক্ষণে তাঁর পক্ষ থেকে আমি হজ্জ আদায় করে দিলে কি তা তার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ’ (বুখারী, হা/১৮৫৪; মুসলিম, হা/৩২৫২)। হাদীছটি আরো প্রমাণ করে যে, পুরুষের পক্ষ থেকে মহিলাও বদলী হজ্জ করতে পারে।
কারো আর্থিক সামর্থ্য থাকা অবস্থায় সে মারা গেলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে হজ্জের খরচের সমপরিমাণ অর্থ নিয়ে হজ্জ করেছে এমন কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করিয়ে নিতে হবে। বুরায়দাহ ইবনুল হাছীব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছে এসেছে, এক মহিলার মা মারা গেলে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আমার মা কখনও হজ্জ করেন নি, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে হজ্জ কর’ (মুসলিম, হা/২৬৯৭)।
কোন মহিলার দৈহিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জে তার সাথে মাহরাম পুরুষ না থাকা পর্যন্ত তাকে সামর্থ্যবান গণ্য করা হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ وَلَا يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ»
‘মাহরাম পুরুষের সাথে ছাড়া কোন মহিলা সফর করবে না। কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকটে তার মাহরামের অনুপস্থিতিতে যাবে না। এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি অমুক সৈন্য দলের সাথে যুদ্ধে যেতে চাই, কিন্তু আমার স্ত্রী চায় হজ্জে যেতে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, «اخْرُجْ مَعَهَا» তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে যাও’ (বুখারী, হা/১৮৬২; মুসলিম, হা/৩২৭২, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত)। উক্ত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীকে যুদ্ধ ছেড়ে তার স্ত্রীর সাথে হজ্জের সফরে যেতে বললেন। কোন মহিলা মাহরাম ছাড়া হজ্জ সম্পাদন করলে তার হজ্জ শুদ্ধ হবে। তবে মাহরাম ছাড়া সফর করার কারণে সে গোনাহগার হবে। কেননা মাহরাম সঙ্গে থাকা হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত, হজ্জ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। অবশ্য মক্কাবাসী কোনো মহিলা নিরাপদ ও বিশ্বস্ত যে কোন সফর সঙ্গীর সাথে হজ্জ করতে পারে। কেননা মক্কা থেকে হজ্জ করলে কোনো সফরের প্রয়োজন পড়ে না। অতএব, সেখানে মাহরামেরও কোনো প্রশ্ন আসে না।
আর একজন মহিলার মাহরাম হচ্ছে, তার স্বামী এবং বংশ ও অন্য যে কোন বৈধ সূত্রে তার জন্য স্থায়ীভাবে বিবাহ বন্ধন হারাম এমন পুরুষ। বংশ সূত্রে স্থায়ী মাহরাম পুরুষের উদাহরণ হচ্ছে, মহিলার পিতা, ছেলে, ভাই, চাচা, মামা। অন্য দু’টি ‘বৈধ সূত্রে’ কেউ স্থায়ী মাহরাম হতে পারেঃ ১. দুগ্ধপান সম্পর্কিত সূত্রে, যেমন: মহিলার দুধপান সম্পর্কীয় পিতা, ছেলে, ভাই, চাচা, মামা; ২. বৈবাহিক সূত্রে, যেমন: মহিলার শ্বশুর, তার স্বামীর অন্য স্ত্রীর ছেলে, তার মায়ের অন্য স্বামী- যার সাথে তার মায়ের মিলন ঘটেছে, মেয়ের জামাই।
‘বৈধ সূত্র’ দ্বারা নিজ স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগকারী স্বামীকে (যাতে লি‘আন হয়ে তাদের মধ্যে পৃথকীকরণ হয়েছে এমন লোককে) মাহরামের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেননা অভিযুক্ত স্ত্রী ঐ স্বামীর জন্য চিরদিনের জন্য হারাম হবে এবং সে তার মাহরাম হতে পারবে না। যেসব পুরুষ কোনো মহিলার জন্য অস্থায়ীভাবে হারাম, তারাও মাহরাম হতে পারবে না। যেমন: স্ত্রীর বোন, তার ফুফু, তার খালা, স্ত্রীর ভাই ও বোনের মেয়ে। কেননা কোনো পুরুষ কোনো মহিলার জন্য মাহরাম হওয়ার শর্ত হল, তাদের উভয়ের মধ্যে চিরদিনের জন্য বৈবাহিক বন্ধন হারাম হতে হবে।
হজ্জ ও ওমরার রুকনসমূহ
হজ্জ ও ওমরার রুকন বলতে ঐসব আমল উদ্দেশ্য, যেগুলি হজ্জ ও ওমরায় অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে এবং অন্য কোন আমল যেগুলির স্থলাভিষিক্ত হতে পারবে না।
ওমরার রুকন ৩টি। যথা: ইহরাম বাঁধা, ত্বওয়াফ করা এবং সা‘ঈ করা। আর এই রুকনগুলি হজ্জেরও রুকন; তবে হজ্জের ক্ষেত্রে ৪র্থ আরেকটি রুকন যুক্ত হবে, তা হচ্ছে, আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।
ইহরাম অর্থ, হজ্জ শুরুর নিয়্যত করা। মনে মনে নিয়্যত না করলে ইহরাম সম্পন্ন হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى»
‘প্রত্যেকটি কাজ নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকেই তার নিয়্যত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে’ (বুখারী, হা/১; মুসলিম, হা/৪৯২৭, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত)। ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, কেউ হজ্জের তালবিয়া পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে ওমরার তালবিয়া পড়ে ফেললে অথবা ওমরার তালবিয়া পড়ার ইচ্ছা করে হজ্জের তালবিয়া পড়ে ফেললে তার অন্তরের নিয়্যতটাই ধর্তব্য হবে; মৌখিক উচ্চারণ নয়’ (ইজমা/৫৫)।
এখানে ত্বওয়াফ (যা রুকন হিসেবে বর্ণিত হলো তা) দ্বারা ত্বওয়াফে ইফাদা বা হজ্জের ত্বওয়াফ উদ্দেশ্য, যা আরাফা এবং মুযদালিফা থেকে ফিরে এসে করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ ٢٩ ﴾ [الحج: ٢٩]
‘তারা যেন এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে’ (হজ্জ ২৯)। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ করলাম। মুযদালিফা থেকে ফিরে কুরবানীর দিন ছফিইয়া ঋতুগ্রস্ত হয়ে গেলেন। একজন পুরুষ তার স্ত্রীর কাছ থেকে যা কামনা করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছফিইয়ার কাছ থেকে তাই কামনা করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! উনিতো ঋতুগ্রস্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন «حَابِسَتُنَا هِيَ؟» ‘সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে দিল?’ তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সে কুরবানীর দিনে ঋতুস্রাব আসার আগেই ত্বওয়াফে ইফাদ্বা সম্পন্ন করে ফেলেছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমরা মক্কা ত্যাগ কর’ (বুখারী, হা/১৭৩৩; মুসলিম, হা/৩২২৩)।
এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে দিল?’ অর্থ হচ্ছে, সে পবিত্র হয়ে ত্বওয়াফে ইফাদ্বা সম্পন্ন করা পর্যন্ত কি আমাদেরকে মক্কাতে আটকিয়ে দিল? ইবনে ক্বুদামা (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ত্বওয়াফে ইফাদ্বা হজ্জের একটি রুকন, এটি ব্যতীত হজ্জ পূর্ণ হবে না এবং এ বিষয়ে কোন মতানৈক্য আছে বলে আমাদের জানা নেই। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ ٢٩ ﴾ [الحج: ٢٩]
‘তারা যেন এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে’ (হাজ্জ ২৯)। ইবনে আব্দুল বার্র (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, এটি হজ্জের ফরযসমূহের একটি, তাতে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই’ (মুগনী, ৫/৩১১)।
আর ওমরা পালনকারী মক্কায় গমন করে সর্ব প্রথম যে ত্বওয়াফ করে, সেটিই হচ্ছে ওমরার ক্ষেত্রে রুকন। বিদায়াতুল মুজতাহিদ প্রণেতা বলেন, ‘সবাই এ বিষয়ে একমত যে, ত্বওয়াফে ক্বুদূম অর্থাৎ ওমরার ত্বওয়াফ ব্যতীত অন্য কোনো ত্বওয়াফ ওমরাকারীর উপর অপরিহার্য নয়’ (১/৩৪৪)। ইবনে ক্বুদামা (রহেমাহুল্লাহ) ত্বওয়াফে ইফাদ্বা হজ্জের রুকন একথা প্রমাণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আর হজ্জ যেহেতু দুই ইবাদত (হজ্জ ও ওমরা) এর মধ্যে একটি, সেহেতু ওমরার মত সেখানেও ত্বওয়াফ একটি রুকন’ (আল-মুগনী, ৫/৩১২)।
ওমরা (العمرة)-এর আভিধানিক অর্থ: সাক্ষাৎ, সফর, পরিদর্শন ইত্যাদি। পরিভাষায়, কা‘বা ঘরের ত্বওয়াফ এবং ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করার উদ্দেশ্যে কা‘বা ঘরের সাক্ষাৎকে ‘ওমরা’ বলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমরাতুল ক্বাযা ও জে‘রানাহ-এর ওমরাতে কা‘বা ঘর ত্বওয়াফ করেন এবং ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করেন। আমর ইবনে দীনার বলেন, ‘আমরা ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কে জিজ্ঞেস করলাম, যে ব্যক্তি ওমরাতে কা‘বা ঘরের ত্বওয়াফ করেছে, কিন্তু ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করে নি; সে কি স্ত্রী সহবাস করতে পারে?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমন করে কা‘বা ঘর ত্বওয়াফ করেছেন, মাক্বামে ইবরাহীমের পেছনে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেছেন এবং ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যেই তোমাদের জন্য উত্তম নমুনা রয়েছে’ (বুখারী, হা/১৭৯৩; মুসলিম, হা/২৯৯৯)।
ওমরার ক্ষেত্রে সা‘ঈ করতে হবে ত্বওয়াফের পরে; যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওমরাতুল ক্বাযা ও জে‘রানাহ-এর ওমরাতে এবং ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর হাদীছে গত হয়ে গেছে। আর তামাত্তু হজ্জ পালনকারীকে ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে সা‘ঈ করতে হবে। পক্ষান্তরে ক্বিরান ও ইফরাদ হজ্জ আদায়কারী ত্বওয়াফে ক্বুদূম অথবা ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে সা‘ঈ করবে। যদি তিনি ত্বওয়াফে ক্বুদূমের পরে সা‘ঈ না করে থাকেন, তবে অবশ্যই তাকে ত্বওয়াফে ইফাদ্বার পরে সা‘ঈ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ فَمَنۡ حَجَّ ٱلۡبَيۡتَ أَوِ ٱعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَاۚ ﴾ [البقرة: ١٥٨]
‘নিঃসন্দেহে ছাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যারা কা‘বা ঘরে হজ্জ বা ওমরা পালন করে, তাদের পক্ষে এ দু’টি প্রদক্ষিণ করাতে কোনো দোষ নেই’ (বাক্বারাহ ১৫৮)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا أَيُّهَا النَّاسُ اسْعَوْا فَإِنَّ السَّعْيَ قَدْ كُتِبَ عَلَيْكُمْ»
‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা সা‘ঈ কর। কেননা সা‘ঈ তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে’ (দারাক্বুতনী, ২/২৫৫; দারাক্বুতনীর সূত্রে বায়হাক্বীও হাদীছটি বর্ণনা করেন, ৫/৯৭, মা‘রূফ ইবনে মুশকান ব্যতীত দারাক্বুতনীর বর্ণনাকারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য (ثقات), মারূফ সম্পর্কে ইবনে হাজার (রহেমাহুল্লাহ) তাঁর প্রসিদ্ধ ‘তাক্বরীবুত তাহযীব’-এ বলেন, তিনি ‘ছদূক্ব’ (صدوق) বা বিশ্বস্ত। অতএব, হাদীছটির সনদ ‘হাসান’। ইমাম নববী (রহেমাহুল্লাহ) এটিকে ‘হাসান’ বলেছেন (মাজমূ, ৮/৮২) এবং মিয্‌যী ও ইবনু আব্দিল হাদী ‘ছহীহ’ বলেছেন। শায়খ আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) প্রণীত ‘ইরওয়াউল গালীল’-এর ১০৭২ নং হাদীছ দ্র:, এখানে হাদীছটির আরো কয়েকটি সনদ উল্লেখিত হয়েছে)। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন,
«مَا أَتَمَّ اللَّهُ حَجَّ امْرِئٍ وَلَا عُمْرَتَهُ لَمْ يَطُفْ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ»
‘ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ না করা পর্যন্ত আল্লাহ কারো হজ্জ বা ওমরা কোনটাই পূর্ণ করবেন না’ (বুখারী, হা/১৭৯০; মুসলিম, হা/৩০৮০)। এই আছারটির শব্দগুলি ইবনে জারীর (রহেমাহুল্লাহ) সূরা বাক্বারাহ্‌র ১৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এভাবে উল্লেখ করেন, আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করল না, সে মূলতঃ হজ্জই করল না। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٥٨]
‘নিঃসন্দেহে ছাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহের অন্যতম’ (বাক্বারাহ ১৫৮)। ইবনে জারীর (রহেমাহুল্লাহ)-এর উক্ত বর্ণনার সূত্র বুখারী ও মুসলিমের শর্ত সাপেক্ষ।
সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ তিনটি অর্থাৎ ইহরাম বাঁধা, ত্বওয়াফ করা এবং সা‘ঈ করা হজ্জ ও ওমরার রুকন। সা‘ঈর ক্ষেত্রে মতানৈক্য থাকলেও অধিকাংশ বিদ্বানগণের নিকটে এটিও রুকন।
হজ্জের চতুর্থ রুকন হচ্ছে আরাফায় অবস্থান করা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ ﴾ [البقرة: ١٩٨]
‘অতঃপর যখন তোমরা আরাফা থেকে ফিরে আসবে’ (বাক্বারাহ ১৯৮)। আর আরাফায় অবস্থানের পরেই তো সেখান থেকে ফিরে আসা হয়। আরাফায় অবস্থান এমন একটি রুকন, যা ছুটে গেলে হজ্জই হবে না। আব্দুর রহমান ইবনে ইয়া‘মুর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফায় অবস্থান করতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর নিকটে নাজ্‌দের কতিপয় লোক এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! হজ্জ কেমন করে (আদায় করব)? তিনি বললেন,
«الْحَجُّ عَرَفَةُ، فَمَنْ جَاءَ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ لَيْلَةَ جَمْعٍ، فَقَدْ تَمَّ حَجُّهُ»
‘আরাফায় অবস্থানই হচ্ছে হজ্জ। অতএব, যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফজরের পূর্বে এখানে আসল, তার হজ্জ পূর্ণ হল’ (সুনানে আরবা‘আহ, হাদীছের শব্দগুলি ইবনে মাজাহ্‌র, হা/৩০১৫; বুকাইর ইবনে আত্বা নামক বর্ণনাকারী ব্যতীত হাদীছটির সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্ত সাপেক্ষ, বুকাইর হচ্ছেন নির্ভরযোগ্য (ثقة)। ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, আরাফায় অবস্থান করা ফরয। যার এখানকার অবস্থান ছুটে যাবে, তার হজ্জ নেই’ (আল-ইজমা/৬৪)।
হজ্জ ও ওমরার ওয়াজিবসমূহ
হজ্জ ও ওমরার ঐসব আমলকে ওয়াজিব বলা হয়, যেগুলি অবশ্যই পালনীয়; তবে সেগুলি পালন না করা হলে ‘দম’ (دم) দিয়ে তার ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। যার উপর দম ওয়াজিব হবে, সে তা থেকে খেতে পারবে না; বরং তা পুরোটাই হারামের দরিদ্রদেরকে খাওয়াতে হবে। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ্জ-ওমরার কোনো আমল ছেড়ে দিবে, সে দম দিবে’ (মালেক, মুওয়াত্ত্বা, ১/৪১৯, সনদ ‘ছহীহ’)।
ওমরার ওয়াজিব ২টি এবং হজ্জের ওয়াজিব ৭টিঃ
১. মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীক্বাতসমূহের বর্ণনা দেওয়ার পর বলেন,
«هُنَّ لَهُنَّ وَلِكُلِّ آتٍ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِمْ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَمَنْ كَانَ دُونَ ذَلِكَ فَمِنْ حَيْثُ أَنْشَأَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ»
‘এসব এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা হজ্জ ও ওমরা করতে চায় এবং তারা ব্যতীত যারাই এসব এলাকা দিয়ে হজ্জ ও ওমরা করতে আসবে, এগুলি তাদের সকলের মীক্বাত। যারা এসব এলাকার ভেতরে বসবাস করে, তারা তাদের অবস্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবে; এমনকি মক্কাবাসী মক্কা থেকে’ (বুখারী, হা/১৮৪৫; মুসলিম, হা/২৮০৪, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত)। অতএব, হজ্জ ও ওমরা পালনেচ্ছু যে-ই এই মীক্বাতগুলির কোনো একটি অতিক্রম করবে, তাকেই সেই মীক্বাত থেকে অবশ্যই ইহরাম বাঁধতে হবে।
২. হজ্জ ও ওমরা থেকে হালাল হওয়ার সময় মাথা মুণ্ডন করা অথবা চুল ছেটে ফেলা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَّقَدۡ صَدَقَ ٱللَّهُ رَسُولَهُ ٱلرُّءۡيَا بِٱلۡحَقِّۖ لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمۡ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَۖ﴾ [الفتح: ٢٧]
‘আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ তোমরা অবশ্যই নিরাপদে মস্তকমুণ্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায় মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে, তোমরা কাউকে ভয় করবে না’ (ফাত্‌হ ২৭)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَا تَحۡلِقُواْ رُءُوسَكُمۡ حَتَّىٰ يَبۡلُغَ ٱلۡهَدۡيُ مَحِلَّهُۥۚ﴾ [البقرة: ١٩٦]
‘আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুণ্ডন করবে না, যতক্ষণ না কুরবানী যথাস্থানে পৌঁছে যায়’ (বাক্বারাহ ১৯৬)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُحَلِّقِينَ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلِلْمُقَصِّرِينَ قَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُحَلِّقِينَ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلِلْمُقَصِّرِينَ قَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُحَلِّقِينَ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلِلْمُقَصِّرِينَ قَالَ وَلِلْمُقَصِّرِينَ»
‘হে আল্লাহ! আপনি মাথা মুণ্ডনকারীদেরকে ক্ষমা করুন’। ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! চুল কর্তনকারীদের কি হবে? তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি মাথা মুণ্ডনকারীদেরকে ক্ষমা করুন’। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! চুল কর্তনকারীদের কি হবে? তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি মাথা মুণ্ডনকারীদেরকে ক্ষমা করুন’। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! চুল কর্তনকারীদের কি হবে? তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি চুল কর্তনকারীদেরকে ক্ষমা করুন’ (বুখারী, হা/১৭২৮; মুসলিম, হা/৩১৪৮, আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত)।
মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধা এবং মাথা মুণ্ডন করা বা সমস্ত মাথার চুল ছেটে ফেলা হজ্জ ও ওমরা উভয় ক্ষেত্রেই ওয়াজিব।
৩. যে ব্যক্তি দিনের বেলায় আরাফায় অবস্থান করবে, তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জের বিবরণ সম্বলিত জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,
«فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَذَهَبَتِ الصُّفْرَةُ قَلِيلاً حَتَّى غَابَ الْقُرْصُ»
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত (আরাফায়) অবস্থান করলেন’ (মুসলিম, হা/২৯৫০)। আর স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, ‘তোমরা (আমার কাছ থেকে) হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখ। আমি জানি না, সম্ভবতঃ আমার এই হজ্জের পরে আমি আর হজ্জ করব না’ (মুসলিম, হা/৩১৩৭, জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত)।
৪. মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِۖ ﴾ [البقرة: ١٩٨]
‘অতঃপর যখন আরাফা থেকে ফিরে আসবে, তখন মাশ‘আরে হারামের নিকটে আল্লাহ্‌র যিক্‌র কর’ (বাক্বারাহ ১৯৮)। এখানে মাশ‘আরে হারাম অর্থ মুযদালিফা। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সকাল পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করেছেন। তবে তিনি দুর্বল নারী এবং বাচ্চাদেরকে শেষ রাতে মিনায় যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন (বুখারী, হা/১৬৭৬; মুসলিম, হা/৩১৩০, ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে)। বুখারী ও মুসলিম ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকেও হাদীছটি বর্ণনা করেন (বুখারী, হা/১৬৭৭; মুসলিম, হা/৩১২৬)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কতিপয় ওযরগ্রস্ত মানুষকে অনুমতি দেওয়ার অর্থই হচ্ছে, এখানে রাত্রি যাপন করা ওয়াজিব। কেননা মুযদালিফায় রাত্রি যাপন ওয়াজিব না হলে অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসত না।
৫. কুরবানীর দিন সূর্য ঢলে যাওয়ার আগে বা পরে জামরাতুল আক্বাবায় এবং তাশরীক্বের দিনগুলিতে অর্থাৎ ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা। জাবের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীছে এসেছে,
«رَمَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- الْجَمْرَةَ يَوْمَ النَّحْرِ ضُحًى وَأَمَّا بَعْدُ فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ»
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সকালে জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করেন। তবে এরপরের দিনগুলিতে সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে নিক্ষেপ করেন’ (মুসলিম, হা/৩১৪১)। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘কুরবানীর দিন মিনাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল এবং তিনি বলছিলেন, কোনো অসুবিধা নেই। এক ব্যক্তি তাকে বললেন, আমি কুরবানীর পশু যবেহ করার আগেই মাথা মুণ্ডন করে ফেলেছি। তিনি বললেন, এখন যবেহ কর, সমস্যা নেই। লোকটি বললেন, সন্ধ্যার পরে কংকর নিক্ষেপ করেছি। তিনি বললেন, সমস্যা নেই’ (বুখারী, হা/১৭৩৫)।
ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, সূর্য ঢলে গেলেই কংকর নিক্ষেপ করতাম’ (বুখারী, হা/১৭৪৬) ।
আছেম ইবনে আদি (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَخَّصَ لِلرُّعَاةِ فِي الْبَيْتُوتَةِ يَرْمُونَ يَوْمَ النَّحْرِ وَالْيَوْمَيْنِ اللَّذَيْنِ بَعْدَهُ يَجْمَعُونَهُمَا فِي أَحَدِهِمَا»
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশুর দায়িত্বে নিয়োজিত লোকদেরকে মিনায় রাত্রি যাপনের ক্ষেত্রে ছাড় দিতেন। ফলে তাঁরা কুরবানীর দিন কংকর মারতেন এবং তৎপরবর্তী দুই দিনের কংকর একদিনে একসঙ্গে মেরে দিতেন’ (নাসা‘ঈ, হা/৩০৬৯, সনদ ছহীহ)। উক্ত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক পশু দেখাশুনার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকদেরকে দুই দিনের কংকর একদিনে একসঙ্গে মারার অনুমতি দেওয়া এবং তাঁদের উপর থেকে কংকর নিক্ষেপের দায়িত্ব রহিত না হওয়াই প্রমাণ করে যে, কংকর মারা ওয়াজিব।
৬. বিলম্বকারীদের জন্য তাশরীক্বের তিন রাত এবং তাড়াহুড়া করে প্রস্থানকারীদের জন্য প্রথম দুই রাত মিনায় যাপন করা। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوۡمَيۡنِ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِۖ لِمَنِ ٱتَّقَىٰۗ﴾ [البقرة: ٢٠٣]
‘আর তোমরা নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে আল্লাহ্‌র যিক্‌র কর। অতঃপর যে ব্যক্তি প্রথম দুই দিনে তাড়াহুড়া করে চলে যাবে, তার জন্য কোন পাপ নেই। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাড়াহুড়া না করে থেকে যাবে, তাঁর উপর কোন পাপ নেই। অবশ্য যারা ভয় করে’ (বাক্বারাহ ২০৩)। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আইয়ামে তাশরীক্বের তিন রাতই মিনায় যাপন করেন এবং ১৩ তারিখে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর মিনা ত্যাগ করেন। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক পানি পরিবেশনকারী এবং পশু দেখাশুনায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে তাশরীক্বের রাত্রিগুলি মিনায় না কাটানোর অনুমতি প্রদানই প্রমাণ করে যে, মিনায় রাত্রি যাপন ওয়াজিব। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্ত্বালিব হাজীদেরকে পানি পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত থাকায় তাশরীক্বের রাত্রিগুলি মক্কায় কাটানোর অনুমতি চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি দেন’ (বুখারী, হা/১৬৩৪; মুসলিম, হা/৩১৭৭)। পূর্বে উল্লেখিত আছেম ইবনে আদি (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছও মিনায় রাত্রি যাপন ওয়াজিব সাব্যস্ত করে। অতএব, পানি পরিবেশনকারী এবং পশু দেখাশুনায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মত যাদের মিনার বাইরে রাত্রি যাপনের অবশ্য প্রয়োজন দেখা দিবে, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতির আওতায় পড়বে। যেমন: নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ, সেনাবাহিনী, ডাক্তার প্রমুখ।
৭. বিদায়ী ত্বওয়াফ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ত্যাগের সময় বিদায়ী ত্বওয়াফ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘(মক্কায়) লোকদেরকে সর্বশেষ যে কাজটির আদেশ করা হয়েছে, তা হচ্ছে বায়তুল্লাহ্‌র ত্বওয়াফ। তবে ঋতুবতীদের ক্ষেত্রে বিধান শিথিল করা হয়েছে’ (বুখারী, হা/১৭৫৫; মুসলিম, হা/৩২২০)। হাদীছটিতে ঋতুবতী মহিলাদেরকে বিদায়ী ত্বওয়াফের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার অর্থই হচ্ছে এটি ওয়াজিব। প্রসূতি অবস্থায় পতিত মহিলারাও এই ছাড়ের অন্তর্ভুক্ত। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘লোকেরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাচ্ছিল; অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বিদায়ী ত্বওয়াফ না করা পর্যন্ত কেউ যেন মক্কা ত্যাগ না করে’ (মুসলিম, হা/৩২১৯)। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত হাদীছে ছফিইয়া (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) ঋতুগ্রস্ত হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সে কি আমাদেরকে মক্কায় আটকিয়ে দিল?’ অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানলেন যে, সে কুরবানীর দিনে ত্বওয়াফে ইফাদ্বা সম্পন্ন করেছে, তখন বললেন, ‘তাহলে এখন তোমরা মক্কা ছাড়তে পার’ (বুখারী, হা/১৭৩৩; মুসলিম, হা/৩২২৩)। হাদীছটি হজ্জ ও ওমরার রুকন উল্লেখ করার সময় গত হয়ে গেছে।


হজ্জ ও ওমরার মুস্তাহাবসমূহ
হজ্জের ঐসব কর্মকে মুস্তাহাব বলে, যেগুলি নেকী প্রাপ্তির আশায় হাজীদের বাস্তবায়ন করা উচিৎ; তবে তা অপরিহার্য নয়। কোন হাজী এগুলি ছেড়ে দিলে যেমনিভাবে তার উপর দম ওয়াজিব হবে না, তেমনি সে পাপীও হবে না। তবে অপছন্দ এবং অবজ্ঞাবশতঃ ছেড়ে দিলে গোনাহগার হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِى فَلَيْسَ مِنِّى»
‘সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে আমার দলভুক্ত নয়’ (বুখারী, হা/৫০৬৩; মুসলিম, হা/১৪০১)। হাদীছটিতে সুন্নাত বলতে পবিত্র কুরআন ও হাদীছে উল্লেখিত ফরয, ওয়াজিব এবং মুস্তাহাবসমূহ উদ্দেশ্য। হজ্জের অনেকগুলি মুস্তাহাব রয়েছে; তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: হজ্জ ও ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমনকারী কর্তৃক প্রথম ত্বওয়াফে ‘রমল’ এবং ‘ইযত্বিবা’ করা। ত্বওয়াফের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করা বা স্পর্শ করা অথবা ইহার দিকে ইশারা করা এবং আল্লাহু আকবার বলা। রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা। ফরয, ওয়াজিব বা নফল যে কোন ত্বওয়াফের পরে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা এবং যমযম পানি পান করা। ছাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে আরোহণ করে ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ করা। সা‘ঈর সময় দুই সবুজ বাতির মাঝখানে জোরে চলা। তারবিয়ার দিনে অর্থাৎ ৮ তারিখে মিনায় অবস্থান করা। প্রথম এবং দ্বিতীয় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর হাত তুলে দো‘আ করা। কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর দেওয়া ইত্যাদি।


হজ্জ ও ওমরার ইহরাম বাঁধার সময়-কাল এবং মীক্বাতসমূহ
হজ্জ ও ওমরার মীক্বাতসমূহ বলতে ঐসব স্থানকে বুঝায়, যেসব স্থান দিয়ে হজ্জ ও ওমরা পালনকারী অতিক্রম করলে তার জন্য সেখান থেকে ইহরাম বাঁধা অপরিহার্য হয়ে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই মীক্বাতসমূহের বিশদ বর্ণনা এসেছে। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَّتَ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلِأَهْلِ الشَّأْمِ الْجُحْفَةَ وَلِأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنَ الْمَنَازِلِ وَلِأَهْلِ الْيَمَنِ يَلَمْلَمَ هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ وَمَنْ كَانَ دُونَ ذَلِكَ فَمِنْ حَيْثُ أَنْشَأَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ»
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীর জন্য যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীর জন্য জুহ্‌ফা, নাজ্‌দবাসীর জন্য ক্বারনুল মানাযিল এবং ইয়েমেনবাসীর জন্য ইয়ালামলামকে মীক্বাত হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। (তিনি বলেছেন), এসব এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা হজ্জ ও ওমরা করতে চায় এবং তারা ব্যতীত যারাই এসব এলাকা দিয়ে হজ্জ ও ওমরা করতে আসবে, এগুলি তাদের সকলের মীক্বাত। যারা এসব এলাকার ভেতরে বসবাস করে, তারা তাদের অবস্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবে; এমনকি মক্কাবাসী মক্কা থেকে’ (বুখারী, হা/১৫২৪; মুসলিম, হা/২৮০৩)। মক্কাবাসী কর্তৃক তাদের বাড়ী থেকে ইহরাম বাঁধার বিষয়টি শুধুমাত্র হজ্জের সাথে নির্দিষ্ট। কেননা ওমরা করতে হলে তাদেরকে হারাম এলাকার বাহির থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে তান‘ইমে ইহরাম বাঁধার জন্য পাঠিয়েছিলেন (বুখারী, হা/১৭৬২; মুসলিম, হা/২৯১০, আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত)। উপরোক্ত হাদীছ দু’টিতে মক্কাবাসী এবং তাদের মত যারা, তাদের সবাইকে হজ্জ-ওমরায় হারাম এবং হালাল এলাকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে বলা হয়েছে। এই মীক্বাত চারটি ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বর্ণিত হাদীছেও এসেছে (বুখারী, হা/১৩৩; মুসলিম, হা/২৮০৫)। আর পঞ্চম মীক্বাত হচ্ছে ‘যাতু ইর্‌ক্ব’, ইহা ইরাকবাসীদের মীক্বাত। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত হাদীছে উপরোক্ত মীক্বাত চতুষ্টয়ের সাথে এই পঞ্চম মীক্বাতও উল্লেখিত হয়েছে (নাসা‘ঈ, হা/২৬৫৬, সনদ ‘ছহীহ’, বর্ণনাকারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য (ثقات)। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত অন্য হাদীছে শুধু এই মীক্বাতটির কথাও এসেছে, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরাকবাসীদের জন্য যাতু ইর্‌ক্বকে মীক্বাত হিসাবে নির্ধারণ করেছেন’ (আবূ দাঊদ, হা/১৭৩৯, ইমাম আবূ দাঊদের উস্তাদের পর থেকে শুরু করে সনদের বাক্বী সবাই ইমাম নাসা‘ঈর সনদের রাবী)। তবে ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর হাদীছে বর্ণিত আছে, ‘কূফা ও বাছরা বিজিত হলে এসব এলাকার লোকজন ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর নিকটে এসে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজ্‌দবাসীর জন্য ক্বারনুল মানাযিলকে মীক্বাত হিসাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু সেটি আমাদের রাস্তায় না পড়ায় সেখানে যেতে আমাদের কঠিন হয়। তিনি বললেন, তোমরা দেখ, তোমাদের রাস্তার কোন স্থানটি ক্বারনুল মানাযিল বরাবর পড়ে। অতঃপর তিনি তাদের জন্য যাতু ইর্‌ক্ব নির্ধারণ করে দিলেন’ (বুখারী, হা/১৫৩১)। এই হাদীছের ব্যাখ্যা হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যাতু ইর্‌ক্বকে ইরাকবাসীর মীক্বাত হিসাবে নির্ধারণ করার মারফূ হাদীছটি ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর জানা না থাকায় তিনি ইজতেহাদ করে তাদের জন্য এটি নির্ধারণ করে দেন এবং তাঁর ইজতেহাদ হক্বের সাথে হুবহু মিলে যায়।
যে ব্যক্তি উক্ত মীক্বাতসমূহের কোনোটিই অতিক্রম করবে না, সে মীক্বাত বরাবর পৌঁছলে সেখান থেকেই ইহরাম বাঁধবে, চাই সে স্থল পথ দিয়ে আসুক অথবা আকাশ পথ বা পানি পথ দিয়ে আসুক। কেউ মীক্বাতে পৌঁছার আগে ইহরাম বাঁধলে তার ইহরামও শুদ্ধ হবে, তবে তা অনুত্তম বিবেচিত হবে। ইবনুল মুনযির (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সবাই একমত পোষণ করেছেন, যে ব্যক্তি মীক্বাতে পৌঁছার পূর্বে ইহরাম বাঁধবে, সে মুহরিম হিসাবে গণ্য হবে’ (আল-ইজমা/৫৪)।
যে ব্যক্তি হজ্জ বা ওমরার ইচ্ছা ছাড়াই মীক্বাত দিয়ে অথবা মীক্বাত বরাবর স্থান দিয়ে অতিক্রম করবে, তার জন্য সেখান থেকে ইহরাম বাঁধা অপরিহার্য নয়। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী «مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ» ‘যে ব্যক্তি হজ্জ বা ওমরা করতে চায়’ প্রমাণ করে যে, এই হুকুম হজ্জ বা ওমরা পালনকারী ব্যতীত অন্যদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
আর যে ব্যক্তি তার জন্য নির্ধারিত মীক্বাত থেকে ইহরাম না বেঁধে তা অতিক্রম করে চলে আসে; যেমন কোন ইয়েমেনী যদি তার মীক্বাত ইয়ালামলাম অতিক্রম করে প্রথমে মদীনায় আসে অথবা কেউ যদি বিমান যোগে জেদ্দায় পৌঁছে সেখান থেকে মসজিদে নববী যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সরাসরি মদীনায় আসে, অতঃপর মদীনাবাসীর মীক্বাত যুল-হুলায়ফা থেকে ইহরাম বাঁধে, তাহলে তাতে কোন সমস্য নেই। কেননা সে তার মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধার ইচ্ছাই করে নি; বরং যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় আসার পথে সে তার মীক্বাত অতিক্রম করেছে এবং পরবর্তীতে মদীনার মীক্বাত থেকে ইহরাম বেঁধেছে।
কিন্তু যে ব্যক্তি তার মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধার পর জেদ্দায় পৌঁছল এবং সেখান থেকে তাকে সরাসরি মদীনায় আসার জন্য বলা হল, সে ইহরাম অবস্থাতেই থাকবে। কেননা যে ব্যক্তি হজ্জের কার্যাবলী শুরু করেছে, তার জন্য তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِۚ﴾ [البقرة: ١٩٦]
‘আর তোমরা আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পূর্ণ কর’ (বাক্বারাহ ১৯৬)।
ইহরাম বাঁধার সময়-কাল বলতে ঐসব মাসকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলিতে হজ্জ ও ওমরার ইহরাম বাঁধা যায়। বছরের সব কয়টি মাসেই ওমরা করা যায়। কেননা কোনো মাসকে ওমরার জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়ার কোন দলীল নেই। তবে হজ্জের ইহরাম বাঁধার জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস রয়েছে। আর সেগুলি হচ্ছে, শাওয়াল, যুল-ক্বা‘দাহ এবং যুল-হিজ্জাহ মাসের প্রথম দশ দিন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ٱلۡحَجُّ أَشۡهُرٞ مَّعۡلُومَٰتٞۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي ٱلۡحَجِّۗ﴾ [البقرة: ١٩٧]
‘হজ্জের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস রয়েছে। এসব মাসে যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বাঁধবে, তার জন্য হজ্জে স্ত্রী সহবাস করা, অশোভন কোন কাজ করা এবং ঝাগড়া-বিবাদ করা জায়েয নয়’ (বাক্বারাহ ১৯৭)। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত একটি আছারে এই মাসগুলির বর্ণনা এসেছে, ইমাম বুখারী আল্লাহ্‌র বাণী: ‘হজ্জের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস রয়েছে’ অনুচ্ছেদে আছারটিকে ‘মু‘আল্লাক্ব’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ইমাম হাকেম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী এটিকে ছহীহ ও ‘মাওছূল ’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং হাফেয যাহাবী তাঁকে সমর্থন করেছেন। হাফেয ইবনে কাছীর (রহেমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীরে আছারটিকে ওমর, আলী, ইবনে মাসঊদ, ইবনে যুবায়ের এবং ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-এর দিকে সম্বন্ধিত করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘হজ্জের মাসগুলিতে ছাড়া অন্য মাসে হজ্জের ইহরাম বাঁধা যাবে না। কেননা হজ্জের নিয়ম হচ্ছে, হজ্জের মাসসমূহে ইহার ইহরাম বাঁধা’ (ছহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৫৯৬, বুখারীর শর্তানুযায়ী হাদীছটি ছহীহ)। ইমাম বুখারী ‘আল্লাহ্‌র বাণী: হজ্জের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস রয়েছে’ অনুচ্ছেদে আছারটিকে ‘মু‘আল্লাক্ব’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন; তিনি বলেছেন, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘সুন্নাত হচ্ছে, হজ্জের মাসসমূহ ছাড়া অন্য মাসে হজ্জের ইহরাম বাঁধা যাবে না’। আর ছাহাবীর উক্তি (من السنة) ‘সুন্নাত হচ্ছে..’ মারফূ হাদীছের মত। অতএব, শাওয়াল মাসের প্রথম রাত থেকেই হজ্জের ইহরাম বাঁধার বৈধতা শুরু হয় এবং কুরবানীর দিন ফজর উদয় হওয়ার মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। শাওয়াল এবং যুল-ক্বা‘দাহ ৩০ দিনে হলে মোট দিনের সংখ্যা হয় ৭০ দিন, উক্ত মাসদ্বয়ের কোন একটি ২৯ দিনে হলে হয় ৬৯ দিন এবং উভয় মাস ২৯ দিনে হলে হয় ৬৮ দিন। ঈদুল ফিতরের রাত হচ্ছে প্রথম রাত এবং ঈদুল আযহার রাত হচ্ছে শেষ রাত। ঈদুল আযহার পরে হজ্জের কতিপয় কাজ বাক্বী থাকলেও তা এই বক্তব্যের সাথে মোটেও সাংঘর্ষিক নয়। কেননা এই মাসগুলিতে হজ্জের ইহরাম বাঁধা উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلۡحَجَّ﴾ [البقرة: ١٩٧]
‘এসব মাসে যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বাঁধবে..’।
কুরবানীর রাতে ফজর উদিত হওয়ার পরে আরাফায় অবস্থানের সময় শেষ হওয়ার কারণে হজ্জের ইহরাম বাঁধার আর কোনো সুযোগই থাকে না।
উল্লেখ্য যে, হজ্জের মাসসমূহ পূর্ণ তিন মাস না হওয়া সত্ত্বেও সেগুলির ক্ষেত্রে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে এবং তাতে কোন সমস্যাও নেই। এমন ব্যবহার কুরআনের বেশ কিছু আয়াতে এসেছে। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَقَدۡ صَغَتۡ قُلُوبُكُمَاۖ﴾ [التحريم: ٤]
‘তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে’ (তাহরীম ৪)। আয়াতে দু’জনের অন্তরের কথা বলা হলেও (قلوب) ‘অন্তরসমূহ’ ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿ وَدَاوُۥدَ وَسُلَيۡمَٰنَ إِذۡ يَحۡكُمَانِ فِي ٱلۡحَرۡثِ إِذۡ نَفَشَتۡ فِيهِ غَنَمُ ٱلۡقَوۡمِ وَكُنَّا لِحُكۡمِهِمۡ شَٰهِدِينَ ٧٨ ﴾ [الانبياء: ٧٨]
‘আর স্মরণ করুন দাঊদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তাঁরা শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে বিচার করেছিলেন। তাতে রাত্রিকালে কিছু লোকের মেষ ঢুকে পড়েছিল। তাদের বিচার আমার সম্মুখে ছিল’ (আম্বিয়া ৭৮)। আয়াতে দু’জন বুঝাতে বহু বচনের সর্বনাম (لِحُكْمِهِمْ) ব্যবহার করা হয়েছে। নিম্নোক্ত আয়াতেও দু’জন বুঝাতে বহু বচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে:
﴿فَإِن كَانَ لَهُۥٓ إِخۡوَةٞ فَلِأُمِّهِ ٱلسُّدُسُۚ﴾ [النساء: ١١]
‘অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ’ (নিসা ১১)। কেননা মৃতের দুই বা ততোধিক ভাই থাকলে মা তিন ভাগের এক ভাগের পরিবর্তে ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। এখানে দুই ভাই বুঝাতে বহু বচন (إِخْوَةٌ) ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوۡمَيۡنِ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِ﴾ [البقرة: ٢٠٣]
‘অতঃপর যে ব্যক্তি তাড়াহুড়া করে প্রথম দুই দিনে চলে যাবে, তার কোনো পাপ নেই’ (বাক্বারাহ ২০৩)। এখানে এক দিন এবং অর্ধ দিন বুঝাতে দ্বি-বচন (يَوْمَيْنِ) ব্যবহার করা হয়েছে।
আর কেউ হজ্জের মাসসমূহের বাইরে অন্য মাসে হজ্জের ইহরাম বাঁধলে তার ইহরাম শুদ্ধ হবে; তবে তা ওমরার ইহরাম হিসাবে গণ্য হবে । অতএব, সে ত্বওয়াফ এবং সা‘ঈ করে মাথা মুণ্ডন বা সমস্ত মাথার চুল ছেটে হালাল হয়ে যাবে। এই ওমরার সাথে তামাত্তু হজ্জের কোনো প্রকার সম্পর্ক থাকবে না । কেননা এই মুহরিম ব্যক্তি হজ্জের মাসসমূহে ওমরার ইহরাম বাঁধে নি।
আর সম্মানিত মাস যার উল্লেখ মহান আল্লাহ তাঁর বাণীতে করেছেন,
﴿ إِنَّ عِدَّةَ ٱلشُّهُورِ عِندَ ٱللَّهِ ٱثۡنَا عَشَرَ شَهۡرٗا فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِ يَوۡمَ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ مِنۡهَآ أَرۡبَعَةٌ حُرُمٞۚ﴾ [التوبة: ٣٦]
‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহ্‌র কিতাব ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারটি। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত’ (তাওবাহ ৩৬)। উক্ত আয়াতে উল্লেখিত পবিত্র মাস চারটি হচ্ছে, যুল-ক্বা‘দাহ, যুল-হিজ্জাহ, মুহাররম এবং রজব; তিনটি ধারাবাহিক এবং চতুর্থটি পৃথক। কারণ রজব মাস বছরের মাঝখানের একটি মাস, এটি ধারাবাহিকতার দিক থেকে সম্মানিত অন্যান্য মাসসমূহ থেকে আলাদা। যুল-হিজ্জাহ মাসে হজ্জ আদায় করা হয় এবং এর আগের এক মাসে মানুষ হজ্জে যায় আর পরের এক মাসে হজ্জ থেকে ফিরে আসে। মুহাররম এবং রজব সম্মানিত মাস হলেও এতদুভয় হজ্জের মাসসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। যুল-হিজ্জাহ মাস পুরোটাই সম্মানিত মাস এবং এর প্রথম দশ দিন হজ্জের মাসসমূহের অন্তর্ভুক্ত। জাহেলী যুগেও আরবরা সম্মানিত এই চার মাসকে সম্মান করত এবং এই মাসগুলিতে তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকত। সেকারণে আব্দুল ক্বায়সের প্রতিনিধি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে এমন নির্দেশ তলব করেছিলেন, যা তারা তাদের গোত্রের লোকদেরকে বলবে এবং এর বিনিময়ে তারা জান্নাতে যেতে পারবে; তারা বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সম্মানিত মাসসমূহ ব্যতীত অন্য মাসে আমরা আপনার কাছে আসতে পারব না। কেননা আমাদের মাঝে এবং আপনার মাঝে মুদ্বার গোত্রের কাফেরদের বসতি রয়েছে’ (বুখারী, হা/৫৩; মুসলিম, হা/১১৫)।
আবু বাকরা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছে সম্মানিত এই মাসগুলির বিবরণ এসেছে (বুখারী, হা/৩১৯৭; মুসলিম, হা/৪৩৮৩)।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×