somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলুন এটাই শেষ সিগারেট

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বলুন এটাই শেষ সিগারেট
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]
শাইখ আব্দুল মুহসিন আল-কাসিম
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
الحمدُ لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين أما بعد.
ধূমপান বর্তমান যুগের বড় সমস্যার একটি। ধূমপানের ফলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমাজে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। ধূমপায়ীরা ধীরে ধীরে রোগাক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপান তাদের অন্তর দুর্বল ও শক্তি ক্ষয় করে দিচ্ছে। ধূমপান “নীরব ঘাতক” এ ব্যাপারে এখন কারো দ্বিমত নেই। যারা মৃত্যুশ্বাস ধূমপান গ্রহণ করেন তাদের অবশ্যই নীরব ঘাতক ধূমপান বা তামাক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, কারণ ধূমপান তাদেরকে ধীরে ধীরে কবরে নিয়ে যাচ্ছে বা রোগা-শোকা দুঃসহ ও অভিশপ্ত জীবন বয়ে আনছে তাদের জন্য। অধূমপায়ীদের জন্য শুভ বার্তা যে, আল্লাহ তাদেরকে ধূমপানের বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। তারা ধূমপান জনিত ধ্বংসের গহ্বর থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি আমার এ লেখা থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন এবং ধূমপানের অনিষ্ট থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষা করুন।

 ধূমপানের ইতিহাস:
ইউরোপীয়রা ১৪৯২ইং সালে তামাক সম্পর্কে প্রথম ধারণা লাভ করে, যখন কলম্বাস তার বাহিনীসহ আমেরিকায় অবতরণ করেন। আমেরিকান আদিবাসী তথা “রেড ইন্ডিয়ান”রা তাদের ভূমিতে তামাক চাষ করত ও তা জ্বালিয়ে ধোঁয়া গ্রহণ করত। তাদের থেকে কলম্বাস ও তার সাথীরা তামাকের প্রথম ধারণা লাভ করেন। খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপে তামাক চাষের সূচনা হয়। প্রথমে ফ্রান্স, অতঃপর পর্তুগাল, স্পেন এবং সর্বশেষ বৃটেন ক্রমানুসারে তামাক চাষ করে। ইউরোপ থেকে পর্তুগাল ও স্পেনের ব্যবসায়ীগণ আফ্রিকা ও ভারত উপমহাদেশে তামাক রফতানি করেন।

 মুসলিম দেশে ধূমপানের প্রবেশ:
খ্রিষ্ট সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারত, ইরান ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তামাক আমদানি হয়। অতঃপর হিজরি দশম শতাব্দীতে তুর্কীদের দ্বারা আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশে তামাকের প্রবেশ ঘটে।

 মুসলিম দেশে ধূমপান আমদানিকারক:
হিজরি দশম শতাব্দীর আগে ধূমপান সম্পর্কে মুসলিমদের কোন ধারণা ছিল না। পরবর্তীতে ইসলামের শত্রুরা মুসলিম দেশে তামাকের প্রচলন শুরু করার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নামে। জনৈক খৃস্টান ইংরেজ তুরস্কে সর্বপ্রথম ধূমপান নিয়ে আসে। জনৈক ইহুদি মরক্কোতে সর্বপ্রথম ধূমপানের প্রচলন ঘটায়। সুদানে সর্বপ্রথম ধূমপানের প্রচলন করে জনৈক অগ্নিপূজক। অতঃপর মিসর, আরব উপদ্বীপ, ইয়ামান, হিন্দুস্তান ও অধিকাংশ মুসলিম দেশে তার প্রসার ঘটতে থাকে এবং ধীরে ধীরে এ ব্যাধি ব্যাপক আকার ধারণ করে। ১৮৮১ইং সনে আমেরিকায় সর্বপ্রথম সিগারেটের কারখানা তৈরি হয়।
হে মুসলিম, তুমি কখনো শত্রুদের শিকারে পরিণত হয়ো না!

 ধূমপানের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের যুদ্ধ ঘোষণা:
গোটা বিশ্ব আজ তামাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কতক দেশ তামাকের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিয়েছে, যে তামাকের সূচনা আমেরিকা থেকে। রাশিয়া তামাক বিক্রেতা ও ক্রেতার ওপর কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করেছিল। তাদের নিকট ধূমপায়ীর শাস্তি ছিল নাক ভেঙ্গে দেয়া অথবা সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো।
উসমানী বাদশাহ চতুর্থ মুরাদ ধূমপায়ীদের ওপর কঠোরতা করতেন ও তাদের সভা-সমাবেশ নজরদারিতে রাখতেন। তার নিকট ধূমপায়ীর শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। কথিত আছে ইরানের সাথে তার যুদ্ধের সময় ধূমপায়ীদের তিনি হত্যা করতেন, ধূমপায়ী তার সৈন্য পক্ষ বা পারস্যের দলভুক্ত যেই হত।
১৬২৯ইং সনে বাদশাহ “প্রথম আব্বাস” এর যুগে ধূমপায়ীর শাস্তি ছিল নাক ছিদ্র করা ও মুখে লাঠি ভরে দেয়া। পরবর্তীতে তার ছেলে বাদশাহ “সাফি” ধূমপায়ীদের মুখে তীর নিক্ষেপ করতেন।

 ধূমপানে মজুদ বিষাক্ত উপাদান:
১. নিকোটিন: পর্তুগালে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত “জন নিকোট” এর নাম থেকে নিকোটিন শব্দের উদ্ভব। সে-ই ফ্রান্সে ধূমপানের প্রথম প্রচলন করেছিল।
নিকোটিন বর্ণহীন তরল পদার্থ, যা সিগারেট জ্বালানোর সময় বাতাসে বাদামি রং ধারণ করে। ধূমপায়ী যখন সিগারেটে টান দেয় অতঃপর বাইরে ধোঁয়া ত্যাগ করে, তখন নিকোটিনের খুব সামান্য বা সূক্ষ্ম অংশ ফুসফুসে প্রবেশ করে। যদি কোনো মানুষের শিরায় নির্দিষ্ট পরিমাণ নিকোটিন প্রবেশ করানো হয়, তাহলে তার ক্রিয়ায় মৃত্যু অনিবার্য। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষার নিমিত্তে জীবিত খরগোশের গায়ে নিকোটিনের উপাদান পুশ করে দেখেছেন যে, নিকোটিনের প্রভাবে খরগোশটি অবশ হয়ে পড়ল এবং কিছুক্ষণের মধ্যে মারা গেল।
নাকের নিশ্বাস থেকে ফুসফুসে এবং সেখান থেকে রক্তের শিরায় শিরায় নিকোটিন প্রবেশ করে। ধূমপান আরম্ভের আট সেকেন্ডের মধ্যে মস্তিষ্কে নিকোটিন প্রবেশ করে ও গভীরভাবে আঘাত হানে।
২- কার্বন মনো অক্সাইড: ধূমপানে মজুদ দ্বিতীয় বিষাক্ত উপাদান কার্বন মনো অক্সাইড। এ বিষ ক্রমাগত শরীরে প্রবেশ করে দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে, যার ফলে মানসিক ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা ও শ্বাসকষ্টের জন্ম হয়। এ গ্যাস এমন ঘাতক যে, কোনো ব্যক্তি যদি দীর্ঘ সময় বায়ুহীন আবদ্ধ ঘরে তা গ্রহণ করে, তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য অথবা তার মস্তিষ্ক স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিশ্চিত। রক্তে কার্বন মনো অক্সাইডের উপস্থিতি থাকলে মস্তিষ্ক ও হার্টে অক্সিজেন পৌঁছতে বাধার সম্মুখীন হয়।
৩- অ্যামোনিয়া: ধূমপানে মজুদ এ উপাদান ধূমপায়ীর মধ্যে কাশির রোগ সৃষ্টি করে।
৪- ক্যান্সারের উপাদান: ধূমপানে ক্যান্সারের উপাদান রয়েছে বিধায় ধূমপায়ীরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ও তাদের মধ্যে ক্ষয়রোগ দেখা দেয়।
৫- বেনজিন: এক প্রকার জৈবযৌগ যা মুখের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, গলনালি ও শ্বাসনালীর ওপর পর্দার সৃষ্টি করে। এ কারণে ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস ফোলা ও ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এ থেকে শ্বাসকষ্ট রোগ হয়, যা ধীরে ধীরে ধূমপায়ীকে চলার অযোগ্য করে দেয়। যার পরিসমাপ্তি ঘটে হার্টের নিষ্ক্রিয়তা ও ধূমপায়ীর মৃত্যুর মাধ্যমে।

 চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ধূমপানের অনিষ্ট:
সুস্থতা মানুষের জীবনে অমূল্য সম্পদ। সুস্থতাই মানুষের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবনে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সাহায্য করে। অসুস্থ লোক এক পায়ের অধিকারী ব্যক্তির ন্যায় পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়ায়। ধূমপান জীবন বিধ্বংসী অনেক রোগের জন্ম দেয়। সিগারেট কোম্পানিগুলো মানুষের কাফনের ওপর দিয়ে তাদের সম্পদ বাড়িয়ে তুলছে। ধূমপান থেকে সৃষ্ট কয়েকটি রোগের বর্ণনা এখানে আমি আপনার সামনে পেশ করছি, যার কতক দীর্ঘস্থায়ী, কতক দ্রুত প্রভাব বিস্তারকারী, অতঃপর পরিণতি মৃত্যু:
১- শ্বাসকষ্ট: ধূমপানের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার, গলনালির ক্যান্সার, ফুসফুস ফোলা ও শ্বাসকষ্ট হয়।
২- হৃদ রোগ: ধূমপানের ফলে হার্ট এ্যাটাক ও হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
৩- বদ হজম: ধূমপানের ফলে ঠোঁট, মুখ, গলনালি ও খাদ্যনালীর মধ্যে ক্যান্সার দেখা দেয়, পেটে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
৪- মূত্রনালি: ধূমপানের ফলে মূত্র থলি বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৫- স্নায়ুযন্ত্র: ধূমপানের ফলে মাথা ব্যথা, স্মৃতি শক্তি হ্রাস ও খিটখিটে মেজাজ তৈরি হয়। বর্তমান সুস্থতা দেখে আপনি ধোঁকায় পতিত হবেন না, মনে করবেন না ধূমপান আপনার শরীরে প্রভাব ফেলে নি। অবশ্যই ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব প্রকাশ পাবে, দেরি হওয়ার অর্থ ধূমপানে বিষাক্ত উপাদান নেই এমন নয়। অবশ্যই তাতে বিষ রয়েছে, দেরিতে হলেও শরীর তার দ্বারা আক্রান্ত হবে।

 চিকিৎসকদের মতামত:
‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: “ধূমপানের প্রসার যেখানে ঘটেছে, সেখানে রোগ-ব্যাধি ও দ্রুত মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে ধূমপানকে দেখা হচ্ছে”।
সিরিয়ার চিকিৎসক ডা. কিনআন আল-জাবি ঘোষণা করেছেন: “ক্যান্সারের ওপর আমার চিকিৎসার ২৫ বছর গত হয়েছে, আমার নিকট গলনালির ক্যান্সার আক্রান্ত কোন রোগী আসেনি যে ধূমপায়ী ছিল না”।
ব্রিটেনের ফিজিয়াসন্স রয়েল কলেজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: “এক সিগারেটে মজুদ নিকোটিন সুস্বাস্থের অধিকারী এক ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট, যদি তা ইনজেকশন দ্বারা রক্তের শিরায় পুশ করা হয়”।

 আর্থিক ক্ষতি:
ধূমপানের ফলে অর্থ বিনষ্ট ও সম্পদ ধ্বংস হয়। ধূমপায়ী তার ধূমপান দ্বারা না দুনিয়ার উপকার করে, না আখেরাতে আল্লাহর দরবারে এর কোনো সঠিক অজুহাত পেশ করতে পারবে! কোনো ব্যক্তি যদি প্রতি দিন একটাকা নদীতে নিক্ষেপ করে, মানুষ তাকে পাগল বলবে, যার চিকিৎসা অতীব জরুরী, কারণ আগামীতে যেন বেশী, আরো বেশী টাকা নদীতে নিক্ষেপ না করে। যে ব্যক্তি তার শরীরের ক্ষতি ও ধ্বংসের পেছনে বারবার টাকা খরচ করে তার বিষয়টা কেমন?! যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিদিন আপনার এক টাকা চুরি করে, তাহলে আপনি তাকে শত্রু জ্ঞান করবেন, তার থেকে সতর্ক থাকবেন। ধূমপান তো তার মতই! প্রতিদিন আপনার পকেট কাটছে আপনাকে হত্যার জন্য! ধূমপানের টাকা দিয়ে যদি আপনার বাচ্চার জন্য প্রতিদিন উপহার ক্রয় করেন, তাহলে আপনি আদর্শ পিতা হবেন সন্দেহ নেই, অতএব কোনটি উত্তম? আপনার সন্তান না ধূমপান?! আপনি আরো চিন্তা করুন ধূমপান আপনার সম্পদ বৃদ্ধি করছে? বা ভবিষ্যতের প্রয়োজনে তা সঞ্চয় করছে?
ধূমপানের টাকা কেন কোনো গরিবকে দেন নি যে আপনার জন্য দো‘আ করবে? চিন্তা করুন আপনার টাকা কোথায় যাচ্ছে? ধূমপানের টাকার দ্বারা কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? আপনি নিজেই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না?!!

 ধূমপায়ীর ভদ্রতা কোথায়:
ধূমপানের দুর্গন্ধ ধোঁয়ায় ঘরটা পূর্ণ, কাপড়ে পোড়ার দাগ, ঘর ও অফিস সর্বত্র ধূমপানের ছাই, সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ প্রভৃতি দেখে ধূমপায়ী নিজেও বিরক্ত।
ধূমপায়ী বাথরুম ও আবর্জনার স্থানেও ধূমপান করে। ধূমপায়ী তার ধূমপান দ্বারা সমাজকে কোনো সভ্যতা বা উন্নতি দিচ্ছে না, বরং সে সমাজের বোঝা, পরিবেশ নষ্টকারী ও মানুষের বিরক্তির কারণ। ধূমপানের অনিষ্ট দ্বারা সন্তান, স্ত্রী ও গর্ভের ভ্রূণ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধূমপানের বদ অভ্যাস দূর করার জন্য ধূমপান প্রতিরোধ সংস্থা গঠন করা হয়েছে। ধূমপানের কোনো বৈশিষ্ট্য বা বিশেষত্ব নেই, সমাজে প্রতিষ্ঠিত, সুশীল ও অগাধ সম্পদের মালিক যেমন ধূমপান করে, তেমন সমাজের গরিব, নাম-যশ ও খ্যাতিহীন নিম্ন পেশার লোকও ধূমপান করে। ড্রাইভার, চাকর, কর্মচারী ও সুইপার সবাই ধূমপান করে। অতএব ভেবে দেখুন আপনার ধূমপানের আভিজাত্য কোথায়!
ভুলে যাবেন না আপনি সমাজে অসুস্থদের একজন এবং দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। অতএব ধূমপান ত্যাগ করতে বিলম্ব কিসের!
আপনি জানেন মাদক সেবী প্রত্যেকেই ধূমপানে অভ্যস্ত, ধূমপান করে আপনি তাদের কাতারে শামিল হতে চান!

 ধূমপায়ীর চেহারা:
ধূমপায়ীর আঙুল হলুদ, দাঁতগুলো ময়লাযুক্ত, কাপড় পোড়া-ফাটা, চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ। ধূমপায়ীর শরীর ও কাপড় অপরিচ্ছন্ন, অপবিত্র, গায়ে দুর্গন্ধ, বেশভূষা পুরনো কাপড়ের ন্যায়। কণ্ঠস্বর ভাঙা ও কাশিযুক্ত।
ধূমপায়ীর স্মরণশক্তি দুর্বল হয়, তার মধ্যে ক্লান্তি, অক্ষমতা ও রুচিহীনতা ভেসে ওঠে। সে নিজের উপার্জনের টাকা দ্বারা নিজের ক্ষতি করে। বার্ধক্যের আলামত তার চেহারায় সুস্পষ্ট। ধূমপান তার শরীরের চামড়া ও চেহারার সৌন্দর্য খতম করে দিয়েছে।
ধূমপান প্রমাণ করে যে, ধূমপায়ী অসৎ সঙ্গ দোষে দুষ্ট। ধূমপায়ী নিজ পিতা ও নিজ সন্তানের নিকট হীনবল, ব্যক্তিত্বশূন্য। তাদের নিকট লজ্জিত, ধূমপানের কারণে তাদের ভর্ৎসনার স্বীকার হয়। নিজ সন্তানকে ধূমপান থেকে সর্তক করার হিম্মত পায় না, নিষেধ করবে কি করবে-না দ্বিধায় ভোগে।

 ধূমপায়ী লাঞ্ছিত:
সমাজ ধূমপায়ীদের বাঁকা চোখে দেখে, মানুষের নজরে তারা মূল্যহীন। সম্মানজনক অনেক চাকুরী থেকে ধূমপায়ীদের বঞ্চিত করে অধূমপায়ীদের সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়। ধূমপায়ীদের জন্য রাখা হয় নিচুমানের চাকুরী। বিমানে ধূমপান নিষেধ, যারা অগত্যা ধূমপান করতে চায়, বাথরুম সংলগ্ন তাদের আসন দেয়া হয়। আপনি বাথরুম সংলগ্ন আসনে সন্তুষ্ট!
এমন অনেক যুবক রয়েছে যারা ধূমপানের কারণে সুন্দরী নারীর পানি গ্রহণ থেকে বঞ্চিত, কারণ অভিভাবক ধূমপায়ী ছেলের নিকট তাদের মেয়ে পাত্রস্থ করতে রাজি হয় নি।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী থমাস এডিসন (Thomas Edison)বলেছেন: “তামাক স্নায়ুতন্ত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, যার ফলে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়। এ জন্য কোন ধূমপায়ীকে আমার কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ দেই না”।

 সমাজের চোখে ধূমপায়ী:
সমাজ আপনাকে নেশাগ্রস্ত অসুস্থ ব্যক্তির মতই দেখে, আপনি পকেটে সিগারেট বহন করেন, যেমন মদ্যপ ব্যক্তি নেশার দ্রব্য বহন করে চলে ও নিজ হাতে টাকা অপচয় করে।
মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আপনি অপরিপক্ব, মনের চাহিদা মেটাতে বাচ্চাদের ন্যায় মুখে কোনো বস্তু না চুষলে আনন্দ পান না। এ জন্য জ্ঞানীরা আপনার জন্য বিশেষ চিকিৎসা কেন্দ্র খুলেছে, কারণ আপনি অসুস্থ, আপনি সেখানে চিকিৎসা নিন, আপনার থেকে ধূমপানের বদ অভ্যাস দ্রুত দূর করুন।

 কিছু বাস্তবতা:
• আপনি জানেন, কোন জন্তু বা পাখি তামাক গাছের নিকটবর্তী হয় না!
• আপনি জানেন, কয়েক ফোঁটা নিকোটিন একটি কুকুর হত্যার জন্য যথেষ্ট!
• আপনি জানেন, ধূমপায়ী নিজের টাকায় নিজকে হত্যা করছে!
• আপনি জানেন, ধূমপান প্রায় ২৫টি রোগের কারণ, প্রত্যেক রোগ জীবনের জন্য বড় হুমকি!
• আপনি জানেন, প্রতি বছর তামাকের কারণে আমেরিকায় ৪২০ হাজার মানুষ মারা যায়।
• আপনি জানেন, প্রতি বছর তামাকের প্রচার ও বিজ্ঞাপন খরচ হিসেবে ৪ মিলিয়ন ডলার অপচয় হয়!
• আপনি জানেন, ৭৫% অপরাধী ধূমপায়ী, আপনি কি তাদের একজন হতে চান!
• আপনি জানেন, আপনার ধূমপানের টাকা দিয়ে দু’দিন পরপর একটি কুরআন খরিদ করে মসজিদে দান করতে পারেন! চিন্তা করে দেখেছেন কুরআন খরিদ করার পরিবর্তে কি পরিমাণ টাকা ধূমপানের পেছনে ব্যয় করছেন!
• আপনি জানেন, এমন কোনো ধূমপায়ী নেই যে ধূমপানের জন্য অনুশোচনা করে না, ধূমপান থেকে মুক্তির পথ খোঁজে না!
• আপনি জানেন, উন্নত দেশে ধূমপানের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ!
• আপনি জানেন, ব্রিটেন তার ভূমিতে তামাক চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে!

 ধূমপানের পূর্বে চিন্তা করুন:
• আপনি ধূমপায়ী নামে পরিচিত হবেন!
• সভ্য মজলিসে আপনি অনাকাঙ্ক্ষিত, আপনি তাদের কষ্টের কারণ, আপনার কারণে তাদের বাড়ি-অফিস দুর্গন্ধময় হবে!
• আপনি নিজ সাথীদের নিকট মূল্যহীন, যদিও প্রকাশ্যে তারা আপনার প্রতি মহব্বত প্রকাশ করে, কিন্তু আপনাকে নিয়ে তারা শঙ্কিত তাদের সন্তান না আপনার থেকে ধূমপান শিখে!
• ধূমপান করে প্রতি দিন আপনি আল্লাহর নাফরমানি করছেন!
• ধূমপানের উপকারিতা কী?! ধূমপানের আগে একটু চিন্তা করুন!
• সুস্থতা আল্লাহর নিয়ামত আর ধূমপান হচ্ছে অসুস্থতা, ভেবে দেখুন কোনটা গ্রহণ করবেন!
• মালাকুল মউতের সাথে কিভাবে সাক্ষাত করবেন, অথচ আপনার মুখে রয়েছে তামাকের গন্ধ!
• আপনি কিভাবে মুনকার ও নাকিরের সাক্ষাত করবেন, অথচ কবরেও আপনার মুখে ধূমপানের নিদর্শন!
• ধূমপানের খাতে ব্যয় করা প্রতি টাকার জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে!

 ধূমপান ব্যবসায়ীদের মূল টার্গেট যুবক শ্রেণি:
ছোট ও কম বয়সীরা জীবনের মূল্য তেমন বুঝে না, যেমন বুঝেন প্রাপ্ত বয়স্করা। ছোটরা যৌবনের কৌতূহলে এমন অনেক কিছুই করে পরবর্তীতে যার জন্য দুঃখিত হয়।
আপনি এমন কাউকে পাবেন না, যে যৌবনে ধূমপান মুক্ত থেকে চল্লিশ বছরে পা রেখে ধূমপান আরম্ভ করেছে। কারণ তখন তার জ্ঞান পরিপক্ব, ধূমপানের অনিষ্ট ও তার পরিণতি সম্পর্কে সে সচেতন, তাই এ বয়সে কেউ ধূমপান আরম্ভ করে না। এ জন্য ধূমপান ব্যবসায়ীরা যুবকদের সরলতা ও তাদের অজ্ঞতাকে লুফে নেয়। তাদের সকল প্রচার ও বিজ্ঞাপন হয় যুবক কেন্দ্রিক। যেন যুবকরা তাদের তৈরি ধূমপান থেকে সৃষ্ট রোগ-ব্যাধির প্রথম ও প্রধান শিকার হয়, আর তারা তাদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে!
ধূমপান প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর বক্তব্য:
১- “বিজ্ঞাপনের মূল লক্ষ্য উঠতি যুবকরা। তারা যেন বারো ও তেরো বছর থেকে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়। এ জন্য আমাদের সব ধরণের প্রচেষ্টা করতে হবে”।
২- “আমরা অবশ্যই তামাক ব্যবহারের কালচার মুখের দ্বারা বাজারজাত করব। এ জন্য কম বয়সী যুবকদের আকর্ষণ করার কোন বিকল্প নেই”।
হে যুবক সতর্ক হও, তুমি তাদের শিকারে পরিণত হয়ো না!

 নারী ও ধূমপান:
ধূমপান নারীদের জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, জরায়ু মুখের ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু বরণকারী নারী ও গর্ভের সন্তানের ক্ষেত্রে ২৯% মায়েরা ধূমপান করেছেন। নারীর ধূমপানের ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে, গর্ভের সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, অকাল গর্ভপাত ও প্রসব কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। অধিকন্তু প্রসবকালে মৃত্যুর সম্ভাবনা ও গর্ভের সন্তানের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিও কম নয়।
মায়ের ধূমপানের কারণে বাচ্চার মধ্যে ঘনঘন খিচুনি, রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয় এবং বুক ও চামড়া সংবেদনশীল হয়। বমি হয়, রুচি নষ্ট হয়, বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও তার স্মৃতি শক্তি দুর্বল হয়।
অতএব নারীর ধূমপানের অর্জন কি?!

 ধূমপানের বিধান:
ধূমপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর সবার নিকট প্রমাণিত। এতে আরো রয়েছে অর্থের অপচয় ও মানুষের কষ্ট। হাদিসে এসেছে: “মানুষের জন্য যা কষ্টদায়ক, ফেরেশতাদের জন্য তা কষ্টদায়ক”।

ধূমপান হারাম মর্মে শায়খ আব্দুল আযিয ইব্‌ন বায রাহিমাহুল্লাহ ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া লক্ষ্য করুন:
প্রশ্ন-১: ধূমপানের হুকুম কী? ধূমপান হারাম না মকরুহ? ধূমপান ক্রয়-বিক্রয়ের বিধান কি?
উত্তর: ধূমপান হারাম। ধূমপান কুরআনে বর্ণিত নিষিদ্ধ খবিস বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। ধূমপানে রয়েছে বিভিন্ন রোগের উপাদান। আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ওপর পবিত্র খাদ্য-পানীয় হালাল করেছেন। অপবিত্র ও খারাপ বস্তু তিনি বান্দার ওপর হারাম করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
﴿ يَسۡ‍َٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمۡۖ قُلۡ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُ ٤ ﴾ [المائ‍دة: ٤]
“তারা তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী বৈধ ‎করা হয়েছে? বল, ‘তোমাদের জন্য বৈধ করা ‎হয়েছে সব ভাল বস্তু”।
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আরাফে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাগুণ বর্ণনায় বলেন:
﴿ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ١٥٧ ﴾ [الاعراف: ١٥٦]
“যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ ‎করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য ‎পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু ‎হারাম করে”।
সর্বপ্রকার ধূমপান খবিস বস্তুর অন্তর্ভুক্ত, অনুরূপ নেশাদ্রব্য সকল প্রকার বস্তু বিক্রয় করা খবিস কর্মের অন্তর্ভুক্ত। তাই ধূমপানের ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য মদের মতই হারাম। যারা ধূমপান করেন অথবা তার ব্যবসায় জড়িত তাদের সবার ওপর ওয়াজিব দ্রুত তাওবা করে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। পূর্বের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় অঙ্গিকার করা। সত্যিকার অর্থে যে তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٣١ ﴾ [النور : ٣١]
“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট ‎তাওবা কর”। ‎ তিনি আরো বলেন:
﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ ٨٢ ﴾ [طه: ٨٢]
“আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে ‎তাওবা করে”।
প্রশ্ন-২: ধূমপান হারাম, না হালাল? দলিলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন?
উত্তর: ধূমপান হারাম, কারণ ধূমপান খবিস বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ ও তার রাসূল খবিস বস্তু হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাগুণ বর্ণনায় বলেন:
﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ١٥٧ ﴾ [الاعراف: ١٥٦]
“এবং তাদের জন্য ‎পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু ‎হারাম করে”।
দ্বিতীয়ত ধূমপানে রয়েছে শারীরিক ক্ষতি ও অর্থের অপচয়, অথচ শরীয়ত শরীর ও সম্পদ সংরক্ষণ করার নির্দেশ প্রদান করেছে। মানব জাতির সংরক্ষণ ও উম্মতের হিফাজতের জন্য আলেমগণ যে পাঁচটি বস্তু হিফাজত করা অতীব জরুরী ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে শরীর ও সম্পদ অন্যতম। অতএব শরীর ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা অপরিহার্য। হাদিসে সম্পদ নষ্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সন্দেহ নেই ধূমপানের জন্য সম্পদ ব্যয় করা অপচয়ের শামিল, বরং ধূমপানের জন্য খরচ করা প্রকৃত পক্ষে নিজের ও সমাজের অনিষ্ট সাধন করা।

 কীভাবে ধূমপান ত্যাগ করবেন:
‘ধূমপান ত্যাগ করতে পারি না’— কখনো বলবেন না। দেখুন, নবুওয়তের প্রথম যুগে যখন মদ বৈধ ছিল, সাহাবিগণ প্রকাশ্যে মদ পান করতেন। সভা-সমাবেশে মদ দ্বারা আপ্যায়ন করা হত। যখন মদ হারাম করে একটি আয়াত নাযিল হল, তাদের চিরাচরিত অভ্যাস সত্ত্বেও সবাই তা ত্যাগ করলেন। ঘর থেকে মদ বের করে দিলেন। আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে মদিনার অলিতে গলিতে তা ভাসিয়ে দিলেন। যখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন:
﴿ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠ ﴾ [المائ‍دة: ٩٠]
“সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে ‎‎তোমরা সফলকাম হও”। তারা বলতে লাগল: আমরা নিবৃত হলাম, আমরা নিবৃত হলাম।
আল্লাহর প্রতি ইমান, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, দুর্দান্ত সাহস, আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্বেষণ, দীনের হিফাজত, ব্যক্তি ও সম্মান কলুষিত না করার ইচ্ছা, খারাপ বস্তু থেকে দূরে থাকার আগ্রহ, সর্বদা আল্লাহর স্মরণ, শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল জ্ঞান করা ও অধিক দো‘আর ফলে ইনশাআল্লাহ এসব বদ অভ্যাস চিরতরে বিদায় নিবে। সমাজে সম্মানিত ও বন্ধু-বন্ধবদের নিকট ব্যক্তিত্বশীল প্রমাণিত হবেন। অধিকাংশ ডাক্তার বলেন এক সাথে ধূমপান ত্যাগ করে দিন। অতএব আপনি নিজেকে নিয়ে ভাবুন এবং নিজের ওপর, সমাজ ও পরিবারের ওপর ধূমপানের অনিষ্টগুলো চিন্তা করুন।
এ মুহূর্ত থেকে ধূমপান ত্যাগ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুন। শরীর ও দীনের মঙ্গল যে পথে, সে পথেই বিচরণ করুন। মনে রাখবেন শয়তান আপনাকে পুনরায় ধূমপানে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করবে। জেনে রাখুন, মানুষ যখন কোনো বস্তু থেকে সত্যিকার তাওবা করে, তার প্রবৃত্তি তাকে সে দিকে ধাবিত করতে চায়। এটা এক ধরণের পরীক্ষা। এতে প্রমাণিত হয় আপনার তাওবা সত্যিকার না মিথ্যা। ইব্‌নুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “প্রত্যেক তাওবাকারী শুরুতে চাপ ও কষ্টের সম্মুখীন হন, যেমন দুশ্চিন্তা অথবা সংকীর্ণতা অথবা পেরেশানি অথবা বিষণ্ণতা অনুভব করেন। আর কিছু না হলেও দীর্ঘদিন অভ্যস্ত বস্তু ত্যাগ করার দুঃখ কম কিসের! মানসিক চাপ, অন্তর ভেঙে পড়া, বক্ষ সংকীর্ণ হওয়া তো আছেই। এ কারণে দেখি কতক তাওবাকারী তাওবা করে মুখ থুবড়ে পড়েন। সত্যিকার জ্ঞানী অবশ্যই জানেন যে, খুশি, আনন্দ ও প্রকৃত স্বাদ তাওবার পর অনুভূত হয়, যে পরিমাণ কষ্ট সে পরিমাণ আনন্দ। পছন্দের বস্তু ত্যাগ করার কষ্ট যত বেশী, তার পশ্চাতে স্বাদ তত মিষ্টি, সুস্বাদু ও পরিপূর্ণ”।
যদি প্রথমবার ধূমপান ত্যাগ করার চেষ্টা করে সফল না হন, পুনরায় চেষ্টা করুন, পুনরায় চেষ্টা করুন, পুনরায় চেষ্টা করুন, নিরাশ হবেন না। ইনশাআল্লাহ, অচিরেই আপনি এ ঘাতক থেকে রক্ষা পাবেন।
অতএব সাহসী হোন, ‘এটাই শেষ সিগারেট’ ঘোষণা করুন।
আল্লাহর নিকট দো‘আ করছি, আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে তাওফিক প্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিন, সংকীর্ণতার মোকাবেলায় প্রশস্ততা দান করুন। কঠিনকে আপনার জন্য সহজ করে দিন।
وصلَّى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.

সমাপ্ত

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×