“তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” সুরা আল ইমরান আয়াত 7
.......................................................................................................................
যৌনসঙ্গমের সময়, পুরুষ ও নারী প্রজনন তন্ত্রের মাঝে পারস্পারিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে নারীর ডিম্বাণু পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। এগুলো হল গ্যামেট নামক বিশেষ প্রজনন কোষ, যেগুলো মিয়োসিস নামক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। যেখানে সাধারণ কোষে ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে, সেখানে গ্যামেট কোষে শুধুমাত্র ২৩টি ক্রোমোজোম থাকে, এবং যখন দুটি গ্যামেট একত্রিত হয়ে জাইগোট বা ভ্রূণ গঠন করে তখন দুটি গ্যামেটের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ ঘটে যাকে জেনেটিক রিকম্বিনেশন বলে, এবং নতুন ভ্রূণে মাতা পিতা উভয়ের কাছ থেকে আসা ২৩টি ক্রোমোজোম একত্রিত হয়ে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম গঠন করে। একটি নির্দিষ্টকালীন গর্ভধারণ পর্যায়ের পর (সাধারণত নয় মাস), প্রসবের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয়।
ডিম্বানু আর শুক্রানু শিশু উৎপাদনের কাচামাল। ডিম্বাণু বলতে জীবের স্ত্রীজননকোষ বুঝানো হয় যা জীবের যৌন জনন প্রক্রিয়ায় শুক্রাণুর দ্বারা নিষিক্ত হয়ে থাকে। ডিম্বাণু সাধারনত হ্যপ্লয়েড ক্রোমোসোম ধারন করে থাকে। শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত ডিম্বাণু ডিপ্লয়েড যা প্রথমে জাইগোট গঠন করে যা পরবর্তিতে ভ্রূন এবং শিশু জীবে পরিনত হয়। একটি ডিম্বানু শুধু একটি শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হয়। আর শুক্রানু কি? শুক্রানু হলো পুরুষের স্পাম যা যৌনমিলনের সময় পুরুষ দেহ থেকে বের হয়। যৌনমিলনের একপর্যায়ে পুরুষ দেহ থেকে প্রায় ৩ মিলিয়ন স্পাম বেরোয়। যৌন মিলনের সময় শুক্রানু নারীর যোনিমুখ দিযে জরায়ুতে প্রবেশ করে ( কম পক্ষে ১ মিঃলিঃ এবং এতে ৩ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকতে পারে ) তখন কিছু কিছু শুক্রানু জরায়ুর মুখ থেকে সাঁতরে জরায়ুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মেয়েদের তখন ডিম্বাণুর নি:সরণ হয । সে সময় শুক্রানু গর্ভাশয়ের মধ্য দিয়ে সাঁতরে ডিম্বনালী (ফেলোপিয়ান টিউব) এ প্রবেশ করে। ডিম্বানু স্থির হয়ে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকে আর ৩ মিলিয়ন শুক্রানু ডিম্বাণুর দিকে সাঁতরে যায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র একজনই ডিম্বাণুকে পায়। শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলে হয়ে যায় জাইগোট।
এখন প্রশ্ন কেনো এই ৩ মিলিয়ন স্পার্ম এর মধ্যে একটি মাত্র স্পার্ম থেকেই শিশু জন্ম নেয়? হয়তো নাস্তিকদের ভাষ্য মতে আপনি বলবেন যে স্পামটি যোগ্য ছিলো। কিন্ত আমার প্রশ্ন কেনো সেই স্পামটি যোগ্য হলো? কে তাকে যোগ্যতা দিলো? কোথা থেকে পেলো সে এই যোগ্যতা। প্রতিটি স্পামই তো একই রকম একই ক্ষমতা সম্পন্ন থাকার কথা ছিলো। কিন্ত কেনো এই যোগ্যতা প্রাপ্তি? এর একটি মাত্র উত্তর - স্পামটি নির্ধারিত ছিলো। আর নির্ধারিত থাকার কারনে সেই স্পামটি ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে এবং জাইগোট রুপে সন্তান রুপে সৃষ্টি হযে থাকে। এই যোগ্যতাকে অদৃশ্য এক জগত থেকে নির্ধারন করে দেওয়া হয়? যদি এই বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপাঙ্খ ভাবে বুঝতে চান তবে শিশু উৎপাদনের গভিরের বিষয়টি আলোচনা করতে হবে।
একটি শিশু কিভাবে তার যোগ্যতা গুনাগুন আচরন এসকল কিছু পাই। শিশুটি কেমন হবে এটা কিভাবে নির্ধারিত হয়? এই গুলো পাই শিশুর MEIOSIS বিভাজনের সময়। MEIOSIS বিভাজনের মাধ্যমে CHROMOSOME এর গুনাগুন শুধু মাত্র অঙ্কুরিত ব্যক্তিটা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনা বরং এটা বংশানুক্রমিক ভাবে ও বংশধরদের মধ্য দিয়েও ও গড়াতে থাকে। MEIOSIS এর কারখানার মধ্যেই সিদ্ধান্ত এসে যায পিতৃ-মাতৃ প্রজনন কোষ হতে উৎপন্ন ব্যক্তিটির গুনাগুন কিরুপ হইবে। তবে আপনার আমার জীবনটা কেমন হবে তার ব্লুপ্রিন্টটা নির্দ্ধারিত হয়ে এসেছে পিতৃ-মাতৃর উৎপাদন কোষ MEIOSIS বিভাজনের সময় এই কারখানার মধ্য দিয়েই বাছাই হতে থাকে ৭০ ট্রিলিয়ন ধরনের বিভিন্ন গুনাবলী সম্বলিত GENETICS MATERIALS। একটি CHROMATID তার আর একটি NON SISTER CHROMATID এর সংগে উভয়ে BODY এর কোন একটি জায়গায় একত্রে মিশে যায়।এই স্থানটাকে CHIASMATA বলে। এই মিলিত হওয়ার স্থানের মধ্য দিয়ে তখন এরা উভয়ের GENETIC MATERIALS একে অপরকে আদান প্রদান করতে থাকে। অনেকটা কৌশল, চতুরতা, দক্ষতার সংগে ও পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে আমাদেরই পিতৃ-মাতৃ GENETIC MATERIALS গুলীর মিশ্রন বা আদান প্রদান সম্পন্ন করে ফেলা হয়! এখানে কোথায় কার সংগে কিসের আদান প্রদান করা হল তা এ পর্যন্ত কারো লক্ষ্য করবার সাধ্যি হয় নাই। অত্যধিক গোপনীয়তা বজায় রেখে এই কাজটি সম্পন্ন করা হয়। এই GENETIC MATERIALS এর আদান প্রদানের মাধ্যমেই CHROMATID গুলীর গুনাবলী বা ভাগ্য তথা এর থেকে উৎপাদিত ব্যক্তির ভাগ্য এখানেই সকলের অজান্তেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। অতএব আপনার আমার ভাগে কী পেলাম বা কী হতে বঞ্চিত হলাম দুনিয়ার কেউই তা জানতে সক্ষম হয়না। শুধু সেই কারখানাই জানে পিতৃ অংশ থেকে কতটুকু গ্রহণ করবে কতটুকু মাতৃ অংশ থেকে অথবা কতটুকু বংশ পরম্পরা থেকে কতটুকুইবা সে নিজস্ব যোগ্যতা পাবে। তার আচরণ, চালচলন, যোগ্যতা আকৃতি প্রকৃতি সমস্তটাই পাই কারখানা থেকে। কারখানায় নির্ধারিত করে সমস্তটাই। অথচ এই আদান প্রদানের সময় তার ভাগে কী পড়ল কারখানার নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছা উপরই নির্ভর করতেছে, সে একজন আইনষ্টাইন হবে নাকি একজন DOWN’S SYNDROME এর মত একটি স্থায়ী দুরারোগ্য ব্যাধি গ্রস্থ রোগী হবে নাকি, একজন সুস্থ মানুষ হয়ে জন্মাবে নাকি একজন CANCER রোগ গ্রস্থ হয়ে জন্মাবে। তার সমস্তটাই নির্ধারণ করে কারখানা।
এ যেনো অদৃশ্য কোন বিষয়বস্তুর ইচ্ছাপ্রকাশের মাধ্যমে সমস্ত প্রকৃয়া ঘটতে থাকে। এমন আশ্চর্যজনক ঘটনা কি আর কোথাও দেখতে পাবেন? অসম্ভব!!! এই GENETIC MATERIALS এর TRILLION TRILLION প্রকারের মিশ্রনের মাধ্যমে যে কত ধরনের গুনসম্পন্ন মানব উৎপাদিত হতে পারে তার ইয়ত্তা কারো পক্ষে খুজে বের করা সম্ভবপর নয়। এই কারখানার মধ্য দিয়েই জীব জগতের বৈশিষ্টের বৈচিত্রতা প্রকাশিত হয ও এর মধ্য দিয়েই DNA এর GENETICS MATERIALS এর পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই প্রানী জগতের বংশ ধারার মধ্যে বিবর্তন ধারাও চলতে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার হল এগুলী সবই আমাদেরই ব্যাপার বটে কিন্তু এটা আমাদের হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রনের একেবারেই বাইরে, এবং সম্পূর্ণ দৃষ্টির বাইরে এক অদৃশ্য জগতের কারখানা। আমরা যেন সেখান থেকে কোন এক অদৃশ্য হস্তের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একটি শিশু কি গুনাগুন সমৃদ্ধ হবে সেটা অদৃশ্য এক জগৎ যেনো নির্ধারন করে? নিয়ন্ত্রিত একটি বিষয় যেনো!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫৫