(নাস্তিকের বিচার চাই-পর্ব-৩)
আমাদের চারপাশে প্রাণের এত কোলাহল। কিন্তু কোথা থেকে এলো এত প্রাণ? কিভাবে শুরু হলো প্রাণের এই পথ চলা? সভ্যতার আদিকাল থেকে মানুষ এই প্রশ্ন করে চলেছে! আজ বিজ্ঞানের এই জয়জয়কারের যুগে এখনো কি সঠিক উত্তর আমরা পেয়েছি? পৃথিবীতে প্রাণের যে অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাই তা কোথা থেকে এলো? প্রাণ কিভাবে জড় থেকে উৎপত্তি হলো অথবা কোথা থেকে এলো?
১৯৫২ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী স্ট্যানলি মিলার এবং তাঁর ছাত্র হ্যারল্ড উরে একটি যুগান্তকারী গবেষণার ফলাফল ঘোষণা করেন। কয়েকটি অজৈব পদার্থ- জল, হাইড্রোজেন, মিথেন ও অ্যামোনিয়ার মিশ্রণে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ পাঠিয়ে মিলার এবং উরে অ্যামাইনো অ্যাসিডের মতো প্রাণ সৃষ্টির ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে তোলন। এর থেকেই পৃথিবীতে প্রাণ উদ্ভবের প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ পৃথিবীর অজৈব পদার্থ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস জন্মে। এর পরে ১৯২৪ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী এ. আই. ওপারিন জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে থিওরী দেন যে, আদি পৃথিবীর সাগর উত্তপ্ত ছিল (১০০০ সি.)। আদি পৃথিবীতে মিথেন গ্যাস, অ্যামোনিয়া ও পানি মিলে আদি সাগরে প্রচুর ঘন অ্যামোইনো এসিড উৎপত্তি হয়, যা মুরগীর স্যুপ (Chicken Soup) নামে পরিচিত। এই স্যুপ হইতে প্রোটিন এবং পর্যায়ক্রমে একটি আনুবীক্ষনিক এককোষী ব্যাকটটেরিয়া জাতীয় প্রাণীর উৎপত্তি ঘটে। উল্লেখ্য যে, আদি পৃথিবীতে অক্সিজেন না থাকায় এই স্যুপ-এর পচন নিরোধ করে। সেই এককোষী জীব হইতে মানুষ সহ পৃথিবী সমস্ত প্রাণীর উৎপত্তি লাভ করেছে । ১৯২৯ সালে বৃটিশ বিজ্ঞানী জে. বি. এস. হ্যালডেন জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে একই রকম মতবাদ দেন। বিশ্বজুড়ে সকল বিজ্ঞানী এই তত্ত্ব মেনে নেয়। জীবন পৃথিবীতে সৃষ্টি এমনটি প্রচার ডারউইনের বিবর্তনবাদকে আরো আপডেট করে।
চিত্র- আকাশ থেকে আসা উল্কা। যেখানে প্রানের সম্ভাবনা পাওয়া যায়। বামাবর্তী এ্যামাইনো এসিড পাওয়া গেছে।
কিন্তু ১৯৫০ সালে বিজ্ঞানী স্যার ফ্রেড হয়েল এ সকল তত্ত্বের বিপক্ষে আরেকটি বিতর্কিত মতবাদ হাজির করেন । তিনি বলেন, মহাকাশে আন্তর্নাক্ষত্রিক মেঘমণ্ডলী বা ‘ইন্টারস্টেলার ক্লাউড’ থেকেই জন্ম হয়েছিল প্রাণের। আমাদের সৌরমণ্ডল, মহাবিশ্বে পরিক্রমণের সময় যখন ওই মেঘমণ্ডলীর ভেতর দিয়ে যায়, তখন পৃথিবী সেই ‘প্রাণে’র দ্বারা সংক্রামিত হয়ে পড়েছিল। অনেকে বলেন এটা সম্ভব নয় কারন জীবনবাহক উল্কাপিন্ডদেরকে মহাকাশের শুন্যতা, তাপমাত্রার চরম অবস্থা এবং কয়েকটি বিভিন্ন ধরনের বিকিরণকে মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে সূর্যের উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন অতিবেগুনী রশ্মি যা জৈবিক অণুর কার্বন পরমাণুর বন্ধনকে ভেঙ্গে দেয়। তাই মহাকাশ থেকে অনুজীব পৃথিবীতে আসা কোনভাবেই সম্বব নয়। এই ধরনের তত্ত্বের কোনও সরাসরি প্রমাণ না থাকায় বিজ্ঞানী মহল একে কল্পবিজ্ঞান বলেই উড়িয়ে দেন। সকলে এ. আই. ওপারিন ও হ্যালডনের তত্ত্বের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। কিন্তু বাধ সাধলো পরে। ১৯৬৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর। বিশাল একটি উল্কা এসে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে, মুরচিশান শহরে। ঐ উল্কাপিণ্ডের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ৯০ রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিড। যা আদতে একটি জৈব পদার্থ। সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানী মহলে আড়োলন হযে পড়ে। তাহলে কি প্রাণ বহিরাগত? বিজ্ঞানী স্যার ফ্রেড হয়েল এর তত্ত্বের পক্ষে প্রচার প্রচারনা শুরু হয়ে যায়। ফ্রেড হোয়েলের পূর্বেও ১৯০৮ সালে দার্শনিক আরহেনিয়াস বলেছিলেন ‘প্রাণের বীজ’ মহাকাশে ঘুরে বেড়াতে-বেড়াতে পৃথিবীর কোলে আশ্রয় নিয়েছিল। আর তা থেকেই পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম হয়েছিল। তখন আরহেনিয়াসের কথা কেউই মানেনি। আরহেনিয়াসের এই মতবাদটিকে বলা হতো “প্যান্সপার্মিয়া তত্ত্ব”। কিন্তু উল্কাপিন্ডে এ্যামাইনো এ্যাসিডের প্রমান “প্যান্সপার্মিয়া তত্ত্ব” ও “হোয়েল” এর তত্ত্বকেই স্বিকৃত দিতে থাকে সমগ্র বিশ্ব। ব্যপক গবেষনা শুরু হয়ে যায়। পরে আরও অনেক উল্কাপিণ্ড এবং ধূমকেতুর মধ্যেও অনুসন্ধান ও নানা রকমের জৈব পদার্থের সন্ধান খুজে পাওয়া যায।
চিত্র- ঝাকে ঝাকে উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে এসে পড়েছে। লাখে লাখে পৃথিবী সৃষ্টির পর পরই।
আমরা জানি, পৃথিবীর জন্মের পর কয়েক কোটি বছর ধরে অনবরত এবং অবিশ্রান্ত উল্কাপাতের ঘটনা ঘটেছে আমাদের এই গ্রহে। তাহলে কি পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির জন্য জরুরি জৈব পদার্থ উল্কাপিণ্ডরাই বয়ে এনেছিল কোনও দিন, কোনও কালে? শুরু হয়ে গেলো প্রাণের উৎস সন্ধানে নতুন করে বিজ্ঞানী মহলে গবেষনা। প্রাণ কি তাহলে বহিরাগত? ‘প্রাণের বীজ’ যদি উল্কাপিণ্ড বা ধূমকেতুর পিঠে চড়ে পৃথিবীর বুকে এসে থাকে তাহলে প্রচণ্ড শৈত্য, ভয়ঙ্কর মহাজাগতিক রশ্মি, শক্তিশালী মহাজাগতিক কণার ঝাপটা এই সবের মধ্যে কী ভাবে ‘প্রাণ’ তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল এবং সাম্প্রতিক কালে এই ধরনের কিছু এক কোষী প্রাণী বা ব্যাকটেরিয়ার হদিশ মিলেছে, যারা ভয়ঙ্কর রকমের প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, খুব পাতলা অ্যালুমিনিয়ামের আস্তরণই আশি শতাংশ অনুজীবকে তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। গ্লুকোজ এবং লবনের মতো উপাদানের উপস্থিতি তাদের টিকে থাকার হারকে বাড়িয়ে দেয়। দেখা গেছে ক্ষুদ্র ধূলিকণার আস্তরণের মধ্যে বসবাসকারী ব্যক্টেরিয়ার কলোনীকে সৌর বিকিরণ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে পারে না। আর এই কলোনি যদি নুড়ি আকৃতির কোন প্রস্তর খন্ডের মধ্যে থাকে তবে সেটার অতিবেগুনী রশ্মি প্রতিরোধের ক্ষমতা বেড়ে যায় অনেক অনেক বেশি পরিমাণে। ফলে অনুজীবের জন্য তেজস্ক্রিয়তা কোন সমস্যা নয়।
১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ধসে পড়া একটি গ্রহাণুর মধ্যে ডিএনএ ও আরএনএ-র ছাপ দেখে গবেষকরা এ ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত৷ ঐ গ্রহাণুর ভেতর ভারী কার্বন পরমাণুর তৈরি বিশেষ নিউক্লিওবেজ-এর সন্ধানও পাওয়া গেছে৷ কার্বণ পরমাণুর এই বিশেষ ধরন কেবল পৃথিবীর বাইরে তৈরি হওয়া সম্ভব৷ গবেষণা দলের প্রধান ড. জিটা মার্টিন জানালেন, আমরা বিশ্বাস করি, গ্রহাণুর নিউক্লিয়বেজ থেকেই জেনেটিক কোডিংয়ের সূত্রপাত৷ ৩৮০ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবী ও মঙ্গলে রীতিমতো গ্রহাণুর বৃষ্টি হতো৷ তবে প্রাণ বিকাশের উপযোগী পরিবেশ ছিল শুধু পৃথিবীতে৷ অ্যামেরিকান কেমিকেল সোসাইটির ২৩৫তম সম্মেলনে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রোনাল্ড ব্রেসলাউ (Ronald Breslow) এক খবর প্রকাশ করেছেন। তিনি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের স্নাতক ছাত্র মিন্ডি লেভিন (Mindy Levine) কর্তৃক যৌথভাবে পরিচালিত গবেষণায় এই ফলাফল বেরিয়ে এসেছে। চমকপ্রদ খবরটি হচ্ছে: বহির্জাগতিক কোন উল্কাই পৃথিবীতে জীবনের বীজ বহন করে নিয়ে এসেছিলো। জীবনের বীজ বলতে এখানে "বামাবর্তী অ্যামিনো এসিড" (Left-handed Amino Acid) কে বোঝানো হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, আমেরিকার নাসা (NASA), আমেরিকার নোবেল বিজয়ী ও ডিএনএ আবিস্কারক ওয়াটসন ও ক্রিক স্পিফিন হকিং প্রমুখ বিজ্ঞানীগণ ওপারিন এর থিওরী বিশ্বাস করেন না। ওপারিনের তত্ত্ব ভূল প্রমান করার পিছলেন বেশ কয়েকটি যুক্তি পাওয়া যায়। ১) সবচেয়ে সরলতম এককোষী আনুবীক্ষনিক ব্যাকটটেরিয়া ২৭টি মৌলিক পদার্থ দ্বারা গঠিত। একটি এককোষী জীব আপনা-আপনি উৎপত্তি হওয়া মানে পিনের আগার চেয়ে শততম সুক্ষ্মতম স্থানে ঐ ২৭টি মৌলিক একত্রিত সুনির্দিষ্ট রাসয়নিক বন্ড দ্বারা একত্রে আবদ্ধ হয়ে প্রোটিন, লিপিড, এনজাইম, ভিটামিন প্রভৃতি উৎপত্তি করতে হবে ও আরও সুনির্দিষ্ট পুণরায় রাসয়নিক বন্ড দ্বারা একত্রে আবদ্ধ হয়ে শক্তি উৎপাদনের জন্য ক্রেবচক্র, গ্লাই কোলাইসিস প্রভৃতি প্রক্রিয়া সক্রিয় হতে হইবে। যা আপনা-আপনি হওয়া মানে ছাপা খাতা হইতে শত শত ডিকশনারী বের হয়ে আসার মতোই।২) ওপারিন ধারণা করেছিলেন যে, আদি পৃথিবী অক্সিজেনবিহীন ছিল। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা যায় তা কোন সময়ই অক্সিজেনবিহীন ছিল না । ওপারিন ধারণা করেছিলেন পৃথিবী উত্তপ্ত ছিল এবং সাগরে প্রচুর ঘন অ্যামোইনো এসিড হইতে প্রোটিন ও পরে জীবের উৎপত্তি লাভ করে। আধুনিক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন তাপ ও পানি উভয়ই অ্যামাইনো এসিড হইতে প্রোটিন তৈরিতে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করে। ফলে আদি পৃথিবীতে মুরগীর সুপ্যের কোনো অস্তিস্ত ছিল না। ৩) আধুনিক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন অ্যামাইনো এসিড হইতে জীবের উৎপত্তি হয় না, অ্যামাইনো এসিড জীবের মুল উপাদান নয়; বরং নিউক্লিক এসিড বা ডিএনএ জীবের জীবনের মুল ভিত্তি; যা আপনা আপনি কোনোক্রমেই তৈরি হয় না। ৪) প্রকৃতিতে বা সাগরে ডানহাতি (Right-handed) ও বামহাতি (Left-handed) অ্যামাইনো এসিড সমান সংখ্যক দেখা যায়। কিন্তু জীবদেহে এর বিপরীত। জীবদেহ শুধুমাত্র বামহাতি অ্যামাইনো এসিড দ্বারা গঠিত। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণ হয় যে, প্রকৃতিতে বিদমান বা আদি সাগরের অ্যামোনিয়া এসিড হতে কোনো ক্রমেই আদি এককোষী জীব তৈরি হয়নি; হলে জীবদেহ ডানহাতি ও বামহাতি অ্যামাইনো এসিড সমান সংখ্যক দেখা যেত। এ সকল গবেষনাই ওপারিনের গবেষনা ভূল বলেই প্রমান করে।তাছাড়া আদি পৃথিবী উত্তপ্ত ও অক্সিজেনবিহীন ছিল এবং পানিতে জীব উৎপত্তি লাভ করেছে যা; তার এই ধারণা সঠিক মনে করে-মিলার অ্যামাইনো এসিড তৈরি করেছেন; যা আদৌ সঠিক না, তা পরীক্ষাতে বিফল। এছাড়া স্টানলি মিলার শুধু মাত্র অ্যামোনো এসিড তৈরি করেছেন। জীবন শুধু অ্যামাইনো এসিড/প্রোটিন দিয়ে তৈরি না। তিনি এককোষী কোনোই অংশই তৈরি করেন নাই। এমনকি এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা একবিন্দু কার্বোহাইড্রেড বা শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ তৈরি করতে ব্যর্থ।
এক্সট্রিম্ফাইল ব্যাকটেরিয়া । ছবি সৌজন্যে নাসা
প্রিয় পাঠক তাহলে এতক্ষনের গবেষনা সংক্রান্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম প্রাণ একটি এক্সট্রিম জীব ফাইল।এক্সট্রিম জীব ফাইল হিসেবে প্রাণ মহাবিশ্ব থেকে এসেছে। এখন আমরা যদি ভাবি আদম একটি এক্সট্রিম জীব ফাইল যা আল্লাহ আসমান থেকে পাঠিয়েছে। সেই এক্সট্রিম ফাইলকে খুললেই প্রকৃত ফাইল টি বের হবে। সেই ক্ষেত্রে কি সমস্যা থাকে? কিসের সমস্যা? বলুন ? আদম কি এই রকম হাত এইরকম পা এই রকম দেহ নিয়ে এসেছিলো? (মাসুম বাচ্চা ‘লাফাঙ্গা ব্লগার’ যেমন বলে ৯০ ফুট আদম) এমনটি কি বলা আছে আল কোরআনে? আল কোরআন কি আদ্যৗ গভীর ভাবে পড়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করেছেন! লক্ষ্য করুন একটি আয়াত। ৭:১১"আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি।…." 'We initiated your creation (khalaqa), and then we shaped you…' (7:11) তাহলে আমাদের তৈরী করা হলো কিরুপে। এক্সট্রিম ফাইল রুপে। দেখুন এই আয়াতে একটি time gap আছে। সৃষ্টি শুরুর পরে ধাপে ধাপে আকার-অবয়ব দেয়া হয়েছে। এমন না যে রেডিমেড মানুষ তৈরী হলো। এই আয়াত নিয়ে যদি একটু গভিরভাবে চিন্তা করি , তাহলে দেখি , মানুষের যখন আকার-অবয়ব দেয়া হচ্ছিল তখন তারা জীবিত ছিল। এটা এই ইঙ্গিত করে যে প্রথম জীবন (first life) কাদামাটি (খনিজ পদার্থ) থেকে শুরু হওয়ার পরে এই যে আকার-অবয়ব দেয়া । মানুষকে যে একেবারে রেডিমেড তৈরি করা হয়নি , একটা time gap যে ছিল তা কোরানের আয়াতে আরো পরিস্কার। একটা কথা পরিস্কার যে মানুষকে সৃষ্টি করার পর মানুষের এই দেহ গঠন কাঠামো তৈরী হয়। তার মানে অনুজীব রুপে প্রাণ বাইরে থেকে আসাটাই অনেকাংশে যুক্তিযুক্ত।
(তাহলে আদমের আকাশ থেকে পড়া নিয়ে লাফাঙ্গা মাসুম বাচ্চাদের এত অট্টহাসের কি আছে? নাস্তিকদের হাসাহাসি দেখলে আমার বড় হাসি পাই। বিশেষ করে কিছু লাফাঙ্গা টাইপের নাস্তিক আছে যাদের অত্যাচারে থাকাই যাই না। একটু শান্ত করে কিছু পড়বো সেই পড়ার সুযোগ পাই না। ঠুস করে এমন এক কমেন্ট করে বসে। ওদের স্রষ্টা রাসুল নাই বলে যেনো আমাদেরও নেই। মানুষের অনুভূতীতে আঘাত দিতে এরা খুব পারদর্শী।)
চিত্র- এক্সট্রিমফাইল জলভল্লুক, মাইক্রোস্কোপে। ছবি সৌজন্যে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি
আদমকে বেহেস্ত হতে পাঠানোর কিছুটা গুরুত্বপূর্ন জিঙ্গাসার উত্তর তাহলে মিলে যাচ্ছে। পৃথিবীর বাইরে থেকে প্রাণের আর্বিভাবের মাধ্যমে সেই ‘এক্সট্রিমফাইল জীব’ই মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বুকে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছিল? এবং সেই প্রাণ থেকেই জগতে এত জীব। বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কোটি কোটি জীব—এদের প্রত্যেকের আছে আলাদা আলাদা বডি-সিস্টেম; এদের জীবনধারণ-পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন এবং পৃথিবীর প্রতিবেশগত ভারসাম্য (ecological balance) রক্ষায় প্রতিনিয়ত এরা পালন করে যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এহেন কোটি কোটি জীব দৈবক্রমে সৃষ্টি হয়ে গেছে এবং এ-সৃষ্টির পেছনে কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ক্রিয়াশীল নেই—এমনটি দাবী করা কি নিতান্তই অযৌক্তিক নয়? বস্তুত, কোনো জীব নিজেকে নিজে সৃষ্টি করেনি বা নিজের প্রচেষ্টার ফলে অস্তিত্বে আসেনি। জীবনের মতো একটি জটিল জিনিস দৈবক্রমে সৃষ্টি হয়েছে বলে ভাবাও অসম্ভব। ব্যাপারটি এরকম ! ভাবুন একটি ভাংড়ি পট্টি। চারিদিকে লোহা লক্কড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । লোহা লক্কড় চারিদিকে অসংখ্য পরিমান। হঠাৎ একটি ঝড় এলো । বিরাট ঝড়। ঝড় শেষে দেখা গেলো একটি বোয়িং বিমান উড়ে গেলো। ঝড়ে সেই লোহা লক্কড় বিমান হয়ে গোলো। হ্যা সেই লোহা লক্কড় বিমান হয়ে গেলো। হা.হা.হা.হা,হা. আপনা আপনি প্রাণ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি এমনি।
চিত্র- ডিএনএর ডিজাইন অদ্ভুদরাকেমর এবং জটিল। যেনো কেউ যেনো সাজিযে দিয়েছে। আপনা আপনি আদ্যৗ কি সম্ভব?
বিবর্তনবাদের একজন কট্টর সমর্থক ও গবেষক রিচারড ডকিন্স নিজেও কোষের জটিল ডিজাইন দেখে এক ধরনের ডিজাইনারের সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু তার থিওরি অনুসারে এই ডিজাইনার হল প্রাচীন সময়ে মহাবিশ্বের অন্য কোন স্থানে সৃষ্টি হওয়া কোন ধরনের সভ্যতা(!) যারা ডারউইনের বিবর্তন অনুসারেই বিবর্তিত হয়ে অত্যন্ত উন্নতি লাভ করে বুদ্ধি ও প্রযুক্তিতে। তার মতে এই সভ্যতাই আমাদের গ্রহে প্রাণের ডিজাইন করে প্রাণের বীজ বপন করে গেছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের প্রাণের ডিজাইনার সমস্যার সমাধান ডকিন্স করে ফেলেছেন। কিন্তু সেই উন্নত সভ্যতা যারা নাকি আমাদের তথাকথিত ডিজাইনার তাদের আবির্ভাব কোথা থেকে হল বা হতে পারে সে সম্পর্কে আর তিনি কোন মন্তব্যে যাননি। কি অদ্ভুদ ব্যাপার ভিন গ্রহের প্রানীরা মানুষের ডিজাইন করেছে অথচ ভীন গ্রহের প্রাণীদের ডিজাইন কে করেছে এ বিষয়ে কোন নিদীষ্ট তথ্য তিনি দেন নি। একটিবারের মতো তিনি ভাবতে চেষ্টা করেন নি যে একটি হায়ার ডাইমেনশনাল সুপার ইন্টেলেকচুয়েল পাওয়ার এই সৃষ্টি কারুকাজ করতে পারেন খুবই সহজেই। তবে মূল ব্যাপারটি হল বিবর্তনবাদের অন্যতম একজন গবেষকও যে প্রাণের মাঝে বুদ্ধিমান ডিজাইনের ব্যাপারটি উড়িয়ে দেননি এটাই বা আমাদের কম কি!
প্রিয় পাঠক, একটি ব্যাকটেরিয়া একটি প্রাণী কোষের থেকে অনেক বেশি সরল কিন্তু তবুও এর গঠনকে একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও জটিল যন্ত্রের সাথে তুলনা দেওয়া যায়। এমন একটি সূক্ষ্ম ও জটিল যন্ত্র যা তৈরি করা এখনও মানুষের আয়ত্তের বাহিরে। কারন শুধুমাত্র এর একটি ডিএনএ অনুই প্রচণ্ড রকমের জটিলতা ধারণ করে থাকে। সমগ্র ব্যাকটেরিয়া কোষের মধ্যে এই ডিএনএই সবচেয়ে বেশি সূক্ষ্ম ও জটিল এবং কোষের বাকি অংশের সম্মিলিত জটিলতাও ডিএনএ এর জটিলতার তুলনায় নগণ্য। ডিএনএর জটিলতা সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। যাই হোক, ব্যাকটেরিয়ার এই সূক্ষ্ম যন্ত্রের মত জটিলতা দেখলে এটাই মনে হয় যে এটা খুবই বুদ্ধিমান কেউ প্ল্যান করে তারপর ডিজাইন করেছে। না হয় ধরেই নিলাম কোন একটি সরলতম কোষ থেকে ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি হয়েছে তবুও এর সূক্ষ্ম ও জটিল যন্ত্রের মত ডিজাইন নির্দেশ করছে কোন ধরনের অত্যন্ত বুদ্ধিমান ডিজাইনার, ইনভেন্টর ও মোডিফায়ারের দিকে। এই ধরনের জটিল ডিজাইন আসলে নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনের দিকেই নির্দেশ করছে। অর্থাৎ মহাকাশ থেকে আসা সেই এক্সট্রিম ফাইল জীব বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষে পরিবর্তিত বা রুপান্তরিত হয়েছে। অথাৎ পৃথিবী থেকে উপাদান সংগ্রহ করে তার নিজ দেহ ধারন করে এবং প্রকৃতির বিবর্তন নামক একটি নির্দেশনায় একটি পরিকল্পনায় প্রক্রিয়াটি তার কাযক্রম শেষ করে। এই যেমন ধরেন ডাইনোসর প্রজাতিটি যদি প্রাকৃতিক বিপর্যযের মাধ্যমে ধ্বংশ না হতো তবে প্রকৃতিতে মানুষ নামের প্রানিটির রাম রাজত্ব হতো না। বিবর্তন কোনভাবে হয়ে থাকলে অবশ্যই কোন না কোন ধরনের বুদ্ধিমান সত্তা দ্বারা পরিচালিত । অথবা ধরে নিতে হবে যে বিবর্তন নামের এই প্রক্রিয়াটির নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা আছে!!! সে একটি নিদীস্ট লক্ষ্যে পরিচালিত।
চিত্র - প্যান্সপার্মিয়া যা স্রষ্টার দান। এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন।
ইউটিউবে কিছু নাস্তিককেই মাঝে মাঝে দেখি আদম সৃষ্টি জান্নাতে হয়েছে এবং জান্নাত থেকে আদমকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ব্লগের কিছু (মাসুম বাচ্চা ) লাফাঙ্গা মার্কা নাস্তিক তাদের ব্লকে উপহাস করে লিখেছে “৯০ ফুট আদম আসমান থেকে লাফাইয়া পড়েছে।” এই সকল প্রসঙ্গ তোলে আর হাসাহাসি করে।৯০ হাত আদম লাফাইয়া পড়েছ” বিজ্ঞান কে আর কিছুদিন সময় দেন না দ্যখেন বিজ্ঞান নাস্তিক্যবাদ কে কোথায় নিয়ে যায়। অন্ধকার গহ্বরে নোংরা নর্দমায় আপনাদের সকল তত্ত্বকেই ফেলে দবে। ওরা আসলে আল কোরআনকে বোঝার চেষ্টা করে না। বুজতে পারে না ১৪০০ বছর পূর্বের মানুষের সাথে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন নিয়ে কথা বলা যায় না। ফলে আল্লার রুপক আলোচনা। আল্রার এই রুপক আলোচনা নাস্তিকদের হাসির খোরাক যোগায়। কিন্তু নাস্তিকরা ভাবে না তাদের হাসি অন্যের হাসিরও কারন হতে পারে। “তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাজিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিতনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে তন্মধ্যকার রূপকগুলোর। - সুরা আলে ইমরান-৭ ”
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩৯