হঠাৎ, একটি আলো হতে দ্রুত গতিতে সম্প্রসারিত হয়। একে বলা হয় কসমিক ইনফ্লেশন। এর স্থায়িত্বকাল 10^-32 সেকেন্ড। এ ক্ষুদ্র সময়েই আমাদের মহাবিশ্ব পূর্বের তুলনায় 10^26 গুণ বড় হয়েছে। কিন্তু এর পর মুহুর্তে তা স্বাভাবিকভাবে প্রসারিত হতে থাকে।
বিগব্যাং এর পর থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রতিটি পর্যায়ে এক পরিকল্পনাকারীর সুষ্ঠ পরিকল্পনার দ্বারা এই মহাাবিশ্ব নিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি পদক্ষেপই একটি নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত।
প্রকৃতই সৃষ্টির শুরুতে প্রকৃতির মাঝে একটি উদ্দেশ্য নিয়োজিত ছিলো প্রাণীজগত এবং মানুষ। এবং এই মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কারনে সৃষ্টিকূলে এতটা সুশৃংখলা নির্ধারিত রয়েছে। যদি মানুষ সৃষ্টিই স্রষ্টার উদ্দেশ্য না হতো তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এতটা সুক্ষ সমন্ময় থাকতো না। সুগভীর পরিকল্পনার ছাপ এতটা প্রকট আকারে দেখা দিতো না। গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে বিগব্যাাংগ এর সৃষ্টি হয়েছে একটি বাসযোাগ্য পৃথিবীর জন্য, যা মানুষের বসবাসের উপযোগী। বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞান প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে যে বিগব্যাংগ বা মহাবিস্ফোরনটিও ছিলো হিসেবের নিত্যতা এবং সুক্ষসমন্ময় দ্বারা গড়া একটি মহৎ পরিকল্পনা। বিগব্যাংগ ঘটেছিলো একটি নির্দীষ্ট গতিতে। বিগব্যাং ঘটার পরে মহাবিশ্বটি সম্প্রসারিত হতে থাকে। ষ্ট্যার্ন্ডাড বিগব্যাং মডেল অনুসারে এক মহাক্ষুদ্র আদি ঘনায়িত শক্তি পিন্ড মহাগর্জন করে এক মহাবিস্ফোরনের মাধ্যমে ১০^-৪৩ সেকেন্ড সময়কালে সৃষ্টি করে এই মহাবিশ্ব। সৃষ্টির সময় মহাবিশ্ব ১০^-৩২ k কেলভিন উত্তপ্ত অবস্থায় ছিলো।
অকল্পনীয় শক্তির ঘনায়নে থাকা অবস্থায় এক মহাবিস্ফোরনের সাথে সাথে আশ্চার্য রকম গতিতে মহাসম্প্রসারন হতে শুরু করে। যা আজো পযর্ন্ত সেই মহাসম্প্রসারন চলছে। সেই মহাসম্পসারণটি একটি নির্দীষ্ট গতিতে ঘটেছে বলেই চরম উত্তপ্ত মহাবিশ্বটি গ্যালাক্সি, নক্ষত্র গ্রহ পৃথিবী সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। নিদীষ্ট ও পরিকল্পিত একটি গতিতে মহাবিশ্বটি সম্প্রসারিত হয়েছে। গতিটি ১০০% পারফেক্ট ছিলো বলেই মহাবিশ্ব, পৃথিবী এবং মানুষ সৃষ্টি হতে পেরেছে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এ্যালেন গুথ মহাবিশ্বের এই সুনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ হার দেখে স্তম্ভিত হয়ে বললেন “এই সম্প্রসারনের হার এতটাই সুনিয়ন্ত্রিত, যেখানে ভুলের সম্ভাবনা ১/১০^৫৫। এত সুক্ষ এবং সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা বা বা প্রক্রিয়া কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা হতে পাওয়া অসম্ভব। বিগব্যাং যদি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো অনিয়ন্ত্রিত ঘটনা হতো তবে এই প্রক্রিয়া এতটা সঠিক এবং উপযুক্ত ভাবে চলতে পারতো না। তাই বলা যায় এটি অবশ্যই একটি নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া।”
মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের এই নিখুত গানিতিক বিষয়টি পর্যলোকন করে অনেকেই চমকে ওঠেন! বিশিষ্ট পর্দাথবিজ্ঞানী পল ডেভিস বিগব্যাংগের পর মহাবিশ্ব যে গতিতে সম্পসারিত হচ্ছে তা নিয়ে চমকপ্রদ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মতে সম্প্রসারনের গতিটি ১০০% পারফেক্ট ছিলো। তার হিসাব মতে সেই গতিবেগের কোটি ভাগের ১ ভাগ যদি কম বেশি হতো তবে এই (habitable universe) বাসযোগ্য বিশ্বজগত সৃষ্টি হতো না। এ প্রসঙ্গে পল ডেভিস বলেন “ সুক্ষভাবে হিসেব-নিকেশ করে দেখা যাচ্ছে যে বিগব্যাং এর পর বিশ্বজগতের সম্প্রসারনের গতির মাত্রা ছিলো ঠিক ততোটুক্ইু যে মাত্রায় সম্প্রসারিত হওয়া শুরু করলে বিশ্বজগত তার নিজস্ব মাধ্যাকর্ষন-শক্তির কবল থেকে মুক্ত হয়ে অনন্তকালের জন্য সুশৃংখলভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে। সম্প্রসারণের গতিবেগ সামান্যতম কম হলে এ বিশ্¦জগত ধ্বংশ হয়ে যেতো। আবার গতিবেগ সামান্যতম বেশি হলেও বিশ্বজগতেরর সবকিছু বহু আগেই বিশৃংখলভাবে ছড়িযে ছিটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতো।
স্পষ্টতই বিগ ব্যাং কোনো সাধারণ বিস্ফোরন ছিলো না, ছিলো সুক্ষভাবে পরিকল্পিত একটি বিশাল ঘটনা - W.R.Bird, The Origin of Species Revisited, Nashville: Thomas Nelson, 1991; originally published by Philosophical Library in 1987, p.405-406) পল ডেভিসের ভাষায় “সাধারন বিস্ফোরন ছিলো না, ছিলো সুক্ষভাবে পরিকল্পিত একটি বিশাল বিস্ফোরন”। বিস্ফোরনের গতিবেগের উপর নির্ভর করেছিলো সম্প্রসারনের গতিবেগের হার। বিস্ফোরনের গতিবেগ যদি কম হতো তবে সম্প্রসারণের হার হতো কম গতিতে ফলে আইনষ্টাইনের রিলেটিভিটি সুত্র অনুযায়ী মহার্কষ আকর্ষনের কারনে বস্তু সমূহ সম্প্রসারিত হতে থাকলেও সৌরজগতের নির্মানের আগেই পুরো মহাবিশ্ব পূনরায় আবার সংকুচিত হয়ে মিশে যেতো। আর যদি বিস্ফোরনের গতিবেগ বেশি হতো তবে সমস্ত কিছু এলোপাথালি ভাবে ছড়িযে ছিটিয়ে যেতো। অতিরিক্ত সম্প্রসারণের কারনে বস্তুকনাগুলো একে অপরকে আকর্ষন করে সৌরজগত, তারকারাজি, ছায়াপথ এসব গড়ে উঠার সুযোাগ পেত না। এ্ই সকল বিভিন্ন প্রাপ্ত তথ্য থেকে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে এই সম্প্রসারনের হার ঠিক ততটুক্ইু যতটুকু হলে মহাবিশ্ব নিজের মহাকর্ষ আকর্ষন শক্তি অতিক্রম করতে পারে। এই কারনেই পল ডেভিস এটিকে একটি পরিকল্পনার ফসল বলে অভিহিত করেছেন। তার ধারনা এটাকে সৃষ্টি করা হয়েছে হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার ফল নয়। পল ডেভিস বলছেন: “এমন ধারণা মনে স্থান দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা খুবই কঠিন যে, বিশ্বজগতের বিদ্যমান কাঠামো যা কিনা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনের ব্যাপারের স্পর্শকাতর যত্নের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করেই অস্তিত্বে আনা হয়েছে।”-(Paul Davies, God and the New Physics, New York: Simon & Schuster, 1983, p.189)
একই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেখা যায় জর্জ গ্রিনস্টেইনকেও (George Greenstein)। আমেরিকার এই জ্যোতির্বিদ প্রফেসর তার The Symbiotic Universe নামক গ্রন্থে বলছেন: “(বিশ্বজগতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা) বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করবার পর, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মনে যে-চিন্তার উদয় হয় তা হচ্ছে: (বিশ্বজগত সৃষ্টির পেছনে) নিশ্চয়ই কিছু অতিপ্রাকৃতিক এজেন্সির(some supernatural agencies) হাত আছে।”-(দেখুন: Hugh Ross, The Fingerprint of God, 2nd ed., Orange, CA: Promise Publishing Co., 1991, p.114-115)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:২৭