আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে চাইছি সে বিষয়টি হলো আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাতে মানুষের ক্রমবিকাশ নিয়ে যে শিক্ষা আমাদের দেওয়া হয় তার বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার আছে। আমরা পড়ছি বা আমাদের সন্তানেরা শিখছে মানুষ কিভাবে পোষাক পড়া শিখলো, চাষাবাদ শিখলো, পশুপালন শিখলো, লৌহ যুগ লৌহ ব্যবহার শিখলো এভাবেই মানুষের কিভাবে ক্রমবিকাশ মানব জাতির জীবনে এত উন্নয়ন কি আপনা আপনি ঘটেছে? আমাদের সন্তানেরা যা শিখছে তাতে বোঝানো হয় মানুষ সব আপনি আপনি শিখে গেছে। স্রষ্টার হস্তক্ষেপ নেই। এর মধ্যে কোন রহস্যময়তা বিদ্যমান ছিলো না? কিন্তু আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মানুষ সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মানুষের কথা বলা শেখাটাই ছিলো চমকপ্রদ উন্নয়নমূলক একটি মাইলফলক ঘটনা। কথা বলা শেখার পরেই মানুষ জাতির ঐতিহাসিক উন্নয়ন শুরু হয়। ধাপে ধাপে মানুষের পশুত্ব থেকে মনুষত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু মানুষ কথা বলা শিখলো কি করে? কে তাকে বোঝালো কন্ঠ থেকে বেরোনো সুর জিহ্বা ঘুরিয়ে পেচিয়ে পরিবর্তন করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। বিভিন্ন শব্দ চয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুর নামকরন করে এক একটি বিষয় নির্ধারন করা যায়? কে তাকে শেখালো এই নামকরন করা? একটি গরুকে গরু বলতে হবে, একটি ছাগলকে ছাগল বলতে হবে, একটি মুরগীকে মুরগী বলতে হবে। আকাশকে আকাশ বলতে হবে। এই নামকরন করা মানবসভ্যতার চুড়ান্ত উন্নয়নের দ্মার উন্মোচরন করে। এই নামকরন করাইবা মানুষ শিখলো কি করে? কে তাকে শিখালো নামকরন করা?

একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করলে আমরা লক্ষ্য করবো মানুষের ভাষা শিক্ষাটা একটি অলৌকিক বিষয়। ইতিহাস আমাদের বুঝতে শেখায় জ্ঞানবৃক্ষ জনিত ঘটনা বা হোমো সেপিয়েন্সদের মধ্য পোষাক পড়ার বাসনা থেকেই সুই সুতার আবিস্কার করে তার কিচুদিনের মধ্যেই অদ্ভুদভাবে হোমো সেপিয়েন্সরা কথা বলতে শুরু করে। বাইবেল অনুযায়ী বলা হয় ভাষা একটি ‘Divine Gift’ বা স্বর্গীয় উপহার। সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টির শুরুতেই মানুষের মধ্যে শুধু ভাষাই নয় বরং কথা বলার ক্ষমতাও দিয়ে দিয়েছেন। এবারে আমরা আল কোরআনের গুরুত্বপূন কিছু আয়াত নিয়ে আলোচনা করি। আল কোরআন মানবজাতির কথা বলা শিক্ষা নিয়ে কি বলেন? আল কোরআন বলেন- দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন। -সূরা রহমান : ১-৪ " যার অর্থ দাড়ায় স্রস্টাই মানুষকে ভাব প্রকাশ করতে বা কথা বলতে শিখিয়েছেন। এবার আসি বিজ্ঞান আমাদের মানুষের কথা বলা সম্পর্কে কি বলে? কথা বলার প্রসঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞান চমকপ্রদ তথ্য দিচ্ছে। তাদের মতে-মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশ কথা নিয়ন্ত্রণ করে এফএক্সপি-২ জিন যার জন্য আমরা মুখ মধ্যে প্রয়োজনীয় নড়াচড়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এফএক্সপি-২ নামের এই জিনটি স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর শরীরেই আছে। কিন্তু মানবদেহে যেটি আছে সেটি এর রূপান্তরিত জিন," মানুষের কথা বলার জন্য এই রুপান্তরিত জীনটি কৃতিত্ব বহন করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো মানব দেহে এই জীনটি রুপান্তরিত হলো কি করে? কথা বলা ও ভাষার বিকাশে এই জিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারণ যেসব মানুষের শরীরে এই জিনটি রূপান্তরিত অবস্থায় থাকে না, তাদের কথা বলতে অসুবিধা হয়।" আর যাদের মধ্যে রুপান্তরিত অবস্থায় থাকে তারাই কথা বলতে পারে। যেমন গরিলা ওরাং ওটাং এর এই জিনটি রুপান্তরিত অবস্থায় নেই। কোন না কোন ভাবে কোন মিউটিশন মানব দেহে এই জীনটিকে রুপান্তরিত অবস্থায় পরিবর্তন করেছিলো। আর যাই হোক দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ায় মানব দেহটাও কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কিন্তু এই পরিবর্তন অন্য কোন প্রাণির দেহে ঘটলো না ঘটলো আল্লাহর নির্ধারিত প্রানি মানুষকে যাকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েচে তার মাঝে? নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও এই জিন ছিল, কিন্তু এতটা উন্নত ছিল না। আর এই কারনে জার্মান মনোবিজ্ঞানী উইলহেম উন্ড ভাষার উৎপত্তি নিয়ে যতো তত্ত্ব ও প্রস্তাবনা আলোচিত হয়েছে তা দেখে তিনি প্রশ্ন করেছেন মানব জগতে ভাষার আবির্ভাব ও ব্যবহারের সক্ষমতা কি কোন ‘ঐশ্বরিক দান নাকি? পৃথিবীতে মানুষই হলো একমাত্র প্রাণী যাদের ভাষা আছে, এই ভাষার কারণে আমরা অন্যসব প্রাণী থেকে আলাদা হয়েছি," নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাগি টলারম্যান সত্যি একটি মহান সত্যি কথা বলেছেন ! আমাদের মানুষের উন্নয়নের চুড়ান্ত শিখরে আরোহন করার একটি মাত্র কারন যে মানুষেরা খুব সহজেই তার মনের ভাব প্রকাশ করাতে পারে। ভাষা আবিস্কারের প্রয়োজনীয়তা সর্ম্পকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইতিহাসবিদ ড. লরা রাইট বলেন ‘এই আড্ডা মারার মতো করে কথা বলার গুরুত্বও কম ছিল না। টুকটাক কথা বলা, পরচর্চা বা গসিপ এগুলো প্রতিদিনেরই অংশ- আর একসকল কারনে মানুষের জীবনে ভাষা আবিস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ’ কিন্তু মানুষের এই কথা বলার পিছনে তার শারীরিক সক্ষমতা কি ছিলো? নাকি মানুষের বিবর্তেনের মধ্য দিয়ে মানবজাতি কথা বলার মতো যোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছিলো। আদি মানুষের মস্তিষ্কের গাঠনিক অবস্থানের সাথে ভাষার উৎপত্তির সম্পর্ক স্থাপন করা খুবই কঠিন। আদিম পৃথিবীতে মানুষের আগেই এসেছিল এপরা। এই এপদের গলায় বড় আকারের বায়ুথলী ছিল। এটা দিয়ে তারা 'গোঁ গোঁ' ধরনের শব্দ করে প্রতিপক্ষ বা অন্যান্য প্রাণীকে ভয় দেখাত। বেলজিয়ামের ফ্রি ইউনিভার্সিটি অফ ব্রাসেলসে বিজ্ঞানী বার্ট দ্য বোর সিমুলেশন করে দেখিয়েছেন। মানুষের ভাষার পেছনে স্বরবর্ণ, যাকে বলে, আবশ্যক। এপদের মধ্যে এ ধরনের বায়ুথলী ছিল ঠিকই, সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের বায়ুথলী স্বরবর্ণের উচ্চারণে বাধা দেয়। কিন্তু হোমো হাইডেলবার্জেনিস প্রজাতীর দেহে এরকম কিছু দেখা যায় না। এই হোমো হাইডেলবার্জেনিস থেকেই পরে নিয়ান্ডারথাল ও স্যাপিয়েন্সরা এসেছে বলে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া কিছু কিচু বিজ্ঞানীদের মতে মানুষ যখন সোজা হয়ে দাড়াতে শিখতে শুরু করে তখন থেকেই মানুষের বাগযন্ত্র সোজাসুজি অথাৎ L আকৃতির হতে শুরু করে। মানুষের সোজা হয়ে হাটার কারনে তার কন্ঠনালী পারফেক্ট হতে থাকে। আধুনিক মুখের ভাষাগুলির বিভিন্ন ধ্বনি উচ্চারণের জন্য মানুষের বিশেষ উল্টো Lআকৃতির বাগনালী প্রয়োজন, এবং স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংক্সের গলার বেশ ভেতরে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নিয়ানর্ডাথালদের পূর্বের শ্রেনির মাঝে জৈবিক কাঠামো, শ্বসনতন্ত্র, কণ্ঠের অবস্থা ইত্যাদি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছিলো। আধুনিক মানুষ তথা হোমো সেপিয়েন্স এর পূর্বের নিয়ান্ডারথালদের দৈহিক বাকযন্তু বা অণ্যান্য বিষয়বস্তু কথা বলার জন্য উপযোগী ছিল৷ বক্ষ ও উদরের মাঝখানের ঝিল্লিতে নার্ভের সংখ্যা বেশি হলে এবং স্পাইনাল কর্ড মোটা হলে তা কথা বলার পক্ষে সহায়ক ছিলো। এমনকি কথা বলার মূল চালিকা শক্তি FXP2 নামের একটি জিন নিয়ানডার্থাল শ্রেনির মাঝে বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু কোন কোন প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে নিয়ান্ডার্থাল মানুষদের মধ্যে ল্যারিংক্সের অবস্থান গলার বেশ উপরের দিকে ছিল এবং এই কারনেই তাদের পক্ষে বর্তমান মনুষ্য ভাষার ধ্বনিগুলি উচ্চারণ করা সম্ভব ছিল না। আধুনিক মানুষের কথা যদি ভাবি, মস্তিষ্ক থেকে মেরুদণ্ড হয়ে অনেক অনেকগুলো স্নায়ু ডায়াফ্রাম এবং পাঁজরের মধ্যকার পেশীতে এসে যুক্ত হয়েছে। ঠিকভাবে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ ও যথার্থ শব্দ করার জন্য এগুলো জরুরি ভূমিকা রাখে। এই একই জিনিস নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও দেখা যায়। নিয়ানডার্থালরা বিভিন্ন রকম শব্দ করা বা কিছুটা ইশারা ইঙ্গীতের মাধ্যেমে কিচুটা মনের ভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করলেও নিয়ানডার্থালরা আসলে ভাষা আবিস্কার করে উঠতে পারে নাই অথাৎ কোন বস্তুর নামকরন করার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বস্তুর পরিচয় সৃষ্টির বিষয়টি তাদের মাথায় আসেনি । কথা বলাল মতো গো গু শব্দ করা ছাড়া চিৎকার করে কোন কিছু বোঝানো ছাড়া তেমন কোন শব্দ বা বস্তুর নামকরনের মাধ্যমে ভাষার সৃষ্টির কোন গ্রহনযোগ্য কোন প্রমান নিয়ানর্ডাথালদের আমলে পাওয়া যায় নি। এককথায় বলা যায় মানুষের কথা বলার মতো দৈহিক প্রস্তুতি নিতে প্রায় কয়েক লক্ষ বৎসর লেগেছিলো।

এবার আসি আল কোরআনের আরেকটি আয়াতে। যে আয়াতে আল্লা মানুষকে শব্দ গঠন করতে নামকরন কিভাবে করতে হবে সেটা শিখিয়েছেন বলে ঘোষনা করেছেন। আয়াতটিতে বলছে -“আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’। তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন, ‘হে আদম, এগুলোর নাম তাদেরকে জানাও। অতঃপর সে এগুলোর নাম তাদেরকে জানাল। (আল কোরআন সুরা বাকারা 31-33) প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন এই তিনটি আয়াতে আদমকে নাম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আল কোরআনে আদমের এই নাম শিক্ষা দেওয়া বিষয়টি ভাষা সৃষ্টির ধারাবাহিক প্রয়াস ছিলো। আসলে ভাষা তখনই পূর্নতা পায় যখন নামকরনগুলো পূর্নাঙ্গরুপে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যখন একটি শিশুকে বিদেশী ভাষা শেখায় সর্বপ্রথম বিভিন্ন শব্দ শেখায় শব্দ মুখস্ত হলে ব্যকরন শেখায় এবং বাক্য গঠন শেখায়। আদিমকালে মানুষের সমাজে নানা প্রয়োজনে ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। তখন তারা বিভিন্ন জিনিসের নাম দিতে থাকে যাতে সবাই একটি জিনিসকে একটি নির্দিষ্ট নামেই চেনে। শিকার করতে গিয়ে তাদের সহচরদের বুঝতে সহায়তা করতে শিকার করা প্রাণিটিকে একটি নাম ধরে ডাকা শুরু করে। এই নাম সৃষ্টিই পরবর্তীতে ভাষা সৃষ্টি করে। আসলে ভাষার তখনই পূর্নাঙ্গতা পায় যখন পর্যাপ্ত শব্দের ভান্ডার বিদ্যমান থাকে। যেমন একটি বাক্য আমি বলি “আমি বইটি পড়ছি। এখানে তিনটি শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করা হলো। এই তিনটি শব্দকে তিনটি নামকরন করা হয়েছে। যেমন আমি শব্দটি আমাকে বোঝাতে নামকরন করা হয়েছে। বই একটি বিষয় তাকে বই নামে নামকরন করা হয়েছে। পরবর্তীতে পড়া একটি কাজ তাকে পড়া নামে নামকরন করা হয়েছে। এরকম বিভিন্ন নামকরন করার মধ্যেই হোমো সেপিয়েন্সরা ভাষা সৃষ্টির চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হতে থাকে। প্রিয় পাঠক, কোন জিনিসটার নামকরণ কি হবে তা কিভাবে নির্ধারিত হয়? যেমন ধরুন, বৃক্ষের নাম কেন বৃক্ষ হলো? মাছের নাম কেন মাছ হলো? প্রজাপতির নাম কেন প্রজাপতিই হলো? প্রিয় পাঠক, আলাকোরআনে উল্লেখিত আদমের এই নাম তত্ব নিয়ে মহামান্য দার্শনিক প্লেটোর ‘ক্রাইটাইলাস’ গ্রন্থে বিষয়টির প্রমান্যতা আনয়ন করে। প্লেটোর ‘ক্রাইটাইলাস” বইয়ে জানা যায় দার্শনিক সোফিস্ট ক্রাইটাইলাস দাবী করেছিলেন জগতের সবকিছুর নামকরণের পেছনে রয়েছে একজন ‘নামকর্তা’র ভূমিকা। সেই নামকর্তা হতে পারে স্বয়ং ঈশ্বর কিংবা আদিমকালের কোন পৌরাণিক বীর৷ ক্রাইটাইলাস মনে করেন নামকর্তা নামকরণ করে প্রতিটা জিনিসের অন্তর্নিহিত প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। এই সোফিস্ট ক্রাইটাইলাস একজন মানুষকে উল্লেখ করেছিলেন যিনি মানবজাতিকে নামকরন করা শিখিয়েছেণ। এবং সেই মানুষটি স্বয়ং ঈশ্বরের কাছ থেকে নামকরন করার পদ্ধতি শিখেছিলেন। কিন্তু বিশিষ্ট দার্শনিক সক্রেটিস নাকি এই বিষয়টি মানেন নাই। যদিও সক্রেটিস এর কথা ভেবে লাভ নেই। কারন সক্রেটিস একজন নাস্তিক ছিলেন। যেখানেই ঈশ্বর প্রসঙ্গ ছিলো সেইখানেই গিয়ে তিনি আড়ি তর্ক করতেন। সক্রেটিসকে তৎকালীন রাজা হেমলক বিষ পানে মৃত্যু আদেশ কার্যকর করেন। সক্রেটিসের এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন “সেই নামকর্তা সবকিছুর নামকরন করলেন তবে সেই নামকর্তা সবকিছুর নামকরণ করলো যদি তার পূর্বে কোন ভাষার অস্তিত্বই না থাকে যার মাধ্যমে নামকর্তা কোন জিনিসের অন্তর্নিহিত প্রকৃতিকে ভাষার মাধ্যমে চিহ্নিত করতে পারেন?” সক্রেটিসের এই প্রশ্নে সবাই ইতস্তত বোধ করেন। ভাবলেন আসলেও তো তাই ভাষায় যদি না থাকে তবে নামকরন কি হবে? সক্রেটিসের এই কাউন্টোরের মুখে খারিজ হয়ে যায় ক্রাইটাইলাসের তত্ত্ব। নামকর্তার বিষয়টি আর এগুলো না এখানেই থেকে যায়। ক্রাইটাইলাস থেমে যান। কারন তিনি খুব অভিমানি দার্শনিক ছিলেন। কিন্তু সক্রেটিসের সেই কাউন্টার এই যুগে মূল্যয়ন পাই না। কারন নামকরনের পূর্বেও মানুষের ভাষা ছিলো । মানুষ ইশারা ইঙ্গিতের এক আশ্চর্যময় ভাষা সৃষ্টি করেছিলো। সেই ইশারার ভাষা দিয়ে মানুষ তাদের জীবন যাপোন করতো। যেমন উদাহরন দিয়ে বোঝায়। ধরেন বাঘ এসেছে। কেউ বাঘকে বাঘ হিসেবে নামকরন করেছে। এবং ইশারায় ভাষাতে অন্যদের বোঝালো এই প্রানির নাম বাঘ। কখন বাঘ এলে বাঘ বলে চিৎকার করলে সকলেই বুঝে নিতো বাঘ নামক প্রানিটিকে বোঝানো হচ্ছে। আবার ধরেন আকাশ থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। নামকরন করা হয়ে বৃষ্টি নাম দিয়ে। কখনও বৃষ্টি হলে যখন বৃষ্টি বলা হতো তখন সবাই বুঝে যেতো আকাশ থেকে পানি পড়ছে। এইভাবেই নামকরন বিপ্লব শুরু হলো এবং সৃষ্টি হতে থাকে বিভিন্ন শব্দ উৎপাদন। ধীরে ধীরে ব্যাকরণ গঠিত হতে থাকে। গঠন হয় পূনাঙ্গ ভাষা। মুসলিম খ্রীষ্টান বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ভাষা উৎপাদনে সরাসরি ঈশ্বরের হস্তক্ষেপের কথা উল্রেখ করা আছে। আল কোরআনতো সরাসরি বলছে আদমকে নামসমূহ বা শব্দ গঠন করার নিয়ম শিখিয়েছিলো। আর মানবজাতিকে কথা বলিতে বা ব্যাকরণ গঠন বা ভাষা সৃষ্টি করতে শিখিয়েছিলো।
সুতরাং মানবজাতির জীবনে প্রাথমিক শিক্ষার সমস্ত বিষয় স্রষ্টার পক্ষে এসছিলো । বিশ্বের বহু প্রানি আছে অথচ তাদের জীবনে ভাষা আসে নি ভাষা এসেছে মানুষের জীবনে স্রষ্টিার প্রেরিত প্রতিনিধির মাধ্যমে। ইতিহাস আপনাদের অসংখ্য প্রমান দিবে। সুতরাং মানুষের কতৃত্ব দেখানোর আগে একবার শিক্ষাক্ষেত্রের ভাবা উচিত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



