
উপরের চিত্রটি তুলে ধরলাম। এটি নাস্তিক্যবাদী ব্লগ সংশয় এর। ব্লগটি ধর্ম বিরুদ্ধ লেখা লেখি করে। বিভিন্ন ভিডিওতে বিভিন্ন ব্লগের লেখাতে নাস্তিকদের দাস দাসী প্রথা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা দেখা যায়। তাদের আলোচনা বক্তব্যে এমন মনে হয়ে যেনো ইসলামই দাস প্রথা সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে শুধু মাত্র মুসলিমরাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। বিশ্বব্যাপী আর এমন ঘটনা কেউ ঘটায় নাই। আজ আমার এই লেখার কারন হলো দাস প্রথা। দাস প্রথা কেনো ইসলাম বন্ধ করে নাই? আবার যুদ্ধলব্ধ সৈনিকেরা নারী বন্দীদের ধরে নিয়ে দাসী হিসেবে ভাগ করে নিতো এবং তাদের সাথে সেক্স করতো। কিন্ত এগুলো কেনো ইসলামে করা হযেছে? কেনো এগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করা হয় নাই। দাস প্রথা বনধ করতে কেনো ইসলাম ভূমীকা রাখে নাই। এ সকল বিষয় নিয়ে নাস্তিক্যবাদী ব্লগগুলোতে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, আসলে এই দাস প্রথা কেনো প্রয়োজন ছিলো। ইতিহাস থেকে যা জানা যায় বা উইকপিডিয়া যা আমাদের তথ্য দেয়। দাস প্রথার ওপর প্রাপ্ত নথিপত্রে প্রমাণ মেলে যে, বনেদি সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো ও গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে এ প্রথা সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিল। বাজারে মুক্ত শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর থাকায় সমাজের শক্তিশালী শ্রেণি তাদের উৎপাদন ও প্রাধান্য অব্যাহত রাখতে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর শ্রেণির লোককে দাসে রূপান্তর করত। অভিজাত শাসকশ্রেণি, তাদের পারিবারিক ও অন্যান্য সামাজিক-রাজনৈতিক পদমর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার তাগিদে, সুবৃহৎ কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন অনুভব করে। গণপূর্ত কাজ, যেমন সরকারি ভবন, বাঁধ, সেতু, সড়ক ও প্রধান পথের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাষ্ট্রের এক বিশাল শ্রমশক্তির প্রয়োজন ছিল। সৈন্য চলাচল ও তাদের রসদ সরবরাহের জন্যও শ্রমশক্তির প্রয়োজন ছিল। দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ ও শ্রেণিভেদ প্রথা যাদেরকে গুরুত্বহীন করে তুলেছিল প্রধানত তারাই দাস প্রথার বলি হতো। এভাবেই সমাজে অভিজাত শ্রেনির প্রেষন দ্বারা দাস-দাসী সৃষ্টি হতে থাকে।
সমাজের প্রয়োজনে দাস প্রথার উদ্ভব হয়েছিলো। যদিও দাস প্রথার ভালো দিক ছিলো। দাস দাসীদের সাথে ভালো ব্যবহারের আইনও ছিলো। তারপরও অনেক দাস দাসীরা নির্যাতনের শিকার হতেন। কথিত আছে যুদ্ধ বন্দি মানুষদের ধরে নিয়ে এনে দাস বানানো হতো। আর এখান থেকেই মূলত দাস প্রথার প্রচলন শুরু হতো। পরবর্তীতে দেখা যায় অনেক পিতা সাংসারিক অভাব বা দেনা পরিশোধের কারনে নিজ পুত্রকে বিক্রয় করে দিতেন। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় একজন পিতা তার সন্তানদের কথিত মালিক সুবাদে তার সন্তানকে বিক্রয় করার এখতিয়ার রাখতেন। সমাজ তাকে বাধাগ্রস্থ করতো না। ধারের দেনা শোধ করতেও অনেক সময় অনেক পরিবার থেকে একজনকেও দাস হয়ে যেতে হতো। এই ভাবে দাস প্রথা সমাজের একটি নিয়ম বলে গণ্য হতো। দাসদের জন্য অনেক নিয়ম অনেক রাষ্ট্রে আবিভূত হতো। দাসদের আঘাত করা যাবে না। ভালো ব্যবহার করতে হবে। এমনকি দাসদের জন্য আইন বিচার ব্যবস্থা ছিলো। দাসরা মালিকের বিরুদ্ধে অনধিকার গত প্রহারের বিরুদ্ধে শালিশ করেতে পারতেন। দাসদের মধ্যে তাদের মর্যাদা এত উচুঁ ছিল যে, তাদের মালিকগণ তাদের ব্যবসা সংক্রান্ত ও গৃহ পরিচালনা বিষয়ে এবং রাজনৈতিক ব্যাপারেও তাদের সাথে পরামর্শ করতেন। দাসদের ক্ষুধা নিবারনে খাবার ঠিক মতো না দিতে পারলে দাসরা আইনের আশ্রয় নেতে পারতেন।ফলে মালিককে দাস অন্য কোথাও বিক্রয় করে দিতে হতো আসলে আমরা দাস বলতে এখন যেভাবে অমানবিক বিষয় বলে ভাবি ঠিক তেমনটি তৎকালীন সময়ে ছিলো না। কোন দাসকে অন্যায় ভাবে মালিক প্রহার করলে সমাজের কেউ এটির প্রতিবাদ করতে পারতেন। যতটুকু জানা যায় সমাজের শ্রমবাজার রক্ষা করতে এই প্রথাটির আর্বির্ভাব। দাসপ্রথার উৎপত্তি সময় কাল প্রায় ৫০০০ বছরেরও বেশি বলে অনুমান করা হয়। আজ হতে প্রায় পৌনে ৪০০০ বছর আগের ব্যবলনিয় সভ্যতার কোড অব হাম্বুরিতেও দাসপ্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। দাস প্রথার ইতিহাস প্রায় ৬০০০ বৎসরেরও বেশি। ডেভিড ফোর্সথি লেখেন, "উনিশ শতকের শুরুর দিকে আনুমানিক প্রায় তিন চতুর্থাংশ লোকেরাই দাসপ্রথার বন্ধনে আবদ্ধ ছিল।" ইউরোপের মধ্যে সর্বপ্রথম ১৪১৬ সালে রাগুসা নামক দেশ দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে। আধুনিক যুগে নরওয়ে এবং ডেনমার্ক সর্বপ্রথম ১৮০২ সালে দাসদের বাণিজ্য বন্ধ করে।বিশ্বজুড়ে দাসপ্রথা বন্ধে ভূমীকা রাখে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ। যে গৃহযুদ্ধ মূলত দাসপ্রথা বন্ধের মাধ্যমে সুচিত হয়। আমেরিকায় দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয় ১৮৬৩ সালের ১ জানুয়ারিতে। তৎকালীন প্রেসিডেন্টে আব্রাহাম লিংকন আনুষ্ঠানিকভাবে দাসপ্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। দাস প্রথার বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নিয়ে সমগ্র আমেরিকাতে দাস বানিজ্য নিষিদ্ধ করে দিলেন। এবং সকল দাসকে মুক্ত মানুষ বলে ঘোষনা করেন। লিংকনের যুদ্ধ ছিল মানবিকতা, সাম্য, ন্যায়পরায়ণতা, নৈতিকতা, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক কাঠামোকে সমুন্নত রেখে অর্থনৈতিক কাঠামোকে সুদৃঢ় করা। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দাসপ্রথার বৈধতার বিষয়ে, স্ব স্ব স্টেটকে ক্ষমতা অর্পণ করে, ‘কানসাস নেব্রাসকা অ্যাক্ট অব ১৮৫৪' ইউএস কংগ্রেসে পাশ করা হয়। উক্ত আইনের বিরুদ্ধে ৩৪টি স্টেটে প্রচণ্ড বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। ফলে দক্ষিণ অঞ্চলের ১১টি স্টেট দাসপ্রথার বিলুপ্তি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। দক্ষিণাঞ্চলের স্টেটগুলো দাসনির্ভর কৃষি, তুলা, তামাক উত্পাদন এবং তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাদের প্রধান আয় ছিল দাস ব্যবসা। ১৮৬১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পেছনে উপরিউক্ত কারণগুলো অন্যতম প্রধান কারণ ছিল বলে বিবেচিত হয়। ফলে চারিদিকে একটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের লেলিহান শিখা ভয়ংকর রূপ লাভ করে; কিন্তু লিংকন তার সিদ্ধান্তে অটল ও অবিচল ছিলেন। ১৯৬৫ সালের ৯ এপ্রিল বিপক্ষ জেফারসনের নেতৃত্বাধীন কনভেটারেট বাহিনীকে পরাজিত করে, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বাধীন ‘ইউনিয়ন বাহিনী জয় লাভ করে। কনভেটারেটর বাহিনীর কমান্ডার রবার্ট ই লি ‘ইউনিয়ন বাহিনীর কমান্ডার ইউলিশিস এস গ্রান্টের কাছে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মার্কিন গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। গৃহযুদ্ধে প্রায় ৬ লাখ সৈন্য নিহত হয়। প্রায় ৩ লাখের ওপরে সৈন্য আহত হয়। তার পরের ইতিহাস আরো নিষ্ঠুর, বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। এই দাস প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছেলো। সেই গৃহযুদ্ধে হেরে গিয়ে শত্রুরা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। এই দাস প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছেলো। যা ছিলো খুই দুঃখজনক ব্যাপার। ওয়াশিংটন ডিসি ফোর্ডস অডিটরিয়ামে, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন রাতে থিয়েটার দেখার সময়, থিয়েটারের একজন অভিনেতা জন উইলকেস বোথ খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে। লিংকন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল সকালে পিটারসন হাউজে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

প্রিয় পাঠক, আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা সহ ইতিহাস থেকে দাসপ্রথার শুরু থেকে শেষ অবধি কিচু তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এই ৬০০০ বৎসরের ইতিহাসের কোন সময় এই দাস প্রথা আর্বিভাবের কোন ঘটনাতেই মুসলিম সাম্রাজ্য বা মুসলিম জনগোষ্টি কোনভাবেই দায়ী নয়। দাস প্রথা সামাজিক একটি প্রক্রিয়া সমাজের প্রয়োজনেই এই প্রথার উদ্ভব ঘটে। সমাজের কারনে এই প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। অথচ নাস্তিক্যবাদী বিভিন্ন ব্লগে দাস প্রথা নিয়ে যেভাবে আলোচনা সমালোচনা করা হয় তাতে প্রোপাগান্ডা এমনভাবে চালানো হয় যেনো মুসলিমরাই এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি দায়ী। প্র্রিয় পাঠক এবার আসি যুদ্ধ লব্ধ জনগনকে দাস দাসীতে পরিনত করার ঘটনা। যে ঘটনা আর্ন্তজাতিক বিশ্বের একটি নিন্দনীয় ঘটনায় মুসলিম বিশ্ব কোনভাবেই দায়ী নই।কিন্তু কেন যেন ইসলামের সমালোচনায় দাসপ্রথা একটি বেশ মুখরোচক বিষয়বস্তুতে পরিণয় হয়। আলোচনার ভঙ্গিটাও এমন থাকে যাতে পাঠকের কাছে মনে হতে থাকবে দাসপ্রথার মত ঘৃণ্য একটি ব্যবস্থাকে ইসলাম জন্ম দিয়েছে বা উন্নীত করেছে। আসলে এদের এহেন মনোবৃত্তি খুবই দুঃখজনক । যুদ্ধে নারী ধর্ষন একটি অন্যতম সিস্টেমে পরিনত হয়েছিলো হাজার হাজার বছর ধরে। বিশ্বে যেখানেই যুদ্ধ হতো যুদ্ধে বিজিতা সৈনিকেরা পরাজিত এলাকার নারীদের ধরে আনতো এবং ধর্ষন করতো। নারী পূরুষ নির্বিশেষে ধরে নিয়ে এনে দাস ও দাসি হিসেবে বিক্রয় করে দেওয়ার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ১ম বিশ্বযুদ্ধ ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তি উভয় গ্রুপই তার শত্রু দেশ সমূহ জয় করে সেই পরাজিত দেশের অসহায় মেয়েদের কে নিয়ে বিভিন্ন যৌণ ক্যাম্প করত। সেই সব ক্যাম্পে মেয়েদের কে কোন পোশাক ছাড়া রাখা হত। সৈন্যরা যুদ্ধ শেষে এসে সেই সব ক্যাম্পে এসে গণহারে মেয়েদের কে ধর্ষন করত। শত্রু সৈন্যদের ধর্ষনের নির্যাতের অনেক অসহায় মেয়েরা মারাও যেত। জাপান, জার্মানী, রাশিয়া ও ফ্রান্স এরা ইউরোপ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ করার সময় সেইসব দেশের প্রচুর মেয়েকে যুদ্ধবন্দী বানিয়ে ধর্ষন করত। বিজিত সব দেশই এই একই অবস্থা। তাহলে আমরা কি কোনভাবে বলতে পারি এজাতীয় ঘটনা মুসলিমদের দ্বারা উদ্ঘাটিত।বিশ্বের সকল দেশে যুদ্ধলব্ধ নারী ধর্ষনের স্বীকার হতো। এটার সাথে মুসলিম সাম্রাজ্যে কোন সম্পর্ক নেই। সকল দেশে যেমন নারী ধর্ষন হতো ঠিক তেমনি মুসলিম যুদ্ধে একই ঘটনা ঘটতো।
নাস্তিক ব্লগে প্রচার প্রচারনা চালানো হয় আল কোরআনে এসকল দাসী সেক্স কর্মকান্ডেরর ব্যাপারে মুসলিম জনগোষ্ঠিকে উৎসাহি করা হয়েছে। এই টা নাস্তিকদের অভিযোগ। প্রিয় ভিউয়ার, নাস্তিকদের এই অভিযোগের বিরুদ্ধে আমরা কিছু বলতে চাই। তৎকালীন সময় একটি যুদ্ধ চালানোর জন্য ব্যপক যোদ্ধা প্রয়োজন ছিলো। সেই সব যোদ্ধাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রচলন ছিলো। আর সেই সুবিধার মধ্যে যু্দ্ধ লব্দ সামগ্রী লুটতরাজ ছিলো সৈনিকদের অন্যতম আয়ের উৎস। এই সকল আয়ের জন্য অনেকেই তখন যুদ্ধ সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে যেতো। ঠিক অনুরুপ রেওয়াজ মুসলিম যোদ্ধাদের মধ্যেও ছিলো। নস্তিকদের প্রশ্ন কেনো আল কুরআন এধরনের প্রথা রহিত না করে উৎসাহিত করেছে। এ ধেরনের প্রথা উৎসাহিত করে আল কোরআনের কোন আয়াত নেই। যারা বলছে তারা মিথ্যা বলছে অথবা না বুঝে বলছে। বিভিন্ন জাল হাদীস বা ইসলাম শত্রদের বানানো বিভিন্ন বিষয়বস্তু তুলে ধরে তারা প্রোপ্রাগান্ডা চালচ্ছে। যুদ্ধে লব্ধ নারীদের ধরে নিয়ে এনে সেক্স করা ইসলামে নিষিদ্ধ ছিলো। তবে সেই যুগে উপপত্নি বিষয়টি প্রচলিত ছিলো। অনেক পরিবারের দাসীদের উপপত্নি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেটি ছিলো মধ্যপ্রচ্যের তৎকালীন প্রচলিত রিতী। কিন্ত কোন স্বাধীন নারীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণের কোন সুযোগ মধ্যপ্রাচে ছিলো না। কিন্তু সমাজে দাসপ্রথা বিদ্যমান থাকলে নিজ ক্রীতদাসিকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণের অনুমতি সেই যুগে ছিলো। যে ক্রীতদাসির সাথে তার মুনিব শারিরিক সম্পর্ক স্হাপন করে, সে অন্যান্য ক্রীতদাসি থেকে ভিন্ন হয়ে যায়। এ ধরণের ক্রীতদাসিকে বলা হয় সারিয়্যাহ বা উপপত্নী। আরবী সারিয়্যাহ শব্দটি ‘সির হতে আগত যার অর্থ বিবাহ। উপপত্নীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারি পুরুষের কোন বৈবাহিক চুক্তি সম্পাদিত না হলেও এটি সামাজিকভাবে স্বীকৃত ছিলো। এই বিসয়বস্তু গুলো মধ্যপাচ্যের প্রচলিত রিতী হলেও অনেকে এটাকে ইসলামের রিতী বলার মতো প্রচেষ্টা করে থাকে বিভিন্ন জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু এই উপপত্নি বিষয়টি তৎকালীন সমাজে কেনো প্রচলিত হয়ে পড়ে। এটি বিভিন্ন সমস্যা দ্বারা এই বিয়ষটি সামজের একটি নিয়মে পরিনত হয়। যেমন অনেক স্ত্রি অলস প্রকৃতির হবার কারনে সংসারের কাজ করতে পারতেন না। তারা পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকার জন্য আলসেমিগত কারনে তারা তাদের স্বামীর ভাগ দিতো আরেকজন দাসীকে। সেই দাসীই উপপত্নি হয়ে সংসারের সকল কাজ করতো সংসার দেখা শুনা করতো। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রির মৃত্যুর পর বা স্ত্রির অসুস্থতার কারনে এই উপপত্নি বিষয়টি সমাজে প্রচলিত হতে শুরু করে। এই উপপত্নিরাই সংসারের সকল কাজ করে সংসার পরিচালনা করতো । ধীরে ধীরে এটি অভিজাত শ্রেণির একটি সিষ্টেমে পরিনত হয়ে যায়। এবং বেশির ভাগ ঘরে উপপত্নি রাখতে স্ত্রিরাই বাধ্য করতো স্বামীকে। এভাবেই উপপত্নি সিস্টেমটি সমাজে শিকড় গজিযে দেয়। এটি সমাজের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। এখান আপনি যদি প্রশ্ন করেন দাসী বাদী সেক্স কি নোংরামী নয়? আপনি যদি ঐ মুহুত্বে জনম্ গ্রহন করতেন তবে দেখতেন এই বিষয়টি খু্বই স্বাভাবিক কিন্তু আপনি বর্তমান সময়ে জন্ম নেওয়ায় বর্তমান সমাজের মানসিকতা বিবেচনা করে তৎকালীন বিষয়টিকে খুবই তিক্ত বলে অভিহিত করছেন। এই সময়ে আপনি অপনার বাড়ির বেতনভুক্ত কাজের লোক পেয়ে থাকে কিন্তু তৎকালীন সময়ে কাজের লোক পেতে গেলে দাস ক্রয় করতে হতো। আল কোরআন তৎকালীন সময়ে নাজিল হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সমাজব্যবস্থার উপর ভিত্তি করেই তাই আল কোরআনের আয়াত নাযিল হয়ে। একটি আয়াত উল্লেখ করা হয়েচে- “নিজেদের স্ত্রী বা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, এতে তারা হবে না নিন্দিত। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারাই হবে সীমালংঘনকারী।” সুরা মুমিনুন 5-6 । যদি এখনকার সমাজব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে বা সার্বজনীন সময়ের জন্যে যদি সকল আয়াত নাজিল করা হতো তাহলে মেনে নেওয়া যেতো বিষয়টি সত্যিই নিন্দনীয়। রাসুল তো ১৪০০ বছর পূর্বে জন্ম নিয়েছিলেন তাই আল কোরআন ঐ সময়ের জন্য তাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি এই বিষয়টি এখানকার আাইনব্যবস্থান সাথে তুলনা করছেন কেনো? এখন যেহেতু সমাজ ব্যবস্থাতে দাস দাসী নেই তাহলে এই সকল আয়াত তুলে ধরার পিছনে কি যুক্তি থাকতে পারে? কারন ১৪০০ বছর পূর্বে আল কোরআন ঐ সময়ের সমাজ ব্যবস্থার উপর আয়াত নাজিল করে।
তৎকালীন যুগে দাস দাসীদের যুগ। সেই যুগে দাস প্রথা বিশ্বজুড়ে প্রচলিত ছিলো। সেই সুবাদে মধ্যপ্রাচ্যে দাস প্রথা প্রচলন ছিলো। কিছুদিন পূর্বে একজন নাস্তিক ব্যাক্তি আমার এক লেখায় কমেন্টে প্রশ্ন করেন ইসলাম কেনো দাস প্রথা নিষিদ্ধ করেনি? আমি তার প্রশ্ন জেনে সতিই অবাক হয়েছি? ইসলাম সম্পর্কে সম্ভবত তাদের ধারনা কম। লোক মুখে নাস্তিক্য প্রোপ্রাডান্ডা জেনে এসব প্রশ্ন করছেন। কুরআনে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে যে গুলো দাস প্রথার বিরুদ্ধে। লক্ষ করুন আয়াতটি “অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান- এতীম আত্মীয়কে অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকীনকে, অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার। [৯০:১১-১৭]”প্রিয় প্রশ্নকারী ও নাস্তিক ভায়েরা লক্ষ্য করুন আয়াতটিতে বলা হচ্ছে- অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি। সেই ধর্মের ঘাটি হচ্ছে দাস মুক্তি। আল কোরআন বলছে ধর্মের ঘাটিতে তোমরা প্রবেশ কর নি। তোমরা দাস মুক্তি করতে পারনি। তোমরা দুঃখী এতিমের জন্য, মিসকিনের জন্য অনাথের জন্য অন্ন দান করতে পারো নি। সেটি যে রাসুলের যুগে প্রতিষ্ঠিত হবে না সেটি স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলকে প্রশ্ন করা হয়েছে তুমি কি জান সেই ধর্মের ঘাটি কি? তা দাস মুক্তি এবং অনাথদের প্রতি সাম্যবাদ। আল কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রকাশ হয়েছে দাসমুক্তি এত সহজেই সম্ভব হবে না। দীর্ঘ সময় পরে। রাসুলের জন্মেরও ৫০০০ বছরপূর্বে দাস প্রথার জন্ম এবং রাসুলের মৃত্যুর ১৩০০ বছর পরে দাস প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। ভয়াবহ এক যুদ্ধের মাধ্যমে এই দাস প্রথা নিষিদ্ধ সুচিত হয় আমেরিকায়। ধারাবাহিক ভাবে তা ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বের আন্দোলনের কারন হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে এই দাস প্রথা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়। দাস প্রথা রাসুলের যুগে বিলুপ্ত করা সম্ভব হতো না সেটি আল কোরআন প্রকাশ করে। আপনি এই যুগে মাসিক বেতনের বিনিময়ে শ্রমিক পাইলেও সেই যুগে সেটি সম্ভব হতো না। সেইযুগে শ্রমিক প্রয়োজন পড়লে অর্থের বিনিময়ে দাস ক্রয় করে তার ভরন পোষনের বিনিময়ে কাজকর্ম সম্পাদন করানো হতো। তবে দাসদের পক্ষে আল কোরআনের অসংখ্য আয়াত আছে । সুরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে- “সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। ” লক্ষ করুন এই আয়াতে দাসদের মুক্তির জন্য অর্থ ব্যায় করার র্নিদেশ দেওয়া হয়েচে। সুরা নাহলের ৭১ নং আয়াতে বলা হচ্ছে - “আল্লাহ তাআলা জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্টত্ব দিয়েছেন। অতএব যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে স্বীয় জীবিকা থেকে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে। তবে কি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে। [১৬:৭১] লক্ষ্য করুন দাস তাদের সমান হয়ে যাবে বলে অনেকে দাস মুক্তির বিষয়ে এগিয়ে আসে না বলে ধিক্কার দেওয়া হয়েচে। সুরা আল নুরে বলছে- “তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।]
আল কোরআন দাসদাসী দিয়ে বহু আয়াত এসেছে। ইসলাম আগমনের পর মধ্যপ্রাচ্যে দাস-দাসী বিষয়টি অনেকটা রহিত হয়ে পড়লেও তা সমগ্র বিশ্ব থেকে বিলোপ ঘটানো সম্ভব হয় নাই। তার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ছিলো কিছু জলদস্যু সমাজ ব্যবস্থার জন্য্। যেমন উদাহরন স্বরুপ বলা যায় জলদস্যুরা জ্যামাইকার পোর্ট রয়্যালের দাস বিক্রয় করতো। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ধরে নিয়ে এসে দাস হিসেবে বিক্রয় করতো। চলত দাস কেনাবেচা। দাস কেনা বেচার জন্য বেশি কিছু শহর তৈরী হতো। বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ শহর হিসেবে এক সময় পরিচিত ছিল জামাইকার পোর্ট রয়্যাল। জলদস্যুরা দাস ধরে এসে দাসের দোকান বসাতো। মানুষও দাস কিনতে যাইতো। কারন পরিবারের বিভিন্ন কাজ করতে তাদের কাজের লোক বা দাস দরকার পড়তো। রাসুলের মৃত্যুর পর মধ্যপ্রাচে দাস বিষয়টি অনেকাংশে কমে যায়। অনেকে দাস মুক্তি করে দিতো।রাসুলের অনেক মহৎ বক্তব্য শোনার পর থেকে কেউ কেউ দাসদের নির্যাতন করতো না। মধ্যপ্রাচ্যে দাস বিষয়টি রহিত হলেও দাস বিষয়টি বৃদ্ধি পায় ইউরোপিয় ইউনিয়ন, ব্রিট্রিশ বা অন্যান্য এলাকায়।
ইসলামের দাস সর্ম্পকিত বহু হাদীস আছে যেখানে দাস দাসী বিষয়টি নিষেধ করা আছে। দাসদের অণ্যায় আচরনের বিরুদ্ধে কথা বলা আচে। যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানো সেই সময় একটি স্বাভাবিক রীতি ছিল। কোন মুসলিম যদি যুদ্ধে অমুসলিমদের হাতে বন্দী হতো তাকেও এই পরিণতি বরণ করতে হতো। সুতরাং দাস দাসী বিষয়টি সমগ্র বিশ্বের বিষয় এটিকে মুসলিমের ঘাড়ে চাপানো অন্যায়। ইসলামে দাসীদের ধরে এনে জোর করে পাতিতাবৃত্তি কাজে বাধ্য করতে নিষেধ করা আছে। তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। আল কোরআনে এ সকল মহৎ বক্তব্য অবশ্যাই দাস প্রথার বিরোধীতা করে। সুতরাং যারা দাস প্রথাকে নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে নিন্দা চর্চা করে তারা আসলে ইসলাম বিদ্মেষী মানুষ। হাদীস শরিফেও দাস প্রথা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বলা আছে- হে আবুজর! তোমাদের মধ্যে বর্বর যুগের ভাবধারা রয়ে গেছে। তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ পাক তাঁদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তোমরা যা খাবে, তাঁদেরকে তাই খেতে দেবে। তোমরা যে বস্ত্র পরবে, তাঁদেরকেও তাই পরতে দেবে। তোমরা তাঁদের ওপর এমন কোনো কাজের বোঝা চাপাবে না, যা বহন করতে তারা অপারগ হয়। যদি তোমাদের দেয়া কোনো কাজ করতে তারা অসমর্থ হয়, তাহলে তোমরা তাঁদের কাজে সাহায্য করবে।৪১৬৯[৫]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


