somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুখোমুখি অবস্থানে ঢাবি চারুকলা অনুষদের শিক্ষক - শিক্ষার্থীরা

১২ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফল প্রকাশে নিজস্ব নীতিমালা বাস্তবায়নসহ দীর্ঘদিনের নানান দাবিতে শিক্ষার্থীরা আবার একত্রিত হচ্ছেন।
মঙ্গলবার অনুষদের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়া শুরু হয়েছে।
গতকাল বুধবার ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে তালা দিয়ে সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়। শিক্ষকদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন উত্তপ্ত বাকবিত-ায়। এদিকে শিক্ষকরা সবার আগে উক্ত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সৃষ্টিকারীর বিচারের দাবিতে অটল। একদিকে অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ করতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেছে, আরেকদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অনেকে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, মঙ্গলবার বার্ষিক প্রদর্শনী উ™ে^াধনীর শেষ পর্যায়ে জয়নুল পদক প্রদানের আগমুহুর্তে উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইনসহ উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের সামনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ও চারুকলার মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নবেন্দু সাহা নব মাইক নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন। তিনি শিক্ষকদের কাছে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ঠিক সময়ে না হওয়া, এর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা, একেক বিভাগের জন্য একেক নিয়ম হওয়ার কারণ জানতে চান। তিনি জয়নুল পদক প্রদানের প্রক্রিয়া সঠিক নয় বলে অভিযোগ করেন। পাশাপাশি উত্তেজিত হয়ে শিক্ষকদের অনিয়মের কথা বলে তাদের বিচার দাবি করেন। উপস্থিত শিক্ষকরা তার কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ক্ষিপ্ত হয়ে সবাই অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরবর্তীতে নবেন্দু সাহার এ ব্যবহারকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে তাঁরা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
এরপর গতকাল সকালে বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের দীর্ঘদিনের দাবিতে অনুষদের মিলনায়তনে মিলিত হন। সেখানে আলোচনা শেষ করে তারা একত্রে বাইরে বেরিয়ে আসেন। জয়নুল গ্যালারি থেকে তারা তালা দিতে দিতে সামনের দিকে এগোয়। পেইন্টিং বিভাগের কক্ষসমূহে তালা দিয়ে তারা প্রিন্ট মেকিং বিভাগের অফিসে তালা দিতে গেলে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষকরা বাধা দেন। শিক্ষার্থীরা অবস্থানরত শিক্ষকদের বের করে সেখানেও তালা দিতে চান। কেউ কেউ শিক্ষকদের অপসারণের কথাও বলেন। মুখোমুখি অবস্থানে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। সেখানে শিক্ষকদের মুখে ‘আমাদেরও বেকগ্রাউন্ড আছে’, ‘উড়ে এসে জুড়ে বসি নাই’, ‘কোন শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করলে আমরা সবাই ক্লাস বর্জন করব, তখন তোমাদের কি হবে’ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কথা শোনা যায়। নবেন্দু সাহা সেখানে শিক্ষকদের সামনে আগের দিনের ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু তার দাবিতে তিনি ছিলেন অটল। তিনি বলেন, ‘আমার কথার প্রেক্ষিতে যদি অনুষদের নিয়ম ঠিক হয় তাহলেই হবে। এতে আমার বহিস্কার হলেও কোন দুঃখ থাকবে না। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতই আমিও অনুষদের নিয়মের পরিবর্তন চাই।’
শিক্ষকরা তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। তাদের মতে, অভিযোগ দেয়ার জায়গা ঐ অনুষ্ঠান ছিল না। সেখানে তারা কেন বিভাগের কথা বলবেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা জানান, বিভিন্ন সময় তারা অভিযোগ করলেও কোন কাজ হয় না। ফলশ্রুতিতেই তাদের বারবার আন্দোলনে যেতে হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে অনুষদের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ আমজাদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে ডিন অফিসে এক মিটিংয়ে মিলিত হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, সেমিস্টার পদ্ধতিতে প্রবেশ করার পর থেকেই অনুষদে পরীক্ষা ও ক্লাসের কোন নির্দিষ্ট নিয়মনীতি নেই। প্রত্যেকটা বিভাগ নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করে চলছে। কেউ কলা অনুষদের আবার কেউবা বিজ্ঞান অনুষদের নিয়ম মেনে চলার কারণে একএকটা বিভাগের মধ্যে কোন সামঞ্জস্যতা নেই। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। গত ১৩ মার্চ তারা নিজস্ব নীতিমালার দাবিতে ডিন অফিসে তালা দেয়। এর পর একটু নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। তারা আলোচনা করে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোন বাস্তবায়ন না দেখা যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আবারো নানান বিভাগীয় সমস্যায় পরতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ এনামুল হক নতুন কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে গত ১ তারিখ থেকে চারমাসের ছুটিতে গেছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে থমকে আছে বিভাগের সব কার্যক্রম। ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও অন্যান্য বর্ষের রুটিন না হওয়ার দরুণ বিভাগে কোন ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এ কারণে বিভাগের শিক্ষার্থীরা নবেন্দু সাহার সাথে একাত্মতা পোষণ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
১৩ মার্চের আন্দোলন সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বিভাগগুলোর সমন্বয়হীনতার দরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম সমাবর্তনে কোন কোন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পেরেছে আবার কোন কোন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে নি। এ কারণে তাদের মনে ক্ষোভ ছিল আগে থেকেই। তাই সেদিন তারা নীতিমালার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ও ডিন অফিসে তালা লাগায়। প্রায় দুইবছর আগে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি দাবিনামা জানানো হয়েছিল যার কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি।
শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট ৪৭ টি দাবিনামার ও অভিযোগের মধ্যে ছিল নিজস্ব নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন, ছাত্রদের কমনরুমের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের কাজ করার স্বাধীনতা প্রদান করা, বাথরুমের ব্যবস্থা করা, ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ করা ইত্যাদি। তখন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ডিন অধ্যাপক এমদাদুল হক মোঃ মতলুব আলী এগুলোর বাস্তবায়নের কথা দিলেও এখন পর্যন্ত তার কোনটিই বাস্তবায়ন করা হয় নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনুষদের ডীন সবসময় গা-ছাড়া মনোভাব পোষণ করে সব ধরণের কাজ আটকে রাখেন।
ডিনের কার্যালয়ে শিক্ষকদের মিটিং সম্পর্কে সেখানে উপস্থিত সহকারী প্রক্টর মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকরা আজকের (গতকাল) বিষয়টি নিয়ে মনক্ষুণœ হয়েছেন। তাদেরকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে। এটা অবশ্যই ঠিক হয় নি। শিক্ষকরা মিটিংয়ের পর উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। উপাচার্য বিষয়টি দেখার জন্য প্রক্টর সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবিদাওয়া থাকতে পারে। যেগুলো সঠিক সেগুলোর পক্ষেই সবাই কথা বলবেন। কিন্তু তার একটা পরিবেশ পরিস্থিতি রয়েছে। একটা অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ তোলা মোটেও উচিত হয় নি।’ অনুষদের ডিন অধ্যাপক এমদাদুল হক মোঃ মতলুব আলী ফোন ধরেন নি।
অনুষদের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরতে শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার আন্দোলনকে অনেকে রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছে। চারুকলা ছাত্রলীগের একটি অংশ বলছে, নবেন্দু সাহা তার আগের দিনের ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এ ধরণের ছাত্র আন্দোলন তৈরি করতে চাইছে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×