somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনলের বাবা

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ সারাটা দিন অনলের ভাল কাটেনি।অন্য সময় হোস্টেল থেকে বের হয়ে বাহিরে যাবার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে থাকত অনলের। কিন্তু আজ আর এমনটা হচ্ছে না। মাতৃহীন জীবনে যখন তার বাবাই একমাত্র অবলম্বন সেখানে আজ তার বাবার কথা ভীষণ মনে পরছে। আবার মনের মধ্যে একটা আনন্দ বোধ কাজ করছে,আর চারদিন পর সে এই হোস্টেলের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু আজ সেই কারণ মনে করেও ঠিক থাকতে পারছে না।কেমন যেন একটা শক্তি তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সে ব্যক্তির কাছে।যে তাকে ছোট বেলা হাতের উপর দাঁড় করাতো,কখনও কাঁধে চরাত। আবার প্রতিদিন অফিসে যাবার আগে "হচ্চ চচ্চ চ-অ-অ” বলে মুখে একটা শব্দ করে আদর করে বিদায় নিত।কিন্তু তখন খুবই ছোট ছিল অনল বাবার আদর বোঝার মত ক্ষমতা তার হয়নি।কিন্তু যখন তা বোঝার সময় হল তখন তাকে ছেড়ে চাকরির তাগিদে বিদেশ যাত্রা করতে হয় তার বাবার। প্রতিটা শুক্রবার এলে বাড়ির উঠানে বাবা-ছেলে ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত থাকত। আজ অনলের সেই সব দিনের কথা মনে পড়ছে।

তার বাবা এসেছিল দেশে আরও দুবার কিন্তু তখনও অনলের অন্তরাত্মাটা তার বাবার জন্য কাঁদতোনা। এইসব ভাবতে ভাবতে অনল ঘুমিয়ে পড়লো। বাবা ও বাবা উঠ, দেখ আমি আইছিতো। হঠাৎ অনল কেপে উঠলো তার ঘুম ভেঙে গেল।ও এটা স্বপ্ন ছিল। না আজ কেন যেন বাবার জন্য অনলের মন খুবই আর্তনাদ করছে।সে ভাবছে যদি তার বাবা দেশে ফিরতো তাহলে দৌড়ে গিয়ে তার বাবার গলায় জরিয়ে ধরতো। কিন্তু কোনো একটা কারণে অনলের বাবার সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।শেষ বাবার যখন কথা বলেছিল তখন একটি কথাই তার মনে আছে। "তুমি আমার আগের অনল হয়ে ফিরে আসো,নয়তো না।আমি আমার আগের অনলকে ফিরে চাই,আর এটা তোমার এস,এস,সি এর রেজাল্টে প্রমাণিত হবে।"

হঠাৎ মনে পড়লো, তার বায়োলজি খাতাটা বাকি রয়েছে। অনল তাই তার খাতা করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো, কিন্তু যতই লিখুক না কেন তার খাতার লেখা পৃষ্ঠার চেয়ে সময় অনেক কম কেটেছে। আজ কেন যেন অনলের সময় খুব ধীরেই কাটছে। প্রত্যেকটা মুহূর্ত যেন এক একটা দিনের জানান দিয়ে যাচ্ছে। অনল তবুও কোন হিসাব মেলাতে পারছে না,তার এই আজব অস্থিরতার।

সে কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না।কেমন যেন একটা আজব অনুভূতি তাকে প্রতিটা মূহুর্ত তার বাবার অনুপস্থিতির জানান দিচ্ছে। অনলের অন্য সময় একটা খাতা শেষ করতে না হলেও ৪-৫ ঘণ্টা লাগতো।কিন্তু এখন অনল অবিশ্বাস্য ভাবে পুরটা খাতা ২ ঘণ্টাতেই পুরো কমপ্লিট করে ফেলেছে।কিন্তু এখনও তার পরীক্ষার আরও তিনদিন বাকি রয়েছে। কিন্তু এখন তার আর কোনো কাজ নেই। রাতের বেলা সবাই ঘুমিয়ে পরার পরও অনলের ঘুম আসেনা।জানালাদিয়ে তাকিয়ে নীরব শহরটাকে দেখছে অনল।তার কোন কিছুতেই মন মানতে চাচ্ছেনা।অন্তরটা শুধু বাবা বাবা বলে আর্তনাদ করছে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অনলের ডাক পরে অফিস রুমে। অনল অফিস রুমে যেতেই তার স্যার বলে "তোমার ফুপ্পির ফোন এসেছিল। আবার করবে, বস।"

স্যার কথা শেষ না করতেই ফোনটাকে রিং হোল। স্যার ফোনটা অনলের কাছে এগিয়ে দিল।

অনল অন্য মনষ্ক ভাবে ফোনটা তুলল। "কিরে কেমন আছস,পরীক্ষা কবে শেষ হইব?"
ভালো,প্র্যাকটিক্যাল বাকি আছে দুই দিনে চারটা
"কবে পরীক্ষা"
পরশুদিন "
তাইলে ব্যাগ-ট্যাগ লইয়া আইয়া পড়িস,কই আইবি,দড়ানিপাড়া,নাকি চান্দিনা"
দড়ানিপাড়া।
আইচ্ছা,
তোর বাপে ত আইছে।
কথাটা শুনে অনল নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলনা।
বাবা কই আছে এখন,বাবারে দেন।
"তোর বাপে তো একটু বাইরে গেছে"
আইচ্ছা আইলে ফোন দিমুনে"
আচ্ছা।

রুমে এসে অনলের অস্থিরতা যেন আর বাঁধ মানে না।ইচ্ছে করছে ছুটে যেতে তার বাবার কাছে।কিন্তু এভাবে অনেকটা সময় কেটে গেল। দুপুর হয়ে গেল কিন্তু কোন ফোন আসলো না। এখন অনল আর থাকতে পারছে না যে করে হোক তার যেতে হবে, সেই অদ্ভুত ব্যক্তিটার কাছে।তার মাথায় সব পরিষ্কার। মনে হচ্ছে,কাল সারাটা দিনের অস্থিরতার কারণটা।

অনল এখন যাবে,তার সিদ্ধান্ত ফাইনাল।কিন্তু হস্টেলে ছুটির আবেদনের সময় সকালে,এখন আবেদন করেও লাভ নেই।তাই সে কোনো এক কারণ দর্শীয়ে বের হলো হোস্টেল থেকে।পকেটে তিনশ টাকা ছিল।তাও আবার তিনটা খাতার চিত্র একে দিয়ে পেয়েছে সে। অনল আর কোন জাগায় দেরি না করে।সরাসরি বাস স্ট্যান্ডে চলে গেল এবং অবিশ্বাস্য ভাবে অন্য দিনের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি বাস পেয়ে গেল।ভাড়ার কথা চিন্তা না করে সে লাফিয়ে উঠে পড়লো বাসে। কিন্তু এখানে অনল আবিষ্কার করলো অন্য সময় সে বাস না থামা পর্যন্ত উঠতে পারতো না কিন্তু আজ তা খুব সূক্ষ্ম ভাবেই করেছে।

সে বাসে উঠে একটা সিটে বসলো। কিন্তু তাতেও সে স্বস্তি পাচ্ছেনা।যদি পারতো তাহলে সে দৌড়িয়েই চলে যেত, এই অপেক্ষাটা যেন তার আর সহ্য হচ্ছেনা। অনল খুব আস্তে করে গেটে নক করলো, ভিতর থেকে কোন পুরুষ মানুষের কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছেনা সে।তবুও আবার আরেকটা নক করতেই তার আপু এসে দরজা খুলে,অবাক হয়ে চেয়ে রইল কারণ এখন এই সময়ে তার উপস্থিতি আশা করার মত না।

সে ভিতরে ঢুকেই দরজার সামনের জুতা গুলো দেখল।না তার বাবার কোন জুতা সে দেখতে পাচ্ছেনা।ক্রমশ তার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে।তারপর এ ঘর ও ঘর খোজতে লাগলো।তার পর ওয়াসরুমের দিকে তাকিয়েও আর কোন লাভ হোল না।কোথাও সে তার বাবার উপস্থিতি দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে গেল।কিন্তু বাসার সবাই তাকে তার এ অস্থিরতার কথা জানতে চাইল না।কারণ সবাই তা বুঝতে পেরেছে। পরে অনল তার ফুপ্পির কাছে জানতে পারে কোন এক কাজে গিয়েছে।কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় আর জানতে পারেনি।কিন্তু তার বাবা যদি অনলের হোস্টেলের উদ্দেশ্য নিয়ে বের হোত তাহলে, তার দেখা হবার কথা।

পর দিন সকালে সে আবার ঢাকায় ব্যাক করলো আর হোস্টেল থেকে পলায়নের খবরটা আগেই তার ফুপ্পির কাছে এসে গেছে,পরে তার ফুপ্পি সব কিছু সামলে নেয়। আজ রাতটা যেন অনলের আর কাটতে চাচ্ছেনা।কাল তার শেষ পরীক্ষা, তাই কখন সে তার বাবার দেখা পাবে। শেষমেশ সে সব কিছু গুছিয়ে রওনা হয়। আর সারাটা পথ ভাবতে থাকে, সে গিয়েই তার বাবার গলায় জরিয়ে ধরবে।নয়ত তার অতৃপ্ত আত্মা শান্তি পাবেনা।

অবশেষে অনল তার বাবা দেখা পেল,অনল ঘরে ঢুকেই দেখে তার বাবা পেপার পড়ছে,তার সামনে সেই ব্যক্তিটি যার জন্য তার হৃদয় এতটা কেপে কেপে উঠছিল। এখন কেন যেন অনলের বুক থেকে একটা বেদনা মিশ্রিত আভা একত্রিত হয়ে তার গলা দিয়ে বেরতে চাচ্ছে।কিন্তু তার বেদনাগুলো বের হতে পারছে না,ফলে গলায় আটকে একটা ব্যথার অনুভূতি জাগাচ্ছে।

অনল মৃদু স্বরে ডেকে উঠলো "বাবা"

তার বাবা এতক্ষণ অনলকে খেয়াল করেনি, তার বাবা ঘাড় ঘুরিয়ে একটু উত্তেজিত স্বরে ঢেকে উঠলো "ওহে পুত্র,কি খবর তোমার"

মুহূর্তের মধ্যেই অনলের চোখের কোনায় লোনা জল হাতছানি দিয় উঠলো,কিন্তু এটা কষ্টের না,তার আত্মার তৃপ্ততার প্রকাশ। খুব নিখুঁত ভাবে অনল তার চোখের জল লুকিয়ে ফেললো।


((((বাবা এমন একজন মানুষ যাকে,ছোঁয়া লাগে না।এক নজর দেখলেই আত্মার শান্তি হয়ে যায়।বাবা তোমাকে ভীষণ মিস করছি))))
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:১২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×