বর্তমান বাস্তবতা দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক রকম "কনফিউজড জেনারেশন"-এ পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, বিশ্বায়ন, সামাজিক মিডিয়ার প্রভাব, এবং ধর্ম ও সংস্কৃতির টানাপোড়েনে তারা কী দিশা নেবে,তা এখনো অনিশ্চিত।
ধর্মীয় দিক থেকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হচ্ছে। একদিকে একদল হয়ে উঠছে অত্যন্ত গোঁড়া বা কট্টরপন্থী মুসলিমযারা ধর্মকে শুধুই বিধিনিষেধ আর শাস্তির চোখে দেখে। অন্যদিকে, অনেকে হয়ে উঠছে religious pluralist বা liberal Muslim যারা আধুনিকতা ও সহনশীলতার সঙ্গে ধর্মকে মিলিয়ে চলতে চায়।
এখানে প্রশ্ন উঠে , কারা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবে? কারা ভারসাম্য রাখতে পারবে,আধুনিক চিন্তাধারা আর বিশ্বাসের মধ্যে?
আজকের তরুণদের অনেকেই শিক্ষা নিয়ে হতাশ। কারণ, সার্টিফিকেট বা ডিগ্রির মূল্যায়ন না থাকলে, তারা কেনই বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়বে? চাকরির বাজারে যখন সঠিক মূল্যায়ন নেই, তখন অনেকেই আগেভাগেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে, একটা বড় অংশ শিক্ষাকে উদ্দেশ্য নয়, বরং অলস সংগ্রাম মনে করতে শুরু করেছে।
এই অবস্থা শুধু ব্যক্তি নয়, জাতিগত ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপনতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক বিভ্রান্তি: মূল দিকগুলো
অনেক তরুণই রাজনীতিকে এখন যুক্তিভিত্তিক আদর্শের জায়গায় না দেখে আবেগের বা গোষ্ঠীভিত্তিক অনুসরণে সীমাবদ্ধ রাখছে। ফলে তারা রাজনীতিতে যৌক্তিক বিশ্লেষণ না করে ভক্তি বা বিদ্বেষ দিয়ে অবস্থান নেয়।ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ইসলামি রাজনীতির দ্বন্দ্বে নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়:কেউ ভাবে সেকুলার মানেই ধর্মবিরোধী,কেউ ভাবে ইসলামি রাজনীতি মানেই মৌলবাদ।ফলে তারা ভারসাম্যপূর্ণ, সমন্বয়ধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে ব্যর্থ হয়।নতুন প্রজন্মের বড় অংশ রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহ করে ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব বা মিম পেজ থেকে। এতে করে তারা আংশিক সত্য বা প্রোপাগান্ডা-ভিত্তিক তথ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে।
অনেকেই মনে করে রাজনীতির মানে এখন শুধুই দুর্নীতি, ক্ষমতার লড়াই ও স্বার্থসিদ্ধি। তাই তারা রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চায়, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।তারা অনেক সময় বুঝে না,রাজনীতি শুধু দলীয় বিষয় না; এটি শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, কর্মসংস্থানসহ জীবনের সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত। তাই রাজনৈতিক অজ্ঞতা মানে নিজ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে উদাসীন থাকা।তরুণরা অনেক সময় দলের আদর্শ বা কর্মপদ্ধতির চেয়ে নেতার স্টাইল, ভাষা বা আবেগপূর্ণ বক্তৃতার দিকে বেশি ঝোঁকে। এতে বস্তুগত বিশ্লেষণের জায়গায় ব্যক্তি পূজা প্রবল হয়।
অর্থনীতির দিক থেকেও আমরা বিভ্রান্ত। প্রশ্ন হচ্ছে , আমরা কি Endless Economic Growth মডেল অনুসরণ করব? নাকি Traditional Economic Growth মডেলকে বেছে নেব?
Endless Growth শুনতে আকর্ষণীয় হলেও, এটি পরিবেশ ধ্বংস, মানসিক চাপ ও সামাজিক বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে। অপরদিকে, Traditional Growth মডেল তুলনামূলকভাবে টেকসই ও মানবিক।
আমাদের সমাজ এক মোড়ের মুখে দাঁড়িয়ে। এই দ্বিধা, বিভ্রান্তি ও ভাঙনের মাঝেও প্রয়োজন একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, মানবিক ও নীতিনির্ভর দিকনির্দেশন যেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কেবল টিকে থাকতে নয়, বরং মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




