সোমবার ভোরে ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড যখন নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকার নির্দেশ দেয়, তখন জেরুজালেমের রেহাভিয়া পাড়ার প্রায় ১০০ জন বাসিন্দা ধীরে ধীরে এভেলিনা দে রথচাইল্ড স্কুলের একটি পাবলিক শেল্টারে জড়ো হন। এই আশ্রয়কেন্দ্রটি সাধারণ সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ ও কম্পিউটার ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, মুহূর্তেই এটি পরিণত হয় এক চাঞ্চল্যকর আশ্রয়স্থলে—যেখানে আশপাশের বাসিন্দারা পাজামা পরে, পোষা প্রাণী, স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন এবং কেউ কেউ মরিয়া হয়ে ফোনে আপডেট দেখছেন।
একটি ঘরে আলো ম্লান করে রাখা হয়েছে, যেখানে কয়েকজন অভিভাবক শিশুদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশের বড় ঘরে একটি বড় স্ক্রিনে হিব্রু ভাষায় সংবাদ আপডেট প্রচার হচ্ছে। ঘরের নিস্তব্ধতা মাঝে মাঝে কুকুরের ঘেউ ঘেউ বা বাথরুমের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে ভাঙছে।
১৯৪০-৪১ সালে জার্মানির বোমা হামলার সময় ব্রিটিশ নাগরিকরা যেমন লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিল, তেমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে এখন ইসরায়েল জুড়ে। দেশটির নাগরিকরা “মিকলাতিম” নামে পরিচিত পাবলিক আশ্রয়স্থলে অবস্থান নিচ্ছেন, যেখানে তারা ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সুরক্ষার আশ্রয় খুঁজছেন—ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর আগাম হামলার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে
ইসরায়েলিরা বহু বছর ধরে হামাস ও হেজবোল্লাহর রকেট হামলার মুখে থাকলেও, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপক পাল্লা ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এখন দেশটির প্রায় প্রতিটি স্থানকে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। ফলে অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করছেন, বর্তমানে যে সুরক্ষিত অবকাঠামো রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বর্তমান সহিংসতার ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে ৩০টি স্থানে হামলায় প্রায় ২৪ জন নিহত এবং প্রায় ৬০০ জন আহত হয়েছেন। হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানায়, নিহতদের অধিকাংশই তাদের বাড়িতে হামলার সময় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন না।
রবিবার ভোরে বাট ইয়ামের একটি ভবনে রকেট হামলার ঘটনায়, উদাহরণস্বরূপ, যেখানে রকেট আঘাত হেনেছিল, সেখানে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ১৮০ জন বেসামরিক নাগরিক অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। অন্যদিকে, নিহত ৯ জন এবং প্রায় ২০০ আহত ব্যক্তি সবাই আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে ছিলেন, জানিয়েছে হোম ফ্রন্ট কমান্ড।
বেশিরভাগ মানুষের জন্য আশ্রয়ের সবচেয়ে পছন্দনীয় বিকল্প হলো নিজ বাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিগত সুরক্ষিত কক্ষ (হিব্রুতে যাকে বলা হয় ‘মামাদ’)। তবে অধিকাংশ বাড়িতে এমন কক্ষ নেই, কারণ ১৯৯৩ সাল থেকে নতুন বাড়ি নির্মাণে এই কক্ষ থাকা বাধ্যতামূলক হলেও, তার আগে নির্মিত বাড়িগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেই এটি নেই।
ইসরায়েল বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের আনুমানিক ২.৯৬ মিলিয়ন বাসস্থানের মধ্যে ৫৬% বা ১.৬৭ মিলিয়নে মামাদ নেই। যদিও নতুন শহর ও পাড়া-মহল্লা বা নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পুনর্গঠিত বাড়িগুলোতে মামাদ সাধারণত থাকে, বেশিরভাগ বাসিন্দারই ব্যক্তিগত আশ্রয়কেন্দ্রের সুবিধা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




