আমাদের এক অনলাইন আড্ডা আছে , খুব জমজমাট। কেউ রাইট-লেফট পলিটিকাল কেউ আবার লিবারেল-কঞ্জারভেটিভ পলিটিকাল স্পেকট্রামে বিশ্বাসী । এই ভার্চুয়াল রণক্ষেত্রে যুক্তির তলোয়ারে প্রতিদিন ঝনঝন শব্দ হয়। কেউ বিপ্লব চায়, কেউ পরিবর্তনের নামে ছুটি চায়।
এই আড্ডার এক বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন এক আপু—পুরোদস্তুর বামপন্থী!
কার্ল মার্ক্স পড়েছেন, লেনিন মুখস্থ, আর দাস ক্যাপিটাল নিয়ে হেলান দিয়ে চা খান। শুধু বিপ্লব নয় উনি রাষ্ট্র নিয়েও ভাবেন বয়স প্রায় ৩৫-৩৬ এর কাছা কাছি
একদিন কথার কোথায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপু, এই যে বিপ্লব, রাষ্ট্র, শোষণ এসব তো হল—বিয়ে নিয়ে ভাবছেন করছেন না যে ,
উনি একটু থেমে গম্ভীর মুখে বললেন,
দেখো ভাই, বাম রাজনীতি করতে করতে চিন্তার প্রসেস এত জটিল হয়ে গেছে যে বিয়ের মতো সোজা সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব হয়ে গেছে
এমনকি একবার উনি বলেছিলেন, "বিয়ে আসলে একধরনের পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে নারীকে আটকে ফেলার যন্ত্র।"
এই কথা শুনে মনে হলো, বাম রাজনীতি যেন একটা এমন মস্তিষ্কে চেপে বসা সফটওয়্যার, যেটা আপডেট হতে হতে সব সিদ্ধান্ত সিস্টেম ফেইলড দেখাচ্ছে!
বাংলাদেশে বাম রাজনীতি মানেই মিছিল, শ্লোগান, তত্ত্ব আর চায়ের কাপ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই রাজনীতি এখন এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে তার বাস্তব কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ, আর রাজনৈতিক অবস্থান হয়ে উঠেছে ব্যবহারের উপযোগী এক শ্রেণির চিন্তক দল। এই বাস্তবতা অনেক সময় হাস্যকর পর্যায়ে চলে যায়, এমনকি ব্যক্তি জীবনের ‘বিয়ের মত সহজ’ সিদ্ধান্তও সেখানে পরিণত হয় রাজনৈতিক সমীকরণের জটিল ধাঁধায়। এই ব্যাক্তিগত পর্যায়ের উদাহরণটি, বাস্তবে জাতীয় পর্যায়ের বাম রাজনীতির বাস্তবচিত্রেরও প্রতিফলন। শাহবাগে যুদ্ধাপরাধী বিচারের আন্দোলন ছিল তার এক বড় উদাহরণ।
আদিতে জনতার আবেগ থেকে জন্ম নেওয়া আন্দোলনটি, দ্রুতই রূপ নেয় শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কৌশলের অংশে। বাম নেতারা, শ্লোগানে-ভাষণে-মঞ্চে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু স্ক্রিপ্টটা কার হাতে ছিল, সেটা ছিল এক খোলা রহস্য যার উত্তর আমরা সময়ের স্রোতে জেনে গেছি।
শেখ হাসিনার মতো কৌশলী রাজনীতিবিদ জানতেন, জামাত-বিএনপির রাজনৈতিক সমীকরণকে মোকাবেলা করতে হলে জনগণের আবেগ প্রয়োজন। আর সেই আবেগ জোগাতে বামপন্থীদের লেলিয়ে দেওয়া হয় একটু কৌশলে,
শেখ হাসিনা নিজামী, সাঈদী, সাকা চৌধুরীর মতো লোকদের যুদ্ধাপরাধী ট্যাগ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বামদের দিয়ে রাজপথ গরম করিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ‘মানবতাবাদী সরকার’ রূপে নিজেদের চিত্রিত করেন।
তাদের বিরুদ্ধে জনগণের মনোভাব গড়ে তুলতে ধারাবাহিকভাবে বামপন্থীদের সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, একটিকে ‘ন্যায়বিচারের’ মুখোশ দিয়ে ঢেকে।বিপ্লবের ডাক দেওয়া বাম নেতারা তখন স্বপ্ন দেখছিলেন 'এটাই হয়ত নতুন গণতন্ত্রের সূচনা'। অথচ তারা টের পাননি, তারা হয়ে গেছেন স্টেজের অভিনেতা, যাদের সংলাপ আগে থেকেই লিখে দেওয়া। এই বাস্তবতায়, প্রশ্ন উঠে আসে—বাংলাদেশের বাম রাজনীতি আসলে কী? আদর্শভিত্তিক এক বিকল্প শক্তি, নাকি সুবিধাবাদী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত কিছু বুদ্ধিজীবী ও শ্লোগানধারী?
তাদের রাজনীতিতে নেই বাস্তবভিত্তিক রণকৌশল, নেই গণভিত্তি, নেই নির্বাচনী ক্ষমতা। আছে শুধু জটিল চিন্তার জটলা, শ্রেণি সংগ্রামের সেমিনার, আর 'রাষ্ট্র'কে কিভাবে পাল্টাতে হবে তার দীর্ঘ নোট। রাষ্ট্র নিয়ে এত ভাবেন, যে সংসার গঠনের চিন্তা 'সিস্টেম ইনকমপ্যাটিবল' বলে রিজেক্ট হয়ে যায়। বিপ্লব কোথায়, বিবাহ কোথায়
বাংলাদেশের বাম রাজনীতি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাষ্ট্রের শত্রু হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক বন্ধু হিসেবেও তাদের ব্যবহার সহজ।
তারা জনতার শক্তি নয়, নির্বাচনী কৌশলের গুডবয়। তারা আদর্শের প্রতিনিধি নয়, "রাজনৈতিক মাল্টি-ইউজ টুল"।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




