মানুষের জীবন কখনোই পুরোপুরি পরিপূর্ণ নয়। পৃথিবীর অনেক কিছু আমরা মেনে নিতে পারি, অনেক সীমাবদ্ধতাকে আমরা স্বাভাবিক ভেবে সহ্য করি। কিন্তু জীবনে কিছু চাওয়া বা ইচ্ছা থাকে যা একান্তই নিজের, যা পূর্ণ না হলে মনে হয় জীবন যেন অর্থহীন হয়ে গেছে। এই একান্ত চাওয়া পূর্ণ না হওয়ার যন্ত্রণা মানুষকে গভীর হতাশার দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে সবকিছুই অর্থহীন ও নিরর্থক বলে মনে হয়
মানুষের প্রত্যাশা অসীম। কেউ স্বপ্ন দেখে ভালো একটি চাকরি বা ব্যবসার, কেউ ভালোবাসার মানুষের সান্নিধ্যের, আবার কেউ চায় নিরিবিলি শান্ত একটি জীবন। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন বাঁধায় সেই চাওয়াগুলো অনেক সময় অপূর্ণ থেকে যায়। তখন মনে হয়, চারপাশের সবকিছুই ফাঁপা, তুচ্ছ, আর জীবনটা যেন ঘাসের মতো অমূল্যহীন। এই মুহূর্তে মানুষের ভেতরের শক্তি ক্ষয় হতে থাকে।
যখন দীর্ঘ সময় ধরে কোনো চাওয়া অপূর্ণ থেকে যায়, তখন মানুষ জীবনের প্রতি আগ্রহ হারাতে শুরু করে। মনে হয়, সামনে এগোনোর আর কোনো মানে নেই। তখন জীবনযাত্রার গতি কমে যায়, স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা ক্ষীণ হয়। অনেক সময় মনে হয়—"সবকিছু নিকুচি যাক, আর কিছুই চাই না।" এই মানসিক অবস্থাই মানুষকে জীবনের লাগাম ছেড়ে দিতে প্রলুব্ধ করে।
হতাশ মানুষ প্রায়ই ভাবে, সব ছেড়ে দিলে হয়তো শান্তি মিলবে। দায়িত্ব, সংগ্রাম কিংবা সামাজিক চাপ থেকে দূরে গিয়ে শুধু নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকলেই হবে। এই অবস্থায় মানুষ নিজের ভেতরের শক্তি আর সংগ্রামের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে ফেলতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মানুষ যতই হাল ছেড়ে দিতে চাইুক, জীবনের মূল স্রোত তাকে আবারও টেনে আনে। কারণ বেঁচে থাকা মানেই নতুন সম্ভাবনার অপেক্ষা।
যদিও অপূর্ণতার বেদনা মানুষকে দুর্বল করে তোলে, তবুও এই বেদনা অনেক সময় নতুন ভাবনার দরজা খুলে দেয়। জীবনের শূন্যতা মানুষকে শেখায় অন্যভাবে বাঁচতে, অন্যভাবে সুখ খুঁজতে। আজ যে কষ্ট অসহনীয় মনে হচ্ছে, আগামীকাল হয়তো সেই কষ্টই হয়ে উঠবে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার, যা ভবিষ্যতের পথে দিশা দেখাবে। তাই বলা যায়, অপূর্ণতাও জীবনের এক অপরিহার্য শিক্ষক।
জীবনে সবকিছু কখনোই আমাদের ইচ্ছেমতো ঘটে না। কিছু চাওয়া অপূর্ণ থেকে যায়, কিছু ইচ্ছা হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে। কিন্তু এই অপূর্ণতাই মানুষকে নতুন করে গড়ে তোলে, শক্ত করে, এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ বোঝায়। হতাশার অন্ধকার যত গভীরই হোক, মনে রাখতে হবে জীবন সবসময় পরিবর্তনশীল। আজকের দুঃখই হয়তো আগামী দিনের শক্তি হয়ে উঠবে। তাই জীবনের লাগাম ফেলে না দিয়ে, একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে সামনে এগোনোটাই মানুষের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




