দৃশ্যপট ১: একটি লোকাল বাস রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, হটাৎ করে কিছু চ্যাংড়ামার্কা যুবক বেশকিছু ইটের ভাঙ্গা টুকরো হাতে নিয়ে দৌড়ে এসে বাসটির দিকে ছুঁড়ে মারতে লাগল, বাসটি থেমে যাওয়ার সাথে সাথে বাসের ভীতসন্ত্রস্ত মানুষজন জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামতে লাগলো আর মহিলারা তখনও কোনমতে পড়িমড়ি করে দরজা দিয়ে নামার চেস্টা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সেই যুবকদের মধ্যে কয়েকজন একটি কেরোসিন ভর্তি বোতলের মাথার সলতেটিতে আগুন জালিয়ে ছুঁড়ে মারলো বাসের ভেতরে, আর এদিক দিয়ে কয়েকজন মহানন্দে বাসের উইন্ডশিল্ডের কাঁচ ভাঙ্গার চেস্টায় ব্যাস্ত। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাসটিতে আগুন ধরে গেল, জানা গেল না বাসের সবাই বের হতে পেরেছে নাকি কেউ আটকা পড়ে জ্যান্ত কাবাব হয়ে যাচ্ছে!
দৃশ্যপটঃ ২: কোন একটি আবাসিক এলাকার রাস্তা দিয়ে একটি খালি সিএনজি যাচ্ছিলো। আবারো কিছু চ্যাংড়ামার্কা টাইট জিনস আর কেডস পরা যুবক উৎসবের আমেজে এগিয়ে এসে সিএনজি টিকে থামিয়ে দিল, আর পাশ থেকে দুইতিনজন একযোগে হাত লাগিয়ে সিএনজি খানা উল্টে দিতে সক্ষম হল। সামনে দিয়ে একজন এসে লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে উইন্ডশিল্ডের কাঁচ ভেঙ্গে দেয়ার পর সিএনজির ড্রাইভারটিকে আরেকজন দুই পা ধরে টেনে হিঁচড়ে বের করে ছুঁড়ে ফেলে দিল। আর বাকি কজন সিএনজির উপরের প্লাস্টিকটা হেঁচকা টানে খুলে ফেলে একটা কেরোসিনের বোতলে আগুন ধরিয়ে ভেতরে ফেলে দিল। ওদিক দিয়ে পুলিশের সাইরেন কানে আসতেই যুবকেরা উদভ্রান্তের মতন যে যেদিকে পারলো, দৌড় দিল। তবে মুখে ছিল বিজয়ের হাসি!
এগুলো হরতালের নিত্যদিনের খন্ডচিত্র। প্রতিদিন হরলতালে এই ভাংচুরের উৎসব দেখতে দেখতে বেশ কদিন ধরে মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলঃ এগুলো কারা করে? আর কেনইবা করে? এভাবে নিজের দেশের সম্পদ নস্ট করে, মানুষের জীবনকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে কি লাভ তাদের? এমনও তো হতে পারে তারা যে সিএনজিটাতে আগুন দিতে যাচ্ছে, সেটাতে তাদেরই বৃদ্ধ বাবা মা বসে আছেন! এই ব্যাপারটা কি একবারের জন্য ও তাদের মাথায় আসে না?
উত্তরটা আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই পেয়ে গেলাম। অনলাইনে বসেই একটা খবর দেখতে পেলাম যার শিরোনাম ছিলোঃ “আগুন দিতে ১৫ হাজার, ৫ হাজার টাকায় ভাঙচুর”! পুরো খবরটা পড়ে জানতে পারলাম যে হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল আর নাশকতামূলক তৎপরতা চালানোর জন্য কর্মী ভাড়া দেয়া হয়, সাথে পাওয়া যায় অস্ত্র ভাড়াও। এদের রেট হচ্ছে অনেকটা এরকমঃ গাড়ি পোড়াতে হলে ১৫ হাজার টাকা, ভাঙচুর চালাতে হলে ৫ হাজার টাকা আর ঝটিকা মিছিলের জন্য খরচ করতে হয় জনপ্রতি ১শ’ টাকা করে। এছাড়াও অস্ত্র নিয়ে কোন কর্মসূচিত চালাতে হলে খরচ করতে হয় নির্ধারিত টাকা। তবে এদের মধ্যে কোন অপরাধবোধ নেই এসব নিয়ে, বরং তারা মনে করে যারা গরীব মেরে বড়ালোক হয়েছে, তাদের সম্পদ পোড়ানো ভাল একটা কাজ!
এরপর আমার আর কোন প্রশ্ন থাকার প্রশ্নই আসে না!
পুরো খবরটি এখান থেকে পাওয়াঃ আগুন দিতে ১৫ হাজার, ৫ হাজার টাকায় ভাঙচুর
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১২