somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের অধিকার ও একজন লিমন

০৬ ই মে, ২০১১ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ : কোন হত্যাকান্ডকেই আইন ও নীতিগতভাবে সর্মথন করা যায় না। নিজেকে মানুষ ছাড়া কিছুই ভাবি না, র্ধমীয় কোন প্রাকটিসও করিনা ব্যক্তিগতভাবে। যারা বিন লাদেনের মতো শয়তানকে সর্মথন করেন তারাই কেবল সুবিধাবাদি এবং বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডকে সর্মথন করতে পারেন। আইন, মানবাধিকার, আর্ন্তজাতিক আইন, মানবিকতায় বিশ্বাসীরা সবরকম হত্যাকান্ডকে হত্যাকান্ড হিসেবেই দেখে। আমরেকিা নজি্ই বললো, "ওটা লাদনেকে ক্যাপ্চার করার অভযিান ছিলনা, তাকে হত্যা করার মিশনই ছিল"। তাকে ধরে তার বিচার করা উচিত ছিল। কারণ বিন লাদেন দেশে দেশে মানুষ মেরে সাম্প্রদায়িকতার বিশবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছিল। টুইন টাওয়ারে গণহত্যা চালিয়েছিল। তার বিচার হলে তার কাছ থেকে অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং তার সহযোগি সন্ত্রাসীদের সম্পর্কেও বহু তথ্য পাওয়া যেতো। যা থেকে বিশ্ববাসি বঞ্চিত হলো।
আল কায়দা প্রধান মোস্ট ওয়ানটেড জঙ্গি নেতা ওসামা বিন লাদেনকে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। এই কর্মটি আন্তর্জাতিক আইন সমর্থন করে কিনা সে বিষয়ে মত দেবেন বিশেষজ্ঞরা। তবে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এটা বলা খুব কঠিন নয় যে, নিরস্ত্র কোন মানুষকেই হত্যা কোনমতেই জায়েজ নয়। নীতিগতভাবে কোন হত্যাই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আমেরিকা থেকে পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ভারত, লিবিয়া থেকে টিউনিশিয়া কোথাও শান্তি নেই? গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রশ্নের সম্মুখিন। ন্যায়বিচারতো সুদূর পরাহত ব্যাপার।
যাক, আজকের প্রসঙ্গ আমার সেটা নয়। কথা বলতে চাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে। সংবিধানের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এর অভ্যুদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বৈষম্য-শোষণ, বঞ্চনা ও নির্যাতনমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বা মূল উদ্দেশ্য। স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধস্ত এই দেশের অর্থনীতিকে সবল করতে এবং রাষ্ট্রের অবকাঠামো বিনির্মাণ ও প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে নানান পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এমনই সময় একাত্তরের পরাজিত শত্রু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্র দেশী-বিদেশী চক্রান্ত এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহায়তায় বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মানবাধিকার লংঘন ও নির্যাতনের ঘটনা বোধহয় আর কোথাও ঘটেনি। মূলত: এ ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশকে পাকিস্তানপন্থী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়।
রাষ্ট্র, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত চক্র, মানবাধিকার ল্ঘংনকারি সেনা কর্মকর্তা এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীর যৌথ প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী। কেন কি কারণে এবং কিভাবে কাদের মাধ্যমে আমি বর্বর নির্যাতন ও চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম তার ওপর কোন গবেষণা করা গেলে হয়ত বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্র, শাসন ও বিচার ব্যবস্থা, মানবাধিকার লংঘন, রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, দুর্নীতি, দায়মুক্তি ও দুর্বৃত্তায়নের একটা পরিস্কার চিত্র পাওয়া যেতো। নিশ্চিত ক্রসফায়ারের হাত থেকে বেঁচে আসার এক বাস্তব করুণ কাহিনী নিজের জীবনটাকে কিভাবে বদলে দিলো?
মাতৃভূমির মাটি, পানি, হাওয়া, প্রকৃতি এবং পরিবার-বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত এক হতভাগ্য সংবাদকর্মী আমি। ফি বছর দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ লড়াই করেন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, মঙ্গাসহ নানান দুর্যোগের সাথে। দেশের গরীব, নিরন্ন খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জন্য আমার মন কেঁদে ওঠে। প্রিয় পাঠক, দেশবাসি দূর প্রবাস ইউরোপ থেকে বলছি। আজ আপনাদের এক গল্প শোনাতে চাই। না, এ কোন কল্পকাহিনী নয়। আমার জীবনের এক কঠিন বাস্তব সত্য ঘটনা। এক করুণ বেদনাজাগানো এই গল্প আমার জীবনের অন্ধকার সময়। যা আমার প্রতিটি মুহুর্তকে পীড়িত করে। শুধু আমি এই যন্ত্রণার শিকার তা নয়। প্রায় প্রতিদিনই দেশে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান চোখের জল মুছেই মানবাধিকার রক্ষার কাজ সম্পন্ন করছেন! লিমন আজ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। এমন শত শত লিমন আছেন যাদের অনেকেই নিহত আবার অনেকে পঙ্গু জীবন নিয়ে এখনো সংগ্রাম করছেন।
রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড কিংবা নির্যাতন একের পর এক ঘটে চলেছে। এর পেছনে মিডিয়ার ভূমিকাও কম নয়। নিজস্ব ব্যবসা ও রাজনৈতিক পছন্দ থাকার কারণে মিডিয়া সত্যিকারের ভূমিকা নিয়ে সংগ্রাম করতে পারছেনা। বরং মিডিয়া বন্দুকযুদ্ধের নামে তথাকথিত ক্রসফায়ারে হত্যা নির্যাতনের সহযোগি বলা যায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দেয়া সর্ম্পূণ মিথ্যা স্টেটমেন্ট হুবহু মিডিয়ায় তুলে ধরে মিডিয়া পুরো রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-হত্যাকে বৈধতা দিয়ে আসছে শুরু থেকেই।
দুর্নীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কাছে মানবিকতা, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার কিংবা নৈতিকতা খুব একটা বড় বিষয় নয়। ক্ষমতা এবং লুটপাট ও পরিবার-দলতন্ত্রই প্রধান। জনগণ, মানবসেবা, জনগণের অধিকার কোন বিষয় নয়। তাইতো ক্ষমতায় থাকলে একরকম আবার ক্ষমতার বাইরে থাকলে অন্যরতম চেহারা দেখা যায় একইভাবে।
বিএনপি-জামাত জোট রাষ্ট্রীয় হত্যা-নির্যাতন সূচনা করেছিল একটি কালো বাহিনী তৈরী করার মধ্য দিয়ে। তারাই এখন বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে দারুণ বিচলিত। অন্যপক্ষে আজকের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীগ বিরোধীদলে থাকার সময় বলেছিল এক আর এখন করছে অন্যটা। বিচার বিহর্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধের প্রতিজ্ঞা তারা এখন ভুলে গেছে। ফলে জনগণই অন্যায়-অত্যাচার-অবিচারের শিকার হচ্ছেন। সেটা বিএনপি হোক আর আওয়ামী লীগ হোক সবসময়ই মানুষের অধিকার পদদলিত।
২০০৯ সালে দেশ ত্যাগের পর সাংবাদিক বন্ধু এফ এম মাসুম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। নির্যাতনকারিরা বরাবরের মতোই দায়মুক্তি বা ইমপিউনিটি পেয়েছে। কেউ কেউ শুধু দায়মুক্তিই নয় পুরস্কারও পায়। খুলনার পাইকগাছায় আমার আরেক সাংবাদিক বন্ধু এফ এম আবদুর রাজ্জাকের চোখ তুলে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এরও আগে দরিদ্র কলেজ ছাত্র ঝালকাঠির লিমন হোসেনের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। দেশটিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিয়াস আহমদ নির্যাতিতত হয়েছেন। এমন শত ঘটনা ঘটছে অহরহ। দেশের আর একটি মানুষও যেন এমন যন্ত্রণাকাতর না হন। সেরকম প্রত্যাশা নিয়েই আমার এই লেখা।
‘লুব্ধক’ একটি বাসার নাম। রাজশাহী মহানগরীর উপশহরের ২ নম্বর সেক্টরের ৫৫ নম্বর বাড়ি এটি। ২০০৭ সালের অক্টোবর মাস। আমি, আমার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী ফারহানা শারমিন এবং আমাদের চার মাস বয়সী সন্তান (বর্তমানে ৪ বছর) ফিমান ফারনাদ এই তিনজন বসবাস করতাম এই বাসার নিচতলার বাম অংশে। ড. ফখরুদ্দীন-মঈন উ আহমদের নেতৃত্বাধীন জরুরি সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের তুচ্ছ একটি ঘটনার জের ধরে শিক্ষার্থী বনাম সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। এই সঘর্ষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নেন সাধারণ জনতা। জরুরি সরকারের নির্যাতনে অতিষ্ঠ দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীদের সাথে। এরই জের ধরে সরকার দেশের প্রথম ২৪ ঘন্টার নিজ চ্যানেল সিএসবি নিউজ এর প্রচারণা বন্ধ করে দেয়। সিএসবির রাজশাহী ব্যুরো প্রধান দায়িত্বে ছিলাম। সিএসবি বন্ধ। তাই সিএসবি নিউজ এর রাজশাহী ব্যুরো অফিস (মহানগরীর কাদিরগঞ্জে) খোলা হয় না আগের মত। ২৪ ঘন্টার নিউজ চ্যানেলে কাজ করতে গিয়ে পরিবার এবং সহকর্মী কাউকেই তেমন সময় দিতে পারতাম না। সিএসবির স¤প্রচার বন্ধ হয়ে গিয়ে সময় কাটানোর মত কোন কাজ ছিল না হাতে। তাই প্রেসক্লাবে মাঝে-মধ্যে আড্ডা দিতাম অনেক রাত পর্যন্ত। তবে রাত ১০টার আগেই বাড়িতে আসতে হবে। ফারহানা শারমিন এটা চাইতো। কিন্তু তারপরও অনেক সময় যথাসময়ে বাড়ি ফেরা হতো না। বাসায় ফিরতে একটু দেরী হলে (রাত ১০টা অতিক্রম হলে) মোবাইলে রিং আসতো ফারহানার কাছ থেকে। এরপর ফারহানা আমাদের একমাত্র ফিমানের কণ্ঠ শুনাতো আমাকে। আমিও দ্রুত ফিরতাম বাসায়।
২০০৭ সালের গত ২৩ অক্টোবর রাত ১১টা পর্যন্ত ছিলাম রাজশাহী প্রেসক্লাবে। এরই মধ্যে অন্তত: দুইবার ফোন পেয়েছি ফারহানার। রাত তখন ১১টা কি সাড়ে ১১টা ক্লাব থেকে চলে আসি বাসায়। ফিমান সেদিন ঘুমাতে বেশ বিলম্ব করছিল। তাই তার সাথে আমরা খেলছিলাম দুজনে (স্বামী-স্ত্রী)। তখন পর্যন্ত আমরা রাতের খাওয়া সম্পন্ন করিনি। টিভিটা আপনমনে চলছিল। ফিমানকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছি উভয়ে। এক পর্যায়ে ফিমান ঘুমিয়ে পড়ে। আমরাও খাওয়া-দাওয়া সেরে নিই। আমরাও ঘুমিয়ে যাই। রাত অনুমান দেড়টা আকস্মিক বিকট শব্দে বেজে ওঠে আমাদের বাসার কলিংবেল।
বিরামহীনভাবে কলিংবেল বাজতে থাকে। ফলশ্রুতিতে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি ও আমার স্ত্রী ঘরের দরজা খুলে বেলকুনীতে বেরিয়ে আসি। এসময় আমার কোলেই ছিল আমাদের ফিমান ফারনাদ। বুঝতে পারলাম একদল সশস্ত্র মানুষ পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। অপরিচিত লোকদের সবার হাতে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু কেন? পরক্ষণেই মনে হলো আমার নামে যে মামলা রয়েছে তারজন্য হয়ত ধরতে এসেছে। ওই মামলায়তো হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছি আমি। আর পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমার মত একজন নগন্য সাংবাদিককে ধরার জন্য গোটা বাড়ি ঘিরতে হবে কেন? আমি কি চোর না ডাকাত নাকি দাগী অপরাধী? আর পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হলেতো পোশাক পরা থাকবে। সিভিল পোশাকে সবার হাতে অস্ত্র। এরা কি তবে সন্ত্রাসী নাকি ডাকাত দল? তাহলে কি ওরা ডাকাতি করতে এসেছে এই বাড়িতে ইত্যাদি নানা প্রশ্ন বাজতে থাকে নিজের মনের মধ্যে।
অপরিচিত লোকেরা ইতোমধ্যে গোটা বাড়ির সবক’টি কলিংবেল বাজিয়েছে। শুধু এই বাড়িরই নয় আশপাশের বাড়ির সব মানুষের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। এরই মধ্যে তিনতলা বাড়ির একেবারে তিনতলা থেকে বাড়ির মালিক জনাব আবুল কাশেম ও তার পুত্র লিখন নিচে নেমে আসেন। সিভিল পোশাকধারী ১০/১২ জন সশস্ত্র লোক বাড়ির যে অংশে আমরা থাকি সেই অংশের বেলকুনীর দরজার কাছে আসেন। তারা নিজেদেরকে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে আমার বাসা তল্লাশি করবেন বলে দরজা খুলতে বলেন। এসময় আমি এবং আমার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করি যে, আপনারা কারা? আমি উনাদের উদ্দেশে বলি, আপনাদের পরিচয় নিশ্চিত না হলে আমি দরজা খুলবো না। তখন তারা বলেন, ‘তাড়াতাড়ি দরজা খুল, নইলে তোর খুব অসুবিধা হবে।’ আমি বলি কি ধরনের অসুবিধা হবে, এতো রাতে একজন নাগরিকের বাড়িতে এসে আপনারা ডিসটার্ব করছেন কেন, কিসের কি অসুবিধা হবে? তারা আমাকে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ বলে গালমন্দ করতে থাকেন।
সত্যি সত্যি প্রশাসনের লোক নাকি সন্ত্রাসী-ডাকাতদল হানা দিয়েছে আমার বাসায় তা জানার জন্য আমি বোয়ালিয়া মডেল থানায় মোবাইল করি। থানার ডিউটি অফিসার আমাকে জানান, ‘থানা থেকে আমাদের কোন লোক যায়নি আপনার বাসায়। কে বা কোন বাহিনী গেছে তা আমাদের জানা নেই।’ এক পর্যায়ে সশস্ত্র লোকেরা বেলকুনীর গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। তখন স্পষ্ট মনে হচ্ছিল যে এরা তাহলে ডাকাতদল! কিছুক্ষণ পর তারা (সশস্ত্র লোকেরা) নিজেদেরকে র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাবের লোক বলে পরিচয় দেন।
আমি বলি যে, আপনারা র‌্যাবের লোক কিন্তু দেখেতো মনে হচ্ছে না। তাছাড়া আমার বাসা সার্চ করবেন আপনাদের হাতে কি সার্চ ওয়ারেন্ট আছে। আমি এবং আমার পতœী সমস্বরে একথা বলি। এ পর্যায়ে তারা রেগে যায়। এসময় বাড়ির মালিকের ছেলে লিখন সশস্ত্র লোকদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা তাকে প্রহার করতে থাকেন। আমি মনে মনে ভাবি যে, সত্যিই যদি র‌্যাবের লোক হয় তাহলে কেন তারা মারধোর করছে বাড়ির মালিকের ছেলেকে। তখন আমি তাদের কাছে হাতজোড় করে অনুনয় করে বলতে থাকি, আপনারা উনাকে মারছেন কেন ? আপনারা কোন অন্যায় আচরণ করবেন না। আমি দরজা খুলে দিচ্ছি। আপনারা বাসা তল্লাশি করুন। কিন্তু আমার প্রতি কোন অবিচার করবেন না। আমার ঘরে আপনাদের হাতের অস্ত্র রেখে আমাকে অস্ত্রসহ ধরে নিয়ে যাবেন না, প্লিজ। এটা বলার কারণ আছে। আর তা হলো র‌্যাবের এটা পুরনো অভ্যাস। নিজেদের অস্ত্র যে কারও হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যাবার পর র‌্যাব বিবৃতি দেয় ‘ও বড় সন্ত্রাসী’।
যাহোক, আমার শিশুপুত্র ফিমানকে তার মায়ের কোলে দেই। আমি বেলকুনীর গ্রিলের দরজা খুলি। দরজা খোলামাত্র র‌্যাব সদস্যরা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে দরজার বাইরে নেন। তারা আমার দু’ হাতে হ্যান্ডকাপ পরান। আমার দু’ চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে দেন। শুধু তাই নয়, আমার মাথা থেকে গলা পর্যন্ত কালো কাপড়ের টুপি পরিয়ে দেয়া হয়। শুনেছি এধরনের টুপি এশমাত্র ফাঁসির আসামিদের ফাঁসি মঞ্চে নেয়ার সময় পরানো হয়। আমার শিশুপুত্র, স্ত্রী ও বাড়িওয়ালার সম্মুখে র‌্যাব সদস্যরা আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ী কিল-ঘুসি ও লাথি মারতে থাকেন। একটি সভ্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এমন অসভ্য-বর্বর আচরণ করতে পারে, তা আমার জানা ছিল না।
সন্ত্রাসী কায়দায় র‌্যাবের লোকেরা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে একটি মাইক্রোবাসে ওঠায়। মাইক্রোর মধ্যে আমার সামনে দুজন, আমার পেছনে দুজন, আমার ডানে দুজন এবং আমার বাম পাশে দুজন সশস্ত্র লোক বসে শক্তভাবে ধরে থাকলো আমাকে। এদের একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করে বললো যে, ‘এই ব্যাটা এবার বল তোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি’? আমি বলি তা কি করে আমি জানবো। তখন ওরা বলে আমরা র‌্যাব তুই জানিস না র‌্যাব কোথায় নিয়ে যায় মানুষকে। তখন আমি বলি তাহলে কি আমাকে আপনারা ক্রসফায়ারে হত্যা করার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন? এসময় তারা আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ অবস্থায় মাইক্রো চলতে শুরু করলো। রাস্তার বাঁক আর রাস্তার মাঝে স্পিড ব্রেকার অনুমান করে বুঝতে পারি যে, গাড়ি যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট ক্রস করার পর স্পিড ব্রেকার ও তারপর মাইক্রোটি ডানে মোড় নিলে নিশ্চিত হই যে, আমাকে র‌্যাব-৫ রাজশাহীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পথিমধ্যে গাড়ির ভেতরে আমাকে মারধোর করা হয়। আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে তারা। তারা আমাকে অস্ত্র মামলায় চালান দেয়া ও ‘ক্রসফায়ার’ করার হুমকি দেয়। গাড়ির ভেতওে একজন বলে যে, ‘আল্লাহর নাম ডাক, দোয়া-কালাম পড়, তোকে ক্রসফায়ার করা হবে’। তখন মনে মনে ভাবছি যে, আমিতো কোন অপরাধ করিনি, আমি খুনি নই। তারপরও আমাকে ক্রসফায়ার দেয়া হবে। এটা কি হয়? পরক্ষণেই আবার ভাবি সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা নতুন কিছু নয়। এখানে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুনদের মত মানবতাবাদী মানুষদেরকে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন সইতে হয়। কিন্তু খুনি, যুদ্ধাপরাধী নিজামীরা গাড়ির সামনে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় নিশ্চিত হলাম যে, সত্যি সত্যি আমাকে র‌্যাব-৫ রাজশাহীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
র‌্যাব কার্যালয়ে নেয়ার পর আমার দু’হাত বেঁধে আমাকে উপরে সিলিংয়ের সাথে টাঙ্গিয়ে রাখা হলো। এর আগে আমাকে এই ঘর ও ঘর সিঁড়ি দিয়ে ওঠানো নামানো করা হলো বেশ কিছু সময় ধরে। রাতে আমার আশপাশে বুটের খট খট শব্দ করে ৪/৫ জন লোক আসতো। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবার একই শব্দ করে হেঁটে চলে যেতো তারা। চোখ বাঁধা ও কালো টুপি পরিয়ে এবং আমাকে ঝুলিয়ে রাখা হয় সারারাত। এভাবে রাতভর আমার ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। সকাল আনুমানিক আটটার দিকে আমার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে আমাকে নিচে নামানো হলো। একটি ছোট রুটি পাতলা ডাল দিয়ে খেতে দেয় তারা। রুটির সাইজ আর পানির ন্যায় ডাল অনুভব করে আবার ভাবি, তাহলে কি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবেক ভিসি সাইদুর রহমান খান, আবদুস সোবহান ও মলয় ভৌমিক এর ওপরও এমন আচরণ করেছে র‌্যাব সদস্যরা। এই তিন গুণি শিক্ষককেও র‌্যাব-৫ এর সদস্যরাই গ্রেফতার করেছিল। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের ওপর কি অমানবিক-বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে ‘পশুর দল’। জেলে গিয়ে জানতে পাই, বিশিষ্ট নাট্যকার মলয় ভৌমিকের দু’ পায়ে ব্যাপক টর্চার করে এই জানোয়ারের দল। সাইদুর রহমানের মতো শিক্ষককে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে সজোরে ঘুরিয়েছে।
রাতভর উপরে ঝুলে থাকার সময় মনে হচ্ছিল আমার শরীর থেকে বোধহয় হাত দু’টো আলাদা হয়ে গেছে। একটি গামছা দিয়ে আমার চোখ দু’টি শক্ত করে বেঁধে দেয়ার পর আবার মোটা কালো কাপড়ের একটি টুপি পরিয়ে দেয়ায় আমার যেন শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বারবার অনুরোধ করেছি কিন্তু টুপি খুলে দেয়নি অমানবিক ওই ‘নির্যাতনকারি খুনির দল’। সকালে নাস্তা হিসেবে যে পাতলা রুটি আমাকে খেতে দেয়া হয় তা থেকে সামান্য একটু ছিঁড়ে মুখে দিয়েছি। পানি পান করে তৃষ্ণা মিটাই। এরপর আমাকে আবারও উপরে লটকানো হয় একইভাবে। আমাকে খেতে দেয়ার সময়ও টুপিটি খোলা হয়নি। শুধুমাত্র গোঁফ পর্যন্ত টুপিটি উঠিয়ে দেয়া হয়। আমার কাছে এসে আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে র‌্যাব সদস্যরা।
সকাল অনুমান ১০টার দিকে দুই ব্যক্তি এসে আমার নাম জানতে চান। ওই দুইজনের কথোপকোথনেই বুঝতে পারি এরা আমার পরিচিত। গ্রেফতার হওয়ার আগে আগে পেশাগত কারণে এই দু’জনের সঙ্গে আমার পরিচয় এবং উনাদের সঙ্গে আমার একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। এরা হলেন র‌্যাব-৫ এর ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী (সিপিসি) মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ (বর্তমানে পদোন্নতিপ্রাপ্ত লে. কর্ণেল) ও রাব-৫ এর সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর হুমায়ুন কবির। এরা এখন রাজশাহীতে নেই। মেজর রাশীদকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একজন সদস্য করে পাঠানো হয়েছিল আইভরিকোষ্টে। মেজর কবিরকে বান্দরবানে বদলি করা হয়েছে বলে শুনেছি। কথিত অপহরণের অভিযোগে ওয়ার্কাস পার্টির নেতা কামরুল ইসলাম ওরফে মজনু শেখকে র‌্যাব সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করে। ২০০৭ সালের ১৮ মে এ ঘটনা ঘটে। তখন পরিচয় হয়েছিল মেজর কবির এর সঙ্গে। আর সিএসবি নিউজ বন্ধ হবার এক সপ্তাহ আগেও মেজর রাশীদের সাথে তারই কার্যালয়ে কথা বলি পেশাগত কারণে। আমারসঙ্গে সিএসবি নিউজের ক্যামেরাম্যান মাসুদও ছিলেন।
পূর্ব পরিচিতি এই দু’জনের মধ্যে মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ এক পর্যায়ে নির্যাতন শুরু করলেন। নির্যাতনের শুরুতেই মেজর রাশীদ আমাকে বলেন, “এই ফকিরনির বাচ্চা, তোর এতো প্রেসটিজ কিসের? শালা চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী। তোর ‘পাছার ভেতর’ ঢুকিয়ে দেবো সাংবাদিকতা। এই শুয়োরের বাচ্চা তুই আর রিপোর্ট করবি না সিএসবি নিউজ-এ। লিচু বাগানের রিপোর্ট, বেনজিরের বউয়ের কথা, খায়রুজ্জামান লিটন সাহেবের (জনাব লিটন বর্তমানে রাজশাহীর মেয়র, আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার বাদি জনাব লোটনের ভাইপো) পারিবারিক ওয়াকফ্ এস্টেট নিয়ে রিপোর্ট করবি না ? হারামজাদা তুই র‌্যাব দেখেছিস, কিন্তু র‌্যাবের কাম দেখিসনি। তোকে ক্রসফায়ারে মারবো শালা।”
আবার ভাবতে থাকি যে, র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আমাদের জাতীয় নেতার সন্তান লিটন সাহেবের নাম বলছেন কেন? তাহলে কি র‌্যাব সদস্যরা জনাব লিটনের প্ররোচণাতে আমাকে ধরে এনে আমার ওপর নির্যাতন করছে? কিন্তু আমিতো লিটন সাহেবের কোন ক্ষতি করিনি। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রিপোর্ট করেছি। এই রিপোর্ট করতে গিয়ে যদি লিটন সাহেব আহত-মর্মাহতও হয়ে থাকেন তাহলেওতো তিনি আমার ওপর এমন প্রতিহিংসা পরায়ন হতে পারেন না। তবে কি র‌্যাবের এই মেজর লিটন সাহেবের নাম ব্যবহার করে পুরো দোষটি তার (মেয়র সাহেবের) ঘাড়ে ফেলতে চাইছেন? পরবর্তীতে জানতে পারি, আমার বিরুদ্ধে যৌথ ষড়যন্ত্রের অন্যতম রুপকার মাননীয় মেয়র মহোদয় নিজেও। মেয়র লিটন, র‌্যাবের মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ, মেয়রের চাচা মাহফুজুল আলম লোটন, রাজশাহীর একজন নৃত্যশিল্পী যৌথভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। বলে রাখা ভালো, মেয়র লিটন, জামায়াত সমর্থক মেজর রাশীদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের জামায়াতী কতিপয় সদস্যরা আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করতে চেয়েছিল।
নির্যাতনকালে আমি মেজর রাশীদকে বলি, আপনি রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী। আপনি আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে যাচ্ছেন? আপনি কিভাবে একজন নাগরিকের সাথে এমন অসভ্য আচরণ করছেন? রাষ্ট্র, সংবিধানতো আপনাকে কোন ব্যক্তিকে নির্যাতন করার অধিকার দেয়নি। এক পর্যায়ে তিনি (মেজর রাশীদ) আমার বাম গালে থাপ্পড় মারলে আমার ঠোট ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি আমার বাম হিপে একটি গোল বলের ন্যায় বস্তু দ্বারা কঠিন জোরে এশাধিকবার আঘাত করেন। ওটা যে ইলেকট্রিক শক তা আমার জানা ছিল না। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে এই ইলেকট্রিক শক বিষয়ে জানতে পারি। এই শক যখন দিচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিল যেন আমার গোটা শরীরে আগুন ধরেছে। ইলেকট্রিক শক দেয়ার পর আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তখন অনুমান সকাল সাড়ে ১০টা। এসময় আমার হাতের বাঁধন খুলে দেয়া হয়। আমাকে বসানো হয় ইলেকট্রিক চেয়ারে। এর প্রায় আধাঘন্টা পর টর্চার সেলের ফ্লোরে শুইয়ে দেয়া হয়। এরপর দুই মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ ও হুমায়ুন কবির একযোগে আমার ওপর হামলে পড়েন। এসময় আমার মনে হচ্ছিল, যেন এই দুই সেনা কর্মকর্তা তাদের ব্যক্তিগত জিঘাংসা মিটাতেই আমাকে নির্যাতন করছেন। আমার শরীরে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন মেজর রাশীদ ও হুমায়ুন কবির। একই সঙ্গে বুটের লাথি ও কিল-ঘুসি চলে সমানতালে।
প্রায় এক ঘন্টা ধরে সেনাবাহিনীর ওই দুই সদস্য আমার ওপর নির্যাতন চালান। তারা উভয়ে একটা মোটা বাঁশের লাঠি (গোলাকৃতির) দিয়ে আমার দুই পায়ের তালুতে বেধড়ক পিটিয়েছেন। নির্যাতন চালানোর সময় সেনা কর্মকর্তাদের উভয়ই ছিলেন উল্লসিত। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার জ্ঞান ফিরলে আমি বুঝতে পারি যে, একটি পরিত্যক্ত রান্না ঘরে আমি খড়ের ওপর পড়ে আছি। যেখানে পোকা-মাকড় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাকে ওরা গরু-ছাগলের ন্যায় আমার চোখ-মুখ ও হাত বেঁধে ফেলে রাখে সেই ঘরের মধ্যে। দুপুর অনুমান দেড়টার দিকে আমাকে উঠে দাঁড়াতে বললো র‌্যাবের দুই সদস্য। কিন্তু নির্যাতনের ফলে আমি সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না। এসময় ‘অভিনয় করছে শালা’ এই মন্তব্য করে মেজর রাশীদ আমার দু’পায়ের উপরে তার পায়ের বুট দিয়ে খিচতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাটার মার হয়নি। শালা অভিনয় করছে। কুত্তার বাচ্চা উঠে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে হাঁট। নইলে আরও মারবো। শালা তোকে ক্রসফায়ার দিলে ঠিক হবি।’ আমি বলি যে, আমি কোন অভিনয় করছি না প্রকৃতপক্ষে আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে এবং হাঁটতে পারছি না। কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস করতে নারাজ মেজর রাশীদ। মেজর রাশীদ বলছেন যে, তুই যতক্ষণ হাঁটতে পারবি না ততক্ষণ মারতে থাকবো। নির্যাতন থেকে সাময়িক রেহাই পাবার জন্য আমি কষ্ট করে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ানোর ও হাঁটার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।
মেজর রাশীদ তার বুট পরা পা দিয়ে আমার দু’পায়ে পায়ে খিচতে খিচতে আমাকে একটি রুমে নিয়ে যান। বেলা অনুমান দু’টায় আমার মাথা থেকে কালো কাপড়ের টুপি সরিয়ে চোখ থেকে গামছা খুলে দেয়া হয়। মনে হলো আমি যেন কবরের অন্ধকার থেকে আলোতে এলাম। শান্তিমত শ্বাস-প্রশ্বাস নিলাম। র‌্যাব সদস্যরা একটি ফরমে আমার দুই হাত ও দুই হাতের সব আঙুলের ছাপ নিল। আমার বুকে আমার নাম লিখে তা সেঁটে দেয়া হলো। এরপর ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়। ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার মহড়া শেষে পুনরায় গামছা দিয়ে আমার চোখ বেঁধে আমার মাথায় কালো কাপড়ের টুপি পরিয়ে দেয়া হলো।
আমাকে উঠানো হলো একটি মাইক্রোতে। এসময় RAB’র কেউ আমাকে কানে কানে বললেন, ‘ব্যাটা আল্লাহ আল্লাহ কর তোকে বাগমারায় ক্রসফায়ার দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।’ বেলা আনুমানিক তিনটায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় বোয়ালিয়া মডেল থানায়। র‌্যাব, আওয়ামী লীগ নেতা জনাব লোটনের করা চাঁদাবাজি মামলায় আমাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দিতে চেয়েছিল বোয়ারিযা মডেল থানার মাধ্যমে। কিন্তু বোয়ালিয়া থানার পুলিশ র‌্যাবকে জানায় যে, এই মামলা সে (আকাশ) জামিনে আছে তাকে গ্রহণ করা যাবে না। থানায় নেয়ার সময় র‌্যাব সদস্যরা আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘থানায় গিয়ে পুলিশের সামনে সোজা হয়ে হাঁটবি। নইলে তোকে আবার ফিরিয়ে আনবো এবং ক্রসফায়ার-এ মারবো। পুলিশ জিজ্ঞাসা করলে বলবি আমাকে মারধোর করা হয়নি।’ মনে মনে ভাবি আমাকে মেরে ফেললেও কখনও আমি মিথ্যার আশ্রয় নেবো না। কিন্তু পরক্ষণেই আমার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে আমাদের সন্তান ফিমান ফারনাদের মুখখানি। মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে সন্তানের কথা ভেবে। দুই চোখ গড়িয়ে ঝরতে লাগলো পানি। চোখের জলে ভিজে গেল সেই ফাঁসির আসামিকে পরানোর কালো টুপির অংশ বিশেষ। আওয়ামী লীগ নেতার মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে থাকার কারণে থানার পুলিশ আমাকে গ্রহণ করতে অসম্মতি জানালে থানা থেকে র‌্যাব কার্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায় র‌্যাব। এরপর র‌্যাব সদস্যরা বলাবলি করছে যে, আমাকে বাগমারায় নেয়া হবে সেখানে আমাকে একটি অস্ত্র মামলায় চালান দেয়া হবে। আরও শুনি যে, আমার নামে পুঠিয়াতে আরও একটি চাঁদাবাজির মামলা করানো হয়েছে, সেখানেও নিতে পারে। শেষ পর্যন্ত বিকেল অনুমান পাঁচটার দিকে র‌্যাব আমাকে বোয়ালিয়া মডেল থানায় ৫৪ ধারায় হস্তান্তর করে। এরপর আমার মাথার টুপি সরিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেয়া হয়।
আমাকে থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব সদস্যরা থানা কম্পাউন্ড অতিক্রম করার পরপরই আমাকে বোয়ালিয়া মডেল থানা হাজতে নেয়া হলো। হাজতখানার ভেতরে বিড়ি-সিগারেটের মোথা, থু-থু, কফ, কলার ছালসহ নানান অস্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ। এই পরিবেশে আমার বমি বমি ভাব হতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই থানার এসআই নূরুজ্জ্মান আসলেন আমার পাশে। তিনি রাজশাহীর বর্তমান মেয়র জনাব লিটনের চাচা ও আওয়ামী লীগ নেতা জনাব লোটনের করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। পুলিশের এই সদস্য আমার পূর্ব পরিচিত। আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র এবং জিয়াউর রহমান হলে থাকি তখন তিনিও (নূরুজ্জামান) রাবিতে পড়ালেখা করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাত্রদলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার আরও একটি পরিচয় আছে। তা হলো এই নূরুজ্জামান রাজশাহীর সাবেক ছাত্রদল নেতা শাহীন শওকত এর ভাইপো। আমার ধারণা করতে আর বাকি রইল না যে, তিনি পুলিশের চাকরীতে কিভাবে এসেছেন। সে যাহোক, এসআই নরুজ্জামান আমাকে অশোভন ভাষায় গালমন্দ করতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, ‘শালা তুই আওয়ামী-ঘাদানিক, হাসিনা লীগ করিস। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে তুই ছাত্রদল আর শিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর লিখেছিস। এইবার আমি তোকে রিমান্ডে নিয়ে আবার মারবো।’
বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ ২৪ অক্টোবর, ২০০৭ এর সন্ধ্যায় আমাকে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালা ২০০৭ এর ১৬ (২) ধারায় রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চালান দেয়। এসআই নূরুজ্জামান পুলিশ পিকআপ এর সাইরেন বাজাতে বাজাতে আমাকে আদালত চত্বরে নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য বোধহয় এই যে ‘এতবড় এবকজন দাগী অপরাধী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ কে গোটা রাজশাহী শহরের মানুষ (বোয়ালিয়া থানা হতে কোর্ট যাবার পথে) কে দেখানো! আমাকে যখন আদালতে নেয়া হয় তখন আদালতে কোন ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন না। আমাকে পুলিশ ভ্যান থেকে দুইজন পুলিশ ধরে নামালেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার পুলিশ ভ্যানে উঠিয়ে আমাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হলো।
কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালের ইমার্জেন্সী ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ড-৪ এ ভর্তি করে। পরদিন অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর, ২০০৭ খুব সকালে আমাকে দুইজন বন্দী দুই পাশে ধরে নিয়ে এলেন কেস টেবিলের (কারা বিচারাচালয়) সামনে। সেখানে আমার শরীরের বস্থা অবলোকন এবং আমার কাছ থেকে নির্যাতনের কাহিনী শোনার পরও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আমাকে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখার নির্দেশ দিলেন। আমাকে নেয়া হলো আমদানি ওয়ার্ডে (একজন মানুষ প্রথম জেলে আসার পর এই ওয়ার্ডেই তাকে নেয়া হয়)।
আমদানি ওয়ার্ডের বন্দিরা আমার শারীরীক অবস্থা দেখে আমাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য কারা সুবেদারকে অনুরোধ করেন। এরপর কারা সুবেদার আমাকে কারা হাসপাতালে স্থানান্ত করে দেন। কারা হাসপাতালে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত আমি চিকিৎসা গ্রহণ করি। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে সুস্থ্য হয়ে ওঠার আগেই কারা হাসপাতালের সার্জনকে ঘুষ না দেযার কারণে আমার ফাইল (সুস্থ্য বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া) কেটে দেন। এরপর আমাকে সিভিল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ২৮ দিনের অন্ধকার কারা জীবনের বাকি দিনগুলো কেটেছে আমার।
পুলিশ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৮ নভেম্বর আমি জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার ১৬ (২) ধারা হতে অব্যাহতি পাই। ওইদিনই আমাকে (গ্রেফতারের মাত্র চার ঘন্টা আগে দায়ের করা) দ্বিতীয় চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিসকেস দায়ের করার মধ্য দিয়ে আমি ২০০৭ সালের ১৮ নভেম্বর এই মামলা থেকে জামিন লাভ করি। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর, ২০০৭ থেকে ১৯ নভেম্বর, ২০০৭ পর্যন্ত রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকার পর গত ১৯ নভেম্বর, ২০০৭ রাত আটটায় কারাগার থেকে মুক্তি পাই। মুক্তি পাবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আমার কাছে খবর আসে যে, আমাকে র‌্যাব আবার গ্রেফতার করবে এবং এবার ‘ক্রসফায়ার’ এ হত্যা করবে। এমন এক চরম হুমকির মুখে পরিবারের সদস্যদেরকে উদ্বিগ-উৎকণ্ঠা আর আতংকের মধ্যে রেখে আমি রাজশাহী ছেড়ে পালিয়ে আসি ঢাকায়। এরপর আমি বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর ট্রমা ভিক্টিমস এ ভর্তি হয়ে আমি মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসার গ্রহণ করি। আমার জীবনের এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, বোমা-গ্রেনেড হামলা নিয়ে চারটি বই লিখেছি। এগুলো হলো অন্ধকারে ১৫ ঘন্টা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং প্রতিহিংসা, জঙ্গি গডফাদার এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ এবং উদীচী থেকে পিলখানা। রাজনীতি ও মানবাধিকার বিষয়ক ইংরেজী ভাষায় তিনটি বই প্রকাশ হয়েছে। এগুলো হলো স্ট্রাগল ফর পিচ, এওয়ে ফ্রম হোম এবং পেইন। এরমধ্যে পেইন বা ব্যথা নামের বইটি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকা থেকে। এই বইটি অ্যামাজনে পাওয়া যাচ্ছে (Click This Link)।
কেন এই রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-ষড়যন্ত্র?
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পট পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে মূলত: সেনাবাহিনী দেশের শাসনভার গ্রহণ করে। তাই সদ্য বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘সেনা নিয়ন্ত্রিত’ সরকার বলেই বেশি পরিচিতি পায়। দেশে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। জরুরি অবস্থার মধ্যেই রাজশাহীতে র‌্যাব-৫ এর একাধিক অপারেশন জনমনে নানান প্রশ্ন সৃষ্টি করে। ২ মে (২০০৭) রাজশাহীর এক সময়ের টপ সন্ত্রাসী বেনজিরকে তার নিজ বাড়ির শয়নকক্ষে স্ত্রী ও শিশু কন্যার সম্মুখে র‌্যাব সদস্যরা গুলি করে এবং তার হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে চালান দেয় আদালতে। একই মাসের ১৬ মে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালকের (তৎকালীন) কক্ষে র‌্যাব সদস্যদের পিটুনিতে হা-পা ভেঙ্গে যায় কারারক্ষী সাহেবুল ইসলামের। এর দু’দিন পর ১৮ মে মহানগ
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১১ রাত ১২:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×