আমাদের একজন 'কবি স্যার' ছিলেন। ক্লাস ফাইভে তখন কড়াকড়ি লেখাপড়া চলছে। হৈ হৈ করে হিমু ,শামীম ,সৈকতরা শুরু করেছে বৃত্তির প্রস্তুতি। যারা বৃত্তি দেবে তাদের জন্য শুরু হল বিশেষ ক্লাসের অবস্থা। এক থেকে বিশ এর মধ্যে যাদের রোল তারা পাবে সে বিশেষ ক্লাসে। আমি নিতান্তই গাধা টাইপ ছাত্র। বৃত্তি পাওয়ার কোন ভরসা নাই ,দেয়ারও ইচ্ছা নাই। তাও রোল বিশের মধ্যে থাকায় বাধ্য হয়েই বিশেষ ক্লাস চালিয়ে যেতে লাগলাম। ইদ্রিস স্যার হলেন ইংরেজি টিচার। ভয়ানক লোক। চোখের দিকে তাকিয়ে বলতেন , পারছস ?
স্যারের কথা বুঝতে না পেরে যখন হা হয়ে তাকিয়ে থাকতাম তখন গালে এসে পড়তো এক রাম থাপ্পর।
তাই ইদ্রিস স্যারের ক্লাসে ভয়ে প্রায় আধমরা অবস্থাই হয়ে যেত। একদিন সে ইদ্রিস স্যারের ক্লাসে ,সে ভয়ানক ইংরেজি ক্লাসে আসেন কবি স্যার।বললেন যে , ইদ্রিস স্যার ছুটিতে থাকায় কিছুদিন ওনি আমাদের ক্লাস নিবেন ।
সেই প্রথম কবিস্যারের সাথে দেখা। গোবেচারা লম্বাটে মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি মিলিয়ে
স্যারের চেহাড়াটা দেখে আমাদের ভয় কোথায় পালাল কে জানে ?
মহা হৈ চৈ জুড়ে দিলাম আমরা। সেই হৈ চৈ এর মধ্যেই স্যার ঘোষণা দিলেন ,তিনি কবিতা লিখতে পারেন।
হিমু পেছন থেকে বলল , মিথ্যা কথা বলছে।
আমি বললাম , কেন ?
: এ লোক কবি না ।
: কেন ?
: এর চুল ছোট ছোট ,মোছও নাই ।
আমাদের ক্লাসে রবীন্দ্রনাথের ছবি ছিল ,দেয়ালে আঁকা। হিমু সেদিকে আঙুল দিয়ে দেখাল আমায় ।
এদিকে সৈকত দাড়িয়ে গেছে। হাসি হাসি মুখ করে স্যারকে সে ব্ল্যাকবোর্ডে একটা কবিতা লেখার অনুরোধ করল।
স্যার ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে বড় বড় অক্ষরে কবিতার নাম লিখলেন , 'দাওয়াত' ।
সমস্ত ক্লাসে সবাই চুপ হয়ে আছি।
এমন সময় হিমু ফিসফিস করে পেছন থেকে বলল , দেখছিস ,নামটা পর্যন্ত মেরে দিয়েছে। জসীম উদ্দিনের নিমন্ত্রন হুবহু লিখবে দেখিস!
হিমুর কথা ভুল হয়েছিল ।স্যারের কবিতার প্রথম লাইন ছিল ,
তুমি যাবে ছেলে যাবে আমার সাথে
আমাদের বাহেরচর ! :p
পরে জেনেছিলাম স্যারের মাথায় নাকি একটু 'ছিট' ছিল ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮