somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে রাশিয়া বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার পাঁয়তারা করছে

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উরসা মেজর, ছবি প্রথম আলো।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার জাহাজ "উরসা মেজর" গত ২৪ ডিসেম্বর রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় প্রবেশ করে এবং পণ্য খালাসের জন্য বন্দরে নোঙর করার অনুমতি চায়, কিন্তু জাহাজটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকার কারণে বাংলাদেশ জাহাজটিকে বন্দের ভিড়ার অনুমতি প্রদান করা থেকে বিরত থাকে। এতে কিছুটা চটে যায় রাশিয়া, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে না দেওয়া হলে দেশ দুটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হবে, কিন্তু তবুও বাংলাদেশ নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকে। উপায় অন্তর না পেয়ে রাশিয়া সিদ্ধান্ত নিলো জাহাজটি ভারতের হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাস করে তা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে, কিন্তু সেখানেও আরেক সমস্যা, কারণ ওই সময়ে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী 'ডোনাল্ড লু' ভারত সফর করছিলেন এবং তিনি ভারতকে জাহাজটিকে ভারতের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার অনুরোধ করেন, যে কারণে জাহাজটি ভারতেও পণ্য খালাস করতে না পেরে সাগরেই ভাসতে থাকে। অবশেষ সিদ্ধান্ত হলো চীনের কোন এক বন্দরে পণ্য খালাস করে তা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে, কিন্তু চীন থেকেও পজিটিভ কোন রেসপন্স না পেয়ে জাহাজটি আবার রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। উল্লেখ্য যে, জাহাজটির আসল নাম "স্পার্টা ৩" সনদ নম্বর ৯৫৩৮৮৯২, কিন্তু রাশিয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিতে জাহাজটির নাম (উরসা মেজর) ও রং পরিবর্তন করে বাংলাদেশের বন্দরে নোঙর করার পাঁয়তারা করে। ভাগ্য ভালো যে বাংলাদেশ বিষটি আগেই টের পেয়ে যায় এবং জাহাজটিকে বন্দরে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা থেকে বিরত থাকে। তখন বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন রাশিয়ার প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছিলেন; অহেতুক বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করার জন্য। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে; বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র, এখন পর্যন্ত ইউক্রেন রাশিয়া ইস্যুতে বাংলাদেশে খুব বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েই আসছে, তবে উক্ত জাহাজটি যদি বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরে নোঙর করতে দেয়া হতো তাহলেই পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশকে রাশিয়ান তাবেদার রাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশের প্রতি খড়গ হস্ত অর্পণ করার সম্ভাবনা ছিল যা আমাদের জন্য মোটেও ভালো কিছু বয়ে আনতো না।

যা হোক উপরের এই বিষয়গুলো সবই হচ্ছে পুরোনো খবর, লেটেস্ট খবর হচ্ছে "উরসা মেজর' নামক জাহাজটি মূলত এতদিন সমুদ্রেই ভেসে বেরিয়েছে রাশিয়াতে ফেরত যায়নি। জাহাজটি আবার বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে চাচ্ছে কারণ এখন আর ডুনাল্ড লু দক্ষিণ এশিয়াতে নেই, এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু বাংলাদেশ এতে রাজি না হওয়াতে গত কাল রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আন্দ্রে রোদেনকো রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করেছে এবং তাকে চাপ দিচ্ছে জাহাজটিকে যেন বাংলাদেশের বন্দরে নোঙর করার অনুমতি দেয়া হয়। মি: রোদেনকো কামরুল হাসানকে আরও জানিয়েছেন- যেহেতু ৭১ এ রাশিয়া বাংলাদেশর পক্ষেই কাজ করেছে তাই তারা এখন বাংলাদেশকে তাদের পাশেই দেখতে চায়, তিনি হুশিয়ার দিয়ে বলেন- "এর অন্যথা হলে রাশিয়া বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে"।


রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান, ছবি প্রথম আলো।

মূল কথা- আসল কথা হচ্ছে, গরীব হলে কত জ্বালা!! আর আপনি নিরপেক্ষও থাকতে পারবেন না, তাহলে দু'পক্ষেরই অভিযোগের তীর আপনাকে বিদ্ধ করবে। চীন এবং ভারত এই দু'দেশই রাশিয়ার প্রতি কিছুটা নমনীয় কিন্তু রাশিয়া তাদের হুমকি ধামকি দিতে পরছে না, যত দোষ নন্দ ঘোষ। তারা যদি ভারত অথবা চীনকে অনুরোধ করে জাহাজটি তাদের বন্দরে নোঙর করে পণ্য খালাস করতো তাহলে উক্ত পণ্য বাংলাদেশ নিজেদের জাহাজ মাধ্যমে বাংলাদেশে আনতে পারতো ঝামেলা শেষ। এছাড়া বিষয়টা এমন নয় যে রাশিয়ার সব জাহাজেই নিষেধাজ্ঞা আছে, নিষেধাজ্ঞা বিহীন যে জাহাজগুলো আছে সেগুলো দিয়ে পণ্য পাঠালেই আর কোন সমস্যা থাকতো না, অহেতুক বাংলাদেশের মত পিচ্চি একটা দেশকে বিপদে ফেলার কোন মানে হয় না। খুব সম্ভবত রাশিয়া ছোট খাটো এমন রাষ্ট্রগুলোকে ট্র্যাপে ফেলে নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমান সময়ে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রে হামলার কথা চিন্তাও করা যায় না যা ইউক্রেনে রাশিয়া করছে, এটা করে সে নিজে তো ডুবেছে সাথে আরো কয়েকটারে ডুবানোর চেষ্টা করছে। হিটলারের পর পুতিনের মত এমন বিপজ্জনক রাজনীতিবিদ বর্তমান পৃথিবীতে একজনও নেই। গত দুই দশক ধরে সে নিজ দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে- গুম, খুন, দমন, নিপীড়ন, নির্যাতন যা করার তার সবই সে করছে নিজ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য, আর এখন শুরু করছে দেশের বাইরে ইউক্রেনে, নিজের রাজত্ব প্রসার করার জন্য। পুতিনের পরিণতি ভালো হবে না, ইতিহাসে কোন সৈরশাসকের পরিণতিই ভাল হয় নি।



তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, বিডি-নিউজ, সময় টিভি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটা প্রস্তাবনা

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০০



ব্লগে এখন একটা প্রতিযোগিতার আমেজ চলছে। এমন আমেজ অতীতেও এসেছে, ভবিষ্যতেও আসবে। সেই কথা মাথায় রেখেই আমার একটা প্রস্তাবনা আছে।

দীর্ঘ প্রায় এক দশকের ব্লগীয় আভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি, ব্লগারগণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ আমার বড় কন্যার জন্মদিন

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৪



আজ আমাদের বড় কন্যা পরীর জন্মদিন।
আমার দুই মেয়ে। ছোট কন্যার নাম ফারাজা তাবাসসুম। ফারাজা চালাক চতুর। কিন্তু বড় মেয়েটা সহজ সরল। দুটা মেয়েই আমার কলিজার টুকরা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফোরপ্লাস, পর্ব ১

লিখেছেন আমি সাজিদ, ০৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:০৩

হামিদ স্যার আমাদের এভাবে পাকড়াও করবেন, আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। প্ল্যানটা আমাদের মধ্যেই ছিল। আমরা চারজনেই হাতে হাত রেখে শপথ নিয়েছি, আমরা একে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত। এই ভরদুপুরে কে এই বিশ্বস্ততাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিযোগী কি বিচারক হয়!!!!!!~ সাময়িক পোষ্ট

লিখেছেন শেরজা তপন, ০৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ৮:৫৮


বিচারক প্যানেল নির্বাচন করুন। ~ কাল্পনিক_ভালোবাসা
গতকাল এই পোস্টের শেষের দিকে আমি ৫৮ নং মন্তব্যে বলেছিলাম (তাঁর সাথে আরো কিছু কথা যুক্ত করে দিচ্ছি);
শেরজা তপন বলেছেন: যার নামই প্রস্তাব করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার তৈরীর কোনো প্রতিযোগিতা করছেন?

লিখেছেন জটিল ভাই, ০৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:১৩

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ধর্মীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×