
ঘটনা ১: ২০১৭/১৮ মৌসুমে আর্সেনাল ক্লাবে একজন ফুটবলার ছিলেন, নাম তার David Dicks, সে তখনও অতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি । আর্সেনাল বনাম চেলসি ফাইনাল ম্যাচের ঠিক তিন দিন আগে অনুশীলন করতে গিয়ে David Dicks ইনজুরড হয়ে পরেন, বাধ্য হয়ে কোচ তাকে ছাড়াই স্কোয়াড ঘোষণা করেন। পরের দিন পত্রিকায় নিউজ বের হলো "Arsenal to play without dicks"

ঘটনা ২: আমি তখন আর্সেনালের পুরা ভক্ত, যে করেই হোক এমন একটি ফাইনাল ম্যাচ আমাকে সরাসরি দেখতেই হবে, তাই যেই ভাবা সেই কাজ, আমি ম্যাচের আগের দিন উত্তরা এয়ারপোর্টে গিয়ে লন্ডন-গামী এক বিমানে চেপে বসলাম। দীর্ঘ যাত্রার পর লন্ডনে নেমে সরাসরি মাঠের উদ্দেশ্যে ট্যাক্সি নিলাম, নতুন শহর ডান বাম কিছুই চিনিনা, ট্যাক্সি ড্রাইভারই আমার একমাত্র ভরসা। ড্রাইভার আমাকে মাঠের পাশেই নামিয়ে দিলো। নেমে আমি কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম! কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কোথা থেকে টিকিট কাটবো, কোন গেইট দিয়ে মাঠে প্রবেশ করবো ইত্যাদি। চারিদিকে প্রচুর মানুষ জনের ভিড় যার বেশীর ভাগই নারী। যেহেতু এই শহরে আমাকে আরও তিনদিন থাকতে হবে তাই ভাবলাম এখানকার স্থানীয় কারো সাথে পরিচিত হতে পারলে ভালো হয়। খেলা শুরু হতে এখনো বেশ খানিকটা সময় বাকি তাই আশে পাশে একটু ঘুরাঘুরি করতে লাগলাম। রাস্তার ও পাশেই দেখলাম এক কফি শপ কিন্তু প্রচুর ভিড়; আজকে ফাইনাল ম্যাচ বলে কথা দুর দূরান্ত থেকে প্রচুর নারী দর্শক ভিড় করেছে স্টেডিয়ামের আশেপাশে। আমি কফি শপে ঢুকলাম, কিন্তু বসার কোন জায়গা না পেয়ে মন খারাপ করে বেরিয়ে যেতেই দেখি বাম পাশে কোনার এক গোল টেবিলে দুইজন মেয়ে বসে হাসাহাসি করছে তাদের পাশের চেয়ারটি ফাঁকা রয়েছে, আমি দূরু দূরু বুকে টেবিলের পাশে গিয়ে Excuse me ladies, may I have a seat? বলতেই Yeah, sure বলে তারা দুজনেই সম্মতি প্রদান করিলো। আমি তাদের Thanks জানিয়ে বসে পরলাম। যদিও কফি খাওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না আমার উদ্দেশ্য ছিল মাঠের আশে পাশে বসবাস করে এমন কারো সাথে পরিচিত হওয়া যাতে বিপদ আপদে সহায়তা পেতে পারি। আমি এক কাপ Hot batch brew অর্ডার করার পর বসে রইলাম কিন্তু কফি আসতে বেশ সময় লাগছিলো লোক সমাগম বেশি হবার কারণে। যেহেতু একা তাই সঙ্গত কারণেই আমি একটু অপ্রস্তুত বোধ করছিলাম তাই এদিক সেদিক তাকা-তাকি করছিলাম যেন আমি কাউকে খুঁজছি, আর উক্ত দুই মেয়ের কথোপকথন শুনছিলাম। ফুটবল নিয়ে কথা হলেও তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল; খেলোয়ারদের শারীরিক গড়ন নিয়ে, কোন খেলোয়ার কত বেশী দৌড়াতে পারে, কার উচ্চতা কত, কোন খেলোয়ার কত বেশি হট.. ইত্যাদি নিয়ে। তাদের কথা-বার্তা শুনে বুঝতে পারলাম এরা দুজনেই বেশ ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তা না হলে এসব আলোচনা সাধারণত সবার সাথে করা হয় না। মেয়ে দুজনের মধ্যে একজনের মাথার চুল সোনা রঙের আরেক জনের হালকা লাল এবং বক্র টাইপের।
স্বর্ণকেশী তার বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে বললো- তুমি যাই বলো David Dicks এর চেয়ে হট খেলোয়ার এই পৃথিবীতে আর একজনও নেই, গোল করার পর ও কি-যে একটা লুক দেয় না, উফফ!! আমার একদম মরে যেতে ইচ্ছে করে!! Dicks ছাড়া আমি এই ম্যাচ একদমই উপভোগ করতে পারবো না।
আমি মনে মনে- খাইসরে!! এরা কি খেলা দেখতে এসেছে নাকি খেলোয়ার দেখতে এসেছে?
হালকা লাল এবং কার্লী চুলের অধিকারিণী বললো- গত সপ্তাহে আমি Nick কে ঘার ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছি, ওর সাথে আমি সবকিছু কাট আপ করে ফেলেছি। সারাদিন শুধু ফুটবল, ফুটবল আর ফুটবল করে, আমাকে একটুও সময় দেয় না, আচ্ছা তুমিই বলো, আমার থেকে কি ওর কাছে Soccer খেলাটাই বড় হয়ে গেলো?
স্বর্ণকেশী- কাজটি তুমি একদমই ঠিক করোনি, আফটার অল সে একজন প্লেবয়, আর আমি শিউর সে শীঘ্রই স্প্যানিশ লীগে চাঞ্চ পাবে।
কার্লী চুলের অধিকারিণী - কিন্তু এসব আমি একদমই পাত্তা দেই না..... ইত্যাদি আরও অনেক বিষয়েই তাদের মধ্যে কথোপকথন চলছে। আর আমি শুধু চুপি চুপি শুনেই যাচ্ছি।
ইতিমধ্যে আমার কফি চলে এসেছে, আমি কফিতে হালকা চুমুক দিয়ে মোবাইল টেপা শুরু করলাম আর দুজনের কথোপকথন শুনে তাদের সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা নেয়ার চেষ্টা করছি। স্বর্ণকেশী'র ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি উচ্চারণ শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে হয় ফ্রান্স, জার্মানি অথবা সুইজারল্যান্ড থেকে এসেছ কোন মতেই সে ব্রিটিশ নাগরিক নয়। নীল চোখের অধিকারিণী এই স্বর্ণকেশীকে চেলসির জার্সিতে একদম কিউটের ডিব্বা মনে হচ্ছে। বিশেষ করে তার ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি উচ্চারণগুলো আমার কানে যেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সুর বইয়ে দিচ্ছিলো, মেয়েটির কণ্ঠস্বর এবং উচ্চারণের ভাঙ্গি শুনে আমারও একদম মরে যেতে ইচ্ছে করছিল।
অপর দিকে হালকা লাল এবং কার্লী চুলের অধিকারিণী'র কথা-বার্তা শুনে মনে হচ্ছে সে একজন খাঁটি ব্রিটিশ, কথার মাঝে হেভি কানেক্টর এবং স্ল্যাং ল্যাংগুয়েজ ইউজ করে, নেটিভ ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলা এই মেয়ের ইংরেজি ঠিকমতো বুঝতে আমার ঘাম ঝরে যাচ্ছে। আর্সেনালের জার্সি পরিহিতা এই মেয়েটির আচার আচরণ এবং হাব ভাব দেখে বুঝাই যাচ্ছে সে একজন খাঁটি ব্রিটিশ নাগরিক। বেশ শক্তিশালী একজন মেয়ে মনে হলো, সে যদি আমাকে এক ঘুসি দেয় তাহলে আমি আর উঠে দাঁড়াতে পারবো না LMAO!!
ইতিমধ্যে আমার কফি অর্ধেকে নেমে এসেছে, আমি ভাবলাম এদের সাথে একটু কথা বলা দরকার, যেহেতু আমি এই শহরে নতুন এবং আরও তিন দিন থাকতে হবে তাই এদের সাথে একটু পরিচিত হতে পারলে কিছু ইনফরমেশন নিতে পারতাম। যদিও স্মার্ট ফোনের এই যুগে পুরো দুনিয়াই এখন হাতের মুঠায়, কারো সহায়তা ছাড়াই সবকিছু করা যায়, তবুও দু-একজনের সাথে পরিচিত হতে পারলে মন্দ হতো না। বিশেষ করে ওই স্বর্ণকেশী সুইসির সাথে একটু কথা বলতে পারলে দিলডা শান্তি পাইতো
যাই হোক, আমি মনে মনে চাচ্ছি মেয়ে দুজনের সাথে পরিচিত হতে; কিন্তু কি বলবো ঠিক বুঝে উঠে পারতেছিলাম না, আর এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম বিদেশ সফর, তাই কিছুটা নার্ভাসও ছিলাম বটে। তাছাড়া আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা আমার জন্য বেশ কষ্ট সাধ্য একটি বিষয়। ওরা যদি আমার কথা ঠিকমত না বুঝতে পেরে আমাকে জঙ্গি মনে করে অথবা ফ্লার্টার ভাবতে পারে ইত্যাদি ভাবছি... হুট করেই মাথায় এক দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো, বুদ্ধিটা মাথায় আসতেই আমি বেশ জোড়ের সহিত হুরুৎৎ.. হুরুৎৎ..... শব্দ করে কফি গিলতে শুরু করলাম। এমন জোড়ে শব্দ করে কফি জীবনে কেউ খেয়েছে কি না সন্দেহ। বেশ ভয়ানক শব্দ করে খফি খাচ্ছি। হুরুৎৎ...হুরুৎৎ... LOL
ব্রিটিশ মেয়েটি- Excuse me.. (দাঁড়িয়ে রাগান্বিত ভঙ্গিতে)
আমি, সুইসির দিকে তাকিয়েই আছি, মনে হয় যেন কিছুই হয় নি, কিছুই শুনিনি।
ব্রিটিশ মেয়েটি এবার- Hey.. I'm takin to you.
এবার আমি যেন একটু সম্ভিত ফিরে পেয়ে, ব্রিটিশ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে- হ্যাঁ আফা কি হইছে, কোন সমিস্যা?
ব্রিটিশ মেয়েটি- What r u duin, man!! r u okay ? (বেশ রাগের সহিত)
আমি- ছোরি আফা আমি ঠিক বুঝতে পারতেসি না আসলে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?
ব্রিটিশ মেয়েটি এবার দাঁড়ানো থেকে চেয়ারে বসতে বসতে বললো- May I know where r u from? (রাগ একটু কমেছে মনে হলো)
আমি- ও হেইয়্যা.. মুই তো বাংলাদেশ থন আইছি।
ব্রিটিশ মেয়েটি- তুমি কতদিন ধরে লন্ডনে এসেছো, আর তোমরা কি এভাবেই পাবলিক প্লেসে ভয়ঙ্কর শব্দ করে কফি পান করো?
আমি- না, আসলে আফা হয়েছে কি, আমার মাইগ্রেনের সমিস্যা আছে আমি নতুন কোন জায়গায় গেলে আমার ভয়ানক মাথা ব্যথা শুরু হয় আর তখন আমি করা হট কফি জোড়ে জোড়ে শব্দ করে খাই, এটা মূলত ফুসফুসের একটা ব্যায়াম বলতে পারেন। এতে ফুসফুস প্রচুর অক্সিজেন পায় এবং খুব দ্রুত ব্রেইনে অক্সিজেন আর ক্যাফেইন চলে যায় যে কারণে মাথা ব্যথা দূর হয়ে যায়।
ব্রিটিশ মেয়েটি- Sad.. I'm sorry to hear that, but this is just not right in public places, you know.
এবার সুইসি আমার উদ্দেশ্যে বললো - আমারও মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করে, কিন্তু আমি এমন ট্রিটমেন্টের কথা জীবনে শুনিনি, এটা কি কোন ডাক্তারের পরামর্শ?
আমি- না, এটা আমি নিজে নিজেই আবিষ্কার করেছি, ভাবছি এই পদ্ধতিটা লন্ডনের মানুষকে শিখিয়েই তারপর দেশে ফিরবো, আজকাল বহু মানুষই মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছে।
সুইসি- How funny!! তাহলে তো তোমাকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া উচিৎ, আর তোমার সম্পর্কে আমি জানতে আগ্রহী।
আমি- এই তো This and that... আর আমি আজই লন্ডনে প্রথম এসেছি, এসেই ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি স্টেডিয়ামে চলে এসেছি।
সুইসি- তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো তুমি আজই প্রথম লন্ডনে এসেছো আর এ শহরে তোমার পরিচিত কেউ নেই? (এ কথা বলে মেয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, হয়তো আমার কথা এরা বিশ্বাস করছে না)
বিভিন্ন বিষয়ে দুজনের সাথেই কথা হলো, একে অপরের নাম, ধাম জানা শোনা হলো। সুইসি মাঠ থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরের এক বাসায় থাকে এবং একটা ভার্সিটিতে Nuclear Weapon নিয়ে পড়াশোনা করছে সেই সাথে একটা ট্র্যাভেল এজেন্সিতে পার্ট টাইম জব করছে। সমস্ত সুইস নাগরিকদের যে কোন ধরণের পারমানবিক হামলা থেকে রক্ষা করাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আর ব্রিটিশ মেয়েটি আসলে তার বান্ধবী নয়, তার কাজিন, সে লন্ডন শহর থেকে বেশ দূরে থাকে। ইত্যাদি আরও কত কি।
যা হোক খেলা শুরু হওয়ার সময় হয়ে এসেছে, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম তিনজনেই একসাথে খেলা দেখবো, এবং খেলা শেষে এক সাথে ডিনার করে তারা আমাকে তিন দিনের জন্য একটা বাসা ঠিক করে দিবে ৩০০ ডলার দিয়ে।
কফি শপ থেকে বের হবার আগ মহুর্তে আমি সুইসিকে বললাম- May I have your phone number, sweetie?
সুইসি- Sure.. Sex! Sex! Sex! Free sex tonight!
আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে- WOW!!!
তখন ব্রিটিশ মেয়েটি বললো- Nao!! she means 666-3629
আমি- Oops!! Grrr!!
The End
================
#ফান পোস্ট।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




