ভোর রাত থেকেই ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে তৈরী হয়েছে অদ্ভুত এক মাদকতা। ঝিম মেরে বিছানায় পড়ে আছি, পাতলা কাঁথার আবরনে সারা শরীরে অদ্ভুত এক আলস্য। কেমন যেন সামান্য জ্বর জ্বর অনুভুতি। সকাল সাড়ে ছয়টা। বৃষ্টির শব্দ বিদীর্ণ করা এর্লাম ঘড়ির কর্কশ সর্তকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বললাম, ঘুমাবো।
চোখ বন্ধ করতেই দেখতে পেলাম, সারি সারি ঘন পাট ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে একটি নির্জন পাকা সড়ক। বড় এক বাদাম গাছের নিচে একটা মাটির ঘরের চা দোকান। আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামায় দোকানের ভেতরটা এখন অন্ধকার। আমি ভেতরের ধূষর অন্ধকার থেকে জানালা দিয়ে বাইরের প্রচন্ড সবুজ দেখছি। আশেপাশে কেউ নেই। চারিদিকে শুধু পাটক্ষেত আর ভেজা মাটির এক অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ।
হঠাৎ প্রচন্ড ঠান্ডা লাগল। চোখ মেলে দেখি আম্মা এসে কপালে হাত দিয়েছেন। বললেন, শরীরে তো জ্বর এসেছে? আজকে আর বের হবি?
আম্মার কথায় অদ্ভুত একটা আলসেমী ছিলো। বললাম - নাহ বের হবো না।
আম্মার হাত জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ মনে হয় ঘুমের মধ্যে অনেক প্রলাপ বকেছি। স্বপ্নে মনে হয় অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম। কিছু প্রিয় মুখ, কিছু স্মৃতি, লাফাঙ্গা জীবন, আহ!
একটা সময় জীবনটা অদ্ভুত বাউন্ডুলেপনায় আছন্ন ছিলো। প্রায়ই রাতে গাড়ীর তীব্র গতির মাঝে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতাম জীবন আর হারানো সময় কে। যত দ্রুত গতি, তত স্মৃতির গভীরে যাওয়া, তত জীবনের দর্শন খুঁজে পাওয়া। আমরা চিৎকার করে গাইতাম, আবৃতি করতাম, পানি পান করতাম। কারন পানির অপর নাম জীবন হলেও তা ভাগ্যিস জীবনের মত তিতা ছিলো না।
বিরহ, বিচ্ছেদকে চিরকাল আমরা বুড়ো আঙুল দেখিয়েছি। তবুও মাঝে মাঝে গভীর রাতে কোন নদীর পাড়ে তীব্র ঢেউয়ের কাছে আমরা পরাজিত হতাম। ঢেউয়ের কাছে কিছু শিখতে চাইতাম। কিছু জানতে চাইতাম! হয়ত ঢেউয়ের মাথায় সাদা ফেনায় খুঁজে বেড়াতাম নিজেকেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৩৪