বাংলাদেশ সরকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়া জানা মানুষের চাইতে 'হরিদাস পাল' বিষয়ে লেখাপড়া করে আমলা হওয়া মানুষের মতামতের গুরুত্ব বেশি। এর সাথে যুক্ত হয় রাজনৈতিক চাপে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা যার বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে 'চাঁদাবাজি'। পুলিশকে সামান্য একটি ভাগ দিয়ে পুরো চাঁদাবাজির বিষয়টি পুলিশের উপর চাপানো হয়। কিছু অসৎ শ্রেনীর পুলিশ কর্মকর্তার কারনে পুরো সিস্টেমটি এখানে অকার্যকর হয়ে পড়ে।
অতীতে এই বিষয়টিকে যখন আমরা সরকারের অব্যবস্থাপনা হিসাবে চিহ্নিত করেছি, তখন সেই বিষয়টি দেখা হয়েছে সরকারের শত্রু হিসাবে। বর্তমানেও তার ব্যতিক্রম নেই। সম্ভবত এটা ভবিষ্যতেও হবে। এই বিষয়ে সবচেয়ে ভালো ভুমিকা রাখে প্রতিটি সরকার পক্ষের দলান্ধ অ্যাক্টিভিস্টরা। কিছুদিন আগে একটি নৈতিক বিষয়ে এক শ্রেনীর অ্যাক্টিভিস্টদের শো ডাউন দেখে মনে মনে হাসি পেয়েছে আবার কষ্টও লেগেছে। দল আগে, দেশ নয়।
আজকে বাজারে প্রতিটি সবজির দাম মধ্যবিত্ত পরিবারের মোটামুটি ক্রয় ক্ষমতার শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। স্থানীয় বাজারে যদি কেজিতে ৫/১০ টাকা বেশি বিক্রি হয়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আঞ্চলিক বাজারের সাথে আমাদের স্থানীয় বাজারের পার্থক্য ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।
বাজার মনিটরিং হিসাবে সরকার যা করছে তা সত্যি বলতে অর্থহীন। আপনি শুধু বিভিন্ন খুচরা বাজারে ঘুরে ঘুরে পন্যের দাম নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না। এই মনিটরিং এর আওতায় একটি স্বতন্ত্র বিভাগ থাকা উচিত যারা পন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সকল সমস্যা চিহ্নিত ও প্রতিরোধে কাজ করবে। আপনাকে নজরদারীতে আনতে হবে এই সংশ্লিষ্ট সকল পাইকারী বাজার। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে স্থানীয় সিন্ডিকেট, রাস্তাঘাটের চাঁদাবাজী ও পরিবহন মালিকদের সিন্ডিকেটদের। এইগুলো বেসিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রসিডিউর। এই সব ব্যাপার আমার মত একজন মোটামুটি মুর্খ মানুষ বুঝতে পারলে সরকারের উপরে বসা মানুষগুলো কেন বুঝতে পারবে না?
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির ভুমিকা ছিলো প্রায় ৩৮%। সেটা এখন কমে এসে ১১% এ হয়েছে। আমাদের সরকারগুলো বিভিন্ন সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে জোর দেন, কিন্তু কৃষিজ পন্য এর উৎপাদন এর ব্যাপারে তেমন কোন এফেক্টিভ প্রকল্প না নেয়ায় প্রতি বছর বহু কৃষি পন্য আমাদেরকে আমদানী করে আনতে হয়। কৃষি মন্ত্রনালয়ের সুত্র অনুসারে, বাংলাদেশে মোট চাষযোগ্য জমি আছে ৭.২৯ মিলিয়ন হেক্টর। সরকারী হিসাবে চাষের আওতায় আসে নাই এমন জমির পরিমান হচ্ছে প্রায় ৪.৩১ লক্ষ হেক্টর। কিন্তু বেসরকারী হিসাবে দেখা যায় দেশের চাষযোগ্য জমির মধ্যে প্রায় ৪০% জমি এখনও কৃষির আওতায় আসে নাই বা কৃষিতে ব্যবহার করা হচ্ছে না। টাকার হিসাবে যার আনুমানিক একটা গড় হচ্ছে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত ২০ বছরে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
আমি আগেই বলেছি আমি কৃষি বিষয়ে কোন কর্মী নই। শ্রেফ আগ্রহের বসে কিছু পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে এই ভয়াবহ রেজাল্ট পেয়েছি। যারা বিশেষজ্ঞ তারা হিসাব করলে এই সংশ্লিষ্ট চিত্র আরো বাস্তবসম্মত এবং ভয়াবহ হতে পারে।
তবে দিনশেষে যা বুঝলাম, কৃষিপ্রধান একটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে এভাবে অবহেলা করা হয়—এমন উদাসীনতা হয়তো বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


