বহুদিন পর ব্লগে আসলাম। ইদানিং ব্যস্ততার কারনে ব্লগে আসার সুযোগ হচ্ছে না পাশাপাশি ব্লগে কিছু ব্লগারদের অদায়িত্বশীল আচরনের খবর যখন ফেসবুকে বসে দেখি বা বিভিন্ন সময়ে ইমেইলের মাধ্যমে জানি তখন মনটা বিষিয়ে উঠে। মনে হয় নিজের মুল্যবান সময় নষ্ট করে শিশুতোষ ঝগড়াঝাটি দেখার সুযোগ কোথায়?
গতকাল ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, পোষ্টের বিষয়বস্তু ছিলো ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থানের লক্ষনে আমাদের মত সাধারন ধর্মপ্রাণ মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে। আমি লিখেছিলাম,
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ধর্মীয় ও আদর্শগত উগ্রবাদ। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে যে ফসলটির বাম্পার ফলন হয়েছে তার নাম ধর্মীয় উগ্রবাদ – ধর্মীয় আদর্শ বা শিক্ষা নয়। দেশে যদি সত্যি ধর্মীয় শিক্ষা বা আদর্শের জাগরন হতো, সেটা স্বাগত জানাতে আপত্তি ছিলো না কিন্তু দেশে যা হচ্ছে সেটা বিপদজনক। এর ফলাফল ভোগ করবে শান্তি প্রিয় ধার্মিক মানুষরাই। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এই সকল উগ্রবাদী চিন্তার মানুষজন ও উগ্রবাদী রেজিম থেকে রক্ষা করুন।
আমার সেই পোস্টে আমাদের একজন সম্মানিত ব্লগার শেরজা তপন মন্তব্য করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদের থেকে তো ভাই আমার মনে হয় জাতীয়তাবাদ উগ্রবাদের জন্য পৃথিবীতে বেশি হত্যাকান্ড ঘটেছে। হিটলার, তৈমুর লং, হালাকু ও চেঙ্গিস খান, গ্রেট আলেকজান্ডার থেকে শুরু করে হাল আমলের পুতিন পর্যন্ত ( বেশীরভাগ জাতীয়তাবাদকে ধর্মের লেবাসে মুড়ে জনগণের বৃহৎ অংশকে সম্পৃক্ত করা হয়।)
সত্যি বলতে মোটা দাগে তপন ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে জাতীয়তাবাদী উগ্রবাদ দিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদকে মিনিমাইজ করা যাবে না। জাতীয়তাবাদী উগ্রতা সাধারণত রাষ্ট্রীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থাৎ তা রাষ্ট্রের সীমা, শাসক বা জাতিগত স্বার্থের মধ্যেই পরিচালিত হয়।
আমি তার মন্তব্যের জবাবে লিখেছিলাম ধর্মীয় উগ্রতা রাষ্ট্রের সীমা মানে না; এটি নৈতিক, আধ্যাত্মিক বা পরকালীন উদ্দেশ্যের নামে মানুষকে হত্যা, ঘৃণা ও ধ্বংসকে ন্যায্য মনে করাতে পারে। এটাকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা ক্ষেত্র বিশেষে ধর্মের নেই।
আমাদের আশেপাশে বহু মানুষ আছেন যারা আমার পোস্টটি পছন্দ করবে না কিন্তু আপনার মন্তব্যটি পছন্দ করবেন শ্রেফ এই কারনে যে আমি এখানে ধর্মীয় উগ্রতার কথা লিখেছি।
দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের জনগণ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মতাত্ত্বিকভাবে অশিক্ষিত একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখানে বাস করে। ধর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে যে বৈচিত্র্যহীন কাঠামোতে আমাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে, সেটা থেকে উদ্ধার করার মত বা ‘এনলাইটেন’ করার মত কোন নিঃস্বার্থ উদ্যোগ আমার বিগত বছরগুলোতে চোখে পড়েনি অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে। ফলে অনেকের পক্ষে এটা বুঝতে চাইলেও সম্ভব নয় যে – আমি মুলত এখানে ধর্মের পক্ষেই কথা বলেছি, তারা যে শান্তিপ্রিয় ধর্মের অনুসরন করতে চান, আমি সেটার পক্ষেই বলেছি।
অবশ্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের যে ব্যবহার আছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে এখন যদি ধর্ম নিয়ে কোন কারনে সমালোচনা করি, তাতে একটা শ্রেনী পোট্রে করার চেষ্টা করবে আমরা কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠির বিরুদ্ধে বলছি।
কারন বাংলাদেশে ধর্ম শুধু বিশ্বাস নয় বরং সামাজিক পরিচয় ও মর্যাদার অংশ। ফলে আপনি দেখবেন আমাদের অনেক অসৎ ব্যবসায়ীদের নামের আগে হাজী থাকে। হাজী নামটি তাদের প্রয়োজন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয় বরং সামাজিক মর্যাদা ও পরিচয়ের জন্য।
তাই আমাদের দেশে সুর্যের চেয়ে বালি বেশি গরম থাকে। ফলে ধর্মের নামে এখানে বিভ্রান্তি, রাজনীতি এবং উগ্রবাদ ছড়ানো অনেক সহজ। আপনি আজকে আমাকে ধর্মের শত্রু বা আমার কারনে আপনার ঈমান বিপন্ন বলে ডাক দেন – দেখবেন কেউ এখানে কোন যুক্তি খুঁজবে না, আবেগ দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে। যার পরিনতিতে আমার কপালে জুটবে গণপিটুনি অথবা কোন সো কল্ড ইসলামিক স্কলারের ফতোয়া অনুসারে গর্দানে কোপ।
আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু যিনি ইউরোপের একটি বিখ্যাত দেশ থেকে পড়াশোনা করেছেন, তিনি একজন ধার্মিক মানুষ। কিন্তু আমি রিসেন্টলি তার আচার ব্যবহারে এক ধরনের অদ্ভুত বিপদজনক গন্ধ পাই। অপুর্ব রায়ের ঘটনায় তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহবান জানিয়েছেন, কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য। এমনকি আমাদের সহপাঠি একজন হিন্দু ধর্মের অনুসারী তাঁর প্রতিও তার আচরন ভয়াবহ রকমভাবে বিদ্বেষমুলক হয়ে গিয়েছে।
আমরা সবাই জানি, নানা কারণে বাংলাদেশের সমাজে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। এই উগ্রবাদ থেকে প্রকৃত লাভবান হয় মূলত ধর্মের ব্যবসায়ীরা—যারা বিশ্বাসকে পুঁজিতে পরিণত করে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে। যদি বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক, আধুনিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের হাতে পরিচালিত হতো, তাহলে আমরা দেখতাম—এই দেশে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষা, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন, এবং আইনের দৃঢ় শাসন। ফলে ধর্মীয় উগ্রবাদের ঝুঁকি হ্রাস পেতো।
এখন আমরা প্রচন্ড ঝুঁকিতে আছি। অনেকেই ব্যাপারটি স্বীকার করবেন না কিন্তু যেদিন আপনার উপর আসবে, সেদিন আপনি টের পাবেন আসলেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
বিঃদ্রঃ যৌক্তিক যে কোন বির্তকে আপনাকে স্বাগতম অপ্রসাঙ্গিক যে কোন মন্তব্য মুছে দেয়া হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


