somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাদিদ
তুমি আমার রাতবন্দিনী। ধূসর স্বপ্নের অমসৃণ সুউচ্চ দেয়াল তুলে তোমাকে আমি বন্দী করেছি আমার প্রিয় কালোর রাজত্বে। ঘুটঘুটে কালোর এই রাজত্বে কোন আলো নেই। তোমার চোখ থেকে বের হওয়া তীব্র আলো, আমার হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করে এক অপার্থিব জ্যোৎস্না।

যাপিত জীবনঃ আমি আফগান হতে চাই।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে একটা পোস্ট চোখে পড়ল আফগানদের নিয়ে। সেখানে আফগানদের প্রশংসা করা করা হয়েছে। আফগানদের নিয়ে প্রশংসায় আমার কোন আপত্তি নেই তবে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের একটা নির্দিষ্ট অংশ যে মনস্তত্বের কারনে আফগান ও পাক বন্দনা করে সেটা অর্থহীন এবং হাস্যকর। ক্ষেত্র বিশেষে এই নির্দিষ্ট অংশের ভেতরে কিছু অংশ যে রাজনৈতিক আদর্শ গুপ্তভাবে ধারন করে সেটার কিঞ্চিত অসর্তক বহিঃপ্রকাশ।

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমাজ ব্যবস্থায় সততা, শৃঙ্খলা ও চারিত্রিক দৃঢ়তার যে সংকট তৈরী হয়েছে, সেটাকে পরাস্ত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মত কোন উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান হয় নি এবং ভবিষ্যতেও এটা হবার সম্ভবনা প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সমাজের একটা অংশের জন্য আফগান হবার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে, নারীর উপর ধর্মীয় বিধি বিধান আরোপ করা, ধর্ম ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা।

আপনি যদি বাংলাদেশীদের সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা আর নিঃস্বার্থ অতিথিপরায়ণতার ভিত্তিতে আফগান হবার স্বপ্ন দেখান তাহলে দেখবেন সবার জন্য ফরজ গোসল বাধ্যতামুলক হয়ে গেছে। একটি জনাকীর্ন সমাবেশ মুহুর্তেই আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

আমাদের সমাজের যে অংশ আফগান হতে চায় এবং যারা আফগানদের ঘৃণা করে তারা আফগানদের সংস্কৃতি, সমাজ সম্পর্কে খুব একটা ধারনা রাখে না। তারা দুইপক্ষই আফগানদের দেখে মুলত তালেবানদের চোখে।

তালেবান সংস্কৃতি একটি আরোপিত সংস্কৃতি যা আফগানদের উপর চাপানো হয়েছে। এর সাথে আফগানদের সংস্কৃতির কোন মিল নেই।১৯৮০–৯০-এর দশকে পাকিস্তানের সীমান্তের মাদ্রাসাগুলোতে কোয়েটা এবং পেশোয়ারে হাজার হাজার আফগান শরণার্থী শিশু পড়ত। সেখানে তাদেরকে পড়ানো হতো জিহাদি মনোভাব, পাকিস্থানীভাব ধারা সম্পন্ন পলেটিক্যাল ইসলাম এবং সামরিক প্রশিক্ষন।

আফগানিস্তানের বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হলো পশতুন। পশতুনরা সামগ্রিকভাবে রক্ষণশীল হিসাবে পরিচিত তবে এই রক্ষনশীলতা শুধু ধর্ম কেন্দ্রিক নয় বরং এটার মুল ভিত্তি ছিলো গোত্র ভিত্তিক বা সামাজিক ক্লাস্টার ভিত্তিক রক্ষনশীলতার চর্চা।

১৯৭৯–১৯৮৯ থেকে যখন রাশিয়া বা সোভিয়েত আফগান আক্রমন করে তখন এই পশতুন সমাজের বহু নেতা, কমান্ডার অত্যন্ত প্রভাবশালী ভুমিকা পালন করেছিলো। যেমন গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার – তার নিজস্ব একটি জিহাদী সংঘটন ছিলো।

সোভিয়েত যুদ্ধ আফগান সমাজকে ভেঙে দেয়ার পর যে বিপর্যয় তৈরী হয়েছিলো, সেই সময় এই পশতুনদের কালচারের উপর ভিত্তি করে মুলত সৃষ্টি হয়েছিলো তালেবান শাসন ব্যবস্থা। এটা আফগান কালচার নয়। তালেবান শাসন ব্যবস্থার মুল সৈনিকই ছিলো বা বাস্তবায়ন হয়েছিলো পাকিস্তানি মাদ্রাসায় বড় হওয়া শিশুদের একটি পুরো প্রজন্মের মাধ্যমে। আর ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থার এই মডেলকে বাজারজাত করার একমাত্র কৃতিত্ব – পাকিস্থানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসএস এর। এটা পাকিস্তানীদের একটি লং ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্প।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ভোটের বাজারে বা রাজনীতিতে তরুন প্রজন্মের ভোটের একটা কথা বলা হয় যারা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির প্রতি আগ্রহী। আপনি যদি একটু লক্ষ্য করে দেখেন তাহলে দেখবেন যে, এই দেশের আনাচে কানাচে ব্যাঙের ছাতার মত অনিয়ন্ত্রিত যে সকল মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে, সেখানে অধ্যায়নরত শিশু ও তরুনদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে যা শেখানো হয়েছে, সেটার একটা ইমপ্যাক্ট বা প্রভাব পড়ার সময় এই নির্বাচনে পড়েছে। এটাকে অনেকেই ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রতি দুর্বলতা বা সমর্থন হিসাবে চালিয়ে দিতে চাইছেন।

বর্তমান সময়ে পাকিস্তানের বিনিয়োগকৃত এই প্রকল্প এই পশতুনদের কারনেই বিপর্যস্ত। ফলে লক্ষ্য করবেন বর্তমান সময়ে পাকিস্তান আর আফগানদের মধ্যে দা কোমড়া সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আফগানদের যে প্রবল দৃঢ়তা, নিজের দেশের প্রতি মুল্যয়ন সেটা কিছুটা হলেও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে।

এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে তা কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে বিধায় মুল প্রসঙ্গেই ফিরে এলাম। আপনি লক্ষ্য করলে আরো দেখবেন যে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বিরোধীতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আইএসএসের লোকজন মোটামুটি স্বক্রিয় হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রচুর পাকিস্তানি আলেম ওলামারা আসা যাওয়া শুরু করেছেন। আপনি ধরে নিতে পারেন, বাংলাদেশে এই মুহুর্তে যদি ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক কোন দল ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের প্রচ্ছন্ন মদদে বাংলাদেশের বিভিন্ন মানহীন মাদ্রাসায় পড়া তরুন প্রজন্মদের বিতর্কিত মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে একটি নতুন ধারার উগ্রবাদী গোষ্ঠি তৈরী হবার সম্ভবনা তৈরি হবে। এদের কার্যক্রম কি হবে, এরা কিভাবে স্থানীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে – সেটা নিয়ে লিখতে গেলে তা হাইপোথিসিসের ভিত্তিতে লিখতে হবে।

এই ধরনের প্রেডিকশন ভিত্তিক হাইপো থিসিস অনেকেই পছন্দ করবেন না বরং সেটাকে একটি গোষ্ঠির প্রতি বিদ্বেষ হিসাবে প্রচার করার সুযোগ পাবে। তাই আমি সেদিকে যাচ্ছি না।

ফলে কেউ যখন আফগানদের গুনগান গায়, সেটা তাঁরা গাইতে পারে। তাঁরা আফগানদের প্রশংসা করুক প্রকৃত আফগান সংস্কৃতি দিয়ে, তালেবানী শাসন ব্যবস্থা দিয়ে নয়। আফগানিস্তানের পরিচিত হোক নিঃস্বার্থ অতিথিপরায়ণতার জন্য, সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, দেশপ্রেম আর উদারতার জন্য যা ধর্ম হিসাবে ইসলামের আদর্শের সাথে যায়, ভাবধারার সাথে যায়। আমাদের যেমন লালন ফকির আছেন, তেমনি আফগানদের আছে মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী। তিনি লিখেছেন, স্রষ্টার কাছে পৌঁছানোর অজস্র পথ আছে। তার মাঝে আমি প্রেমকে বেছে নিলাম।

তিনি আরো লিখেছেন,
ওয়াঈযান কেইন জেলভে দর মেহরাব ও মিম্বার মি-কোনান্দ, চুন বে খালওয়াত মি-রাভান্দ, আন কার-এ দিগার মি-কোনান্দ

এর অর্থঃ মসজিদ-মিম্বারে যারা ধার্মিক সাজে আলোক ছড়ায়,
একাকী হলে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজ করে।

আফগানিস্তানের পরিচিত হোক - এই মাওলানা রুমির জন্য, তালেবানদের জন্য না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০২
১৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×