somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খিলাফত

২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন আগে এলাকায় দেখলাম বিশাল এক মাহফিল হচ্ছে। শাহাদাতে কারবালা উপলক্ষে আলোচনা ও ওয়াজ মাহফিল। ঢাউস সাইজের মাইকের কল্যানে ঘরে বসেই পরিষ্কার শোনা যায়। হুজুর সুললিত কণ্ঠে কারবালার বিষাদময় কাহিনি বর্ননা করছেন। যান্ত্রিক জীবন যাত্রায়, বিবিধ যন্ত্রের অত্যাচারের মাঝে মাইকের যন্ত্রনা সহ্য করার বিবর্তনিক অভ্যাস আমরা আয়ত্ব করে ফেলেছি। তাই সহজেই মনকে মাইকের কথা শোনা থেকে বিরত রাখতে বেগ পেতে হয় না। শব্দ গুলো কানের আশে পাশে ভেসে বেড়ায় কিন্তু ঢুকতে পারে না। এটা বাধ্য হয়েই করতে হয়, কারন ওয়াজ গুলোতে বেশিরভাগই কুরআন এর আয়াত কোট করা হয়। দেখা গেল আমি প্রকৃতির ডাকে টয়লেটে গেলাম, সাড়া দিচ্ছি আর ওদিকে হুজুর সুরা বাকারার ২য় আয়াত সুর করে পড়ছেন। এই অবস্থায় নিশ্চয় আমি তা শ্রবন করতে পারি না। তাই শব্দ গুলো ভাসিয়েই রাখি। মাথায় ঢুকতে দেই না। তার পরেও শ্রবন যন্ত্রের সীমানা প্রাচীরের কাটা তারের বেড়ার ওপরে ফেলানির লাশের মত কিছু শব্দ আছড়ে পড়ে ঝুলতে থাকে। যা কানে না ঢুকিয়েও পারা যায় না। তেমনি একটা গোটা বাক্য আছড়ে পড়লো।
“আহলে বাইয়াতের” প্রতি মহাব্বত রাখাও ইমানের অংশ।”
বাম কান দিয়ে ঢুকে সরা সরি মস্তিষ্কে আঘাত। কিছু দিন ওলট পালট চিন্তা আর এদিক ওদিক পৃষ্ঠা উল্টিয়ে, জীবিকার শ্রাদ্ধঘটিয়ে আর্থিক লোকসান গুনে, এখন প্রসব বেদনা অনুভূত হওয়ায় লিখতে বসেছি।
“আহলে বাইয়াত”
এ ব্যপারে শিয়া, সুন্নি মতবাদ দুই ভাগে বিভক্ত।তবে দুই পক্ষই আলী (রাঃ) এর বংশ ধরেরা যে “আহলে বাইয়াতের” অন্ত র্ভুক্ত এ ব্যপারে একমত। সুতরাং তাদেরকে মুহাব্বত করা আমাদের ইমানি দ্বায়িত্ব যদি না তারা আল্লাহ ও রাসুলের বিধান থেকে দূরে সরে না যান। সেক্ষেত্রে ইমাম হাসান ও হুসেইন (রাঃ) এর শেষ বংশধর পর্যন্ত, কারও উপরি কোন পক্ষই এই অপবাদ দিতে পারে নি। তারা মুহাব্বত ও সম্মানের যোগ্যই ছিলেন। কিন্তু দুখ্যজনক হলেও সত্য যে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এর মৃত্যুর পর তাদের প্রতি মুহাব্বত ও সম্মান তো বহু দূর, প্রান পর্যন্ত হরণ করা হয় অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে। শিয়া, সুন্নি দু পক্ষই এক্ষেত্রে ইয়াযিদকে দায়ী মনে করে, ঘৃণা প্রদর্শন করে। ইয়াজিদকে খিলাফতে বসানো নিয়ে মুসলিম উম্মার মতামত বিভিন্ন এবং পরস্পর বিরোধী। সুন্নি পক্ষের কেউ কেউ আবার হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এর সিদ্ধান্তকে নিয়ে, তাকেও দোষারোপ করে থাকে। ইয়াজিদের বাবা মুয়াবিয়া (রাঃ) এর “নিয়ত” নিয়ে সন্দেহ, আমরা মুসলমান হিসাবে করতে পারি না। যেহেতু তিনি সাহাবা কেরামদের অন্তর্ভুক্ত। তাই মনের সুপ্ত ব্যপার আল্লাহই ভালো জানেন এবং তিনি যার যার হিসাব তার তার কাছ থেকেই নিবেন। আমরা শুধু উনার পরবর্তিতে খিলাফতের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখতে পারি। কারন বাংলাদেশে কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী, কিছু রাজনৈতিক দল আর কিছু তথাকথিত অরাজনৈতিক দল গুলো মুসলিম খিলাফত ব্যবস্থাকেই রাষ্ট্র পরিচালনা করার বা রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচন করার মডেল হিসাবে, কেউ কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ কেউ গোপনে মনে করে। তাই এই মডেল টা আমাদের বুঝতে হবে।
উমাইয়া খিলাফত ইসলামের প্রধান চারটি খিলাফতের মধ্যে দ্বিতীয় খিলাফত। এটি উমাইয়া রাজবংশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফ্‌ফানের খিলাফত লাভের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবার প্রথম ক্ষমতায় আসে। তবে উমাইয়া বংশের শাসন মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান কর্তৃক সূচিত হয়। তিনি দীর্ঘদিন সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন। ফলে সিরিয়া উমাইয়াদের ক্ষমতার ভিত্তি হয়ে উঠে এবং দামেস্ক তাদের রাজধানী হয়।
উমাইয়ারা বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখে। ককেসাস,ট্রান্সঅক্সানিয়া, সিন্ধু, মাগরেব ও ইবেরিয়ান উপদ্বীপ (আল-আন্দালুস) জয় করে মুসলিম বিশ্বের আওতাধীন করা হয়। সীমার সর্বোচ্চে পৌছালে উমাইয়া খিলাফত মোট ৫.৭৯ মিলিয়ন বর্গ মাইল (১,৫০,০০,০০০ বর্গ কিমি.) অঞ্চল অধিকার করে রাখে। তখন পর্যন্ত বিশ্বের দেখা সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ ছিল। অস্তিত্বের সময়কালের দিক থেকে এটি ছিল পঞ্চম।
আমরা মুসলমানরা, উমাইয়া খিলাফতের এই বিপুল স্থলভাগ জয় করাকে অত্যন্ত গর্বের সাথে, ইসলামের বিজয় হিসাবে বর্ননা করে থাকি।
কিন্তু যে খিলাফতের খলীফা, ইয়াজিদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন নবী (সাঃ) এর প্রিয় নাতি ইমাম হোসেন (রাঃ)। যে খিলাফত এত বড় এক ফিতনার জন্ম দিল, রাসুল (সাঃ) এর কলিজার টুকরায় ছুরি চালালো, সেই খিলাফত কিভাবে, কোন যুক্তিতে ইসলামী খিলাফত থাকে !!!! আর কিভাবেই বা তা নিয়ে আমরা মুসলমানরা গর্ব করতে পারি??!!!!! যেখানে ““আহলে বাইয়াতের” প্রতি মহাব্বত রাখাও ইমানের অংশ” হিসাবে আমরা ইমান হাসান ও হোসেন (রাঃ) কে মহব্বত ও করছি আবার ইমাম হুসেইন (রাঃ) এর হত্যাকারী খিলাফতকে নিয়েও গর্ব করছি!
এই পয়েন্ট এ এসে মুসলিম উম্মার ফিস ফিসানি শুরু হয়ে যায়।
যা হয়ে গেছে তা অতীত। অজথা অতীত ঘেঁটে মুসলিম উম্মার মাঝে ভাঙ্গন ধরানো ঠিক হবে না। যেন মুসলিম উম্মাহ কত শক্তি শালীভাবে কাধে কাধ মিলিয়ে আজো টিকে আছে!! আজকের মুসলিম উম্মার এই হালের পেছনে নিজেদের দোষ ত্রুটি বিশ্লেষণ না করাটাও একটা বড় এবং প্রধান কারন, যা আমাদের মনে অহেতুক অহ ংকারে ভরে রেখেছে।
এ যেন দেখেও না দেখার ভান। আর কত দিন নড়বড়ে মুসলিম উম্মাহর ভাঙ্গন ঠেকানোর নামে আমরা সত্যকে অস্বীকার করবো! ইতিহাসের এই বাকে এসে আলোচনা করতে বিব্রত বোধ করবো!
অনেক মুসলমানই এই সময়ের সব ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয়। যারা অবগত তাদের কিছু অংশ এসব ব্যপার জানাতে চান না “উম্মাহর ভাঙ্গন রোধে”, আর কিছু অংশ জানাতে চান না তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্তির ভয়ে। কারন এখান থেকেই যাত্রা শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদী “রাজনৈতিক ইসলামের”।যেখানে ইসলামের মূল বিষয়ের চেয়ে “রাজনীতি” বা রাজ্য দখল করাটাকে জিহাদের নামে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
পাকিস্থানের কবি ও দার্শনিক (এবং আল্লামা) ইকবালের একটি কবিতার প ংতি আমরা অনেকেই শুনেছি, “ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যাঁয় হার কারবালা কে বাদ।”
কারবালার পর যে কোন ইসলাম জিন্দা হয়েছে সেটাই একটু বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টাই না হয় করা যাক।
(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×