বাঙালী নারীর জাতীয় পোষাক শাড়ী। অদূর ভবিষ্যতে এ শাড়ী জাতীয় পোষাক হিসেবে তার মর্যাদা ধরে রাখা সম্ভবপর হবেনা। শাড়ীর জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে বোরকা-হিজাব। রাস্তায় বেরুলে যে পরিমান বোরকা দেখা যায় তা কয়েক বছর আগেও এমনটা দেখা যেতোনা। অনেককে বলতে শুনেছি বোরকা আজকালকার একটা ফ্যাশনএ পরিণত হয়েছে। কিন্তু বোরকা পরিহিতেরা দাবী করে তারা ইসলাম মানছে, পর্দা করছে। যদিও তাদের এ দাবীর পক্ষে ইসলামের শক্ত কোন দলিল নেই।
প্রাক-ইসলামের কথা বাদ দিলাম। ইসলামের শুরুতেও পর্দা প্রথার তেমন গুরুত্ব ছিলনা নবী পত্নীরাও পর্দা করতোনা। পর্দাটা চালু করার তাগিদ নবী মুহাম্মদেরও ছিলনা ছিল উমরের। তিনি চাপ প্রয়োগ করেছিলেন পর্দার বিষয়ে আয়াত নাযিল করার জন্য।
নবীর পত্নীগন রাতের বেলায় প্রাকৃতিক প্রয়োজনে খোলা ময়দানে যেতেন। আর উমর নবীকে বলতেন, আপনার সহধর্মিনীগনকে পর্দায় রাখুন কিন্তু রাসূল তা করেননি। একরাতে ইশার সময় নবী পত্নী সাওদা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘকায়া। উমর তাকে ডেকে বলেন, হে সাওদা আমি কিন্তু আপনাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার আগ্রহে তিনি এ কথা বলেছিলেন। তারপর আল্লা পর্দার হুকুম নাযিল করেন।
সুত্রঃ বুখারী শরীফ (প্রথম খন্ড), হাদিসঃ ১৪৮)
নবী যেমন ইসলাম প্রচারের জন্য উমরের কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন আল্লাও তাই। সে জন্য নাযিল করতে বাধ্য হলেন পর্দার আয়াত। সেটা অন্য কোন কারণে নয় উমরের মুখ বন্ধ করার জন্য।
তোমাদের যদি নবী পত্নীদের কাছ থেকে কোন জিনিস পত্র চাইতে হয় তাহলে পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নিও এটা তোমাদের ও তাদের অন্তরকে পাক সাক রাখার জন্য অধিকতর উপযোগী।
(সুত্রঃ সূরা আল আহযাব, আয়াতঃ ৫৩
হযরত আনাস্ ইবনে মালিক হতে বর্নিত, তিনি বলেন যে, যখন রাসূল যয়নাব বিনতে জাহশ-কে বিয়ে করেন তখন তিনি জনগনকে ওলীমার দাওয়াত করেন। তারা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বসে গল্প গুজবে মেতে উঠে। রাসূলুল্লা উঠবার জন্য তৈরী হলেন, কিন্তু তখনো তারা উঠলোনা। তাদেখে তিনি উঠে গেলেন এবং কিছু লোক তার সাথে সাথে উঠে গেল। কিন্তু এর পরেও তিনজন লোক বসে থাকলো। রাসূল বাড়ীতে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে আসলেন। কিন্তু দেখলেন যে তখনো লোকগুলো বসেই আছে। এরপর তারা উঠে চলে গেল। আমি তখন এসে নবীকে খবর দিলাম যে, লোকগুলো চলে গেছে। তখন তিনি এসে বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করলেন। আমিও তার সাথে যেতে লাগলাম কিন্তু তিনি আমার ও তার মধ্যে পর্দা ফেলে দিলেন। তখন আল্লা এ আয়াতটি অবতীর্ন করেন।
(সুত্রঃ তাফসীর ইবনে কাসীর, ১৫তম খন্ড, পৃষ্টাঃ ৮৪১)
কোরানে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে, পুরুষের উত্ত্যক্ততা থেকে রক্ষা পেতে চাদর শুধু নিজের উপর টেনে নিলেই নারীরা রক্ষা পাবে।
হে নবী তুমি তোমার সঙ্গী, মেয়ে ও সাধারণ মোমেন নারীদের বলো তারা যেন তাদের চাদর নিজেদের উপর টেনে দেয়, এতে করে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তাদের কোনো রকম উত্ত্যক্ত করা হবেনা।
(সুত্রঃ সূরা আল আহযাব, আয়াতঃ ৫৯)
উপরোক্ত আয়াতে উত্তক্তের পাশা পাশি চেনার বিষয়ও উল্লেখ আছে। কিন্তু কেউ যদি বোরকা পরে মুখ খোলা রাখে তাকে ভত্সনা করে নারীরাই বলে, সাইন বোর্ড খোলা রাখছে। প্রকৃত কে শরিয়া সম্মত অার কে শরিয়া বহির্ভূত এটা জানার জন্য গবেষক হতে হয়না।
পর্দা করা কিংবা হেফাজত করা যে শুধু নারীর জন্য নির্ধারিত তা কিন্তু নয়। যেসব ধর্ষক আজ ধর্ষনের কারণ হিসেবে নারীর পর্দাকে দায়ী করছে সূরা নূরের ৩০ নাম্বার আয়াতে তাদের দৃষ্টি এবং লজ্জাস্থানতে হেফাজত করতে বলেছে। তারা কি তা করতে পেরেছে?
তাদেরতো নারীর হাত পা দেখলেই উত্তেজনা উঠে যায়, নিজেদেরকে ঠিক রাখতে পারেনা। নিজে রাতের ঘুম কোরবান করে সানি লিয়নের ছবি দেখবে আর সকালে উঠেই পর্দার উপর বড় বড় লেকচার ছাড়বে, দেশের অবস্থা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য পর্দা কে দায়ী করবে।
আল্লা বলেছেন, তারা(নারীরা) যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না বেড়ায় তবে তার যে অংশ খোলা থাকে তারা যেন তাদের বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখে।
(সুত্রঃ সূরা আন নূর, আয়াতঃ ৩১)
বর্তমানে প্রকৃত ব্যপার ভিন্ন, বক্ষদেশকে সুসজ্জিত করেও মাখায় হিজাব ঠিক রাখা হয়। যেন মাথাটাই যত নষ্টের মূল। আর সুসজ্জিত হবার বিষয়টা মার্কেটে কসমেটিক্সের দোকান কিংবা বিউটি পার্লার গুলোতে গেলে টের পাওয়া যায় বোরকা জেনারেশনের নারীরা সৈান্দর্য প্রদর্শন করে কিনা।
অনেক ডিজাইন রঙের বোরকা-হিজাব ভেসে বেড়ায় রাস্তায় রাস্তায়। কারো কারো বোরকার ঝুল এতো বেশী হয়যে মনে হয় রাস্তা পরিস্কারের লিজটা সিটি কর্পোরেশন তাকেই দিয়েছে।
এ সম্পর্কে নবী বলেছেন, মেয়েরা তাদের আঁচল একহাত নিচে ঝুলিয়ে দিবে এর বেশী করবেনা।
(সুত্রঃ তিরমিযি শরীফ, ৪র্থ খন্ড, হাদিসঃ ১৭৩৭)
এমনকি, ঈদের নামাযে অংশ গ্রহনকারী মহিলাদের যদি শরীর ঢেকে যাওয়ার কাপড় না থাকে তারা যেন সাথী মহিলার অতিরিক্ত কাপড় জড়িয়ে যায়।
(সুত্রঃ সূনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ১১৩৬)
নারীরা সব স্বাধীনতা হঠাত্ করে নবী কিংবা আল্লা কেউই কেড়ে নিতে পারেনি। কারণ প্রাক ইসলামে এর চাইতেও প্রচুর স্বাধীনতা ভোগ করতে নারীরা। এমনকি স্বল্প বসনায় কাবা শরীফ তাওয়াফও করতো।
আল্লা যতটুকু বন্ধী করেছে, নবী তার চাইতে বেশী আর নবীর উম্মতরা পুরোপুরি।
পর্দার কথা কোরান হাদিসে যতবার এসেছে। বার বার চাদর, ওড়না, কাপড় এসব বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে কিন্তু বাস্তবে আসছে বোরকা-হিজাব যাতে তোমাকে চেনা যাবেনা তুমি কে কিন্তু তোমার সৌন্দর্য ঝরে ঝরে পড়বে, পুরুষ সেটা অবলোকন করবে।
আমরা বাঙালী শাড়িকে হিন্দুয়ানী, শরিয়া বিরোধী বলে অনেক মোমিনা তা বয়কট করেছে কিন্তু তারা যে বোরকাটি পরে এটা কি শরিয়া সম্মত?