সিলেবাস তৈরির কাজটি খুব নির্দোষ ও অরাজনৈতিক কাজ নয়।আমরা কী শিক্ষা দিতে চাই তার সাথে সম্পর্ক আছে আমাদের ‘জাতি,রাষ্ট্র ও নাগরিক’ কল্পনা-বাসনার।শিক্ষা,সিলেবাস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ideological state apparatus বা মতাদর্শ তৈরির কারখানা।আমাদের মনজগত তৈরির পেছনে এদের ভুমিকা প্রবল।
ইংরেজির ছাত্র ও ‘মাস্টারি’র সুবাদে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের সিলেবাস নিয়া কিছু জানাশুনা আমার হইছে।এ বস্তু নিয়া আমার আক্ষেপের অন্ত নাই।জগতের সবকিছুকে প্রয়োজনীয় ঠাওরানোর প্রয়োজন নাই।অনার্স লেভেলের ইংরেজি সাহিত্যের সিলেবাসটুকুর বেশীরভাগই ‘আমাদের জন্য অপ্রয়োজনীয়।এই সিলেবাসে পইড়া ইংরেজিতে পড়ছি বইলা গরিমা করন ছাড়া আজকাল আর কিছু হয়না।নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো তো ইংরেজি বিভাগ উঠাইয়া দেয়ার প্রস্তাব করছিলেন (On the abolition of the English Department)আমি এতদুর কইতে পারবোনা,রুটি-রুজির প্রশ্ন তো।তবে অনার্স লেভেলের ‘ইংরেজি সাহিত্যে’র সিলেবাসের ব্যাপক সংস্কারের পক্ষে আমি। ৪ বছরের ইংরেজি অনার্স কোর্স নানা আজিনিস কুজিনিস দিয়া ভরা।(দেখুন থার্ড ইয়ারের ঢাউস গাজ্বলা সিলেবাস)।তার উপর মাষ্টারেরা কিছু বুইঝা উঠার আগেই দুইদিন পর পর সিলেবাস চেইঞ্জ করে মহান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।নম্বর বণ্টন,পরীক্ষা পদ্ধতি ও এই ব্যপারে শিক্ষকদের ক্ষমতায়নের নানামুখি বাহারি পরীক্ষা-নীরিক্ষার জাতীয়বিশ্ববিদ্যালয়ী প্রতিভায় চোখ অন্ধ হইয়া যাইবার যোগার।বর্তমান সিলেবাস না ইংরেজদের বা ইংরেজি সাহিত্যের উপকার করতে পারে,না আমাদের বা বাংলাসাহিত্যের।তবে ভুয়া আত্নমর্যাদাবোধ তৈরি করতে পারে। ইংরেজি বিভাগগুলো ‘ইংরেজি সাহিত্য’ না পড়াইয়া ‘ইংরেজিতে সাহিত্য’ পড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারে।যেমন, ইংরেজি কবিতার সিলেবাস তৈরির সময় বাংলাকবিতাও পাশাপাশি রাখা উচিত,তুলনামুলক বিশ্লেষণের জন্য।মাঝে মাঝে মনে হয়, এমন ব্যবস্থা হইলে ভাল হইত যে, ইংরেজি সাহিত্য বা ইংরেজিতে অনুদিত সাহিত্য নিয়া শিক্ষার্থীরা বাংলায় উত্তর লিখবো আর বাংলা সাহিত্য নিয়া লিখব ইংরেজিতে। এতে ক্রিটিকাল ফ্যাকাল্টি ডেভেলপ করতে পারত দুই ভাষাতেই। একই সাথে বাংলা উপন্যাস ও ইংরেজি সহ অন্যান্য ভাষার কিছু উপন্যাসকে পাশাপাশি পড়ানোর ব্যবস্থাও তো করা যাইতে পারে/পারত।তাছাড়া অনুবাদ নিয়া একটা কোর্স থাকা উচিত। যেখানে বাংলাসাহিত্যের কিছু নির্বাচিত অংশরে ইংরেজিতে,আর ইংরেজির কিছু অংশকে বাংলায় রুপান্তর করতে হবে,সাথে অনুবাদের কিছু তত্ত্বও পড়ান দরকার।তাছাড়া বিভিন্ন লিটারেরি টেক্সটের ফিল্ম এডাপ্টেশান দেখানোর পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি নানা মুভিকে টেক্সট হিসেবে ‘পাঠ’ করা ও করানো যেতে পারে,প্রাতিষ্ঠানিকভাবে।
বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগগুলানে কেউ পিএইচডি করতে গেলে তাকে থিসিস ইংরেজিতে লিখতে হবে এটাতো খুবই স্বাভাবিক,কিন্তু মজাটা হইল,বাংলাসাহিত্যের সাথে বা এতদ অঞ্চলের কোন আর্ট ফর্মের বা ইতিহাসের সাথে কোন তুলনামুলক আলোচনা করতে চাইলে একেক জন মুখ ভারী কইরা ফেলেন,বা রাজভাষা বা সাহিত্যের সাথে কি একটা অন্যায় হইবার অনাগত সম্ভাবনায় তারা আঁতকে উঠেন।(যদিও কিছু ব্যতিক্রম তো আছেই)।আমাদের এই কলনিয়াল মাইন্ডসেট কবে চেঞ্জ হবে?
বাংলাদেশের ইংরেজিবিভাগ গুলোকে বাংলাদেশেরই ইংরেজিবিভাগ হইতে হবে।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইংরেজি বিভাগ গুলোকে কি তাদের জাতীয় ইতিহাস,সংস্কৃতি ও সাহিত্যের পর্যালোচনা,নির্মাণ ও পুননিরমানের এর চাহিদাকে মাথায় রেখে সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবেনা? ‘দিব আর নিব ,মিলাব মিলিব’ এই নীতির বহিঃপ্রকাশ ইংরেজি বিভাগের সিলেবাসে কেন দেখবনা?বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগের সিলেবাস নিয়া(পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কেই খাটে কথাটা)পাবলিকলি অনেক আলোচনা দরকার।