বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে একবিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত রাজনৈতিক দর্শন দুটি ধারায় বিভক্ত। একটিকে বলা হয় অ্যাংলো- আমেরিকান বিশ্লেষণী ধারা(Analytical Philosophy); আরেকটি হোল কন্টিনেন্টাল দর্শনের ধারা(Continental Philosophy)।
রাজনৈতিক দর্শনের অ্যাংলো আমেরিকান ধারার প্রধান ব্যক্তিত্ব জন রলস (1921 – 2002)।আমেরিকার একাডেমিক জগতে এই ধারা আজকাল রলসিয়ান ধারা নামেও পরিচিত। John Rawls সবচেয়ে প্রভাবশালী যে গ্রন্থ তার নাম A Theory of Justice(1971)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নৈতিক দর্শনের সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্রন্থ এটি এবং এটিকে বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক দর্শনের অবশ্যপাঠ্য বই হিসেবে।সমকালীন রাজনৈতিক দর্শনকে তিনি আমুল পালটে দিয়েছেন এবং ন্যয্যতার দর্শন নিয়ে তাত্ত্বিকদের মধ্যে নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন।রলসের তত্ত্ব ও পদ্ধতি বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছে অমর্ত্য সেনের “The Idea of Justice” বইটিকে যেটির বাংলা অনুবাদ ‘নীতি ও ন্যয্যতা’ নামে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
অপরদিকে, রাজনৈতিক দর্শনের কন্টিনেন্টাল ধারার প্রধান চিন্তকগণ হলেন জাক রঁসিয়ের (Jacques Rancière) , আর্নেস্তো লাকলাও( Ernesto Laclau) ও জর্জিও আগামবেন( Giorgio Agamben) ।উইলিয়াম কনলি ও জুডিথ বাটলারও কন্টিনেন্টাল ধারার অন্তর্ভুক্ত।
যা হোক, ফরাসি দার্শনিক Jacques Rancière ( 1940)মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক লুই আলথুসারের সাথে মিলে রচনা করেন “Reading Capital” বইটি।যদিও ১৯৬৮ সালে প্যারিসের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে শিক্ষক আলথুসারের সাথে মতভিন্নতার ফলে তার রাজনৈতিক চিন্তা ও আগ্রহ মোড় নেয় একটু ভিন্ন দিকে। নিষ্পেষিত ও দরিদ্র শ্রেণীর জ্ঞানজগত নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। দার্শনিকদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে দরিদ্রদের ভুমিকা নিয়ে তিনি লেখেন তার বিখ্যাত বই “The philosopher and his poor(1983)”. তার দুটি খুব গুরুত্বপুর্ণ বই The Politics of Aesthetics: The Distribution of the Sensible এবং Disagreement: Politics and Philosophy. পশ্চিমা ইতিহাসে গণতন্ত্রের উপলব্ধির পুননিরীক্ষা করেছেন তিনি তাঁর ডিসএগ্রিমেন্ট রচনায়। রাজনীতি নিয়ে তার দশটি গুরুত্বপুর্ণ থিসিস আছে যেটির লিঙ্ক নীচে দেয়া হোল, আগ্রহী কেউ অনুবাদ করবেন এই আশায়।
Ernesto Laclau (6 October 1935 – 13 April 2014) আর্জেনটিনার রাজনৈতিক তাত্ত্বিক। পোস্ট- মার্ক্সিস্ট হিশেবেও তিনি পরিচিত। লাকলাও এর বিখ্যাত বইগুলো হোল Emancipation(s), On Populist Reason, Politics and Ideology in Marxist theory. দ্বিতীয় বই দুটোতে তিনি গ্রামসির আধিপত্যের ধারনাকে ভিত্তি করে গণআন্দোলন কিভাবে সংগঠিত হয় তা ব্যাখ্যা করার চেস্টা করেছেন। একটি বিশেষ দাবী কিভাবে অন্যসব দাবিকে একটি সাধারণসুত্রে আবদ্ধ করে গণঅন্দলনে রূপান্তরিত হয়,তা তিনি দেখাচ্ছেন তার On Populist Reason বইয়ে। দাবিদাওয়া কে তিনি রাজনীতি ও গণআন্দলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে আলোচনা করেন।
Giorgio Agamben (I1942-) ইতালীয় রাজনৈতিক দার্শনিক ও নন্দনতত্বের অধ্যাপক।state of exception ও homo sacer তার প্রখ্যাত গ্রন্থ। ১৯৯৫ সালের বই, ‘হোমো সাকের:সোভরেইন পাওয়ার এন্ড বেয়ার লাইফ’, এ আগাম্বেন দেখান কীভাবে যুগে যুগে রাষ্ট্র কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের কারণে কিছু মানুষকে হোমো সাকের(নিসিদ্ধ/অভিশপ্ত ইত্যাদি) ঘোষণা করে, তাদের জন্য নাগরিক অধিকার রদ করে দেয়।আইন সব সময় নির্ভর করে এই আলোচনার উপরে যে কে আইনের আওতায়, অর্থাৎ আইন কার জন্য প্রযোজ্য এবং কার জন্য প্রযোজ্য নয়।ইত্যাদি। যখনই রাষ্ট্র তার শাসনতন্ত্র নিজেই মানতে পারেনা, তার নিজের বানানো আইন নিজেরই ভাঙতে হয়, সেই সময়কেই আগামবেন বলছেন ‘স্টেইট অফ এক্সেপশন’। আইন,রাষ্ট্র,রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সার্বভৌমত্ব নিয়ে গুরুত্বপুর্ণ বই হিসেবে state of exception (২০০৫) বিবেচিত।
আমাদের দেশের ভাবুকমহলে লাকলাও ও আগাম্বেন বেশ পরিচিত ও মোটামুটি পঠিত।খুব সম্ভবত জাক রঁসিয়ের স্বল্পপরিচিত।রসিয়ের রাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপুর্ণ ১০টি থিসিসের লিঙ্কঃ
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৪৬