somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ মঞ্জুর বন্ধুপ্রেম

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর ঘুরে এই দিনটা আসলেই বুকের মধ্যে খাঁ খাঁ করে ওঠে।ভিতরটা একেবারেই ফাঁকা ফাঁকা অনুভূত হয়, মনে হয় সব থেকেও যেন কিছুই নেই।সকালের সূর্য ঠিকই উঠে,কিন্তু মনে হয় তার আলো মলিন। গাছের পাতা সবুজ হলেও, মনে হয় তা যেন মনমরা।রাতের আকাশে যদিও বা থাকে পূর্ণিমা চাঁদ,তবুও মনে হয় অমাবস্যা।

ভার্সিটিতে এসে পরিচয় হয় হৃদয়,রাহি ও মঞ্জু র।এরা তিনজন তিনটি ভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে। কেউ কারও পূর্ব পরিচিত নয়।তিনজন যেমন তিনটি ভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে তেমনি তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভিন্ন।হৃদয় উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে আসা চঞ্চল স্বভাবের,কিন্তু সবার সাথে ভীষণ মিশুক প্রকৃতির।রাহি এসেছে মধ্যবিত্ত পরিবারের আশার প্রতীক।আর মঞ্জু; কৃষক পরিবারের সাদাসিদে শান্তশিষ্ট এক যুবক। তিনজন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসলেও তারা ধীরে ধীরে ভাল বন্ধু হয়ে যায়।হৃদয় নিজের বাসায় থেকেই পড়াশুনা করত,আর রাহি ও মঞ্জু একই মেসের রুমমেট।

রাহি ও মঞ্জু প্রথমদিকে হৃদয়ের সাথে মিশত না খুব।মঞ্জু মিশতে চাইতনা,কারণ সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। হৃদয়ের মত ধনীর দুলালের সাথে তার মেলামেশা ঠিক মানায় না।তাকে হিসেব করে চলতে হয়।বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোও তার কৃষক পিতার জন্য কষ্টসাধ্য।তাইতো মঞ্জুকে টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হতো।রাহি অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হলেও সে হৃদয়ের সাথে কম মিশত মঞ্জুর জন্য। রাহি ও মঞ্জু র দূরে দূরে থাকা হৃদয়ের চোখ এড়ায়নি।হৃদয় ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিল যে ইচ্ছে করেই রাহি ও মঞ্জু তার কাছ থেকে দূরে থাকে।আর কারণটাও তার কাছে বেশিদিন অজানা থাকেনি।একদিন ক্লাস শেষে হৃদয় নিজ থেকেই রাহি ও মঞ্জু র সাথে কথা বলে সব দূরত্ব দূর করে দেয়।আর তারা তিনজন ধীরে ধীরে খুব ঘনিষ্ট বন্ধু হয়ে ওঠে।এরপর থেকে তারা তিনজন সবসময় একসাথেই থাকতো,ঘুরাফেরা করতো।বিকেলবেলা প্রায়ই রাহি ও মঞ্জুর রুমে হৃদয় এসে আড্ডা জমাত।শুধু যে মেসের মাঝে আড্ডা দিত তা নয়,কখনও বা হৃদয়ের স্পোর্টস কার নিয়ে তারা দূরে কোথাও বেড়াতে যেত।পরীক্ষার আগে তাদের কার কি কোন পড়া বুঝতে সমস্যা তা নিয়েও আলোচনা করত। কোনও জটিল প্রশ্নের উত্তর তারা তিনজন মিলেই তৈরি করত।

যথাসময়ে তাদের সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হল।তিন বন্ধু ঠিক করল দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে। ঠিক হল জাফলং।নির্দিষ্ট দিন তারা গেল এবং খুব মজা করল।আসার পথে পড়ন্ত বিকেল।সারি নদীর পাশে গাড়ি থামিয়ে নেমে যায় তিন বন্ধু।কতক্ষন নদীর পাশে বসে চলল আড্ডা। আড্ডার খেয়ালে কখন যে গাড়ির চাবি পড়ে যায়, হৃদয় টেরই পায়নি। আড্ডা শেষে যখন তিন বন্ধু গাড়িতে এসে বসল তখন হৃদয়ের খেয়াল হল যে চাবি ফেলে এসেছে।গাড়ি থেকে নেমে হৃদয় গেল চাবি আনতে। আর রাহি ও মঞ্জু গাড়িতে বসে রইলো । অনেকক্ষণ খুঁজাখুঁজির পর হৃদয় চাবি পেল।ওদিকে রাহি ও মঞ্জু অস্থির হয়ে গেল,চাবি পাওয়া গেল কী না??তারাও নেমে গেল গাড়ি থেকে। নামার পর দেখল যে, নাহ!পাওয়া গেছে। ঐ তো হৃদয় হাতে চাবি নিয়ে খেলছে আর কার সাথে যেন মোবাইলে জরুরী কথা বলতেছে। কিন্তু তখনি মঞ্জু খেয়াল করল ,দূর থেকে একটি দ্রুতগামী ট্রাক ছুটে আসছে এলোমেলোভাবে চালিয়ে।দেখেই মনে হচ্ছে চালকের নিয়ন্ত্রণ নেই।এদিকে হৃদয় রাস্তার মাঝ দিয়ে হেঁটে আসতেছে,আর ট্রাকটিও বিপজ্জনক ভাবে নিকটে চলে এসেছে। রাহি ও মঞ্জু চিৎকার করে হৃদয় কে সাবধান করতে থাকল। কিন্তু হৃদয় তখন মোবাইলে কথা বলায় ব¨স্ত। এদিকে কোনও খেয়ালই নেই।অকস্মাৎ, মঞ্জু দিলো প্রাণপণে এক ছুট। তা হৃদয়ের চোখে পড়া মাত্র হতবাক হয়ে জায়গায় দাড়িয়ে পড়ল।খেয়াল হওয়া মাত্র পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে ট্রাক একেবারেই নিকটে। হৃদয় নিশ্চিত মৃত্যু ভেবে চোখ বন্ধ করল। ঠিক তখনই একটি ধাক্কা খেল সজোরে মঞ্জুর এবং তীক্ষ্ণ আর্তনাদ শুনতে পেল।নিরাপদ দূরত্বে হৃদয় আর রাহি দূর থেকে কেবল তাকিয়েই দেখল যে ট্রাকটি মৃদু কম্পিত হয়ে একই বেগে চলে গেল। হৃদয় আর রাহি শুন্য দৃষ্টি নিয়ে সবকিছু তাকিয়েই দেখল।যখন তাদের চৈতন্য ফিরে এল ততক্ষণে তাদের মাঝে মঞ্জু স্থাপন করে গেল বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালবাসা, আত্মার টান,বিবেকের তাড়না,সরল মানসিকতার অকৃত্রিম ও অনন্য বন্ধুপ্রেম।আর হৃদয় ও রাহির জন্য বোঝা হয়ে রইলো সারাজীবনের আক্ষেপ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×