somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তানিয়া মালিয়ারচকের গল্পঃ ক্ষুধার দানো

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার গলায় বেশ ব্যথা লাগছিল ৷ কথা বলতেই পারছিলাম না ৷ সত্যি বলতে কি আমার বলার মত কিছুই ছিল না ৷ অনেক চিন্তা করলাম কিন্তু বিশেষ কিছু কারণে আমার নিজস্ব কোন মতামত ছিল না ৷ অনুমানও করতে পারলাম না আমার কী হলো আর জানলামও না পরিচিতজনদের কী হলো ৷ আমি শুধু একটা ব্যাপারই বুঝলাম আমি বেশি আবেগী ৷ না বললেই নয়, আমি বেশ কাঁদি ৷ এটাই খুব স্বাভাবিক ৷ আরো বেশিও কাঁদতে পারি ৷ যখন কোন কষ্টের কাহিনী শুনি তখন নিজে থেকেই কান্নার জল গড়িয়ে পড়ে ৷ সারা দিন আর রাতজুড়ে কাঁদি আমি ৷ যখন কাঁদি তখন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি ৷ বেশ হালকা ৷

ভালবাসার গল্পগুলো শুনতে আমার বেশ ভাল লাগে ৷ আবেগী গল্প ৷ যখন দু’জন একে অপরকে ভালবাসে আর তখনই ভিতর থেকেই পরস্পরকে পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয় ৷ কিন্তু আমার ভাল লাগে দু’জন প্রেমিক-প্রেমিকা সারাজীবন ধরে আলাদা থাকা আর তাদের মৃত্যুও হয় পৃথকভাবে ৷ যদিও একে অপরকে কখনই ভুলেনা ৷ তাদের থাকে আলাদা স্বামী বা স্ত্রী কিন্তু ভুলে যায় না জীবনের সেরা ভালবাসার কথা ৷ যেমন কোন লোক হয়ত তার জীবনসঙ্গীর হাতের উপর মরে (যে হয়ত তাকে ভালবাসে ) তখন সেই প্রেমিকা বোধহয় জানালার ওপাশে দাড়িয়ে থাকে ৷ নয়ত গোরস্থানের পাশে ৷ সবার সাথে নয় তবু পাশেই থাকে তাকে শেষবারের মত দেখার জন্য ৷ দেখেছো, আমি এখন কাঁদছি যদিও এটি স্বাভাবিক ৷ আমাকে থামিও না ৷

আমারটা থেকেও অন্যের ভালবাসার গল্পগুলো আমায় বেশ আবেগময় করে তুলে কারণ হয়ত আমি কাউকে গভীর ভাবে ভালবাসিনি ৷ সম্ভবতঃ এখনও আমি বেশ দ্বিধান্বিত ৷ তা জানি না কেন ৷ কিন্তু আমার গল্পটা হৃদয়ে দাগ কাটে না ৷ সেটা বুঝে আসে না আমার ৷ সেটি আবার নির্ভর করে কিভাবে বলা হলো ৷ কারণ হয়ত আপনি গল্পটি একভাবে বললেন তা সবাইকে কাঁদালো ৷ আবার সেটি অন্যভাবে বললে সবাই তা নিয়ে হাসতে থাকবে, আসলে গল্প কিন্তু একটাই ৷

আমার দাদিমা সবসময় আমায় এমন ভাবে আমাকে গল্প শোনাত যেন যাতে আমার কান্না পেত ৷ সেও কাঁদতো, আসলে আমরা দু’জনই কাঁদতাম ৷ আর তখনই আমি প্রথম বুঝেছিলাম যে, গল্প শোনে কান্নায় কতটা মধুর ৷

আমার দাদিমা ছিল সপ্রতিভা গল্প বলায় ৷ মাঝে মাঝে তার শরীরের চামড়ায় কি যেন অসহ্য বেদনা হতো ৷ ফলে একবার বলেই ফেলল তার পেছনের ইতিহাস ৷ সবটুকুই তার বেশ মনে ছিল ৷ অবশ্য আমিও সব জানতে কান্নাকাটি করেছিলাম ৷ তারপর দাদিমা আমায় বললঃ
‘বার্চ গাছের তক্তা চেনো ?’
‘না চিনি না ৷ কি সেটা ?’
‘তুমিও চিনবে যখন তোমাকে কেউ বার্চ গাছের বাকল দিয়ে মারবে ৷ তারা আমায় মেরেছিল একবার আর এর বেদনার স্মৃতি বহন করে চলেছি সারা জীবনভর ৷’
‘আচ্ছা এর স্বাদ কি রকম ?’
‘লবণের মত ৷ সাথে খানিকটা তিতার স্বাদও আছে ৷ যখন তক্তার আঘাত পড়বে তখন একটু তিতার স্বাদই লাগবে তখন ৷’

দাদিমাকে তার সৎমায়ের ছোট বাচ্চাকে দেখাশোনা করতে হতো ৷ একবার সেই বাচ্চাটি শেলফের উপর থেকে মেঝেতে পড়ে গেল ৷ আর সৎমায়ের মারের ভয়ে দাদিমা পাশের বনে চলে গেল ৷ তার সৎমা সবসময়ই চাবুকের আঘাতে কষ্ট দিতো তাকে ৷ বাচ্চাটিকে মেঝেতে রেখেই পালিয়ে আসল দাদিমা ৷ উনি ভেবেছিলেন বাচ্চাটি মারা গেছে কিন্তু কিছুই হয়নি তার ৷ মৃত্যুমুখবর্তী ঘোরগ্রস্থ কোন শিশুকে কোলে তুলে নেওয়া আসলে বেশ কষ্টসাধ্য ৷ জীবনের সামনে এগিয়ে যেতে তা বেশ অবহনযোগ্য ভারও ছিল ৷ বিড়ালের মতো চুঁপটি করে বসে থাকলো সন্ধ্যা পর্যন্ত বাপের বাড়ির কাছের বনে ৷ পেছন থেকে বোঝার চেষ্টা করল বাড়িতে কী ঘটছে ৷ তার সৎমা কিন্তু জানতো সে কোথায় লুকিয়ে আছে ৷ গোঁধুলি ঘনিয়ে আসলে সে আঙিনায় বেড়িয়ে এসে নাম ধরে চিৎকার করতে লাগলো ৷

‘বাড়িতে এসো আমি তোমাকে মারবো না ৷ বড্ডো দেরি হয়ে গেছে, তুমি সারাদিন কিছুই খাওনি ৷ বাছা, ফিরে এসো বাড়িতে ৷ তোমাকে আজ শবজির কিছু মজাদার খাবার দিবো ৷ এসো - ভয় পেওনা ৷’
দাদিমা তাকে বিশ্বাস করল ৷ সত্যিকারের ক্ষুধার্ত ছিল বলেই পিছনের জঙ্গল থেকে সৎমায়ের কাছে ফিরে আসল ৷ সেই বাচ্চাকাল থেকেই দাদিমার পেটে খিদে থাকত ৷ এমনকি তার শেষ সময়ও সে ক্ষুধার্তই ছিল ৷ হেঁটে সৎমায়ের কাছে এসে বললঃ
‘শবজি কোথায় ?’
‘ভিতরে যাও ৷ বাড়িতে আছে ৷’
ভিতরে গেল দাদিমা ৷ এরি মধ্যে তার সৎমা গাছের বাকলের তক্তা নিয়ে প্রস্তুত ৷ দাদিমাকে ঝাপটে ধরলো ৷ সাথে সাথে তার পায়ে, পিঠে, মুখে আঘাত আসতেই লাগলো ৷ চিৎকার করতে লাগল দিদা ৷
‘নচ্ছার মাগি তুই ৷ আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি ? তাইতো শেলফ থেকে মেঝেতে ফেলে দিয়েছিলি ৷’

এমন করে মারতেই থাকলো যতক্ষণ না কাজ থেকে দাদিমার বাবা ফিরে আসলো ৷ তাকে টেনে কেড়ে নিল সৎমায়ের কাছ থেকে ৷ যদিও আমার দাদিমা নড়াচড়া, এমনকি কথাও বলতে পারছিলো না ৷ রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো সারা শরীর ৷ এরপরই তার বাবা সৎমাকে পেটাতে লাগলেন ৷ না, ঐ গাছের তক্তার জায়গায় হাতের ঘুঁসিতেই শুরু করলেন ৷

সৎমা প্রচণ্ড ঘৃণা করতো দাদিমাকে ৷ প্রায়ই তাকে খেতে দিতো সাবানের আজলা, একবার তো ইঁদুরের বিষও দিলো ৷ আমি একটুও মিথ্যা বলছি না, সব সত্যি ৷ নির্জলা সত্যি কথা ৷ যদিও তুমি হয়ত বিশ্বাসই করবে না আসলে এমনটা হয়ে ছিল কিনা ৷

বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল ছয় বছর বয়সে ৷ পরে তাকে বোর্ডিং স্কুলে যেতে বাধ্য করা হলো ৷
সাত বছর বয়সে বোর্ডিং স্কুল থেকে পালালো কারণ সে আতঙ্কে ছিল মৃত্যুর ৷ সেখানে সে শিখেছিল, নতুন তরকারি রান্না করা শুধু পানিতে দুটো শিমের বিঁচি ৷
বয়স আটে দাদিমা থাকতে লাগল নভোহরাড-ভলিনস্ক ( ইউক্রেনের একটি স্থান) বাজারে আর খেতে লাগল ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট আলুবোখারা ৷
তারপর কাজ পেল খামারের গরু চরানোর ৷ এরপর এক লোকের খামারে কাজ করত যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিল এক বছরের কাজের বিনিময়ে শীতে গরম কাপড়ের দেওয়ার ৷ দুই বছরের অতিরিক্ত কাজের মূল্য হিসেবে সে পেল একটা বাঁছুর ৷ মালিকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এক তাতারের সহযাত্রী হয়ে বাঁছুর নিয়ে জিইতমির শহরে (ইউক্রেনে অবস্থিত) গেলেন ৷ সপ্তাহান্তে বাঁছুরটি মারা গেলে সেটার চামড়া ছিলে ও মাংস বেচে দুটো তারপোলিন কাপড়ের জুতো পেল ৷ যদিও সে দুটোই বা-পায়ের ৷

তোমাকে বললাম কত সুন্দরভাবে যদিও দশ বছর লেগেছিল দাদিমার আমাকে সবটা বলতে ৷ দশ বছর ধরে সব সূক্ষ্ম ও বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছিল গল্পগুলো ৷ অন্তর দিয়ে তার জীবনটা আমি জানি ৷ সে জন্য হয়ত আমার নিজের দিকে নজরও দিতে পারি নাই ৷ সে সময়ে মনে হতো আমার জন্য নয়, দাদিমার জন্যই বেঁচে থাকা ৷ তাই তো তার দরকার ছিল কোন একজনকে সব বলার, যাতে সে সবাইকে সব কাহিনী বলতে পারবে ৷ আমার চোখে প্রায় নিখুঁত ছিল সে ৷ সে আমাকে বঞ্চিত করেছিল নিজের কাহিনীতে বেঁচে থাকতে ৷ সে কোন সুযোগই দেয় নাই আমাকে কোন ‘একজন’ হয়ে উঠতে ৷ এমনকি একজন স্বাধীন সত্ত্বাধিকারী হিসেবেও নয় ৷

আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট দিক ছিল দাদিমা কাউকেই ভালবাসেননি ৷ সম্ভবত সারা জীবনভর ক্ষুধার্ত ছিল সে ৷ কিন্তু আদতে কাউকে পছন্দ ছিল না তার ৷ কোন পুরুষ মানুষকে, তার সন্তানদেরকে সর্বোপরি আমাকেও নয় ৷ কাউকেই নয় এমনকি নিজেকেও নয় ৷ যদিও আমি সবসময় ভদ্রভাবে তার শ্রোতা ছিলাম ৷ এখন তার অতিতের দিকে তাকালে আমার মনে হয়, ছোটবেলার দিনগুলো থেকেই ক্ষুধার দানো তার মাঝে বসত গেঁড়েছিল ৷ আমি জানি না এমন কিছু কি আছে নাকি ? কিন্তু সেটাও আমার ধারণা ৷

যখন হঠাৎ করে, যদি বাড়িতে কিছুই না থাকে খাবার মতন দাদিমা রাগান্বিত হয়ে উঠতেন ৷ মাঝে মাঝে আমাকেও মারতেন ৷ তখন তার চোখগুলো ফুঁসে উঠতো, কুৎসিত আর আগুনের ফুঁলকির মত লাগতো ৷ মনে হতো রুটির দলার জায়গায় কারো গলা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন ৷ সে খুঁতখুঁত করে টেবিলে ছড়ানো রুটির টুকরাগুলো জড়ো করতে লাগতেন ৷ পরে বাধ্য করলেন আমাকে সেগুলো খেতে ৷ প্রচুর পরিমাণে রান্না করতেন তিনি, যার পুরোটাই ছিল চর্বিযুক্ত ৷ পরিমাণে এতই চর্বি ছিল যে, আমি তার জন্য তরকারিই দেখতেই পেতাম না ৷ লার্ড (শূকরের চর্বি) ছিল তার পছন্দের খাবার ৷ শেলফে আধা লিটার বৌয়মে লার্ডগুলো জমিয়ে রাখতো ৷ অগণিত বৌয়ম ছিল শেলফের তাকে তাকে ৷ আরও ছিল অসংখ্য শিমের বিঁচি ভর্তি বৌয়ম ৷ সেই সু-প্রাচীন শেলফের তাকে ছিল অনেক সংরক্ষিত অংশবিশেষ যার কোনটার বয়স আমার চেয়েও অধিক ছিল ৷

সংরক্ষণের ভীতি দাদিমার জীবন নিয়ন্ত্রণ করতো ৷ যখন গরমের সময় দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি নামতো তখন দাদিমা বাগানে বসে থাকতো ৷ আর আওড়াতে থাকতো ‘এখন কি হবে আলু, শিমের বীঁচি, গাজর ও যবগুলোর ? হে ঈশ্বর, এবার কি হবে ! না খেয়ে সবাই মারা যাব !’
আমার বেশ মনে আছে একবার দাদিমার ক্ষুধার দানোটা আমার মাঝেও বসত নেয় ৷

আমি অবশ্য কখনও খাবার-দাবারের ব্যাপারে অত্যুৎসাহী ছিলাম না ৷ যখন যা পেতাম তাই খেয়ে ফেলতাম ৷ অল্প আর বেশি খুব একটা আগ্রহ ছাড়াই ৷ কিন্তু একবার কি যেন হলো ৷ অনেক টানা ঘুম দিলাম সেই দুপুর বেলা পর্যন্ত ৷ বেশ একটা দুঃসহ্য স্বপ্ন দেখছিলাম তার থেকে নিস্তারও বেশ কঠিন ছিল ৷ আমি এতই ক্লান্ত ছিলাম যে বিছানা থেকে উঠে গরমকালীন রান্নাঘরে যেতে পারছিলাম না ৷ সেখানে দাদিমা বেশ সুস্বাদু বোর্চ (গাজর দিয়ে তৈরি স্যুপ) রান্না করছিল ৷ তখন আমি গরম বোর্চের সুললিত ঘ্রাণ ভেসে আসছিল আমার নাকে ৷ কিন্তু আমি নড়তেও পারছিলাম না ৷ এতই ক্ষুধার্ত ছিলাম যে একটু পাশ ফিরতে পারলাম না ৷ আমার মনে হল পেটের ভিতর খাড়া, সুগভীর একটা গর্ত তৈরি হয়ে গেল ৷ গোটা পেটটাই হয়ে গেল পুরো আমি আর আমি হয়ে গেলাম পুরো পেট জুড়ে ৷ বিছানার ধারের পুরো ওয়ালক্লথটা বা আমার জুতোর ফিতেগুলো সব খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা হল ৷ এরকমটা আগে বা পরে কখনই আমার বোধ হয়নি ৷ পিঁশাচের মত হেলেদুলে রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগলাম পায়জামার রশি হাতে ধরে ৷ এমনকি কোন সম্ভাষণও দাদিমাকে দিলাম না ৷ বসে পড়লাম খাবার টেবিলে আর পুরোটাই বুঝতে পারল দাদি ৷ একবাটি বোর্চের স্যুপ আমাকে দিল আর আমি গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম ৷ আসলেই খাচ্ছিলাম না শুধু গিলতে লাগলাম ৷ দাদিমা পুরো সময় ধরে আমাকে দেখছিল আর মজা লুটছিল ৷ তার মনে হল যেন তার মতই হয়ে গেলাম এই আমি - যোগ্য উত্তরসূরি ৷ যেন তার ক্ষুধার দানোর অংশীদারিত্বের মানস সন্তান ৷ তাই তো আমি খুব বেশি আবেগী ৷ সেটা আমাদের দুজনের জন্যই ৷

শেষের দিকে দাদিমা মারা যাওয়ার আগে দাদিমা আমাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করেছিলেন তার বিছানায় ঘুমাতে ৷ তারপর থেকে তার বিছানায় তার সাথে আমি ঘুমাতে লাগলাম ৷ সে বিছানায় দাদির মৃত্যু হয়েছিল কিন্তু মৃত্যুর ব্যাপারে সে কখনও উদ্ধিগ্ন ছিল না ৷ সেসময় আমি তাকে এটাও বলেছিলাম তার সাথে ঘুমানো কষ্টকর ৷ কারণ আমি দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পাই ৷ যদিও আমার কথাগুলো তার অনুভূতিতে সাড়াও ফেলতে পারল না ৷ আমিও ক্রমাগত প্রতিদিন দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকলাম ৷

বার বছর বয়সে আমার উপলব্দিতে আসল যতদ্রুত সম্ভব আমায় দাদিকে ছেড়ে যতদূর চলে যাওয়া উচিৎ ৷
মনে পড়ে একবার অগাস্ট মাসের ঘরমের দিন ৷ দু’জনে মিলে বাগান থেকে শিমের বিঁচি উঠাচ্ছিলাম ৷ দাদিমা তার পরের গল্প আমাকে শোনাচ্ছিল ৷ তার জন্য শিম থেকে বিঁচিগুলো বেছে বেছে বড় একটা পাত্রে জমাচ্ছিলাম ৷ সেখান থেকে বড় ব্যাগ করে উঠানের এককোণে জমিয়ে রাখছিলাম ৷ জানি না কি হয়েছিল দাদিমা স্বীকারোক্তি করতে লাগলেন ৷ সত্যি জানি না কিভাবে হল ৷ মনে হয় আমি কিছু বলেছিলাম জীবন সম্পর্কে কথার ছলে ৷ স্বর্গ, নরক ও আত্মা নিয়ে ৷ আর এগুলো নিয়ে আমার কথা বলতে ভাল লাগতো ৷

পরে দাদিমা হঠাৎ বলে উঠলঃ আমি আত্মায় বিশ্বাস করি না ৷ এমনকি কিছুতেই আমার বিশ্বাস নেই ৷ যে কেউ মরে আর তার হাড়গুলো মিশে যায় আর এটাই সব ৷ জীবিত সময়কাল অতঃপর শেষ ৷ তার বাইরে কিছু নেই ৷

আমি বললাম, ‘দাদিমা, এভাবে ভাবা আসলে সঠিক নয় ৷ তুমি কি ভয় পাওনা তুমি মারা যাবে আর তোমার হাড়গুলো মিশে যাবে. তাই সব ?’
‘সেখানে ভয় পাওয়ার কি আছে ? এভাবেই সব ঘটে থাকে ৷’
‘তাহলে কেন এই বেঁচে থাকা ? যদি এরপরই কিছু না থাকে !’
‘তারপর কি আসলে কিছু নেই ? এই তুমি ! তুমি আমার জীবনের সব মনে রাখবে, আমি যা যা সব তোমাকে বলেছি ৷ সবটা হবে অমর ৷’

আমি বুঝতে পারলাম যে, আমাকে পালাতে হবে ৷ শিমের বিঁচি ছাড়ানো বাদ দিয়ে দৌঁড়ে চলে আসলাম ৷ দাদিমা কাছ থেকে পালিয়ে আসলাম আর নিজের জীবনে প্রর্ত্যাবর্তন ৷ কারণ আমি হতে চাইনি তার অমরত্ব ৷ চেয়েছি নিজস্ব আমিকে ৷ যদিও অনেকক্ষেত্রে তা নির্ভুল নয় ৷ আর চেয়েছি নিজের জীবনের উপর কর্তৃত্ব ও অমরত্বকে ৷ আমি চাইনি তার অবিশ্বাসের ভোক্তভোগী হতে ৷ যখন পালিয়ে আসি এগুলো আমার মাথায় ভিড়ছিল ৷

এখন বয়স ত্রিশ বছর আমার ৷ দাদিমা মারা গেছেন বহু বছর আগে ৷ তার শেষযাত্রাতেও আমি যাইনি ৷ কিন্তু আমি পারিনি নিজেকে বাঁচাতে ৷ মনে হয় পালিয়েছিলাম দেরি করে ৷ আমার নিজের কোন গল্প নেই - সবই তার ৷ অন্যদেরকে আমি তার গল্পই বলি ৷ অচেতনভাবে আমার ইচ্ছার প্রতিকূলে ৷ মাঝে মাঝে আমার ভেতরে এসে বসে থাকে আর ক্রমাগত পীড়া দেয় গল্পগুলো বলতে ৷ আর যখন তাদেরকে কথাগুলো বলে ফেলি আমার সত্যিকারের আনন্দ হয় ৷ এবং কেঁদে ফেলি ও আনন্দিত হই ৷ তাই তো আপনার কাছে অনুরোধ একটু শুনুন আমার কথা ৷ খানিকটা সময় দিন ৷ চলে যাবেন না! এক মিনিট কি সময় হবে না ? যুদ্ধের সময় দাদিমা সামরিক হাসপাতালের মেস হলে কাজ করতেন ৷ কিভাবে যেন কাপড় কাঁচার সময় সেই বড় চৌবাচ্চায় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন…………. ৷

*__**__**__**__**__**__**__**__**__**__**__**


ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি লেখিকার অনুমতি ব্যাতিত লেখা অনুবাদের প্রচেষ্টায় ৷
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×