somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলাপচারিতায় ঔপন্যাসিক জোরান জিভকভিক

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জোরান জিভকভিকের জন্ম ১৯৪৮ সালে ৷ এ পর্যন্ত ১৮ টি ফিকশন বইয়ের রচয়িতা ৷ জিভকভিকের বইগুলোর অনুবাদের ৬০টিরও বেশি সংস্করণ বের হয়েছে ৷ তিনি বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে প্রফেসর পদে কর্মরত ৷ এ আলোচনায় তিনি মধ্য ইউরোপের ফ্যান্টাস্টিকা “fantastika” আন্দোলন, তার লেখার শিল্পমান, ক্রমবিকাশ ও নিজস্ব লেখক সত্তার ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন ৷
--------------------------পর্ব১----------------------------
##########ফ্যান্টাস্টিকা ও সার্বিয়ার সাহিত্য########

মাইকেল মরিসনঃ আপনার ফিকশনগুলো আর মধ্য ইউরোপের ‘ফ্যানটাস্টিকা’র ঐতিহ্য একই সমান্তরালে যুক্ত ৷ কিভাবে আপনি এ ঐতিহ্যকে সংজ্ঞায়িত করবেন ? এ ধারার কোন কোন লেখকেরা আপনার লেখায় প্রভাব ফেলেছে ?

জোরান জিভকভিকঃ সাহিত্য ও ভৌগলিক দিক দিয়ে শব্দটি “Mitteleuropa” (“Central Europe”) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ৷ পূর্বের ধারণাটি আরো বেশি বিস্তৃত ছিল আর যা ছিল রাশিয়ার আশপাশের এলাকায় ৷ এ ধারণা উনবিংশ শতকে ও বিংশ শতকের কিছু অংশে সংস্কৃতিগত, প্রগতিশীলতায় ও শৈল্পিকভাবে নানাভাবে সম্মিলিত ছিল, বিশেষ করে সাহিত্যে এর প্রভাব পড়ে ৷ উল্লেখ্য যে ভেলেরি ভ্রয়োসভের The Fiery Angel (১৯০৮) উপন্যাসে এর প্রতিফলন দেখা যায় ৷ যার আঙ্গিকগত বৈশিষ্ট্য হল পুরো প্রেক্ষাপটই ষোল শতকের জার্মানি যা কেউ বুঝতেও পারবে না যে সেটা আসলে রাশিয়াতে লেখা হয়েছে ৷ যার মূলত আদর্শগত ভাবেই অধিকার জার্মানির ৷
“fantastika” ধারাটি বিভিন্ন ভাবেই ইউরোপের নানান ভাষায় এসেছে ৷ যেগুলোকে আসলে ইংরেজিতে যথাযতভাবে রূপান্তর করা যাবে না ৷ এতে শুধু ফ্যান্টাসিই থাকতে পারে যদিও বাজারজাতকরণের জন্য “Tolkienesque” ফিকশন নামেও ক্ষুদ্রভাবে প্রচার করা হয় ৷ Fantastika কখনও সাহিত্যের বিস্তৃত পরিধির সূক্ষ্ম দিকের সংকীর্ণ অংশ নয় ৷ আসলে এ নিজেই ব্যাপক ৷ আর সবগুলোই বিস্তৃতির দিক দিয়ে স্বতন্ত্র গদ্যধর্মী ৷ প্রায় ৭০ শতাংশই গত ৫হাজার বছর ধরে লেখা হয়েছে যেগুলো স্বতন্ত্র ধারা ৷ যারা fantastika শাখার উপধারা হিসেবে এসেছে যেমনঃ ফোকলোর(folklore),খোয়াবনামা(oneiric),রূপকথা(fairytale), মহাকাব্য(epic) আরো অনেক প্রকারে ৷

মধ্য ইউরোপিয়ান ফ্যান্টাস্টিকা কখনও আক্ষরিক অর্থে অন্যদের মত জাতিগতভাবে সাহিত্য আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠেনি বা বিস্তৃতি লাভ করেনি ৷ পারতপক্ষে এটির ঐতিহ্য হিসেবে কিছু চরিত্রগত অংশীদারিত্ব ছিল কিন্তু মূলত এ ধারা অসমসত্ত্ব ৷ আর এর খুব সাধরণ অংশ হলো অদ্ভূত, বিচিত্র, কল্পনার উপকরণ ৷
আমি অনেক ঋনী মধ্য ইউরোপিয়ান fantastika-র নামী বোদ্ধদের কাছে ৷ ই.টি.এ.হ্যাফম্যান থেকে শিখেছি কিভাবে বিচক্ষনভাবে ফ্যানটাস্টিকা’র অনুসঙ্গ, ফ্যানটাস্টিকা গল্পে সাংকেতিক মানদণ্ড বৃদ্ধি করা যায় সেটা গোগল থেকে, কিভাবে মৌলিকত্ব লাভ করা যায় তা ব্রেয়োসভের কাছ থেকে, আঙ্গিক ও fantastika-র টেক্সট পাঠে কিভাবে হিউমার বৃদ্ধি করা তা মিখাইল বুলগাকভের কাছ থেকে, কাফকা থেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় অযৌক্তিকতা বা আবসার্ডকে, fantastika-র নতুন নতুন পথের নির্দেশনা পাওয়া যায় সেটা স্টানিসল্ লেমের কাছ থেকে ৷


মাইকেল মরিসনঃ আপনি বললেন অতিতের লেখকদের লিখার পদ্ধতি থেকে কিভাবে শিখেছেন ৷ এবার আপনার লেখার দিকে আসি ৷ আপনার ফিকশনগুলো আমার কাছে মনে হয় মেটাফিজিক্যাল ফ্যানটাসিয়াস (“metaphysical fantasias”) ধারার ৷ কোন লেখক যদি আপনার লেখার কোন মূলভাব থেকে প্রভাবিত হবেন ?

জোরান জিভকভিকঃ আমিও মনে করি চূড়ান্ত প্রশ্নে আমার উপন্যাসগুলো মেটাফিজিক্যাল ফ্যানটাসিয়াস (“metaphysical fantasias”) ধারার বলে সমাদৃত বা গৃহীত ৷ যদিও মনে হতে পারে চূড়ান্ত প্রশ্নের সাথে দর্শনের সংযোগ আসলে বাইরে থেকে দেখলে এমনটাই ৷ সাহিত্যের অন্যান্য ধারা-উপধারা ও শিল্পের অনুসঙ্গগুলো সুদৃঢ়ভাবে একই সমান্তরালে শীর্ষে পৌঁছাতে সহায়তা করে ৷ শিল্পের মধ্যে গল্প উপন্যাস-ই সবচেয়ে প্রভাবশালী নিঃসন্দেহে ৷ যে কেউ বলতেই পারে চূড়ান্ত প্রশ্নের সম্মখীন হতে শৈল্পিক প্রতিকূলতা অতিক্রম ৷
যাই হোক এটা কোন সাধারণ কাজ নয় ৷ ফিকশনে কোন ঘটনার মোচড়ের ফাঁদ সবসময়ই ওত পেতে থাকে, অনভিজ্ঞতার ভয়াবহ চাপ, অযত্ন বা সরলতা অপেক্ষা করে অযোগ্য লেখকের জন্য ৷ এ ধরণের কাজগুলো গদ্যশিল্পের উপযোগিতার সাথে বিদ্রোহ করে ৷ সব মিলিয়েই হলো গল্প বলার শিল্পকলা ৷
উক্ত ফাঁদগুলো এড়াতে প্রজ্ঞাবানরা স্বীকৃত নানান পন্থা গ্রহণ করেন ৷ এই কারণে আমি আপনার আগের প্রশ্নে জোর দিয়েছি মধ্য ইউরোপিয়ান ফ্যানটাস্টিকার শীর্যস্থানীয়দের দৃষ্টিভঙ্গির কাজ থেকে আমার শিখার বিষয়ে ৷ এ দৃষ্টিভঙ্গির ধারণাগুলো বেশ দরকারি ৷ বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের কোর্সে চার সেমিস্টারের মধ্যে তিনটিতেই আমি আমার শিক্ষার্থীদেরকে গদ্য শৈলীর প্রাথমিক ধারণা দেই ৷ কেবলমাত্র চূড়ান্ত সেমিস্টারে আঙ্গিকের বিকশিত পর্যায় থাকে ৷
যদিও খুব দরকার নেই গদ্যশৈলীর চূড়ান্ত প্রশ্নে গল্পের শৈল্পিক বিকাশে ৷ অনেক বিজ্ঞ শেষ বিবেচনায় কোন ছাড় দেননি এই সকল শৈলীতে ৷ আমার মনে হয় কারও কারও কাছে সেসব দিকটি বেশ ঢাল আছে ৷ অপর দিকে সবসময় এটি সুখকর নয় এবং অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক দ্বন্দমুখর সম্পর্কও চূড়ান্ত প্রশ্নে ৷ বেশ নিরাপদ ও কম চাহিদার ফিকশনের ধরণটি ৷
অনেক শিক্ষকরা আমার মতামতকে নানান ভাবে চূড়ান্ত প্রশ্নে প্রকাশ করেছেন ৷ আসলে প্রায় পঠিত সব কিছুই প্রভাবিত করেছে আমাকে মেটাফিজিক্যাল ফ্যানটাসিয়াস ধারার লেখক হিসেবে গড়ে তুলতে ৷ কিন্তু আমাকে যদি বলা হয় শুধুমাত্র একজনের নাম বলতে আমি বলব ফিওদর মিখাইলোভিচ্ দস্তয়ভস্কি ৷ আমি বিগত দেড় বছর ধরে তাঁর সব ফিকশন পুনর্বার পড়েছি তৃতীয়বারের মত ৷ এ অভিজ্ঞতা ছিল, মনে হল আমি তাকে কখনও পড়িনি একবারেই সদ্য পঠন ৷ সেই ষাট শতকের প্রথম দিকের মতন ৷ আমার আছে বিচক্ষণ ও বিদগ্ধ চোখজোড়া তাঁর চমৎকার শিল্পকর্মের উপর ৷


মাইকেল মরিসনঃ বিংশ শতক জুড়েই বলকান অঞ্চল ভুগেছে রাজনৈতিক অভ্যুত্থানে, নৃতাত্ত্বিক স্থানচ্যুতি ও নৃসংশতায়, অর্থনৈতিক চরম বিশৃঙ্খলতায় পরিসূচকের ভিন্নতা থাকলেও আঙ্গিকগুলোকে একজন বহিরাগত হিসেবে কল্পনা করা বেশ কঠিন ৷ এসব নানান ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুগোস্লাভ ও সার্বিয়ান লেখকেরা তাদের গল্প ও উপনাসে এনেছেন ৷ যেমনঃ বরিস্লাভ পাভিকের The Houses of Belgrade, ভুক ড্রাস্কোভিকের Knife, ভ্লাডিমির আরসেনিঝেভিকের In the Hold এবং ফ্যান্টাস্টিকায় মিলোরাড পাভিকের Dictionary of the Khazars লেখায় ৷ তুলনামূলকভাবে লেখার চরিত্রেরা বৃহৎ অর্থে ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ৷ কিভাবে, সার্বিয়ার বিশৃঙ্খল অবস্থা কি প্রভাবিত করেছে তোমার লেখায় ? বৃহৎ আয়তনে এইসবগুলো ঘটনা পরিকল্পিতভাবে আপনার সৃষ্টির প্রক্রিয়ার প্রতিফলন দেখা দেয় না ৷

জোরান জিভকভিকঃ সহজভাবে উত্তরে বলা যায় আমি অনুকরণপ্রিয় লেখক নই এবং সেইজন্য আমার বইগুলো বাস্তবতার মন্তব্য নির্ভর নয় ৷ এমনকি যখন বাস্তবতা আক্ষরিক অর্থে বেশ দমনরত বিংশ শতাব্দির বলকান অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে ৷ কিন্তু কিভাবে সম্ভব, যেকেউ অবাক হবে, এ অবস্থায় অনুকরণশীল লেখক নয় হিসেবে, কি করে শক্তিশালী ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জকে অবহেলা করি যেখানে অন্য সব সার্বিয়ান লেখকেরা সাড়া দিচ্ছে ?
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রায়ই এ প্রশ্নের সম্মখীন হই আমি ৷ কিছু সময়ের জন্যও সার্বিয়ান প্রাতিষ্ঠানিক সাহিত্য আমার এ ব্যপার নিয়ে কি করবে বুঝতে পারে না ৷ শতাব্দিকাল ধরে বাস্তবধর্মী ধারারা ফ্যান্টাস্টিক ধারার উপর ছড়ি ঘুড়াচ্ছে ৷ যা জাতীয় সাহিত্যের শিকড়ের প্রতিকূলে ৷ আমাদের নিজস্ব ফোকলোর এইসব ফ্যান্টাস্টিক ধারার অনুসঙ্গের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ৷ এমনকি একাবিংশ শতাব্দির প্রারম্ভে একজন সার্বিয়ান লেখক জাতীয় ইতিহাস থেকে কোন উপসর্গ নিতে পারেন যা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৷
প্রথমেই তারা আমার বইগুলো অবহেলা করে ৷ যদিও ছাপান তবে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী হিসেবে তকমা লাগান ৷ তাদের অভিধানে এগুলো উপজাতি সাহিত্যের সঙ্গে সমার্থক ৷ ফলে বুঝা যায় তারা আমার কাজগুলো পড়েন না ৷ কিন্তু পর্যায়ক্রমে আমি সর্বাধিক অনূদিত তুলনামূলক সার্বিয়ান লেখক হিসেবে গন্য হচ্ছি ৷ এ মুহূর্তে ২১টি ভাষায় ৬১টি বৈদেশিক সংস্করণ হয়েছে আমার বইয়ের ৷ ফলে কার্যত উপেক্ষা করার মতন নয় আর অল্পসংখ্যক সার্বিয়ান লেখক বহির্বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছেন ৷ তাইতো বেশিরভাগ প্রাতিষ্ঠানিক আমার ফ্যান্টাস্টিক লেখাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম বলে মনে করছেন ৷ অন্যদিকে জাতিয়তাবাদি ছোট অংশ কাজগুলোকে জাতিয় জনগুরুত্বপূর্ণ বলছেন সেসব বিগত ইতিহাস নির্ভর রূপান্তরকরণ যা অনূদিত হয়েছে ৷
একইভাবে মাঝে মাঝে বাইরেও বাঁধার সম্মখীন হয় ৷ কিছু সমালোচক এরা গতানুগতিক সার্বিয়ান লেখকের মত নয় বলে অনুধাবনে ব্যর্থ হন ৷ সাধারণত ১৯৯০ সালের দিকের সাহিত্যে বলাকান গৃহযুদ্ধোত্তর ধারার ব্যতিক্রমি আঙ্গিকধর্মী ৷ বিস্তারিতভাবে বললে তারা জানেন না আমি কোথাকার এবং সক্ষম হন না আমার গল্প ও উপন্যাসের মর্ম উদ্ধার করতে ৷ আমার অনুভূতি হয় তাদের নঞর্থকবাদিতা যা আমাকে অজ্ঞাত সাহিত্যের উপত্যকা থেকে আামাকে বিরত রাখে ৷
আমি বিশ্বাস করি এসব ভুল বুঝাবুঝিগুলো সৃষ্টিশীল ধারার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার শিকড় গজাচ্ছে ৷ খুব সাধারণভাবে বললে লেখক কখনও আঙ্গিক বাছাই করেন না ৷ আঙ্গিকই লেখককে বেছে নেন ৷ সর্বপুরি আমার ক্ষেত্রে এমনটাই হচ্ছে ৷ কোন সময় আমি আমাকে জিজ্ঞাসা করে কোন নতুন কাজে হাত দেই না ৷ যখন আমি লেখার টেবিলে যাই নতুন গল্প বা উপন্যাস লিখতে আমি খুব একটা জানি না সেটা সম্পর্কে ৷ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায় প্রায় অজ্ঞাত ৷ অবচেতনে কাজটি তখন সুসংঘটিত রূপ ধারণ করে থাকে ৷ অপেক্ষায় থাকি কিবোর্ডের মাধ্যমে মনিটরে প্রতিফলনে ৷ অপেক্ষারত আমি মূলত তখন শুধুই একজন মূদ্রাক্ষরিক বা টাইপিস্ট ৷ আর একজন আগ্রহী পাঠক তৈরী কি হচ্ছে সে সময়ে আমার অবচেতন মনে ৷ যাইহোক এসব রহস্যঘেরা কারণে অনুকরণহীন লেখা বের হয় আর সঙ্গে পাঠক হিসাবে আমার সন্তুষ্টি ৷


মাইকেল মরিসনঃ সার্বিয়ান জনগণ কিভাবে দেখেন সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিকতাকে ? আরো বিশতভাবে বললে সার্বিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপে এসময়ে ফ্যান্টাস্টিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?

জোরান জিভকভিকঃ পাঠকসমাজ কখনও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন না ৷ বেশিরভাগেরই কোন পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই ফ্যান্টাস্টিকা ফিকশনের অগ্রযাত্রায় ৷ মানুষেরা যা পছন্দ করে তাই পড়ে ৷ কেউ কেউ ফ্যান্টাস্টিকা পছন্দ করে না যা আদতে স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ৷ একাডেমি অব সাইন্স এন্ড আর্টস্, কিছু বিভাগ, সংস্থার তুলনামূলক সার্বিয়ান প্রাতিষ্ঠানিক ধারা যা বেশিরভাগ সর্বোচ্চ সাহিত্যচক্রে সীমাবদ্ধ ৷ আর এদের রক্ষণশীল অংশের প্রভাবে প্রভাবিত এসব ৷
তবে ফ্যান্টাস্টিকা ফিকশনের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেড়েই চলেছে সার্বিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপ জুড়ে ৷ কিন্তু বেশিরভাগ সীমাবদ্ধ বিদেশি অনবাদ কর্মের উপর ৷ যদিও স্থানীয় ফ্যান্টাস্টিকা ফিকশনের লেখকেরা বেশ উন্নতমানের ৷ তবে এদেরকে প্রতিযোগিতা করতে হয় বিদেশি সর্বোচ্চ বিক্রীত বইয়ের সাথে যাদের মান যাই হোক না কেন ৷ সার্বিয়ায় আমার বইয়ের মূদ্রণ সংখ্যা কদাচিৎ দুই হাজারের উর্ধে যায় ৷ যেখানে গতানুগতিক পিঁশাচধর্মী উপন্যাস দশ হাজারের উপে যায় ৷ যা এখানে প্রায়ই দৃশ্যত ৷ কিন্তু এটাই স্বাভাবিক ৷ আসলে এটা বাহুল্য আমার কাছে, বিশেষায়িত ধারার একজন রচয়িতা হিসেবে ৷ পিঁশাচধর্মী উপন্যাসের পাঠকের কান নেই আমার গান শোনার নয়তো আমার কোন গান নেই তাদের কর্ণকূহরের জন্য ৷
স্থানীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠানেরা ফ্যান্টাস্টিকা প্রশ্নে সহৃদয়শীল নয় যথেষ্ট ৷ ফলে আশ্চর্য নয় যে ফ্যান্টাস্টিকা ধারার লেখক বেশ অপ্রতুল এখানে ৷ বর্তমানে আমি বোধহয় একমাত্র আন্তর্জাতিকভাব স্বীকৃত একমাত্র লেখক ৷ সৌখিন কিছু এ ধারার লেখকের লেখা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গৃহীত নয় ৷ যদিও তাদের কিছু বই আসলে বেশ মানসম্পূর্ণ ৷


মাইকেল মরিসনঃ জাতীয়তা ব্যতিত আপনি কিভাবে একজন সার্বিয়ান লেখক হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ন করবেন ? আপনার ফিকশনে এ পরিচয়টি কিভাবে সজ্ঞায়িত হয় ?
জোরান জিভকভিকঃ আমি নিজেকে অবশ্যই একজন সার্বিয়ান লেখক হিসেবে দেখি ৷ আমার মাতৃভাষা সার্বে আমি লিখি ৷ অপরদিকে আমি অবগত যে, অন্যদের মত আমি গতাণুগতিক সার্বিয়ান লেখক নই ৷ এ পর্যন্ত প্রকাশিত উনিশটি বইয়ের মধ্যে শুধু The Last Book বইয়ে চরিত্রদের নাম সার্বিয়ান ৷ অন্যদিকে আমার সকল বইয়ে কোন সার্বদের প্রকাশ ঘটেনি ৷ এ কারণটি আরো প্রকটতর হয় ফ্যান্টাস্টিকা ধারার লেখায় ৷ যা ফলে সাহিত্য প্রাতিষ্ঠানিক বোদ্ধারা আমার বিপক্ষে বিশেষ করে জাতিয়তাবাদি অংশটি ৷ বিশেষ করে ১৯৯০ সালের দিকে মিলসেভিকের শাসনামলে যা এখনও বর্তমান ৷ অবশ্য খুব শক্তিশালী নয় ৷
শুধু কোন সার্ব চরিত্রই নেই আমার গল্প বা উপনাসে সেখানে আরো নেই কোন অ্যামেরিকান, রাশিয়ান, চাইনিজ, ক্রোয়েট, এস্কিমো চরিত্রও ৷ আমার গল্প বা উপনাসে চরিত্রের জাতীয় পরিচয় খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় ৷ এছাড়াও হয় তারা নামহীন নয়তো আন্তর্জাতিক নাম যেগুলো বহু ভাষায় ব্যবহৃত হয় ৷ সবশেষে, তাদের তরীর দিকফলক যথেষ্ট স্পষ্ট নয় বা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যেও নয় ৷
আমার চরিত্রগুলোর এ রকম বৈশিষ্ট্যগুলো পরিলক্ষিত হয় যখন ভালবাসা ও মৃ্ত্যুর উপর ভিত্তি করে আমার লেখায় ৷ এ দুটো প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাপট ফিকশনের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যে ৷ আমাদের জীবনের অন্যতম দিকনির্দেশনা ও গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রেষ্ট আবেগ, দুই নৈতিকতাকে ভিত্তি করে আমরা ফিকশন লেখায় প্রথম প্রাধান্য দেই ৷
নৈরাশ্যগত ভাবে দেখা যায় মৃত্যু ছাড়া ভালবাসা হয় না ৷ মনে হতে পারে এরা অবিচ্ছেদ্য ৷ মুদ্রার উল্টো পিঠের মতই সৌভাগ্যের অপরদিক দুর্ভাগ্য ৷ কোন দর্শনগত, ধার্মিকতা বা বৈজ্ঞানিকভাবেই এ চূড়ান্ত দ্বৈততাকে সামাল দিতে পারে না ৷ শুধমাত্র শিল্পকলাই করতে সক্ষম ৷ সাহিত্যের সব শাখাই মানুষের এই ট্রাজিক গোপনীয়তার অন্তর্মূলে যেতে পারে ৷ আসলে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আবিস্কৃত সকল সাহিত্যকলায় আমরা এ দুই নিয়ে লিখে আসছি ৷ যা এখনও আমরা প্রকাশ রে যাচ্ছি ৷ এরা কখনও শেষ হবে না আর প্রকৃতপক্ষে এ মিথ্যাদের রয়েছে অন্তর্নীহিত গুরুত্ব সহিত্যে ৷
সবধরণের শিল্পকলার পরও আমারা আদতে মানুষ ৷ সংস্কৃতিক, ধর্ম, সামাজিক বা অন্য দিক বিবেচনার যেকোন প্রেক্ষিত হোক না কেন ৷ অপরদিকে যদিও আমার চরিত্রেরা প্রকাশ করেনা সার্ব বা অন্য কোন জাতিয়তাকে হয়তো ৷ এই জাতিয়তাহীনতার ফলে বিশ্বের সকল পাঠক আমার চরিত্রদের চিনতে পারে, বুঝতে পারে তাদের অবস্থা ও সমস্যা ৷
-------------------------পর্ব ২---------------------------
~~~~~~~~~~~~পরিবর্তনের পেশা~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
গবেষক, অনুবাদক, প্রকাশক থেকে ফ্যান্টাস্টিকার লেখক


মাইকেল মরিসনঃ আপনার পেশায় অনুপ্রবেশ ঘটে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর উপর গবেষণার জন্য বৃত্তি নিয়ে ৷ এ পর্বের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯০ সালে ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব সাইন্স ফিকশন’ বই প্রকাশের মাধ্যমে ৷ তিন বছর পর আপনার প্রথম The Fourth Circle উপন্যাস সার্বিয়ায় প্রকাশ পায় ৷ এরপর থেকে আপনার উনিশটি ফিকশন ছাপা হয় যারা আদতে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নয় ৷ The Fourth Circle উপন্যাস একটি পরিবর্তন পর্যায়ের কাজ যার পর থেকে পরবর্তী কাজের মধ্যে আর কল্পবিজ্ঞানের ছায়া দেখা যায়নি ৷ এটি লেখার সময় কি ঘটেছিল আপনার লেখার মধ্যে যাতে আপনার মনে হল কল্পবিজ্ঞানে আপনার লেখার গল্প কথন প্রকাশে স্বয়ংসম্পূর্ণ বা যথেষ্ট নয় ?


জোরান জিভকভিকঃ The Fourth Circle লেখার সময় নানা ভাবে নূতন নূতন অভিজ্ঞতা হয় আমার ৷ যদিও সাহিত্য আমার জীবনে অপরিহার্য অংশ তবে যাবতীয় পঠনক্রিয়া শুরু হয় ছয় বছর থেকে যখন পড়তে শিখি ৷ এরপর আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ( তুলনামূলক সাহিত্য), প্রাতিষ্ঠানিক উপস্থাপনা (থিসিস) একই সাথে অনুবাদক ( সত্তরের অধিক বই যার বেশির ভাগ ইংরেজি) জীবন, সম্পাদক ও প্রকাশক জীবন এবং সবশেষে ননফিকশন (সত্য কাহিনী অবলম্বনে) লেখা এ পর্যায়গুলোতে আমি কখনও গল্প উপন্যাসে হাত দেয়নি ৷ আসলে সেসব ধারণা আমাকে পেয়ে বসেনি ৷
আমি শুরু করি পয়তাল্লিশ বছর বয়সে ৷ প্রথম লেখা (“The circle.”) গল্পের ১ম বাক্য ১৯৯৩ সালের ফেব্রয়ারিতে দক্ষিণ সার্বিয়ার পর্বতের এক অবকাশকেন্দ্রে হঠাৎ করে ছোট্ট একটি ঘটনা ঘটে গেল ৷ আমি স্ত্রী মিয়া এখনও একজন শৌখিন স্কাইয়ার (উচ্চ পাহাড় থেকে লাফ দেওয়া) ৷ আমরা প্রতি শীতকালে তার প্রিয় কুপাওনিক পাহাড়ে যাই ৷ তবে আমি এর ভক্ত নই ৷ সময় কাটাই সকাল ও দুপুরে হেঁটে আর গ্রাণ্ড হোটেলের শূন্য লবিতে পড়াশোনা করে ৷
আমি আনন্দের সঙ্গে লেখার অপেক্ষায় থাকি তারপর হঠাৎ করে কোন সূর্যলোকিত দিনে ভর করে আমার উপর ৷ পড়ার বই বন্ধ করে চলে যাই কাছের বইয়ের দোকানে আর কিনে আনি খাতা ও কলম ৷ ফেরত আসার সঙ্গে সঙ্গে লিখতে বসে পরি ৷ ইতিমধ্যে মিয়ার ভ্রমণ শেষ হওয়ার মাঝেই শেষ হয় The Fourth Circle এর প্রথম অধ্যায় ৷
আসলে আমি অবাক হয়ে যাই আমার গল্প লেখায় ৷ আরো বিস্ময় মনে হয় যখন তার উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না ৷ ননফিকশন লেখার কৌশল থেকে অনেটাই ভিন্ন অভিজ্ঞতা ৷ ননফিকশন থেকে এর পদ্ধতি অন্য রকমের যেমনটা সেক্ষেত্রে আমি জানি কি করতে চাচ্ছি এবং তা কিভাবে করবো ৷ আর যখন গল্প লিখি বাক্যেরা থাকে ভাসমান গন্তব্য অজ্ঞাত আর সেই সাথে অদৃশ্য থেকে কেউ তাদের আমার জন্য নির্দেশ দিতে থাকে ৷
মাত্র চার মাস পরে The Fourth Circle উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটে ৷ অনন্য অভিজ্ঞতা হয়, সত্যিকারের প্রথম ফিকশনের প্রেরণার উৎস ৷ কোথাও যেন আমার আনন্দময় নিঃশ্বাসের স্তর, আমার অস্বাভাবিক অজ্ঞাত নিজস্বতা, একটি জটিল সমন্বিত সম্মেলন ৷ গত শতাব্দির গড়ে উঠা আমার সাহিত্যের জ্ঞান নুতন কিছুতে রূপান্তর হচ্ছিল ৷ যখন প্রকাশের সেই মুহূর্ত আসল মনে হলো যেন আগ্নেয়গিরির অগ্নোৎপাত ৷ প্রায় যথার্থ কোন পর্বতের শীর্ষদেশে ৷
উপন্যাসটি লেখার সময় নিজেকে বিভক্ত করি ৷ একবার লেখকরূপে যে অবচেতনে কিছু ঘটাচ্ছে আবার পাঠকরূপে যখন লেখক টাইপিংয়ে বিরতি দিচ্ছেন ৷ (আমি টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে ডান হাতের শুধুমাত্র তর্জনি ব্যবহার করি ) ৷ তবে The Fourth Circleএর শেষ অধ্যায়গুলো লিখতে বেশ অস্বস্তিকর বেগ পেতে হয়েছিল ৷ শার্লক হোমসে্র সমাপ্তি ৷ যখন আমি বুঝতে পারছিলাম অযাযিত বহিরাগত কাঠামো ক্রমাগত মূল শৈলীতে সংযুক্ত হতে চেষ্টারত ছিল ৷
The Fourth Circle ছিল আমার বিগত চল্লিশ বছরের সাহিত্যের সাথে বসবাসের বিরুদ্ধাচরণ ৷ নিঃসন্দেহে প্রবাহিত শিকড় যারা কল্পবিজ্ঞানের প্রতিক্রিয়া ৷ কারণ হয়ত এই প্রকারের সাথে পনের বছরের সম্পৃক্ততা ৷ তবে আমি একে কল্পবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখতে চাইনি ৷ আসলে বাজারজাতকরণের কোন তালিকায় পরে না ৷ খুবই ছোট বিশেষায়িত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যা এক দশক পরে অ্যামেরিকা ও বৃটেনে বাজারজাত করা হয় ৷
The Fourth Circle কল্প বিজ্ঞানের অনুসঙ্গগুলো ভীতিকর বা অস্তিত্বহীন আমার উনিশটি ফিকশন বইয়ের অপেক্ষা ৷ আমার অভ্যাস অপেক্ষা কল্প বিজ্ঞানের বইয়েরা কম গুরুত্বপূ্র্ণ ৷ জীবনের দীর্ঘ ও ফলদায়ক অংশ অপেক্ষা এগুলো প্রতারণার মত হতো ৷ বিংশ শতাব্দির শেষ অর্ধাংশের ফ্যান্টাস্টিকার দুইটি ধারার মধ্যে কল্প বিজ্ঞান অন্যতম ৷ অপরটি অবশ্যই যাদু বাস্তবতা ৷ কিন্তু আমার কাছে মনে হয় কল্প বিজ্ঞান তার শীর্ষক্ষণ পেরিয়ে গেছে ফলে এখন আর পারবে না ভূমিকা রাখতে ফ্যান্টাস্টিকার কোন গৌরবোজ্জ্বল পথচলায় ৷


মাইকেল মরিসনঃ পরিস্কার বুঝলাম The Fourth Circle অনেক শিক্ষণীয় পথে এসেছে ৷ বিস্তারিত বলবেন কি আপনার সৃজনশীলতার পদ্ধতি ? কিভাবে গল্পেরা তৈরী হয় ? কিভাবে গল্পের পথকে উন্নতি করেন ? বৃহৎ অর্থে কিভাবে আপনার কাজগুলো মূল্যায়ন করেন ?

জোরান জিভকভিকঃ একজন ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের শিক্ষক হিসেবে প্রায় শিক্ষার্থীরা আমাকে জিজ্ঞাসা করে কিভাবে আমি ফিকশন লিখি ৷ আমি ভাবি এই প্রশ্নে তারা কিভাবে সত্যিকারের উৎসাহ পাবে ৷ তাদের দিক থেকে এভাবে ভাবতে বাস্তবতা খুঁজে পাই ৷ তাদের কারণগুলো এভাবে ভাবা যায় আমাদের শিক্ষক যে নাকি একইসাথে সফল লেখক ফলে তার প্রদর্শিত পথে আমরাও ভাল গল্প তৈরী করতে পারবো ৷
ব্যখ্যা করি তাদের কাছে যতটুকু পারি সেই সাথে যোগ করি শেষে এগুলো আসলে ভিত্তিহীন আমার কাছে (এমনকি অন্য কোন লেখকের কাছেও) ৷ প্রথমত কোন চমকই নেই আমার লেখার পদ্ধতি ৷ আসলে কোন স্বীকৃত পদ্ধতি নেই লেখার ৷ কোন মাধ্যমেই আসলে চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে না নুতন ফিকশনে ৷ এটা কোন বিষয়ই না কোন সংক্ষিপ্ত পথে বা কন্টকসম দীর্ঘ পথ শেষে তোমার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো ৷ প্রত্যেক লেখকেরই তার নিজস্ব পদ্ধতি থাকে ফিকশন রচনায় ৷ আমার পদ্ধতি ব্যতিরেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরী পথ বানাতে পারবে ৷ এভাবেই একদিন তারা সফল হবে ৷
আমার সব ফিকশনের বইয়ের জন্ম একইভাবে ৷ যাবতীয় সবকিছু যা অনুভূত হয়, শোনা যায়, অভিজ্ঞতা লাভ হয়, পঠিত হয়, সর্বোপুরি জ্ঞাত হয়ে সঞ্চিত থাকে এসবে আমার জমা থাকে নীরবে ৷ আমার অতিতের সবকিছুই জমা থাকে ক্রমাগত ভাবে নুতন করে কিছুই নয় ৷ শেষে এমনটাই আমি কল্পনা করি কর্মে নিয়োজিত সৃজনশীলতাকে যা ব্রহ্মাণ্ডের সুস্থির ও মহামূল্যবান ৷ সজ্ঞানেই আসলে আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই এর উপর ৷ এমনকি ভিতরটিকে আঁকতেও পারি না যে কিভাবে এটি কাজ করে ৷ কিন্তু যতক্ষণ এটি কাজ করে ততক্ষণ বিস্মিত হয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা করি ৷
যদি একবার সৃজনশীল ভারসাম্য পৌঁছায় অবচেতনে মনে ছবি ফুঁটে উঠে যা থেকে ভবিষ্যতের গল্প বা উপন্যাসের সূচনা বাক্যে রূপ লাভ করে ৷ এটি সাধারণত সকালের দিকে ঘটে যখন আমার মন চূড়ান্ত শুভ্রতায় থাকে ৷ তারপরই কম্পিউটারে লিখি কারণ হয়ত প্রেরণা হারিয়ে যেতে পারে ৷ কিন্তু চূড়ান্তভাবে আমার অভিজ্ঞতায় বলে যে এটি বিস্তারিত নয় ক্ষণিকের ঝলক মাত্র ৷ ফিকশনের পুরোটাই অবচেতনে অঙ্কিত হয়ে যায় যা থাকে চিরস্থায়ী হয়ে আর ধীরে ধীরে লিখিত রূপ নিতে অপেক্ষারত থাকে ৷
আমি সতর্ক থাকি যা সম্পূর্ণই অভূতপূর্ণ কিন্তু আমি কখনই আমার ফিকশনের পুনঃপাঠ করি না ৷ কিছু বানান ভুল থাকলেও আদতে প্রথম রূপটি চূড়ান্ত সংস্করণ ৷ প্রথমদিকে আমি দ্বিধাগ্রস্ত থাকতাম ৷ আমার যত সাহিত্যজ্ঞান থেকে মনে হয় কিছু ক্ষেত্রে পূণঃমূল্যায়ন দরকার ৷ কিন্তু কিছুতেই প্রাথমিক খসড়া থেকে অগ্রগতি করতে পারি না ৷ উনিশটি ফিকশন প্রকাশের পর মনে হয় এখন সময় এসেছে ফিকশন লেখা বন্ধ করার আবার মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত ৷
আমার সৌভাগ্য যে, আমি একজন বিশ্বস্ত প্রতক্ষ্যদর্শী পেয়েছি এ ক্ষেত্রে ৷ এলিস কোপলতশিক- Time Giftsএর র থেকে আমার সতেরটি বই অনুবাদ করেছেন ৷ প্রথম থেকেই একই সূচিতে কাজ করছি লেখা ও অনুবাদ একই সমান্তরালে ৷ যখনই গল্প বা উপন্যাসের কোন অধ্যায় লেখা শেষ করি সাথে সাথে ইমেইল করে দেই তাকে তারপর সে অনুবাদ করতে থাকে ৷ এবং আমি হাত দেই পরের অধ্যায়ে আর এভাবেই চলতে থাকে শেষ পর্যন্ত ৷ আমি তাকে কখনই বলি না পুনঃমূল্যায়ন করতে আদতে তার কোন প্রয়োজনই নেই ৷


মাইকেল মরিসনঃ আপনি যেমনটা বললেন তা আমাকে বিস্মিত করে দিল ৷ আপনার লেখায় বাক্য বিন্যাস অনেক জটিল ৷ প্রায়ই একের অপরের সাথে সংযুক্ত ও টীকাসম্পৃক্ত ৷ মাঝে মাঝে আন্তঃলাইনের সাথে পরস্পর ক্রিয়াশীল ৷ বৃহৎভাবে বললে প্রত্যেক বাক্যে আপনার ফিকশনগুলো ব্যতিক্রমি যথার্থ ৷ কোন শব্দ অপ্রয়োজনীয় নয় ৷ রূপকল্পে বিস্তারিত ফুঁটে উঠে চরিত্র ও আঙ্গিক ৷ অনেক বাক্য বেশ ছান্দনিক ৷ কিভাবে আপনি এই সক্ষমতা বুঝেন ? আপনার দক্ষতা গণিত ও দাবার সাথে তু্ল্য যা নির্দিষ্ট ছকে বাধাঁ ৷

জোরান জিভকভিকঃ বলা উচিৎ আপনার ধারণা প্রায় সঠিক ৷ যদিও আমি উল্লেখ করেছি আমার অক্ষমতা পুরো সৃজনশীলতার কর্মযজ্ঞ বুঝাতে ৷ কোন এক পর্যায়টি হয়তআসে যা গণিত ও দাবার ছকের সাথে সম্পৃক্ত ৷ যুবক কালে আমার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল এসব ক্ষেত্রে ৷ সম্ভাবনা থাকলেও গণিতবিদ বা দাবাড়ু না হয়ে লেখক হয়ে গেলাম ৷ মাঝে মাঝে নিজেকে খারাপ লাগলে পরিবর্তনকে দোষ দেই না ৷

মাইকেল মরিসনঃ সারাবছর ধরে আপনি সাহিত্যের উপর বাজারের প্রভাবকে তীক্ষ্ণস্বরে মন্তব্য করে আসছেন ৷ আপনার কি মতামত সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের প্রভাব সম্পর্কে ? কি কি উন্নয়ন আপনার কাছে মনে হচ্ছে হ্যাঁ বা না সূঁচক অর্থে ?

জোরান জিভকভিকঃ আমি বেশ সজাগ যে, বাজার ব্যবস্থাপনা অনেক কার্যকর মানুষের অনেক প্রবৃত্তির উপর ৷ কিন্তু পুরোটাই নয় ৷ অনেকের মাঝে প্রকাশনা শিল্পের দিকে তাকালে দেখা যায় আর সবার মতন খরচের প্রতিকূলে লাভ বিবেচ্য ৷ অনেককিছুর সফলতা নেই শুধু সাহিতাঙ্গনের ক্ষুদ্রাংশ বাদে ৷ এ অবস্থাকে সাধারণ সমিকরণে প্রকাশ করা যায় অদরকারি সমান জনপ্রিয়তা সমান বাজারজাতকরণ যোগ্য সমান লাভ ৷ শেষ বিশ্লেষণে তারাই পঠনযোগ্য যারা প্রতিনায়ক স্বরূপ তারা হল বাজার নিয়ন্ত্রণকারী ও সাহিত্যের প্রচার প্রতিনিধিরা ৷ অ্যান্না ক্যারেনিনা অবশ্যই এদের ব্যতিক্রম এ ক্ষেত্রে ৷ (The Book বই বিশ্বের প্রকাশনী শিল্প বিষয়ক ৷ )
আমার প্রধান উচ্চাকাঙ্ক্ষা হলো ধনী হওয়ার লক্ষ্যে সর্বাধিক বিক্রীত লেখক না হওয়া ৷ আমার ফিকশনের সবসময় নির্দিষ্ট পাঠককূল আছে ৷ বাজার বৃদ্ধির করার জন্য এ প্রবৃদ্ধিতে আমার কোন প্রয়াস নেই বা পাঠকের সংখ্যা বৃ্দ্ধি করা ৷ (যদিও আমি চাইতাম হয়ত পারবো না ৷ ) পাঠককে দেওয়ার জন্য আমি সংখ্যা থেকে মানবৃদ্ধিতে উদ্যোগী ৷ আমার আদর্শ মানসম্মত পাঠক যদিও সংজ্ঞায় এরা সীমিতসংখ্যক ৷
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে প্রকাশক খোঁজার আমার প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে ৷ আমার ফিকশনগুলো প্রকাশনা শিল্পের চাহিদা উপযোগী নয় ইংরেজি ভাষার জন্য অন্ততঃ নয় ৷ এদিকে আমি একজন বিদেশি লেখক ৷ কিন্তু আমার অভিযোগের কোনো কারণ নেই ৷ নিকট সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ছোট প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে ৷ আমি সত্যিই গর্বিত সুন্দর সংস্করণের জন্য ৷
অস্তিত্বের আন্দোলনে ছোট ও স্বাধীন প্রকাশনকে বিশেষভাবে দেখি ৷ তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ও দয়াহীন তবে অবশ্যই দুর্বলতামুক্ত নয় ৷ ছোট প্রেসগুলো মানসম্পূর্ণ সাহিত্য প্রকাশ করে যার মধ্যে আছে অনুবাদ ৷ এদের উপর বাজার অবশ্য ভাগ্যক্রমে নিয়ন্ত্রকেরা নেই ৷ সেই সাথে প্রয়োজনও নেই সাহিত্য এজেন্টদের ৷ তারা এমনকি বেরও করতে পারে অ্যানা ক্যারোনিনা ৷

মাইকেল মরিসনঃ টেকনোলজি সম্পর্কে কি ভাবেন বিশেষ করে ইন্টারনেট ও ইবুকের ব্যপারে ? কিভাবে দেখেন ইমিন্যান্ট রিপাবলিকাশনকে নিয়ে যেখানে তারা আপনার বেশ কিছু বইয়ের ই-বুক বের করেছে ?

জোরান জিভকভিকঃ নানাভাবেই ডিজিটাল বই বিপ্লবী সূচনা ৷ কোন সন্দেহ নাই একটি ই-বুক কাগুজে বই অপেক্ষা অনেক সুবিধাজনক ৷ আগের যুগান্তরী বিপ্লব থেকে অনেক বড় পদক্ষেপ এক্ষেত্রে ৷ যখন হাতের লেখা বই থেকে ছাপানো বইতে আসে ৷ এটি আসলেই চমকপ্রদ গোটা লাইব্রেরিটাই ছোট ডিভাইসে এটে পুরে নেওয়া যায় ৷ এ পর্যন্ত এটাই শেষ বিপ্লব ৷
যদিও বিপ্লবী ঘটনা এটি আসলে ফর্মের পরিবর্তন, আঙ্গিকের নয় ৷ এর নানাবিধ ফিচার সত্ত্বেও ডিজিটাল বই আসলে একটি বই-ই ৷ বক্তব্যের সংরক্ষণাগার ৷ সংরক্ষণের বৈশিষ্ট্য খুব চমৎকার আর আগ্রহমূলক ৷ যদিও ভেতরে কিছু না থাকলে পুরোটা বৃথা ৷ আসল আঙ্গিক হলো বক্তব্যের গুণাগুণ ৷ কি পড়ছি সেটা, কিভাবে পড়ছি সেটা নয় ৷ সেকেণ্ডহ্যান্ড ব্যবহৃত অ্যান্না ক্যারেনিনা সুদৃশ্য একখানা ডিজিটাল ফিকশন অপেক্ষা বেশি মূল্যবান ৷
এই সাক্ষাৎকার বের হওয়ার সময় গত শতাব্দিতে আমার প্রকাশিত সাতটি বই পিএস প্রকাশনী বের করেছে ৷ এছাড়াও আছে The Fourth Circle ও The Ghostwriterএর ডিজিটাল সংস্করনে ৷ বাকি আছে Only Hidden Camera ও The Five Wonders of the Danube এর মধ্যে ৷ এখন দেখা যাক আমার ই-বুকে পাঠক কি সাড়া দেন ৷ ভবিষ্যতে এ রকম উদ্যোগে আমার উৎসাহ থাকবে ৷ আমি এখনও বুড়ো বা রক্ষণশীল হয়ে উঠেনি যে, বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকব সব ভাল কিছু অতিতের ৷

সূত্রঃ জোয়ান জিভকভিকের নিজস্ব সাইট

কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল
(সংক্ষেপিত, পরে আরো সংযোজন করা হবে)
**__++**__++**__++**__++**__++**__++**__+
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৮
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×