somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাহিদুল হক শোভন
এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

গল্প: না চাওয়া আলো।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"কে করেছে এই কাজটা? কার এতো সাহস। মজা করার আর বিষয় নেই? কে করেছে এটা?

ডান হাত দিয়ে শক্ত করে আমার হাতটা ধরে আছে আর আমি দাঁড়িয়ে থেকে জেনিয়ার দিকে চুপ করে তাকিয়ে আছি। আমাকে নিয়ে এই রকম একটা ঘটনা ঘটে যাবে আমি জানতমই না। আজকে কলেজে আসার কিছুক্ষন পরে আমাকে যেই দেখেছে সেই কেমন করে যেন তাকিয়ে থেকে হেসেছে। কিছুই বুঝতে পারিনি। জেনিয়ার এই রকম বলার শব্দ শুনে ক্লাসটার ভিতরে নিরবতা তৈরি হলো। ও চারপাশটা একটু ভালো করে তাকিয়ে আবার বললো..

"আবারো বলছি কাজটা কে করেছে? আমি চাই যে কাজটা করেছে সে নিজে থেকে এসে ওর কাছে ক্ষমা যেন চেয়ে যায়। আর যদি নিজ থেকে ক্ষমা না চায়..

ও পুরো কথাটা বলেনি। আমি চোখের চশমাটা একটু ঠিক করে বললাম।

"বাদ দাও না।

ও আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো। আমি চোখ দুটো নিচে করে ফেললাম। কি করবো বুঝতে পারছি না। ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো...

"কে করেছে তুমি জানো?

আমি মাথা দিয়ে না সূচক ইশারা দিলাম। ক্লাসটা কেমন যেন থমথমে হয়ে আছে। কি হতে যাচ্ছে তা যেন দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। যদিও আমি জানি এই কাজটা কার কাজ তারপরও বলিনি। ঝামেলা করা আমি একদমই পছন্দ করি না। কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। ও আমার হাতটা হাতটা টানতে টানতে রাফসানের সামনে নিয়ে এসে থামলো। আমি রাফসানের দিকে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললাম। আমার এই রকম নিচে তাকানো দেখে মনে হলো ও নিশ্চয় আচ করতে পেরেছে। রাফসান কয়েকটা কাশি দিয়ে টি শার্টের কলারটা একটু নেড়ে হাত দিয়ে চুল গুলা সিথি করতে লাগলো। আমি জেনিয়াকে বললাম...

"এই গুলা বাদ দিলে হয় না?

ও আমার দিকে রাগী চোখ নিয়ে তাকালো। ওর চোখ যেন আমাকে বলছে? না হয় না, বাদ কেন দিব। চুপ করে থাকো.. সত্য বলতে কি রাফসানের সাথে সবাই হিসেব করে কথা বলে। বলতে গেলে মোটামুটি ওকে সবাই ভয় পায়। মূলত ওর ভাই কোন দলের যেন নেতা আর ওর ভাইয়ের পাওয়ারেই কত কিছু করে। জেনিয়া ওর দিকে তাকিয়ে বললো..

"কি মজা পেলে কাজটা করে?

আমার শরীরটা কেমন করে যেন উঠলো। মনে মনে একটাই টেনশন হচ্ছিল জেনিয়া যেন কিছু না করে বসে। রাফসান সিট থেকে উঠে পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে কানটা আড়ি পেতে বললো..

"সুন্দরী কিছু বলেছো আমাকে?

আমার শরীরটা ঘামতে শুরু করলো। জেনিয়া আবার বললো..

"কেন করছো তুমি এটা?

ও হাসতে লাগলো। আসলে আমার জন্যই এত কিছু। আমার সাথে এই রকম কিছু হবে বুঝতেই পারি নি। কলেজে এসেই আমি ওয়াশ রুমে গিয়েছিলাম। ওখান থেকেই বের হয়ে হাটতেই যেই দেখেছে সেই তাকিয়ে থেকে হেসেছে। আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। ক্লাসে এসেও দেখলাম একই অবস্হা পরে রিয়াদ আমার শার্টের পিছন থেকে একটা কাগজ সামনে এনে আমাকে দিল। আমি কিছুক্ষন পর চুপ করে কাগজটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ঐটাতে লিখা ছিল... জেনিয়া আই কিস ইউ... ব্যাস এইটুকুই। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি যখন ওয়াশ রুম থেকে বের হচ্ছিলাম রাফসান আমার পিঠে হাত দিয়ে বলেছিল..

"কিরে কি অবস্হা চার চোখ?
"এই তো ভালো, তোর?
"আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি খারাপ আছি? ব্যাটা আমি সব সময় ঝাক্কাস থাকি।

আমি একটা হাসি দিয়ে চুপ করে ছিলাম। ও আবার বললো..

"শুননাল তোর সাথে নাকি জেনিয়ার ইয়ে চলতেছে।

আমি একটু অবাক হয়ে চশমাটা ঠিক করে বললাম..

"আমরা শুধুই ফ্রেন্ড।
"আরে ব্যাটা আমাকে লুকালে কি হবে আমি জানি। তবে জানিস জেনিয়া সেই বুঝলি। সেই একটা....
"আমি যাই।

ওকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়েই আমি দ্রুত হাটতে থাকি। কিন্তু আমার পিছনে যে কিছু লিখে লাগিয়ে দিয়েছিল আমি টেরই পাই নি। জেনিয়াকে আমার ভালো লাগে তবে আমি কখনো ওকে নিয়ে এইসব ভাবিনি। রিয়াদ যখন আমার পিছন থেকে এনে কাগজটা দেখাল আমার মনের অবস্হা কি হচ্ছিল তা আমি নিজেই জানি না। আমি ভয় পেয়ে গেলাম যদি জেনিয়া অন্য কিছু মনে করে? এইগুলা ভাবতে ভাবতে ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের লিচু গাছটার নিচে গিয়ে বসে ছিলাম। এর একটু পরেই ও আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাগ রাগ চোখ নিয়ে তাকিয়েছিল। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ওর এমন তাকানো দেখে ওঠে বললাম..

"বিশ্বাস করো এসবের আমি কিছুই জানি না।

ও তারপরও চুপ করে রইলো। আমি মনে মনে থাপ্পড় খাওয়ার প্রশ্তুত নিচ্ছিলাম। আবার বললাম..

"আমি কি এতটাই বোকা যে এইগুলা লিখে ঘুরে বেড়াবো? আমি তো তোমাকে ডিরেক্ট বলতে পারতাম। তুমি কি বিশ্বাস করো আমি এইটা করবো?

ও তারপরও চুপ করে রইলো। তারপর আমার হাত ধরে টানতে টানতে ক্লাসে নিয়ে আসে। আমি ভেবেছিলাম আমাকে অপমান করবে বরং এই কাজটা কে করেছে সেটা জানতে চাচ্ছে। জেনিয়া রাফসানের দিকে রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে আমাকে বললো..

"আসো আমার সাথে।

এইটা বলেই ক্লাসের সামনে আবার নিয়ে আসলো।

"কাগজটাতে কি যেন লেখা ছিল?

আমি চুপ করে রইলাম। ক্লাসের সবাই তাকিয়ে আছে।

"কি হলো বলো। কি লেখা ছিল?

আমি রাফসানের দিকে তাকালাম। ও পকেটে হাত ঢুকিয়ে তাকিয়ে আছে। আমার চুপ থাকা দেখে জেনিয়া বললো..

"জেনিয়া আই কিস ইউ। এটা লিখা ছিল তাই তো?

আমি চশমাটা ঠিক করে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিলাম। আমার কেমন যেন ঠিকঠাক লাগছে না।

"আমাকে কিস করতে চাও?

আমি চুপ হয়ে গেলাম। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও আমাকে বললো..

"করো কিস আমায়। আমি কিছুই বলবো না।

কি হতে যাচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি রাফসানের দিকে তাকালাম। ও পকেট থেকে হাত খুলে কেমন ঘোমড়া মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। ও হয়তো এই কাজটা করে জেনিয়ার হাতে আমাকে মার খাওয়াতে চেয়েছিল। ও হয়তো এইরকম আশা করেনি। আমি জেনিয়ার দিকে তাকাতেই ও আমার মুখটা দু হাতে ধরে আলতো করে গালে ছুয়ে দেয়। আমি অবাক হয়ে গেলাম। রাফসান টেবিলে একটা সজোরে লাথি দিল। কিন্তু ঐদিকে আমার একদম মন নেয় শুধু এইটুকুই ভাবছি এইটা হলো কি? পুরো ক্লাস হৈচৈ শুরু করে দিল। জেনিয়ে আমার হাত ধরে টানতে টানতে আবার রাফসানের কাছে গেল। তারপর একটু চুপ থেকে রাফসানকে বললো... কী জ্বলে?...আমি শুধু হাসলাম। কিভাবে কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতেছিনা। যে আলো নিয়ে ভাবিনি সেই আলো না চাইতেই হাতের মুঠোয়।কারো ভুল থেকে যদি ভালো কিছু তাহলে ভুলই ভালো..
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×