somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অধ্যাপক ইউনূস স্যার এবং আমাদের হীন মানসিকতা

৩১ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন: অধ্যাপক ইউনূসের নাকি এত আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, বিদেশে নাকি তাঁর খুব প্রভাব-প্রতিপত্তি, কিন্তু তাঁর কিছুই দেশের কাজে লাগাতে দেখি না। আমেরিকার বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে, পদ্মা সেতুর ব্যাপারে, সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ‘আকামা’ সমস্যার সমাধানে, তাঁকে তো কোনো দিন তাঁর প্রভাব খাটাতে দেখি না। দেশের কোনো উপকার করতে তিনি এত নারাজ কেন?
উত্তর: একজন নাগরিকের প্রভাব থাকলে তা খাটানোর কাজে সরকারের একটা ভূমিকা দরকার হয়। সরকারের রায় থেকে সেই নাগরিককে এই দায়িত্ব অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও দিতে হয়। দুই দিকের সরকারকে বুঝতে হবে যে সেই নাগরিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি সে কথা অন্য দিকের সরকারকে জানাতে পারবেন এবং তাঁরা সেটা বিবেচনা করবেন; নাগরিক শুধু তাঁর প্রভাব খাটিয়ে আলোচনাকে সহজ করে দিচ্ছেন মাত্র। তখন যেকোনো আলোচনা অগ্রসর হতে পারে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান পরিস্থিতি সে রকম নয়। বর্তমান যুগের শক্তিশালী মিডিয়ার কারণে সব দেশের সরকার জেনে গেছে, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনেকটা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি। তা ছাড়া সেটা তাঁরা চাক্ষুষ করেনও। অধ্যাপক ইউনূসের সম্মানে যখন কোনো একটি দেশে একটি অনুষ্ঠান হয়, সেখানে সে দেশের মন্ত্রীরা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা আমন্ত্রিত হন; অনেকে আগ্রহসহকারে উপস্থিত হন। কিন্তু শতভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অনুপস্থিত থাকেন। সবাই জানতে চায়, যে দেশের একজন বিশিষ্ট মানুষের সম্মানে অনুষ্ঠান, সে দেশের রাষ্ট্রদূতের তো সেখানে গৌরবের সঙ্গে উপস্থিত থাকার কথা, অথচ তিনি অনুপস্থিত কেন? অবশ্য কারণ বুঝতে কারও কষ্ট হয় না। তাঁদের ধারণাটি আরও বদ্ধমূল হয় যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।
অধ্যাপক ইউনূস একটা সামাজিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিন বছর আগে। তার নাম গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস। প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। বিভিন্ন দেশের কোম্পানি সরাসরি এর মাধ্যমে জনশক্তি আমদানির জন্য তাঁর কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কয়েকটি কোম্পানি অগ্রিম চাহিদাও দিয়ে রেখেছিল। সেসব দেশের সরকারও এই উদ্যোগে উৎসাহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত আমাদের সরকারের কাছ থেকে এ কাজ শুরু করার অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তাই এই কোম্পানির কার্যক্রম কোনো দিন আর শুরু করা যায়নি। অটোমেকানিক, অটো-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য জাপানি একটা কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ খোলার ব্যবস্থাও হয়ে গেছে। সে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাও সহজ হবে কি না এখনো বলা মুশকিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য জার্মানির একটা বিখ্যাত কোম্পানি ২০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করার সব প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাঁরা হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
তিন বছর আগে সৌদি রাজপরিবারের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য প্রিন্স তালাল বিন আবদুল আজিজ আল সাউদ বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি লেখেন যে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘আরব গালফ ফান্ডের’ বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী সভাটি বাংলাদেশে করতে চান। তাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে আরব দেশগুলোর সংবাদমাধ্যম উপস্থিত থাকবে। তিনি নিজে এবং আরব দেশগুলোর অন্যান্য গণ্যমান্য বক্তি এখানে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করার জন্য তিনি আমন্ত্রণ করেন এবং অনুষ্ঠানের সামগ্রিক অনুষ্ঠানসূচি বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দেন। প্রিন্স তালাল অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘদিনের বন্ধু। আরব গলফ ফান্ডের মাধ্যমে তিনি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুকরণে ‘মাইক্রো ফাইন্যান্স ব্যাংক’ স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ সরকার থেকে জানানো হয় যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সানন্দে তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন, তাঁর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কোনো বাংলাদেশি বক্তৃতা করতে পারবেন না। এই জবাবে প্রিন্স তালাল অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে জানান যে অধ্যাপক ইউনূসকে সম্মান জানানোর জন্যই সমগ্র অনুষ্ঠানটি তিনি বাংলাদেশে করতে চেয়েছিলেন। যদি অধ্যাপক ইউনূস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে না পারেন, তাহলে তিনি বাংলাদেশে এই অনুষ্ঠান করবেন না। তিনি এই অনুষ্ঠান কুয়ালালামপুরে নিয়ে যান। ১ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে প্রিন্স তালাল এবং আরব বিশ্বের অন্য গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সব আতিথেয়তা দেখিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন অতিরিক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নাজিব অধ্যাপক ইউনূসকে সম্মানিত করেন। প্রধানমন্ত্রী নাজিবের পরিবারের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের অনেক আগের সম্পর্ক। ১৯৯৪ সালে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে ‘তুন আবদুর রাজ্জাক পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বাবার স্মৃতিতে এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস নিশ্চয়ই আনন্দিত হবেন, যদি তাঁর কোনো ভূমিকা দেশের কোনো সমস্যা সমাধানে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু তাঁকে কাজে লাগাতে হবে তো।
লাইন গুলো কপি না করে পারলাম না। অধ্যাপক ইউনূস স্যার এতো ভালো মানুষ অথচ আমরা তাকে কাজে লাগাতে পারছি না। বাঙালী জীবনেও উন্নতি করতে পারবে না যদি না মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে না শেখে।
সুত্রঃ প্রথম আলো
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×