somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগ বন্ধের দিনগুলোতে ব্লগিং!

১০ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






আমাদের সকলের অত্যন্ত প্রিয় সামু ব্লগটি দেশের অধিকাংশ (প্রায় সব আইএসপি) থেকেই বন্ধ রহিয়াছে। আমাদের ঢুকতে হইতেছ নানা বিকল্প উপায়ে। এতসব বাঁধা বিপত্তি পেরিয়েও যাহারা ব্লগে থাকিতেছি, ব্লগে অন্যদের সহিত সময় ভাগাভাগি করিয়া লইতেছি তাহাদের সকলকে শুভেচ্ছা (আমাকে সহ)।

আজকে আসুন দেখিয়া হই এমন একটা অস্থিতিশীল সময়ে ব্লগারদের মনোবীক্ষণ:
এই পোষ্টে ব্লগারদের কয়েকটা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হইয়াছে- কে কোন ভাগে পড়ে গেলেন দয়া করিয়া জানাইবেন। যদি আরও কোনো ক্যাটাগরি বাদ পড়িয়া যায় উহাও মন্তব্যে জানাইবার জন্য বিনীত অনুরোধ করিতেছি। কথা না বাড়াইয়া কাজে যাওয়া যাউক!

১) ক্যাচালপ্রিয় ব্লগার:
এই ধরণের ব্লগারদের প্রধান চাহিদা হইতেছে লোকবল, ব্লগে আজকাল বলগার কম বলিয়া উহারা ব্লগে ক্যাচাল লাগাইতে উৎসাহ পান না এবং লাগাইলেও যুইত করিতে পারেন না। তাই উহাদের মনে ভীষণ কষ্ট, বুকে বড় জ্বালা। ক্যাচাল না করিয়া উহাদের পেটের কথা হজম অইতেছে না। উহাদিগকের অবস্থা এমন হইয়াছে যে, ক্যাচাল না করিতে পারিয়া উদাদের মস্তিষ্ক কিলবিল কিলবিল করিতেছে, এখন সামনে যাহাকে পাইতেছে তাহার সহিত’ই অকারণে ঝগড়া লাগাইয়া দিতাছে। ব্লগ বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরণের মানসিক অবস্থা সম্পন্ন ব্লগারদের মস্তিষ্কের বাম দিকের হাইপোথ্যালামাস অংশে বেশী পরিমাণ ‘মাল্টি নিক’ নামক হরমোন ক্ষরিত হতে থাকে বলিয়া উহাদিগকের শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়া যায় এবং মানসিকভাবে সবসময়য় অস্থিরতায় ভোগেন।

২) টেকনিক্যাল ব্লগার:
যে সমস্ত ব্লগার ডিপ্লোমা, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করিয়া বেকার বসিয়া ছিলেন এবং কিছু করিবার নাই দেখিয়া ব্লগে আসিয়া সময় কাটাইতেছিলেন(মাছি মারিতে ছিলেন) তাহারা যেন এইবার নিজেদিগকে যোগ্য প্রমাণ করিবার উপলক্ষ খুঁজিয়া পাইলেন!
ব্লগ বন্ধ থাকাতে যাহারা ব্লগে ঢুকিবার পন্থা খুঁজিয়া পাইতেছিল না, এই টেকি ব্লগারগণ যেন দেবদূত হইয়া আগাইয়া আসিলেন তাহাদের জন্য।
নিজেদের পুঁথিগত বিদ্যা আর গুগলস্থ জ্ঞান সম্বল করিয়া উহারা বাতলে দিতে থাকিলেন একের পর যুগান্তকারী উপায় যাহার দ্বারা ব্লগারগণ ‘দুই ক্লিকেই’ ব্লগে লগইন করিতে সক্ষম হইতে পারছেন।

৩) বেচারা কবি ব্লগার(!)
কবিরা এমনিতেই তফাতে থাকিতে পছন্দ করেন, উহারা সমাজের বাকীসব প্রাণীদের হইতে একটু যেন আলাদা, উহাদের রাখিতে হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। ব্লগের পরিভাষায় একটা বহুল প্রচলিত উক্তি বলা হইয়া থাকে যে, ‘একজন ভালো ও সফল কবি, ব্লগার হিসেবে সবচেয়ে বেশী নিকৃষ্ট হইবার যোগ্যতা রাখেন’।
সত্যিই যেন তাহাই হইয়া যাইতেছে আজিকাল, কবিদের কবিতা পড়িবার লোক আজ নাই, পাঠক নাই; নাই কবিদের অন্যদের সহিত মিশিবার, ঘেঁষিবার যোগ্যতা। উহাদের অবস্থা আজ হইয়াছে ‘ফিশ উইথআউট ওয়াটার’।
কবিতার বাজার তাই মন্দা, সূচকের কাটা মাধ্যাকর্ষণ নীতি মানিয়া চলিতেছে নিম্নমুখী।

৪) আড্ডাবাজ ব্লগার:
একথা অনস্বীকার্য যে, ব্লগের এই অবস্থায় সবচাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে আড্ডাপ্রিয় ব্লগারগণ। পূর্বে যেইখানে আড্ডা পোষ্ট ও আড্ডা-ঘরের মন্তব্য সংখ্যা রেকর্ড সংখ্যক রেকর্ড অর্জন করিতো আজকাল তাহাদের টিকি পর্যন্ত দেখা যাইতেছে না! উহাদিগকের মানসিক অবস্থা ভাবিতে গেলেও গায়ে কাটা দিয়া ওঠে! উহারা না পারিতেছেন আড্ডা দিয়া মনের কথা খুলিয়া বলিতে, না পারিতেছেন কূটনামি করিয়া মাথার বোঝা হালকা করিতে! আড্ডা-পোষ্টের এমন অবস্থায় শুধুমাত্র যে আড্ডাবাজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন তাহাই নহে, যেসকল ব্লগার আড্ডা দিতেন না কিন্তু চুপিচুপি আড্ডাঘরে যাওয়া অন্যদের কথাবার্তায় আড়ি পাতিতেন তাহারাও আজ বঞ্চিত ও অবহেলিত!

৫) আশাবাদী ব্লগার:
ইহাদিগকের মানসিক অবস্থা সবসময়েই আশাবাদী। সব সময় উহারা ঈশ্বরের মুখের দিকে চাহিয়া থাকেন এবং এই কথা বিশ্বাস করেন যে, ‘একদিন সব ঠিক হইয়া যাইবে – আবার তাহারা সুখে শান্তিতে ব্লগিং করিতে পারিবেন’। এসকল ব্লগারদের মুখে একটা কথাই ঘুরেফিরে শোনা যায় যে, ব্যপার না সব ঠিক হইয়া যাইবে।

৬) প্রবাসী ব্লগার:
যেসকল ব্লগার কলিকাত্তা, লন্ডন, দুবাই, ফ্রান্স, জার্মানি, নিউইয়র্ক, ওল্ড-ইয়র্ক, চীন, জাপান, উগান্ডা বসবাস করিতেছেন তাহাদের যেহেতু আইএসপি ব্লক করে নাই, তাই তাহারা ঠিক বুঝিতে পারিতেছেন না দেশে আসলে কী কাণ্ড হইতেছে! কীভাবে দেশ হইতে নানা প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ করিয়া ব্লগারগণ ব্লগে অবস্থান করিতেছেন! উহাদের অবস্থা তাই ক্ষণিকটা চক্ষু-চড়কগাছ!

৭) মীর জাফর ব্লগার:
এই ধরণের ব্লগার দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। উহারা গলাবাজি করিয়া এই রাষ্ট্র করিয়া বেড়াইতেছেন যে, ব্লগ চিরতরে বন্ধ হইয়া গিয়াছে, ব্লগে আর যাওয়া যাইতেছে না। ব্লগ বলিয়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই।
তাই উহারা এখন লর্ড ক্লাইভ পাইয়াছেন, অন্য ব্লগে ব্লগারদেরকে খেদাইয়া লইয়া যাইতে নানা প্রকার ফন্দি ফিকির করিতেছেন এমনকি সম্পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম ব্লগ খুলিয়া বসিবার কানাঘুষাও শোনা যাইতেছে। এমনকি এইসব লোভনীয় অফারও শোনা যাইতেছে যে, তাহাদের নতুন ব্লগে লিখিবার বদলে শব্দ প্রতি দশটাকা করিয়া নগদ অর্থ প্রদান করা হইবে।

৮) ঈদের চাঁদ ব্লগার:
এই ধরনের ব্লগারেরা আগেও মাঝেমধ্যে ঈদের চাদের মত ব্লগে হাজিরা দিতেন, এখনও তাই। পার্থক্য এই যে, আগে কিছু বলিতে পারিতেন না, এখন তবু বলিবার পাইয়াছেন! একটা অজুহাত পাইয়াছেন!
কয়েকমাস পর পর উহারা ব্লগে লগইন করিয়া থাকেন এবং লগইন করিয়াই এই বলিয়া পোষ্ট প্রসব করেন যে, ‘এতদিন ধরিয়া নানাবিধ চেষ্টা তদবির চালাইয়াও ব্লগে ঢুকিতে পারিতেছিলেন না। হুজুরের পানি পড়া, বাবার তাবিজ কিছুতেই যখন কাজ হইতেছিল না- তখন আইজ যখন দেখিলেন যে সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হইয়াছে তখনই ভাবিলেন যে আজ ব্লগে যাওয়া যাইবে সন্দ করি!’
তুমুল আনন্দের সহিত এই পোষ্টখানা করিয়াই তিনি হয়ত তাহার খিড়কি দিয়া দেখিতে পাইলেন যে, সূর্য দেবতা আবার ঘুরে ফিরে পশ্চিম হইতে পূর্বে যাইতেছে, অতঃপর আবার ব্লগের সহিত তাহার সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হইলো।

৯) মিঃ পারফেক্ট ব্লগার:
দিকে দিকে যখন শোনা যাইতেছিল যে, ব্লগে ঢোকা যাইতেছে যা, মন্তব্য করা যাইতেছে না। ভিপিএন কাজ করিতেছে না- ব্লগ ব্যান করা হইয়াছে!
এরকম কঠিন সময়েও কিছু কিছু ব্লগার সংসদে সরকার দলের মত দাবী জানাইয়া আসিতেছিল যে, ব্লগে কিছুই হয় নাই- কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নাই। উহারা আগের মতই নিত্যদিন যেমন ব্লগে লগইন পারিতেন এখনও পারিতেছেন—উহাদের কোথাও কোনো সমস্যা হইতেছে না।

১০) বিকল্প ব্লগার:
এই ধরনের ব্লগার ব্লগে বেশ সেলিব্রেটি ছিলেন এবং এখনো আছেন। তথাপি ব্লগের এই ক্রান্তিকালে উহারা যেন গা বাঁচাইয়া চলিতেছেন। ব্লগে উহাদিগকে খুব একটা দেখা যাইতেছে না। ব্লগ ছাড়িয়া উহারা এখন ব্যস্ত হইয়াছেন অন্যান্য নানাবিধ কাজে। শোনা যাইতেছে কেহ কেহ শুরু করিয়াছেন পাবলিশিং ও প্রিন্টিং ব্যবসা। কেহ আবার খুলিয়া বসিয়াছেন নাচা ও গানার স্কুল। কেহ কেহ ব্লগে আসিয়া খানাদানার পোষ্ট করিতে না পারিয়া নিজেই একখানা খাবারের হোটেল খুলিয়া বসিয়াছেন, যেখানে ব্লগার পাশ টোকেন দিয়া অর্ধেক মূল্যে খাওয়া যাইবে এমন ব্যবস্থাও করা হইয়াছে।
মনে মনে এইসব ব্লগারেরা নিজেরাও অপেক্ষায় রহিয়াছেন যে, কবে ব্লগ ঠিক হইবে!


১১) হতাশাবাদী ব্লগার:
ইহারা ধরিয়া লইয়াছেন যে, ব্লগ আর চালু হইবে না। যাহা গেছে তাহা একেবারেই গেছে! ইহারা তাই নিজেদেরকে মানাইয়া লইতেছেন অন্যান্য কাজে। ব্লগ বলতে দেশে কখনো কিছু ছিল না এমন প্রছন্ন ভাবনা নিজেদের মনের মধ্যে লালন পালন করিয়া উহারা নিজেদেরকে সান্ত্বনা দিতেছেন।


১২) আমজনতা ব্লগার:
জ্বি ভাই ! ঠিক ধরিয়াছেন! ইহাই আমি- আপনি- আমরা ! যাহারা সব অবস্থাতেই ব্লগে থাকেন যেভাবে পারেন থাকেন। ব্লগ যেভাবে চলিতেছে সেইভাবে নিজেকে মানাইয়া লইয়া থাকেন। ইহাদের অভিযোজন ক্ষমতা প্রখর। ইহারা সংসারের বাবাদের মত, সমস্ত অভাব অভিযোগ মানিয়া লইয়াও সংসারধর্ম পালন করিতে থাকনে।



****
সকল ক্যাটাগরির সকল ব্লগার’কে উৎসর্গ করা হইলো এই পোষ্ট।




জাহিদ অনিক
১০/৫/২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১২:০৯
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×