বাসা ভাড়া নিতে কি পরিমান হুজ্জত পোহাতে হয় টা আর না লিখি। ব্যাচেলর লাইফে আমার সব বন্ধুরাই হয়তো কম বেশি ঐ হুজ্জত পোহানোর মদ্ধ দিয়ে গেছে।মাসের ১০ তারিখ হয়ে গেছে। এখনো কোন বাসা ঠিক করতে পারিনাই। বাসা খুজি ঠিকই , কিন্তু কোন বাসাই মন মতো হয় না। গলির চিপায় খালি সাব্লেট এর TO-LET । তানভিরকে বললাম, এতো বাসা খুজে লাভ নাই। চল সাব্লেত ঠিক করে ফেলি।
সাব্লেতে আগে কোন দিন থাকসস? বন্ধু জিগায়।
থাকি নাই বইলাই তো থাক্মু বলেতে বলতে সামনের TO-Let লাগানো বিজ্ঞাপনে ফোন দিলাম। এক মধ্যবয়েসি মহিলা ফোন ধরল।।আমাদের একটা ঠিকানার সামনে আসতে বলল।বহু চিপা চাপা ডিঙ্গাইয়া ঐ বাসার সামনে গেলাম। বিল্ডিং বাসা। ৫ তালা।জন্মের পর থেকে রঙ ছাড়া।সরি। রঙ করবো কি, প্লাস্টারই তো নাই ।জং ধরা ময়লা রেলিঙে হাতটা ভরাইয়া ৪ তালায় উঠলাম।দরজাটা এতো পুরনো যে জোরে একটা কিক মারলে কলিং বেল ছাড়াই দরজা খুলে যাবে।
যাক। ঐ মহিলা এসে দরজা খুলল শেষে।
আমরা হাসি মুখে ঢুকলাম। ধুকেই একটা ছোট ডাইনিং স্পেস।ডাইনিং স্পেস বলে অপমান করা হবে।একটা জুতার আলনা আরেকটা ভাঙ্গা কাঠের টেবিল।ভিতরে দুইটা রুম আরেকটা রান্না ঘর। কোন ঘরটা যে আমরা ভাড়া নিতে যাচ্ছি বুঝতে পারতেছিলাম না। আমাদেরকে ঐ মহিলা দ্রুতই টেনশন মুক্ত করলেন।২টা রুমের রান্না ঘরের লাগোয়া রুমটায় উনি আর উনার মেয়ে থাকেন।
মেয়ে ইন্টারে পড়ে।আর আমাদের পাশের রুম ভাড়া দিবেন। পাশের রুমে সরি পাশের খোপে গিয়ে গিয়ে দেখি সাথে এটাচড বাথ্রুম ও আছে।
তানভীরের মুখ দিয়ে ফট করে বেরিয়ে এল অওাউ!!
কিন্তু বাথ্রুম দেখেই বেচারা ফুটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। ঐটা এটাচড সলিড টয়লেট। কোন মতে হয়তো গোসল নামে একটু রসিকতা করা যেতে পারে। কিন্তু কাপড় চোপড় ধুমু কৈ?
মহিলা মেবি পীর টাইপের হবেন। আমাদের মনের কথা উনি চট করে বুঝে ফেললেন। আরে কাপড় চপর ধুইতে গেলে পাশের বাথরুমে কাপড় ধুঁয়া যাবে।
পাশের বাথ্রুম মানে তারা যে রুমে থাকেন ঐ রুমের এটাচ বাথ্রুম। আমার সাথে সাথে একটা দৃশ্য বায়স্কোপের মতো চোখে ভেসে উঠল, আমি কাপড় ধুয়ে ঐ বাথ্রুম থেকে বালতি নিয়ে বের হচ্ছি আর ইন্টারে পড়া মেয়ে পা দুলিয়ে পড়া বাদ দিয়ে ফিক করে হেসে উঠছে!! বায়স্কোপটা রোমান্টিক না হরর বুঝতে পারলাম না।
এর ভিতর মহিলা আবার কথা শুরু করলেন।আমরা বাজার করতে পারবনা। কারন এই বাসায় বুয়া রাখা যাবে না।এই মহিলাই এই বাসার ম্যানেজার।মাস শেষে খাবারের থাকা পেমেন্ট করতে হবে।
আমি বলে উঠলাম বাহ !!
জোরেই হয়তো বাহ বলে উঠলাম। মহিলা আমাকে থামিয়ে দিয়ে আরও যোগ করা শুরু করলেন।ঐ ইন্টারে পড়া মেয়ে নাকি বিবাহিত।হাসবেন্ড খুলনা চাকরি করেন।মাসে দুবার এসে থাকেন।
হায় হায়।ঐ লোক কি তখন রাতে আমাদের সাথে থাকবেন ? না ঐ মহিলা এসে আমাদের সাথে থাকবেন? নাকি আমাদের তখন বাইরে গিয়ে থাকতে হবে? বিশাল এক ক্লাইমেক্স।
এইবারও মহিলা পীরের মতো আমাদের মনের কথা বুঝে ফেললেন।
সমস্যা নেই, ঐ সময় আমি রান্না ঘরে থাকবো।মহিলার চটপট জবাব।
মহিলাকে দেখে এইবার মায়া লাগল।আহহ। সামান্য কয়টা টাকা।এর জন্য কতো কষ্ট, কতো অপমান।
মহিলাকে নিরাশ করতে মন চাইল না।
বাসাটা নেয়া যেতে পারে, কি বলিস?
অবশ্যই।এখনি এডভান্স করে দিচ্ছি। খালাম্মা ঝিগাতলা মোড়েই তো এটিএম বুথ তাইনা?বন্ধুর ঝটপট উত্তর।
পুনশ্চঃ অবশেষে দুর্দান্ত বাসা পাওয়া গেছে। ঝামেলার শেষ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭