পাইকারী কাপড়ের ব্যবসা করতেন হযরত ওমর (রঃ)।
ব্যবসায়ীরা একটু ভাল খাবার দাবার খায়। প্রতিদিন বাজার করে।
হযরত ওমর (রঃ) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
প্রায় দু'বছর হতে চলল ঘরের মধ্যে আকাল পড়েছে। যবের রুটি তাও চালনি দিয়ে চালা নিষেধ।
আমিরুল মুমিনিনের স্ত্রী বললেন, "আপনি ও বাদশাহ হলেন, আর ঘরের মধ্যে আকাল নামল, আজকে দেড় বছরের উপর বাচ্চারা পিঠা খেতে পারে না, আগে কত পিঠা, অন্যান্য নাস্তা, ভাল খাবার দাবার খেত, দেখেন বাচ্চার কি রকম শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে"।
আমিরুল মুমিনিন বললেন, "ঐ পিঠা, নাস্তা এগুলো হবে না, ঐ আফ্রিকা থেকে শুরু করে ফোরাত নদীর কুল পর্যন্ত, এই অর্ধেক পৃথিবীর প্রতিটি পরিবার পিঠা খেতে পেরেছে কিনা আমি এখনো এটার খবর নিতে পারিনি। সুতরাং দুই দিরহাম এটাই আমার বেতন, এটা দিয়ে যা চলে, এটাই তোমরা চালাও"।
স্ত্রী দেখলেন এমন আমিরুল মুমিনিন রাষ্ট্রপ্রধান যার সাথে কথা বলে কোন কুল কিনারা পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন দুই দিরহাম এটা থেকে পিপড়াঁর মত সিকি পয়সা, আধা পয়সা এভাবে জমিয়ে জমিয়ে দুই মাস পর কিছু পয়সা যখন জোগাড় হল, খাদেম আসলামকে বাজারে পাঠিয়ে নাস্তা বানানোর কিছু উপকরণ কিনে আনল। এবং কিছু নাস্তা তৈরী করা হল। আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর (রঃ) যখন নাস্তা করতে বসলেন তখন উনার সামনে নাস্তার প্লেট দেওয়া হল। নাস্তার প্লেট দেখে আমিরুল মুমিনিনের চোখ ছানাভরা হয়ে গেল।
স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল, "আরে এগুলো কোত্থেকে? নিশ্চয় আমার অজান্তে বায়তুল মাল থেকে এনেছ?"
স্ত্রী বললেন, "আপনার বায়তুল মালের যে গর্ভণর, যে ঈমানদার, যে জিম্মাদার, কি পোস্টে যাদের দিয়েছেন, আমার মত একজন হতভাগী সারা জীবন বায়তুল মালের দরজায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকলে ও আমাকে একটি চিনির দানা দেওয়া হবে না, যদিও আমি ফার্স্টলেডি, সেখানে আমার কোন গুরুত্বই নাই। সুতরাং তারা ও দেবে না, আর আপনি নিষেধ করার পর আমি যে আনতে যাব তা কি করে ভাবতে পারলেন।"
আমিরুল মুমিনিন বললেন, তাহলে এই পয়সা তুমি কোথায় পেয়েছ?
আমিরুল মুমিনিনের স্ত্রী বললেন, "আমি গত দুই মাসের বেতন থেকে কিছু পয়সা বাচিয়েছি, তা থেকে এই নাস্তা করেছি, আপনার বেতনের টাকা, হালাল, আপনি খান।"
আমিরুল মুমিনিন নাস্তার প্লেট সামনে ঠেলে দিয়ে মসজিদে নববীতে গেলেন। মিম্বরে বসে মুয়াজ্জিনকে ডাকলেন। বললেন, "আজান দাও"।
মুয়াজ্জিন একবার আমিরুল মুমিনিনের দিকে তাকান আর একবার বেলার দিকে তাকান। বেলা বাজে সাড়ে আটটা। ফজরের আজানের তো সময় না, জোহর তো অনেক দেরি। এই অসময়ে আজান দিতে বলে কেন?
এটা ছিল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সময় জরুরী তলব। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে যদি নামাজের ওয়াক্ত ছাড়া কোন জরুরী প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অসময়ে আজান দিয়ে সবাইকে ডাকা, আজানের ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে ন। পরামর্শ করার জন্য সবাইকে আসতে হবে। যে যেখানে আছে আমিরুল মুমিনিনের ভাষণ শোনার জন্য যেতে হবে। রাষ্ট্রীয় বিপদ।
সবাই আসল। আমিরুল মুমিনিন, হামদ ও সানা পড়লেন। তারপর বললেন, "দুই বছর আগে তোমরা যখন আমার বেতন নির্ধারণ করছিলে দৈনিক দুই দিরহাম। তখন বলেছিলাম আমার এত লাগে না, এত লাগে না, অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে, আরো কম। এই দেড় থেকে দুই বছর পর দেখলাম এই দুই দিরহাম থেকে ও উদ্বৃত থেকে যায়। এই বেতন এখনই কমাও তা না হলে এখনই আমি খেলাফতের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিব"।