যারা লুল শব্দটা দেখে মুখের সামনে গামলা ধরে পোস্ট পড়া শুরু করসেন তাদেরকে বলি, ভাইয়েরা সময় থাকতে ভাল হইয়া যান। কারণ আমার একজন মেন্টর খুব দরকার।
ছোটবেলা থেকেই আমি খুব নরম-শরম-দুব্বল টাইপের ছেলে ছিলাম, যে কারণে অন্যান্য দুর্ধর্ষ-ষণ্ডা টাইপের পোলাপাইনের সাথে আমার তেমন খাতির জমে নাই (সবাই চান্স পাইলেই আমারে ধইরা মাইর লাগাইত)। ফলস্বরূপ আমার ফ্রেন্ড-সার্কেলে একজন ছাড়া সবকয়টা ছিল মেয়ে (পাঠক, ফিচলে হাসি দেওয়ার কিছু নাই, এইডা স্কুলে ভর্তি হওনের আগের কাহিনী)। তয় অত ছুডুবেলার কোন লুলকাহিনী স্মরণ নাই, তাই একটু সামনে আগাই।
আমি স্কুল লাইফে কোনদিন কোন মেয়ের সাথে কথা কইতে পারি নাই, বিশ্বাস করেন! এই মাথায় হাত দিয়া কসম কইতাসি, হ্যাঁ ঠিক ধরসেন, আস্ত একটা ভুদাই নাম্বার ওয়ান ছিলাম যে! ওহ, একবার কইসিলাম ক্লাস ফোরে পড়ার সময়। কি কথায় যেন আমার এক ক্লাসমেটের ছোটভাইরে "অলসের ডিম" কইসিলাম, সঙ্গে সঙ্গে বান্ধবী আমার উপর চড়াও হইলেন, "কি! তার মানে আমার আব্বু-আম্মুকে তুমি অলস বললা?? তোমারে আমি..!" দৌড়টা ভাল পারতাম তাই কুনুরকমে পালায় বাঁচছিলাম সেইদিন!!
আর ব্যাঙ-টিকটিকি ধরায় ওস্তাদ ছিলাম বইলা ক্লাসের প্রায় সব বিটলামি-বদমাইশিতে আমার পরোক্ষ অবদান ছিল, যদিও আজকের আগে কোনদিন স্বীকার যাই নাই।
আরেক কাহিনী হইল, এক বিটলা ফ্রেন্ড ছিল আমার। ক্লাস ওয়ানে তখন, হারামজাদা আমাদের ফার্স্টগার্লরে গিয়া বলে আমি নাকি ওরে ভালবাসি!! ব্যাটার গায়ে আমার চাইতে বেশি শক্তি ছিল, নাইলে ...
এসএসসি পরীক্ষার সময় আমার সামনে আর পাশে বসছিল দুইটা মাইয়া, সামনেরটা পড়াশোনায় ডাব্বা হইলেও চালু ছিল। ফলে সবকয়টা পরীক্ষায় সে আমার খাতা ফটোকপি কইরা নিজের খাতা ভরসে। কিন্তু যখনই পাশের মেয়েটা আমার খাতা দেখার ট্রাই নিত সঙ্গে সঙ্গে এই মেয়ে বলত, "খাতা ঢাকো, খাতা ঢাকো, ওই মেয়ে তোমারটা দেখে লিখতেসে!" আজব ফিমেল সাইকোলজি!!
এরপরের কাহিনী কলেজলাইফের। একবার বাড়িতে ছুটি কাটাইয়া কলেজ ফিরব, পাশের সিটে বসছেন এক ইয়াং স্মার্ট আন্টি উইথ উনার পিচ্চি। দুই সিটের দেড়খানা তিনি দখল কইরা আমারে গায়ে গা ঘেষে চাপায় দিলেন একদম জানালার সঙ্গে। আমার মোশন সিকনেস থাকার কারণে উইঠা যাইতেও পারি না আবার কিছু বলতেও পারি না বেয়াদব মনে করে যদি! যাই হোক জার্নিটা খারাপ হয় নাই অবশ্য!!
মেডিকেলে ফার্স্ট ইয়ারে খুব ভদ্র ছিলাম, তবে সেকেন্ড ইয়ারে উঠতে উঠতে যাকে বলে পেকে গেলাম। দুইএকটা মেয়ে আবার পিছে লাগাও শুরু করল। যাদের ফোনের যন্ত্রণায় অপরিচিত নাম্বার থেকে কল রিসিভ করা বন্ধ করতে হইসিলো। যাই হোক, টিউশনি শুরু করলাম (কারণ বাপের টাকায় আরাম কইরা বিলাসিতা করা যাচ্ছিল না)। সেখান থেকে কয়েকটা কাহিনী বইলা পোস্টের সার্থকতা পুরা করি।
কাহিনী ১- (যা থেকে প্রমাণ হয় আমি মহাপুরুষ)
শহরের গোমস্তাপাড়ায় এক মেয়েকে পড়াইসি টানা দুই বছর। মিনিস্কার্টের প্রতি উনার বিশেষ দুর্বলতা ছিল। যার ভুক্তভুগী ছিলাম এই অভাগা আমি। তাকে পড়াইতে হইত ড্রয়িং টেবিলে, বিজ্ঞ পাঠক বুঝতেই পারতাসেন... তবে তাহার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার সাহস কখনো হয়নাই। নিরুপায় আমি নিজের পৌরুষকে দমন করিয়া গেছি সফলভাবে।
কাহিনী ২- (এটাকে পুরুষ নির্যাতন বলা যাইতে পারে)
এইটা বাবুপাড়ায়, মেয়েটা ছিল খুব ডাকাবুকো টাইপ আধুনিকা। মুখে কিছু আটকাইতো না। একদিন পড়াইতে গেছি, গিয়া দেখি বাসায় তিনি ছাড়া আর কেউ নাই। আন্টি নাকি কাজের মেয়েকে নিয়ে মার্কেটে গেছে, আঙ্কেল অফিসে। আমি দুরুদুরু বক্ষে প্রবেশ করিলাম, মনে মনে তসবি-দরুদ যা জানি সব পড়তাসি, আল্লাহ, আজকে মান-সম্মান বাচাঁইয়ো। সে একে একে মেইনগেট, বাসার গ্রিল এবং ঘরের দরজা সব লাগায় দিল। তারপর বলল, "আম্মুর আসতে দেরী হবে!" আমি তো অলরেডি ঘামতে শুরু করসি। কোনরকমে বললাম, "আমার একটা জরুরী কাজ আছে আপু, এখনি যেতে হবে।" সে বলে,"কেন ভাইয়া, থাকেন না প্লিজ!" তারপর কি হইসে মনে নাই, কিভাবে যেন রাস্তায় পৌঁছায় বুঝা পাইলাম বুকের বামপাশে স্টিম-ইঞ্জিন ফুল থ্রটলে। নরমাল হওয়া পর্যন্ত খালি আলহামদুলিল্লাহ জপসিলাম। এরপর আর কখনো ওইমুখে যাইনাই, বেতনের টাকাটা এখনো বাকি পইড়া আছে গো!!
কাহিনী ৩- (অমর প্রেম...)
এক ফ্রেন্ডের কাজিনের সাথে কিভাবে কিভাবে যেন মোবাইলে খানিকটা খাতির হয়া গেছিল তিন বছর আগে। জীবনে প্রথম প্রেমের কিঞ্চিত সম্ভাবনাকে অংকুরে বিনষ্ট কইরা দুই মাসের মধ্যেই এক প্রবাসীর সাথে তার বিয়া হইয়া যায়। খুব কিউট একটা বেবি আছে তার। তয় আট্টাশ খাওয়া ঘটনা হইল, কয়েকমাস আগে আমারে লন্ডন থেইকা ফোন কইরা কয় সে নাকি আমারে ছাড়া থাকতে পারতাসে না, আমার কাছে চইলা আসবে বাচ্চাসহ!! ভাবলাম, বউয়ের সাথে বাচ্চা ফ্রী এইযুগে আর কয়জনের কপালেই বা জোটে! কিন্তু রাজি হইতে পারি নাই, কারণ ততদিনে একজনের লগে ইটিসপিটিস চলতাসে। তার কাছে অবশ্য অনুমতির ট্রাই নিসিলাম, বাট ঘরের কথা না হয় ঘরেই থাক!! :!>
কাহিনী ৪- (রহস্য রহস্য রহস্য)
থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় একটা অচেনা নাম্বার থেকে এসএমএস আসা শুরু হইল, যার মধ্যে দুইটা-তিনটা চরমভাবে ১৮+ (আমি মডুগো ভয় পাই, তাই দিলাম না)। ফোন ব্যাক করলে মাইয়া কথা কয় না, শুধু হাসে আর গুনগুন কইরা গান গায়, তুমি আমার প্রথম সকাল...। তার পরিচয় বাইর করতে পারি নাই। পরে নাম্বারটা হারায় ফেলসি, আর সেও মনে হয় আমাকে কাপুরুষ ভাইবা হাল ছাইড়া দিসে!
কাহিনী ৫- (যে কারণে সকল লুলামির সুযোগ বন্ধ হইল)
গত নভেম্বরে, তখনও আমার ইয়ের সাথে ইয়ে হয় নাই। উনার বান্ধবীরা ধরলো, ভাইয়া খাওয়াইতে হবে। ওক্কে, খাওয়াইলাম। উনি বসছিলেন আমার পাশে। খাওয়ার পর যত্ন কইরা আমার গ্লাসে পানি ঢাইলা দিল। বেকুব আমি মনে করলাম, মাইয়া আমার প্রেমে পইড়া গেছে রে!! পরে এই কথা বলায় যে ঝাড়িটাই না দিসিলো ভাই!! আম্মো ছুপা রুস্তম, কাবু কইরা ছাড়সি না শেষ পর্যন্ত!! কিন্তু দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি নাই, স্বাধীনতা, তুমারে বড় মিস করি...
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
[দৃষ্টি আকর্ষণ: এইসব ঘটনার কোনটার সাথে কেউ যদি আমার বা আর কারো জীবনের কোন ঘটনার আংশিক বা সম্পূর্ণ মিল খুঁজে পায় তবে সেটার সম্পূর্ণ দায়ভার তার নিজের, লেখকের এক্ষেত্রে কিছুই করার নাই]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:৫৮