somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিমিকে আটকানো গেলনা।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি আসলে কোন কিছুই আটকাতে পারিনা।
বাল্যকালে বন্ধুরা সবাই ঝিঝিপোকা ধরতো। নারিকেলের আইচা একটার সাথে আরেকটা ঘষলে একটা খসখসে শব্দ হয় যার আকর্ষনে ঝিঝি পোকারা ধরা দেয়। ছেলেরা যখন একের পর ঝিঝি পোকা ধরতো, পেটের মাঝখানে চাপা দিয়ে ঝিঝিঝিঝিঝি শব্দ বের করতো, আমি তখন তাদের দেখতাম।হিংসা করতাম। ভাবতাম কেন তারা পারে আর আমি পারিনা। সেই ভাবা আমার কোনদিনই শেষ হয়নি। আর সারাজীবনে আমি একটি ঝিঝি পোকাও ধরতে পারিনি।

বিকেলে যেখানে ক্রিকেট খেলতাম সেই মাঠে প্রচুর ফড়িং ছিল। হেলিকপ্টারের মত দেখতে। ছেলেরা খেলার ফাকে ফাকে ফড়িং ধরতো। পা টিপে টিপে কাছে গিয়ে ফড়িংটা বোঝার আগেই দুই হাত বাড়িয়ে খপ করে ধরে ফেলতো। তার পরে পাখা ছিড়ে ছেড়ে দিত। পাখাহীন ফড়িং নিরন্তর ব্যর্থ চেষ্টা করতো পালিয়ে যেতে। তার প্রলম্বিত ছটফটানি ছেলেদের আনন্দকে দীর্ঘায়িত করতো, পালাতে সে পারতোনা। আমি সারাজীবন অন্যের ফড়িং ধরাই দেখে গেলাম। আমি যতবারই যত পা টিপে টিপেই যাই না কেন কি করে যেন তারা টের পেয়ে যেত। আমার আর ফড়িং ধরা হয় নি।

ধানকাটা হয়ে গেলে মাঠের ভেতরে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হতো। কার ঘুড়ি কে কাটতে পারে তা নিয়ে প্রবল উত্তেজনা। মাঝে মাঝে ঘোষনা দিয়ে ম্যাচ। দুবাই ওয়ালা বনাম সৌদি ওয়ালা। বাজার থেকে দামী সুতো কেনা হতো, সেই সুতায় মাখা হতো কাচের গুড়ো। আমরা ছোটরা অপেক্ষায় থাকতাম কখন কার ঘুড়ি কেটে যায়। তারপর দৌড়ে সেই সুতোসহ ঘুড়ি ধরতাম। যে ধরতে পারে তার সুতোসহ ঘুড়ি। সারাজীবনে আমার মাথার উপর দিয়ে, কাধের পাশ দিয়ে কত সুতো ভাসতে ভাসতে চলে গেল ধরতে আর পারলাম কই। একজন শিখিয়ে দিয়েছিল সবসময় অপরের জন্যে দোয়া করবি তাহলে দেখবি আল্লাহ তোর ইচ্ছা মিটিয়ে দিয়েছে, তার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে শুধু অন্যের জন্যে প্রার্থনা করে গেলাম, তারাই ঘুড়িগুলো নিয়ে গেল। আমার জন্যে হয়তোবা কেউ প্রার্থনা করে নি। এ কারনে আমারও আর একটা সুতাসহ ঘুড়ি আটকানো হলোনা।

আরো বড় হয়ে সবাই আরো দুরন্ত হয়ে গেল। কচুরীপানা আর মোতরার ঝোপের আড়ালে হঠাৎ করে যদিবা একটা ডাহুক দেখা যেত অমনি হৈ হৈ করে ঢিল ছুড়ে পেছন পেছন মাইলের পর মাইল দৌড়ে তাকে ধরে আনা হতো। তারপরে সবাই মিলে চাদা দিয়ে সেটা দিয়ে খিচুড়ী রান্না হতো। সেই খিচুড়ী খাওয়ার জন্যে সবসময় আমাকে দ্বিগুন চাদা দিতে হতো। কারন ডাহুক ধরায় আমার যে কোন অবদান থাকতোনা। থাকবেই বা কি করে? আমি যে কিছু মায়ায় ভুলাতে পারিনা।

এইভাবে আমার জীবন ধরতে না পারার এক বিশাল মিলনমেলায় রুপান্তরিত হল। আমি কিছুই ধরতে পারিনা। সেটা হোক বড়শী ফেলে মাছ কিংবা বন্ধুদের ছুড়ে দেয়া বল। সব হাতের ফাক গলে ফস্কে বেরিয়ে যায়। ধরতে পারিনা।

একসময় আমার স্বপ্ন বেড়ে গেল।
আমি রিমিকে ধরতে গেলাম। আমার হাতে আসার আগেই মাঝপথে কেউ একজন তাকে ছো মেরে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল।
আমার আর তাকে ধরা হলোনা।

সারাজীবনভর সব আকাংখিত সব বস্তু আমার কাছে অধরাই থেকে গেল।
একজীবন কেটে গেল ধরতে না পেরে, এক হৃদয় ভেঙ্গে গেল রিমিকে হারিয়ে।

(রাসেলের ডাইরি থেকে)
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×