বাঙ্গালীকে, আরো বিশেষ করে বললে আমাকে পূর্নিমা দেখতে চিনিয়েছেন তিনি। উজ্জ্বল পূর্ণিমা তাকে উদ্দেলিত করেছে, বারে বারে পূর্ণিমা এসেছে তার লেখায়। পূর্ণ চাদের আলোয় স্নান করে উন্মাতাল হতে চিনিয়েছেন। আমার জীবনে পূর্ণিমা অনেক বছরের সেই জন্ম থেকে। আমার বাবার কিংবা দাদার আমলেও পূর্ণিমা হতো। প্রাগৈতিহাসিক কালের, অতি পূরাতন এই বিষয় বাঙ্গালীকে হাতে ধরে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তিনি বুঝতে শিখিয়েছেন।
সেই মনকাড়া সৌন্দর্য্যে পাগল হয়েছি বার বার, আবারো হবো। তখন হয়তো থাকবেন না তিনি, আমরা থাকবো তার দেখানো পথে। জোৎস্নায় পাগল হবো, গভীর দুঃখে বনে যাবো। উন্মাতাল হয়ে ঘোরের জগতে যাবো।
তিনি অসুস্থ, তার সুস্থতা কামনা করে এই কবিতাটা তাকে উৎসর্গ করে দিতাম, কিন্তু কবিতা তাকে উৎসর্গ না করে শুধু কৃতজ্ঞতা জানালাম, এই কবিতা শুধু একজনের। আমার এই কবিতা শুধু একজনকেই উদ্দেশ্য করে লেখা। যদিও এই কবিতা তার শোনার সম্ভাবনা শুন্যের কাছাকাছি। তবুও তাকে ছাড়া এই কবিতা আর কাউকে প্রাণে ধরে দেয়া গেলনা!
আমি অপারগ। ক্ষমাপ্রার্থী!
তোমার জন্যে, পূর্ণিমা!
--------------------
আজ রাতে পূর্ণিমা।
অনেক বছর আগে এমনি এক জ্যোৎস্না রাতে
উথাল পাতাল জ্যোৎস্না দুহাতে মেখে
হারিয়েছিল সে অপার্থিব মুগ্ধতায়, স্বপ্নিল ভালবাসায়।
হাতের মুঠোয় প্রিয় মানুষের হাত রেখে একজোড়া মানব মানবী
জ্যোৎস্না দেখতো তারা একে অপরের সাথে
গভীর ভালবাসা, মাতাল হাওয়া আর উত্তাল সৌন্দর্যের ভেতর
ভালবাসতে বাসতে বাসতে একসময় হারিয়ে গেল।।
আমাদের মতই ছিলো তারা
ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, আনন্দ-বেদনায়, কামে-কলায়।।
ভালবাসতে বাসতে নাই হয়ে গেল, বাগানবিলাশি সেই জোৎস্নায়।
অনেক আসা, অনেক যাওয়া, অনেক অনেক মানবধারা।
পেরিয়ে আজ আমার পালা
আমার সামনে আজ জ্যোৎস্না।
বাশবাগানে মৃদুমন্দ বাতাস, কলতলায় পানির শব্দ।
সেখান থেকে দাঁড়িয়ে বাশবাগানে সরু পাতার ফাকে ফাকে উকি দেয়
দেখি এক চাঁদ থালার মতো বিশাল, অন্য ভুবনের শুভ্রতা।
অনেক জনমের অনেক স্বপ্ন সাক্ষী, অনেক ইতিহাস বুকে নিয়ে
আজো উঠেছে সেখানে, তার যেখানে থাকতে হয়।
আমাদের নিরন্তর যাওয়া আসা চলে।
আমাদের বদল হয়।
মানচিত্র, জাতীয়তা, সমাজ, সভ্যতা।
ধর্ম বদলে যায়, দিনে দিনে ইতিহাস পালটায়।
মুখের ভাষায় ঘুণ ধরে, চুপে চুপে বদলে যায়।
প্রতি পক্ষকাল পরে শত-জনম ধরে
সে সেখানেই আছে, অনন্ত কালের যাত্রায়
আজ আমি অনেক ব্যস্ত, গভীর আলোচনায়
ফ্রয়েড, লেনিন, মার্ক্স আর মোহাম্মদ, অর্জুন, অশোক আর শ্রীকৃষ্ণ
জ্যোৎস্না দেখার সময় কোথায়?
পেছন থেকে শুরু, প্রতিবার আরো পেছনে।
যতই সামনে যেতে চাই
পেছনের টানে আরো একধাপ পিছিয়ে যাই
সমাজ, সংসার, সভ্যতা
ইতিহাস, ঐতিহ্য আর নৈতিকতা
এক এক করে টেনে নেয়, পেছনে, অন্ধকারে, আরো ভেতরে।
একরাশ কালো অন্ধকারে।
এইবার আমি বাস্তব। আজন্ম মানব, উত্থিত পৌরুষ।
গরুর মাংস-পরোটা, পেতলের টুংটাং
সবজীর হালুয়া প্লেটের উপরে নীচে মাখামাখি।
ডাইনিং এর টেবিলে অসীম খাবারের পসরায়
সেই সময়ে সে আরো সুন্দর হয় প্রতিমুহূর্তে
ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় বিম্বিত সৌন্দর্য
যখন বাড়তে থাকে, সমান্তরাল আর গুণোত্তর ধারায়
দেহের খাবার আর মনের খাবার দুপাশে নিয়ে
মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকি আমি
ফার ফ্রম দ্যা মেডিং ক্রাউড
এই কথায় ভাসতে ভাসতে আত্মা চলে যায় দূর প্রান্তে
অনেক দুরের ঘাসের বনে
আলতা রাঙ্গা ফর্সা পায়ের আর রুপার নূপুরের খোজে।
প্রতিটি পদক্ষেপে তার ছন্দ
রিনিঝিনি করে নূপুর বাজে।
আবার আলোচনা, হোমো ইরেকটাস, হোমো সেপিয়েন্স
শিম্পাঞ্জী আর পুশমিপুলু দেখিনি এসবের কিছুই
দেখার আগেই দেখি জানালার ফাঁক গলে হাজার বছরের জ্যোৎস্না
চুপে চুপে আজো আস্তে আস্তে কিভাবে হারায়!
শত বছরের ফেলে রাখা কাজ, ফেলে রেখে আরো দশ বছর।
বর্ষার মেঘমালা, কলাগাছের ছোটভেলা, কালবৈশাখীর ঝড়
এখানে সেখানে ফেটে যাওয়া কালো জামের সাদা মাংসের মত
সাত দিনের ব্যর্থ জীবন, দশদিনে তার পরাজয়
আমি তাই আজ হারাতে চাই, মাতাল করা জ্যোৎস্নায়।
-পলাশ মিজানুর রহমান
(উৎসর্গঃ যার নামে কবিতা)