তুমি হতে পারো অনিন্দ্য রূপসী কোন অষ্টাদশী।
আবার তুমি হতে পারো খুব সাধারণ একটা মেয়ে- সবার চোখে অসুন্দর। কিন্তু বাতাসে এলোমেলো উড়ে যাওয়া তোমার খোলা চুল দেখে আমি পাগল হতে পারি- চুপে চুপে তোমায় নিয়ে লিখে ফেলতে পারি কয়েকটি পঙক্তি, কিংবা একটি কবিতা। কিংবা তোমায় ভেবে ভেবে আমি রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিতে পারি। আমার চোখে তোমার কাছে জগদ্বিখ্যাত সব রূপসীরা হার মানতে পারে।
তুমি কেমন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তোমাকে কিভাবে দেখি সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
কোন এক উদাস রৌদ্রকরোজ্জল দুপুরে ক্ষণিকের তরে তোমার আমার মুখোমুখি দেখা হতে পারে কৃষ্ণচূড়া ছাওয়া কোন এক পথে, কিংবা তোমায় আমি দেখতে পারি কোন ব্যস্ত রাস্তায় রিক্সায় যেতে যেতে। আবার এক ঝুম বৃষ্টির দিনে ডান হাতে ছাতা আর বাম হাতে শাড়ি সামলে পেরিয়ে যেতে পারো তুমি আমার জানালার সামনের রাস্তা। তোমার সাথে আমার আর কোনদিন দেখা নাও হতে পারে এই জনমে।
কিন্তু আমি যে ভাবতে বড় ভালবাসি। আমি আমার মনে ঘটনার জন্ম দেই, কাহিনী বিন্যস্ত করি- চরিত্র সৃষ্টি করি, সেই চরিত্রকে পূর্ণতা দেই। বাস্তবে হয়তো তুমি এতীম হতে পারো- মামার বাসায় শত গঞ্জনা সয়ে হয়তো কষ্টের জীবন কাটে তোমার কিন্তু আমার মনের কল্পনায় আমি তোমার সম্বন্ধে অনেক কিছুই ভেবে নিতে পারি। আমার কল্পনায় তোমার একটা চমৎকার ভাল মানুষ আম্মু থাকতে পারে, একটা সদা-দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আব্বু থাকতে পারে। আরো থাকতে পারে সর্বংসহা এক বড় ভাই, দুষ্ট মিষ্টি ছোট ভাই বোন। অভিজাত এলাকায় ছোট্ট বাগান ঘেরা একটা পাখির নীড়ের মত বাড়ি থাকতে পারে তোমার- যার লনে তোমরা পরিবারের সবাই বিকেলে এক সাথে চা খেতে খেতে বৈকালিক আড্ডা দাও। বোনের স্কুলে মিসের কঠোরতার কথা শুনে চোখ বড় করতে পারো আবার ভাইয়ের বোকামিতে সবাই মিলে হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়তে পার।
তুমি হয়তো হতে পারো চরম মেধাবী কোন এক পড়ুয়া ছাত্রী কিন্তু আমার কল্পনায় তুমি হতে পারো পড়াশোনায় অমনোযোগী এক রুপ সচেতন মেয়ে- পড়ার টেবিলে যার শুধু ঘুম পায়, ক্লাসরুমের বোরিং ক্লাস গুলোর চেয়ে বান্ধবীদের সাথে মিলে ফুচকা খেতে যার অনেক আগ্রহ। প্রতিবার রেজাল্টের শেষে যার তিনদিন রুমের দরজা বন্ধ করে বসে কাঁদতে হয়- তুমি হতে পারো সেই ফাঁকিবাজ মেয়ে যদিও আমার কল্পনায় তুমি মোটা চশমার সিরিয়াস ছাত্রী, ভাল রেজাল্টের কারনে যে বার বার শিরোনাম হয়।
তুমি হয়তো সারাদিন কানে হেডফোন লাগিয়ে হিন্দি গান শুনতে অভ্যস্ত- তেরি মেরি গানের সাথে লালন গীতির তুলনা হয়তো তোমায় হাসায় কিন্তু আমার ভাবনায় হয়তো তুমি খুব সুন্দর রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারো। তোমার কিন্নর গলায় দর্শক তন্ময় হয়।
এভাবে একদিন তোমায় কোন এক ক্ষণে সামান্য সময়ের তরে তোমার আমার দেখার পরে আমি তোমায় নিয়ে অনেক কিছু ভাবতে পারি। তুমি আমার একদিন হঠাৎ পাওয়া কাদামাটির ঢেলার মত- আমি তোমায় নিজের হাতে ভেঙ্গে গড়ে ইচ্ছেমত গড়ে নিতে পারি। আমি তোমার সেই কল্পিত রূপের প্রেমে পড়তে পারি। তোমায় নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি বালুকাময় নির্জন প্রান্তরে- যেখানে চারিদিকে শুধু ধুধু বালুচর। তোমায় নিয়ে আমি ঘর বাধতে পারি গহীন অরণ্যে- যাবতীয় ব্যস্ততা আর কোলাহল থেকে দূরে সরে গিয়ে। যদিও বাস্তব তুমি আর আমার মনের ভেতরে তুমি অনেক অনেক দুরের।
একদিন সামান্য দর্শনের পরে তোমায় নিয়ে ভেবে ভেবে আমি হয়তো তোমার প্রেমে পড়তে পারি। তবে বিশ্বাস করো সেই প্রেম তোমার সাথে নয়- তোমায় আশ্রয় করে গড়ে ওঠা আমার কল্পনার নায়িকার সাথে, যাকে আমি নিজের খেয়ালে তৈরি করেছি- তোমার সাথে হয়তো তার সামান্য মিলও নেই।
তুমি কি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তোমার সম্পর্কে কি ভাবি সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
---------------------
মিজানুর রহমান পলাশ
নজরুল ইসলাম হল, বুয়েট
একই সাথে আমার ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিতঃ
--------------> প্রথম পাতাঃ মিজানুর রহমান পলাশ এর লেখার জগত।
------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১২ রাত ১২:০৪