somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী কি অসম্ভব সুন্দর আর আনন্দময়.......।

২১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম থেকে উঠেই ছোট ছোট ব্যস্ততায় জড়িয়ে যাওয়া আমার জন্যে নিত্যনৈমিত্তিক....। এর পর এক কাপ চা আর একটু মুড়ি নিয়ে খবরের কাগজের অন্তত শিরোনামগুলোয় চোখ তাড়িয়ে নিয়ে ঝটপট তৈরী হয়ে কাজে বেরিয়ে যাওয়া- এটা প্রায় রুটিনের পর্যায়ে।

চা হাতে দরজার ওপাশ থেকে খবরের কাগজ তুলে নেবার সময় একটি ছোট্ট চিরকুট পাওয়া গেল যাতে এভাবে লেখা আছে " ছরি ম্যাডাম, আপনার ওরকিড গাছের একটা ফুলও আর নাই। কেহ বা কাহারা চুরি করিয়া নিয়া গেছে।"

উহঃ! এই 'আর নাই' জাতীয় দু:সংবাদ খবরের কাগজ ছাপিয়ে এবার চিরকুটে এবং তা আমার ভাগ্যে? মুহূর্তেই মেজাজ বদলে গেল (প্রিয় অরকিড হারানোর বেদনা আর এলোমেলো অক্ষরে অসাধারণ বাংলায় লেখা আমার মালী বেচারার দায়িত্বশীল চিরকুটের কৌতুক মিলেমিশে যে ভীষন অনুভূতি হলো তার নাম আমার জানা নেই)।

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আর বিশুদ্ধ ক্ষোভ নিয়ে দরজার বাইরে পা বাড়াতেই ইন্টার-কমে ফোন বেজে ওঠে:

হ্যালো! (নিজের কন্ঠস্বর নিজের কানেই কর্কশ ঠেকলো)

গুড মন্‌নিং ম্যাডাম, আমি ইব্রাহিম! (আর কোন কথা নেই)

হুম বলেন ইব্রাহিম! (আমার ঠান্ডা হিম কন্ঠস্বরে অনভ্যস্ত বেচারা ইব্রাহিম খানিকটা অপ্রস্তুত স্বরে যুক্ত করলো, ছ'টা গোলাপ গাছে একটা গোলাপও নেই)

আমি আসছি নীচে আপনি থাকেন। (দুঃখে- বেদনায় চোখ দু'টো আমার ভিজে উঠলো)!

লিফ্টে বন্দী হতে মন চাইলো না বরং ছটফটিয়ে সঁিড়ি বেয়ে নেমে গেলাম। পায়ের চটির ক্রমশঃ বেড়ে চলা শব্দে নিজেই লজ্জা পেয়ে সামলে নিই নিজেকে।

হিমায়িত ইব্রাহিম আমার চোখের সামনে। আমার মত তাকেও বেশ আহত মনে হচ্ছে। আমার ক্ষোভের তীব্রতা হেরে গেলো ওর নিরব সমবেদনায়।

এটা কিভাবে হলো ইব্রাহিম? আমার হাত দুটো পরম মায়ায় প্রিয় গাছগুলো ছঁুয়ে চলে কেবল......। গাছগুলোও কি কষ্ট পাচ্ছে না সৌন্দর্য হারিয়ে?



গুড মর্নিং আন্টি- ছুটে এসে আমায় দু'হাতে জড়িয়ে ধরে প্রতিবেশী ছয়-সাত বছরের ফুটফুটে মেয়েটি।

গুড মর্নিং সোনামনি! তুমি আজ স্কুলে যাওনি?

না- না, আজকে তো আমার দাদুভাইয়ের হ্যাপি বার্থডে- তুমি জানো না?

ও, তাই নাকি? তা হলে তো খুউ-উ-উব মজা হবে?

হ্যাঁ তো! আজকে আমার দাদুর সেভেনটি টু ইয়ার্স হবে জানো? দাদু অনে--ক বড় হয়ে যাবে। তাই মা আর বাবাও আজকে বাইরে কোথাও যাবে না। আমি আর ভাইয়া অনেক বেলুন হ্যাং করে দাদুর রুম ডেকরেট করেছি। ঘুম থেকে উঠে দাদুতো অবাক হয়ে যাবে- আ' অ্যাম শ্যিয়র.....। আরও অনেক কিছু বলতে চায় ও....।


ওর খুশি আরো একটু বাড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে আদর করে বলি, 'শোনো আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে, বিকেলে আমি তোমার দাদুকে উইশ করতে আসবো।


ও-কে! তা হলে তো তোমাকে শপিং-এ যেতে হবে। তুমি দাদুর জন্য কি গিফ্‌ট কিনতে চাও আন্টি? (কি অসম্ভব নির্দোষ মিষ্টি একটি প্রশ্ন!)


তাই তো! আমার মনে হয় অনেকগুলো লাল গোলাপ আমি কিনতে পারি।


আমার এমন একটি উপহারের আকাংখায় ও খানিকটা নিভে যায়- সাথে সাথেই বলে ওঠে,

না- না! আমিইতো দাদুকে ফুল দিয়ে উইশ করবো। জানো, আমি না এই এখান থেকে অ---নে--ক ফুল তুলে নিয়ে নিজে হাতে একটা বি--উটিফুল 'বুকে' বানিয়ে দাদুর বেডের পাশে রেখে দিয়েছি চুপিচপি। দাদু ঘুম থেকে জেগে ওটাই প্রথম দেখতে পাবে। তুমি কিন্তু এসো, বা-বাই আন্টি..। ছুটে চলে গেল মিষ্টি মেয়েটি।


আমার মন ভালো হয়ে যায়- অসম্ভব আনন্দে আমার হাত দু'টো প্রিয় গাছগুলো ছঁুয়ে যায় কৃতঞ্গতা আর মমতায়.....। ওদের পাতাগুলো কেমন চকচকে সবুজ হয়ে ওঠে! যেন ওরা সবই শুনেছে, সবই বুঝতে পেরেছে।


আমি মনে মনে দেখতে পাই, একটি ফুলের মত শিশুর বিজয়ী হাসি আর একজন বাহাত্তর বছর বয়সী যুবকের একজোড়া বিজয়ী, উজ্জল চোখ আর নির্মল হাসি।





পৃথিবী কি অসম্ভব সুন্দর, আনন্দময়.......।









সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:৪১
৮১টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×