গত কিছুদিনে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন নিরীহ ছাত্র পড়ালেখা করতে এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বেশ কৃতিত্বের সাথে এইসব শিক্ষার্থীর অন্দরমহলের খবর তুলে ধরেছে, দেখিয়েছে কত দারিদ্র্য আর প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে এরা নিজেদের আর নিজেদের পরিবারের ভাগ্য বদলাতে চেয়েছিলো। মাঝখানে কেউ কেউ রাজনৈতিক স্বার্থেও এদের লাশ ব্যবহার করতে চেয়েছে। তবে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর এখন সব ঠান্ডা। সবাই ভুলে গেছে লাশগুলোর কথা, হতভাগ্য পরিবারগুলোর কথা।
যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছি তাই নিজের সৌভাগ্যের কথা ভেবে সামান্য হলেও অপরাধবোধে ভুগি। আমিও তো হতে পারতাম এরকম একটা লাশ, তখন কী হতো আমার পরিবারের? কী হতো বর্তমানে ভাল চাকরী করা পুত্রের গর্বে গর্বীত আমার বাবা-মা'র? আবুবকরের জীবন সংগ্রামের কথা পত্রিকায় পড়ে চোখে পানি এসে গেল। কেন শুধু দরিদ্র আবুবকররাই ছাত্র রাজনীতির নিষ্ঠুর শিকার হবে? কেন প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়া ধনীর দুলালরা এর বাইরে থাকবে? কোন প্রভাবশালীর সন্তান এভাবে মারা গেলে হয়ত ক্ষমতাবানদের কিছু টনক নড়তো কিন্তু যতদিন দিনমজুর বাবার ছেলে আবুবকর বা বাসের টিকেট বিক্রি করা বাবার সন্তান মহিউদ্দিনরা লাশ হবে ততদিন কিছুই বদলাবে না।
ছাত্র রাজনীতিতে দেশের কোন ক্ষতি হচ্ছেনা, দেশ মোটেও পিছিয়ে যাচ্ছেনা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদেশ থেকে পাস করা ধনিক শ্রেণীর সৌভাগ্যবান বংশধরেরা দখল করে নিচ্ছে সরকারী-বেসরকারী সকল শূন্যস্থানগুলো। মাঝে কিছু আবুবকর, কিছু মহিউদ্দিন বা কিছু সনিদের স্বপ্নগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এসব তুচ্ছ কারণে দেশের অগ্রগতিতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
তারপরও কিছু কথা থাকে। আমরা যারা জীবন নিয়ে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি দ্বারা কলুষিত ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি তাদের মনের গহীন কোণে সামান্য অপরাধবোধের খচখচানি থেকে যায়। আর তাই অন্তুত: একটি পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই, খুব সামান্য হলেও নিয়মিত ভাবে এই পরিবারগুলোর একটিকে সাহায্য করতে চাই।
কারো যদি এরকম কোন পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার উপায় জানা থাকে তাহলে আমাকে মেইল করতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




