শীত এলেই পিঠাপুলি আর খেজুর রসে মেতে ওঠে গ্রাম বাংলার মানুষ। তেমনি শহুরে চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ীরা পরিবারের সাথে আর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে হারাতে চায় তাদের ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে দূরে সবুজের মাঝে, অরণ্যের খোঁজে। প্রকৃতির সাথে আপন মানুষগুলোর সাথে আনন্দময় সময় কাটাতে আপনি স্ববান্ধবে চলে যেতে পারেন শহরের অদূরেই কোনো পিকনিক স্পটে। তাই পিকনিকের এই মৌসুমে নতুন কোনো পিকনিক স্পটের খোঁজ নেওয়া যাক-
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
হাজারো প্রজাতির ফুল-ফল আর ঔষধি গাছের ভিড়ে এই উদ্যানটি পিকনিক আয়োজনের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। পুরো উদ্যানটি ৬ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমি জুড়ে অবস্থিত। গাছ-গাছড়ার ভিড়ে মাঝে মাঝেই তৈরি করা হয়েছে বনভোজন ছাউনি। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজনন কেন্দ্র। প্রজনন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এছাড়া আছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, সংক্ষিপ্ত চিড়িয়াখানা, ছয়টি মনোরম বিশ্রাম কেন্দ্র, ১৩টি মিতব্যয়ী কটেজ, শিশু কর্ণার, ছয় কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা কৃত্রিম লেক, হ্রদ, বিনোদন মঞ্চ ও দীর্ঘ মেঠোপথ। এখানে প্রতি কটেজের ভাড়া ৫৫০ টাকা। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন মহাখালী বন বিভাগের টেলিফোন নম্বরে। ফোনঃ ৮৮১৪৭০০।
গজনী অবকাশ কেন্দ্র
পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে দূরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমানা চোখে পড়ে শেরপুর জেলায়। ঝিনাইগাতি উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে কাংশ ইউনিয়নের গজনি পাহাড়কে কেন্দ্র করে এ অবকাশ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। শেরপুর বাসট্যান্ড থেকে কেন্দ্রটির দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। দেখার মত এখানে আছে শালবন, লেকসহ আরো অনেক কিছু। পিকনিক আয়োজনের জন্য এখানে আলাদা স্পট রয়েছে। ঢাকা থেকে শেরপুরগামী যেকোনো বাসে শেরপুর শহরে যাওয়া যায়। ভাড়া ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। শেরপুর শহর থেকে গজনী যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাস, টেম্পোসহ অন্যান্য ছোট যানবাহন রয়েছে।
অরুনিমা ইকোপার্ক
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই চমৎকার ইকোপার্কটির কাছাকাছি রয়েছে নানা দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান। নড়াইলের কালিয়ার নড়াগাতী থানার মধুমতি ও গঙ্গা নদীর সংযোগস্থল পানিপাড়া গ্রামে গড়ে উঠেছে এই অপরূপ পার্ক। অরুনিমা ইকোপার্ক ও কান্ট্রিসাইড পানিপাড়া পর্যটন কেন্দ্র অরুনিমার প্রবেশ পথে রয়েছে সারিবদ্ধ মন্দির ঝাউ। অভ্যর্থনা জানানোর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধ গাছ। আরও নজর কাড়বে রাস্তার দুপাশে গড়ে তোলা দেশী-বিদেশি অসংখ্য ফুল গাছের বাগান। এখানকার প্রাইম গার্ডেন অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এছাড়া গোলাপ বাগানের সৌন্দর্যে মোহিত হবেন। আরও আছে পাহারবেষ্টিত বাংলো দীঘি। বাংলোর পশ্চিমে একটি দ্বীপ তৈরি করা হয়েছে পরীস্থান নামে এই দ্বীপ যেন সত্যিই স্বপ্নপুরী। দ্বীপটির পশ্চিমে চারদিক বেষ্টিত লেক ও লেকের পাড়ে রয়েছে আম্রপালি বাগান। লেকে বেড়ানোর জন্য রয়েছে ছোট বড় ডিঙ্গি। এখান থেক বেশ দূরে রয়েছে বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের শিশুস্বর্গ ও চিত্রশালা।
তেপান্তর ফিল্ম সিটি
ঢাকা থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহের ভালু উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের মাস্টারবাড়ী রাস্তার পশ্চিম পাশে তেপান্তর ফিল্ম সিটি। ৫০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা তেপান্তরে বনভোজনও করা যায়। এখানে একসাথে প্রায় ৩ হাজার লোক বনভোজন করতে পারে। একদিনে ভাড়া ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, তবে শিক্ষা সফরে গেলে শুক্রবার ছাড়া অন্যদিন ভাড়া ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। যোগাযোগের ঠিকানাঃ তেপান্তর, ফিল্ম সিটি, ৭৩ কাকরাইল (পঞ্চম তলা), কক্ষ নম্বর ৪০২, ঢাকা। ফোনঃ ৮৩১৩৫২১।
যমুনা রিসোর্ট
ঢাকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে রাজসিক যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে যমুনা নদীর একেবারে পাড় ঘেষেই যমুনা রিসোর্টের অবস্থান। পশ্চিমের সোনালি পটে সূর্যের অস্ত যাওয়া আর মেঘমালার নিরুদ্দেশের পানে ভেসে চলা মস্ত থালার মত রূপালী চাঁদ তার সাথে ঝকমকে তারকাকুঞ্জ, এসবই আপনাকে স্বাগত জানায় যমুনা রিসোর্টে। শহর থেকে গাড়ি, বাস, ট্রেন যেকোনো ভাবেই যাওয়া যায়। এখানে আছে থাকা-খাওয়া এবং পিকনিকের জন্য বিশ্বমানের ব্যবস্থা। পাশাপাশি বিনোদনের আয়োজনের মধ্যে আছে টেনিস কোর্ট, ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার জায়গা যমুনায় নৌকা ভ্রমণের জন্য স্পিড বোট, ট্রলার ইত্যাদি। এখানকার পিকনিক স্পটগুলোর ভাড়া সংখ্যা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। আলাদাভাবে খাবার রান্নার ঝামেলা নেই এখানে। অর্ডার পেলে এখানকার সুসজ্জিত রেস্টুরেন্টেই খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। যোগাযোগের ঠিকানাঃ যমুনা সেতু, ভুয়াপুর, টাঙ্গাইল। ফোনঃ ০৩১-৪৪১৪০৪১৪, ০১৭১৩-০৪৯৩৪৭, ০১৭২-২৫৬৬৬৮৬, ফ্যাক্স: ০৩১-৪৪৯৪০৪৫।
উৎসব পিকনিক স্পট
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের মনিপুর গ্রামে সবুজ শ্যামলিমায় আচ্ছন্ন দৃষ্টিনন্দন এই পিকনিক স্পটটির অবস্থান। এখানে রয়েছে পিকনিক এবং ঘুরে বেড়ানোর সু-ব্যবস্থা। ১৯ বিঘা জায়গার ওপরে গড়ে ওঠা এ স্পটটির রয়েছে বিশ্রামাগার, বসার স্থান, বাগান, জলাধার, খেলা মাঠ, খাবার রেস্টুরেন্ট সহ আরও অনেক কিছু। এখানে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা। ঢাকা থেকে শ্রীপুরগামী যেকোনো বাসেই যাওয়া যায়। হোতাপাড়া বাজারে নামতে হবে। বাজার থেকে কাছেই এই পিকনিক স্পটটি। যোগাযোগঃ ২৭৮/এ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা। ফোনঃ ৮৮২৫৩৩৫, ০১৭১৩-০৪৪৫৯১।
পড়শি স্পট
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শনাদি, পানাম শহর এবং লেক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন মিলে গড়ে উঠেছে পড়শি স্পটটি। সাথে আরও দেখতে পাবেন ঈসাপুর গ্রামের খামনগর দীঘি, শাহ আবদুল মসজিদ, কাজী সাহেবের দরগা, পাগলা শাহেব মাজার, পর্বওয়ালির পুল, পাঁচপীরের মাজার, শেখ সাহেবের মসজিদসহ আরো অনেক ঐতিহাসিক নির্দশন। রিক্সা অথবা ভ্যানে করে বেড়ানো সম্ভব। ভাড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা। পিকনিকের জন্য সুব্যবস্থা আছে এখানে। যোগাযোগ করতেঃ ০৬২২-৮৫১৩২।
তো খোঁজ খবর নিয়ে আপনার পছন্দ ও সুবিধানুযায়ী ঠিক করে ফেলুন পিকনিক স্পট আর অবশ্যই পিকনিক স্পট নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহপাঠী বন্ধু বান্ধব অথবা পরিবার সেই অপার সঙ্গী হোক না কেন তার মতামত অবশ্যই নেবেন।
সূত্রঃ ইন্টারনেট ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




