বাংলাদেশ হারাচ্ছে কিচিরমিচির শব্দের গান,
অনেক পাখিই অাজ হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো এ দেশেরই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ানো ও পরিবেশ রক্ষার পাখি। যে পাখিরা কিচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে রাখতো অামাদের শ্যামল সুন্দর বাংলাদেশকে। অপরিচিতভাবে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে এবং অতি মাত্রায় বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার পাখির প্রজাতি বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক পোকা চিনেন না, পোকার অাক্রমণ কি পরিমাণ হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা অনেক কৃষকেরই নেই। ফলে ক্ষতিকর পোকার পাশাপাশি উপকারী পোকা-মাকড় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিষাক্ত কীটনাশক ছিটিয়ে দেয়ায় যেসব পোকামাকড় মরে, সেগুলো খেয়ে পাখিও অাক্রান্ত হয় বিষক্রিয়ায়।
প্রাথমিকভাবে কীটনাশকের রাসায়নিক উপাদানগুলো পাখির স্নায়ুর ওপর কাজ করে পরে ধীরে ধীরে বায়োলজিক্যাল দিকগুলোতে অাঘাত হানে। অতি মাত্রায় বিষাক্ত কীটনাশক সরাসরি পাখির দেহে যদি প্রবেশ করে তাহলে পাখিও মারা যেতে পারে। সেটা ছিটিয়ে দেয়া ফসল খেয়েই হোক অার মৃত পোকামাকড় খেয়েই হোক বিষাক্রান্ত হয়ে পাখি যদি সঙ্গে সঙ্গে মারা নাও যায়, তবুও বিষক্রিয়া ক্রমেই পাখির শরীরে বিভিন্ন রন্ধ্রে প্রবেশ করে স্বাভাবিক ক্রিয়ায় জটিলতার সৃষ্টি করে। সবচেয়ে মারাত্মক যে ক্ষতি করে তা হলো প্রজনন তন্ত্রের ক্ষতি ও স্ত্রী পাখির হরমোন বিনষ্ট। হরমোন ও প্রজনন তন্ত্রের ক্ষতির কারণে পাখির যৌন সংগম বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বংশ বিস্তারে ভাটা পড়ে। প্রজননতন্ত্র প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ায় অনেক প্রজাতির পাখি অাজ বিলুপ্তির পথে। হেপ্টাক্লোর জাতীয় ১২টি বিষাক্ত ও ক্ষতিকর কীটনাশক বাংলাদেশে সরকার বহু অাগে নিষিদ্ধ করেছে অথচ দুর্নীতি পরায়ণ ব্যবসায়ী ও কীটনাশক সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট একশ্রেণীর লোকের যোগসাজসে নিষিদ্ধকৃত ডার্টি ডজনের কোনো কোনটি স্বচ্ছন্দ সরবরাহ হয়ে অাসছে।
না জেনে অধিক ফসলের অাশায় অধিকাংশ কৃষক মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অামাদের দেশের পাখিসম্পদ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহারে ফলন বাড়ছে কিন্তু পাখি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। চড়–ই, কবুতর, পানকৌড়ি, হাড়গিলা, বক, কাক, ঈগল, ডাহুক, মাছরাঙ্গা, শালিক, ময়না, ঘুঘু, টুনটুনি, দোয়েল, বাবুই ইত্যাদি দেশের চিরপরিচিত পাখিরা ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে। তাই কীটনাশক ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি। ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশে বর্তমানে কীটনাশকের পরিবর্তে শস্য বিনাসী পোকামাকড় ধ্বংসের জন্য প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় ফিরে গেছে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে শস্য বিনাশী পোকামাকড় ধ্বংসের জন্য অার এক ধরনের পোকামাকড় অাছে। যেগুলো শস্যের ক্ষতি করে না। ইন্দোনেশিয়ায় ফসলের জন্য উপকারী এই ধরনের পোকামাকড় বংশ বিস্তারের ব্যবস্থা করছে। অামাদের দেশে শুধু কীটনাশকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধানে নজর দেয়া উচিত।
অতিরিক্ত এবং অপরিকল্পিত ব্যবহার ভূগর্ভস্থ এবং পৃথিবীর উপরিতলের পানিকে দূষিত করে ফেলছে। জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পাখি হারাচ্ছে প্রজনন ক্ষমতা। অপর দিকে, বাইরে থেকে অাসা অতিথি পাখিরাও এদেশে এসে তীব্র কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় পড়ে তারাও ফিরে যাচ্ছে প্রজনন জটিলতা নিয়ে। এভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে পাখি। অার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ ও বাংলাদেশ হারাচ্ছে কিচিরমিচির শব্দের গান গেয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখা পাখি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




