somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশে আপনি এবং রোগের নাম যখন 'বর্ণবাদ'

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্ণ নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নাই. অবহেলা, কুনজর, অপমান, বৈষম্য আর নানা শব্দ আমাদের প্রতিদিন অনকে ভাবনায় রাখছে বলা যায়. তাহলে এই বর্ণ নিয়ে ভাবনা-দুর্ভাবনা প্রকট হচ্ছে কেন. আর কেনই বা হাজার বর্ণ বিষয়ক প্রশ্ন ঘিরে ধরছে! সমস্যা কি বর্ণে নাকি অন্য কোথাও. মার্টিন লুথার কিং বা নেলসন ম্যান্ডেলা বা বর্ণবাদ নিয়ে ইতিহাস চর্চা বা সেগুলোর বিশ্লেষণ এই লেখার উদ্দেশ্য নয়. দেশে থাকার সময় বর্ণ নিয়ে নাক সিটকানো আমাদের ধরণ- কালো , আফ্রিকান বা ব্ল্যাক অনেকটা ভালো করেই বুঝিয়ে দেয় আমরাও বর্ণবাদী- এই অভিযোগের বাইরে নই. কিন্তু দেশের বাইরে আসার পর নতুন করে দেখছি, দেশের মানুষের বর্ণবাদ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা ও তাদের বর্ণবাদ বাস্তবতার চেয়ে সবকিছুকে 'বর্ণবাদ' এরে শিকার মনে করে সবকিছুকে একই কাতারে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা. আপনি যখন নিজেই আরেকজনকে নানা বর্ণে চিত্রিত করে আনন্দ পান তখন নিজের কাছে এই রোগের শিকার মনে হবার কি কোনো যুক্তি আছে!

আপনি কেন মনে করবেন, দেশের বাইরে আসছেন, তাতে সবাই আপনারে সালাম দিয়ে সবকিছু আগায়, পেছায় দেবে বা আপনাকে তাদের আচরণ দিয়ে সন্তুষ্ট করতে হবে যে তারা আসলে বর্ণ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলছেনা. নিজে অন্য জায়গায় এসে কি চেষ্টা করেছেন তাদেরকে জানার জন্য. আপনি বিদেশে এসে সব সময়ই চান, এখানে ভাল চাকরি পাবেন, অনেক অনেক টাকা কামাবেন, না পেলে সেটা বর্ণবিদ্বেষ! আপনি এখানে বছরের পর বছর আছেন, থাকছেন, তারপরও প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত আপনার অভিযোগ- এরা বর্ণবাদী. অাপনি নিজে কি কখনো চিন্তা করেছেন-ভেবেছেন- আপনার নিজের দেশে অন্য দেশ থেকে কেউ আসলে তার সাথে আপনি কেমন আচরণ করেছেন, সেটা কি আসলেই সমতার, সমান সুযোগের? বাংলা না জানা একজনকে চাকরি, একজন বাঙ্গালীর মতোই সবকিছু দেয়া তো দূরের, আপনি আসলে প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিভাবে দেখেন বা কিভাবে দেখে অভ্যস্ত! দেশে কি করতাম বা করতাম না এগুলা বলে লাভ নাই, এসব বিদেশীরা আসলেই বর্ণবাদী!

হ্যাঁ, আপনার চোখ এভাবেই দেখে সব. দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এখানেই কাটিয়ে দিতে ভালোই লাগছে আপনার. আবার প্রতি মূহূর্ত এরা বর্ণবাদী এটাও আপনার মুখে ফেনা তুলে সব সময়. অন্য দেশে এসে সে দেশের মানুষরে মনোভাব, সাংস্কৃতিক, জীবনযাপন এসব জানার, বুঝার বা কৗেতুহলী মন নিয়ে দেখার কি চিন্তা করেছেন কখনো- করবেন না, করেই বা কি! এরা আসলেই খারাপ, এদের এটা, ওটা ভালো না. হ্যাঁ, আপনি আরেক দেশ, ভাষা, সংস্কৃতির কাছে এসে চান সবকিছু আপনার দেশের, শহরের বা গ্রামের মতো হোক বা আপনি চান সেরকম থাকুক. এটা নাই মানেই এখানে কোনো রসবোধ নাই. আপনি মনে করেন, এদের ভাষা, সংস্কৃতি শেখার কোনো মানে নাই. এগুলা খারাপ. এইসব কিছু কি প্রমাণ করে না আপনি নিজেই বর্ণবাদ রোগে আক্রান্ত কিনা!

আপনি হয়তো ইতোমধ্যে অভিযোগ করার জন্য তৈরী হয়েছেন- তাহলে এরা কি বর্ণবাদী না? নিজে বড় জ্ঞানী হয়েছেন মনে হয়? হুম. হতে পারে, আপনার কথাই সত্য. এখানে চাকরি পাওয়া যায় না, দেখলে কথা বলেনা, নিজেরা আগে চাকরি নিজ দেশের মানুষদের, বিদেশীদের পদে পদে নানা বাঁধা. হ্যাঁ, কিন্তু এগুলা কি এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক না! আপনি চান আপনার মনে মতোই তারা আপনাকে সুবিধা দিক, না দিলেই খারাপ. দিলে আরো বেশি দিক, না দিলেই খারাপ. আপনার নিজের 'বর্ণবাদ' রোগের কারণে আপনি শুধু পেতে চান, খেতে চান, আরো চান, চাইতেই থাকেন. আপনার এই অভ্যাসের মধ্যে তাদের জানা, বুঝা, দেখা, এসব কিছু গৗেণ!

আমার কাছাকাছি এক বাংলাদেশী থাকেন. আরো অনেকেই আছে এর চেয়েও বেশি বর্ণ রোগে আক্রান্ত. তো যার কথা বলছিলাম. সে এখানে এসে পড়ালেখা করেছে, একটা অনার্স ডিগ্রী শেষ করেছে. চাকরি করে. কিন্তু সে এখানকার লোকদের নিয়ে প্রতিনিয়তই রেসিস্ট, এদের মনমানসিকতা খারাপ, এটা ওটা ভালো না- এ তার নিত্য প্যাঁচাল. তার সাথে কথা বলা মান্ই হলো আপনাকে অন্তত কয়েকবার বিভিন্ন প্রসঙ্গে এরা রেসিস্ট শব্দটা শুনতেই হবে. এখানে যেহেতু লোকজন স্থানীয় ভাষাতেই কথা বলে, সেহেতু এখানে লোকজনের সাথে ব্যক্তিগত, সামাজিক কারণে ভাষা বিষয়ক দক্ষতা থাকা দরকার. কাজের জন্য বা ভালো কাজ খুঁজতে গেলে আরো বেশি দরকার. ভাষা জানাটা অনেক জরুরি, বিশেষ করে আপনি যদি দীর্ঘদিন থাকেন. এক দু বছরের জন্য কোথাও পড়তে আসলে সেখানকার ভাষা জানা এতো জরুরি কিছু না. কিন্তু আপনার যেখানে বছরের পর বছর যাচ্ছে, আর তাও না. আপনি এখানে আজীবন থাকবেন বলেই স্থির করেছেন. তখনও ৫/৬ বছর পর সেখানকার লোকজনের সংস্কৃতি, ভাষা, তাদের বিভিন্ন দিক যখন আপনি ন্যূনতম জানেন না, তখন এটা কি আপনার বর্ণ রোগ নয়! এ প্রসঙ্গে প্রতিবারই তার ঐ - এরা চরম রেসিস্ট, এরা নিজেদের বাইরে কোন কিছুই চিন্তা করে না. আরে ভাই- দিনের পর দিন এইসব নিয়া চিন্তা কইরা বিছানা না ভিজায়া তাদেরকে জানা, বুঝার চেষ্টা করেন না! ঘুমে ঘুমে 'রেসিস্ট' ওরা 'বর্ণবাদী' এই স্বপ্নদোষ থাইকা অন্তত মুক্তি পাবেন. কে শোনে কার কথা.

ঢাকা শহরে কালো এক লোক নতুন এসেছে, তার আরো অনেক বন্ধু পাশের অন্যান্য দেশ থেকে এসেছেে, পড়ালেখা বা কাজ করতে. আপনি তাকে আপনার দোকানের সেলসম্যান রাখবেন? বা রেস্টুরেন্টে? হয়তো রাখবেন. এরপর হতে পারে আপনার দোকানের কাস্টমার হুদাই চিল্লাচিল্লি বা নাক সিটকায়ে, অনেকে গালমন্দ কইরা ফেরতও চইলা গেল. ব্যবসার চিন্তায় আপনি কি ভাববেন তখন? বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন! এইরকম না হওয়াটাই হয়ত স্বাভাবিক? এখন আরেক দূর দেশে আইসা আপনি নিজের জন্য এমনটা হবে না কিভাবে বলবেন? হইলে তো কথাই নাই- এরা বর্ণবাদী. এরা বর্ণবাদী ঠিক আছে. আপনি আইসা আগে কিছু শব্দ শিখেন, দেখেন লোকজন তাদের স্বাভাবিক জীবনে কিভাবে চলাফেরা করে বা এখানকার নিয়ম আসলে কি, সংস্কৃতির ভিন্নতা খেয়াল করেন, নিজে জানেন, বুঝার চেষ্টা করেন, এগুলা কিছুই কেউ করতে চায় না. লাভ আর লাভ তাও আবার নগদ লাভ ছাড়া কোনো দিকে নজর নাই. তাইলে কেম্নে কি!

এগুলা না জেনে কিভাবে বৈষম্য কমবে বলে আপনি ভাবেন! বৈষম্য না থাকুক চাইবেন, আবার বিদেশে এসে সেখানে মানুষ, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, ভাষা নিয়ে সারাক্ষণ নাক সিটকায়ে যাবেন- এটা কি আপনার দ্বিমুখীতা নয়? যেকোন কিছুতে আপনি খুঁজে বেড়ান তারা কতটুকু বর্ণরোগে আক্রান্ত! কখনো কেন ভাবেন না যে- আপনি নিজেই আসলে সেই রোগের বড় রোগী. আয়না আসলে সব জায়গায় একই রকম. দেশে থাকলে দেখুন নিজের চেহারা আপনি নিজে কতটুকু বর্ণরাগে আক্রান্ত- বিদেশে থাকলেও দেখুন নিজেই আপনি কিভাবে রোগ্রাক্রান্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন. আয়না পরিষ্কার থাকলে উত্তর পেতে বিলম্ব হবে না. তবে, এটাও আমি বলি না যে , বর্ণ রোগের কারণে বিদেশীদের নানাভাবে বঞ্চিত রাখছে বিদেশে. বৈষম্যও আছে. থাকবেও.

তবে সেটার জন্য নিজে কি রোগমুক্ত হয়ে ভাবছেন যে কি আপনার করণীয়. নাকি আজীবন পাই না পাই না, কেন পাই না, কেন দেয় না, দেয় না কেন- এরা খারাপ. কেন আরো বেশি পাই না, কেন আরো বেশি দেয় না-এরা খারাপ! আয়না দেখে ভাবুন, আরো ভাবুন রোগটা আপনার মধ্যেই প্রকট কিনা. আপনি যখন অন্যখানে এসেছেন নিজেই যেচে, কখন এটা আসলে কার রোগ!- চোখটা আরো পরিষ্কার করুন. এতেই রোগ নিয়ে জ্ঞান, ভাবনা পরিষ্কার হবে.
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৯
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×