somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ রামায়ণ-সুন্দরা কান্ড

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুন্দরাকান্ড
সাগরপার হওয়ার আগের রাতে হনুমান ,জাম্বুবান,অঙ্গদ সকলে রাত কাটানোর জন্য একটা অস্থায়ী চালাঘর বানালো।কিন্তু সাগরের তীরে এসে সকলের চক্ষুস্থির—একি ভয়ানক ব্যাপার-যেন ক্রুদ্ধ নাগিনী গর্জন করছে এক নিস্ফল রাগে-এই সাগরের উপর দিয়ে সুপার্শ্বকে ধরে ঝুলে ঝুলে যেতে হবে!সর্বনাশের মাথায় পা! কেউ আর রাজি হয় না ভয়ে—সকলেই নেতা অঙ্গদকে জানায়,একটা উপায় বার কর কত্তা!।কথা দিয়ে আসা হয়েছে সুগ্রীবকে যে সীতার একটা খবর নিয়ে যেতে হবে— অথচ দেবতা ছাড়া কেউ এই সাগর পার করতে পারে না।
জাম্বুবান ছিলেন সবার চেয়ে বয়সে বড় ও অভিজ্ঞ মন্ত্রী।তিনি বললেন আমার মনে হয় হনুমানেরই সাগর পার হওয়া উচিত। কারন আমাদের জাতির হলেও হনুমানের জন্ম কিছু অদ্ভুত।তার বাবা ছিল কেশরী ও মা অঞ্জনা।অঞ্জনা একদিন নর্মদা নদীতে স্নান করছিল ,তখন দেব পবন এসে জোর করে অঞ্জনাকে ভোগ করে।অঞ্জনা রেগে গিয়ে পবনকে বলে আমি নীচ বানর জাতির নারী।তুমি না দেবতা? তোমার লজ্জা করে না?
পবন বলে,রাগ কইরো না নারী, তুমি দেখবে অঞ্জনা তোমার খুব বীর এক ছেলে হবে।তা্কে আমি ও সব দেবতা দেবতাদের মতই নানা সুযোগ সুবিধা দেব।হনুমানের জন্মের পরে অবশ্য তার বীরত্ব দেখে ইন্দ্র তাকে মারতে এল।ইন্দ্র তাকে ঐ শিশু অবস্থাতে পাহাড়ে ফেলে দিয়েছিল।মলয় পাহাড়ে পড়ে গিয়ে হনু ভেঙে যাওয়াতেই তার নাম হয় হনুমান।কাজেই দেবতাদের আশীর্বাদ নিয়ে হনুরই উচিত সাগর পার হওয়া,আসলে তো ও দেবতা পবনেরই ছেলে!
হনুমান মুখ গোমড়া করে বলে দেখ ,আমার জন্মের অন্য গল্পও আছে—আমার বাবা কেশরী একবার মুনিদের বাঁচিয়েছিল বলে তারা বর দিয়েছিল।আমরা নীচ জাতির লোক,সেই আমাদের পরিচয় থাক।আসলে জাম্বুবানই বা কার ছেলে বা কার ঘরে কি গল্প আমি সব জানি।হাটে হাঁড়ি আমিও ভাঙতে পারি।যাক,তোমরা যখন বলছ আমিই যাব ।
একটা উঁচু পাহাড়ের উপরে উঠে হনুমান সাগর পারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করল।পথে নানা বাধা বিঘ্ন পার হয়ে হনুমান পৌঁছাল লঙ্কায়।অদ্ভুত সুন্দর নগর লঙ্কা।দেবতাদের কারিগর বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেছে ।সোনা,রূপায় মোড়ানো সব বাড়িগুলির উপরের চূড়া।নারকেল সুপারির সারি সারি গাছ ।হনুমান সারাদিন ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখে আর মুগ্ধ হয়,এমনটা আগে কখনও দেখেনি।এমনকি রাবনের সভাতেও পৌঁছে গেল হনুমান ছদ্মবেশে –কিন্তু সীতাকে দেখতে পেল না।
হাল ছেড়ে দেবার কথা ভাবতে ভাবতে এরপরে হঠাৎ দেখে রাবন অনেক রানীদের নিয়ে কোথায় চলেছে।মন্দোদরী থেকে সাধারণ রানীরা সকলেই রাবনের পিছে পিছে চলেছে।কারোর হাতে চন্দনের বাটি,কারো হাতে শাঁখ,কারো হাতে সুগন্ধী-কাউকে বরন করার জিনিসপত্র,অলঙ্কার।হনুমান পিছু নেয় এদের।রাবন গিয়ে ঢোকে অশোক বনে।সেখানে বড় বড় চেহারার সব দাসীরা পাহারায়।হনুমান একটা গাছের উপরে উঠে পরে ভেতরে ঢোকে।দেখা যায় অপরূপা সুন্দরী এক নারী মাঝখানে-দেখেই হনুমান চিনতে পারে –এটাই সীতা।রাবন সীতার সামনে এসে দাঁড়ায়।সীতা দুই হাতে দেহ ঢেকে জরোসরো হয়ে থাকে।
রাবন সীতার আমনে দাঁড়িয়ে বলে লঙ্কার বহুমূল্য অলঙ্কার এনেছি,বরনের যাবতীয় উপকরণ।সীতা ,অভিমান কোরো না।এই সাগরপারে কেউ নেই।আমার সমস্ত রানী হবে তোমার দাসী শুধু যদি তুমি অনুমতি কর—আজ পর্যন্ত আমি কখনও কারো সামনে মাথা নিচু করিনি কিন্তু তোমার রূপে আমি মুগ্ধ-আমি জানি তুমি শক্তিতে ,বিদ্যায় অনন্যা--
সীতা রাগে ঝলসে ওঠে—লজ্জা করে না,চোর।কেন চুরি করে আনলে আমাকে?কেন সত্য বললে না? কেন আমার স্বামীর সামনে দিয়ে আনবার সাহস হল না তোমার?
রাবন মাথা নিচু করে—অস্ফুটে জানায়,আমি যুদ্ধ চাইনি-সুর্পনখার অপমানের বদলা চেয়েছিলাম।তোমার প্রতি লোভ আমার ছিল না কিন্তু আজ...
মন্দোদরী রাবণকে সামলায়—ছিঃ রাজা,চারিদিকে দাসীরা রয়েছে,তুমি রাবন! ত্রিভূবন বিজয়ী! এভাবে ভিক্ষা চাওয়া তোমাকে মানায়?
রাবন দাসীদের গোপনে ডেকে বলে ,সীতার সঙ্গে সকলে ভালো ব্যবহার করবে আর...একটু বোঝাবে,সে যেন রামকে ভুলে যায়...
রাজার কথা শোনার জন্য সব দাসী হামলে পড়ে সীতাকে বোঝাতে থাকে—রাবন কত ভালো,কত বীর,আরও কত কথা।সীতা কারো কথার উত্তর দেয় না।সুর্পনখা মাঝে মাঝেই আক্রমনের চেষ্টা করে—সাহস পায় না।একসময় সবাই চলে গেলে হনুমান না্মে গাছ থেকে।প্রথমে সীতা তাকে বিশ্বাস করতে পারে না।বলে –রাবনের নতুন বুদ্ধি বুঝি? হনুমান তখন রামের সব কথা সীতাকে জানায়--এখন রাম কিষ্কিন্ধ্যায় আছে।বানর জাতির সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছে।আমরা একটা দল খবর নিতে নিতে দক্ষিন সাগরে এসে পৌঁছেছি।আমি সাগর পার হয়ে এলাম আপনার কাছে-রাম এই আংটি দিয়ে দিয়েছেন—
সীতা রামের অলঙ্কার দেখেই চিনতে পারল।কেউ দেখে ফেলবার আগেই তিনি পরে নিতে যান কিন্তু এত রোগা হয়েছেন সীতা যে অঙ্গুরী হাতের বালা হয়ে গেল।
সীতা বলেন,হনু,বিভীষণ রাবনের ভাই-সে রাবনকে অনেক বোঝায়-তার স্ত্রী সরমাও খুব ভালো।কিন্তু রাবন বোঝে না।তোমাদের রাজা সুগ্রীবকে বোলো,রামকেও বোলো যেভাবে হোক, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে-আমি যদি মরে যাই ,রামকে বোলো,নারী হত্যার পাপ হবে তার

সীতার এই কষ্ট দেখে হনুমানের চোখে জল আসে। হনুমান বলে মা,তোমার কিছু চিহ্ন দিয়ে দাও,রামকে দেখাব।সীতা তখন মাথা থেকে মনি খুলে হনুমানের হাতে দেন।হনুমান বলে,আমরা কিষ্কিন্ধ্যার সব সেনারা আসব তোমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে—চিন্তা কোরো না মা।
হনুমানকে বিদায় দেবার আগে সীতা হনুমানকে তার কাছ থেকে পাঁচটি আম দিয়ে দেন পথে খিদে লাগলে খাবার জন্য।তখন এদেশে আম কেউ দেখেনি যাতে সবাই পায় তাই সীতা আমগুলি কিভাবে ভাগ হব তাও বলে দেয় ।রামকে একটা আম দিতে হবে ,লক্ষ্মণকে একটা,সব ্সেনাদের ভাগ করে দিতে হবে দুটি আম ,আর একটি রাজা সুগ্রীব ও হনুমানের।
হনুমান বলে মা,আমি অনেক খাই,অর্দ্ধেক আম দিয়ে কি করব? এক ক্কাজ কর,তুমি পিঠে বসো,আমি তোমাকে নিয়ে যাই রামের কাছে--
সীতা জানায়,বিভীষণ,অরবিন্দ সকলে রাবনের সঙ্গে কথা বলছে,যুদ্ধ না করলে রাবন আমাকে ছাড়বে না।আর দেখ একবার রাবন হরণ করছে,আবার তুমি নিয়ে যাবে হরণ করে,য়ামি কি একটা বস্তু? এভাবে আমি যাব না রামকে বোলো,যদি সে পারে ,যেন উদ্ধার করে তার স্ত্রীকে—ততদিন এই বনে আমি থাকব একা---

মনে মনে হনুমানের কিছু অবাকও লাগে—চাইলে সীতা পালাতে পারত,কিন্তু...সেও কি থাকত চায় রাবনের এই দেশে? ঝগড়ায়,অভিমানে সান্নিধ্য চায় রাবণের? রাম তাকে সামান্য সুরক্ষা দিতে পারেনি,রাবণ এনেছে বাহুবলে হরণ করে,এ কথা বলার নয়।রমনীর মন!
হনুমান সীতার কাছে বিদায় নিয়ে নগরের এক প্রান্তে বসল।খুব খিদে পেয়েছে,একটা আম সে নিয়ে খেয়ে ফেলল,খেয়ে ভাবছে এমন অমৃতের মত ফল কোথায় পাওয়া যায়!লঙ্কার আমের বনে গিয় হনুমান দেখে কত আম ফলে আছে!সাজানো রাজবাগানে ঢুকে হনুমান যত ইচ্ছা আম তোলে আর খায়—প্রহরীরা বাধা দিতে এসে হয়রান হয়ে যায়—রাবন খবর পেয়ে জাম্বুবালি নামে এক মহাবীরকে পাঠান হনুমানক ধরার জন্য।জাম্বুবালি এসে হনুমানকে ধরার অনেক চেষ্টা করে,লড়াই হয় খুব কিন্তু ধরতে পারে না।এরপরে লঙ্কার সাত বিখ্যাত বীর সেনাপতিরা আসে,পারে না-রাবণের ছেলে অক্ষ হনুমানের সঙ্গে লড়াই করতে দিয়ে মারা যায়-তখন মেঘনাদ এসে নাগপাশ নামে বাণ মেরে বেঁধে ফেলে হনুমানকে।বাঁধা অবস্থায় হুকুম হয় বিচারের জন্য তাকে রাবণের সভায় নিয়ে যাবার—
হনুমানের শক্তি ছিল অনেক-খুব দুষ্ট বুদ্ধি।সে মাটি কামড়ে পড়ে থাকে।কেউ তাকে টেনে নিয়ে যেত পারে না-হনু আবদার করে ,আমাকে তোমরা মাথায় করে নিয়ে গেলে আমি যাইতে পারি।
সেনারা আর কি করে তাকে মাথায় তুলেছে-আর অমনি বৃষ্টির ধারার মত হনু তাদের গায়েই...
নানান দুষ্টুমির কথা শুনে রাবন রেগে টং—তার রাজ্যে এমন কেউ করে না।তার শখের বাগান এমন করে কেউ ভাঙেনি।হনুমানকে পরিচয় জানতে চাইল রাবন।হনুমান রাবনের দিকে পিছন ঘুরে বসে বলে তোমাকে যে বালি চার সাগরে চুবিয়েছিল আমি তার দেশের লোক,এসেছি রামের পক্ষ থেকে সীতাকে দেখতে।
দূত অবধ্য,দূতকে মারা যায় না-তাড়াতাড়ি দেশ থেকে বার করে দেওয়ার কৌশল করতে রাবনও আনাল অনেকনেক কাপড়,তেল।লম্বা করে সেই কাপড়ের পিছনে আগুন লাগানো হবে-দেশের বাইরে গিয়ে সাগরে সেই লেজ ডুবিয়ে তারপর যেন হনুমান পালায়-এই হুকুম হল-
আগুন লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে হনুমান না পালিয়ে ঘুরে বেরাতে লাগল সমস্ত লঙ্কায়-যেখানে যায় ,আগুনে তার পিছনের এলাকা পুড়ে যায়-সারা শহর জ্বালিয়ে দিয়ে তারপরে হনু সাগরতীর আসে-আবার সাগর পার হতে হবে—রামকে গিয়ে জানাতে হবে সব খবর--

১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×