somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ রামায়ণ-লঙ্কা কান্ড(৩)

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লঙ্কায় মহারণ শুরু হয়েছে—প্রথমদিনেই ইন্দ্রজিতের বাণে রাম ও লক্ষ্মণ প্রায় মৃত হয়ে পড়েছিলেন।দেব জাতির সহায়তায় তাদের বাঁধনমুক্ত করে বাঁচানো হয়েছে।এমনিতেই রাম-লক্ষ্মন যুদ্ধ করছিল না,তাদের কোনও দলের সামনেও রাখা হয়নি,কিন্তু রামের স্ত্রীকে বাঁচানোরই লড়াই কাজেই তারা এ যুদ্ধে অতি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
দ্বিতীয়দিনের সকাল থেকে একে একে রাবনের অনেক বীর যোদ্ধা প্রাণ হারালেন,আহত হলেন অনেকেই-যেমন প্রহস্ত,অকম্পন,বজ্রদংষ্ট্র,ধূম্রাক্ষ- অন্যদিকে বানরসেনারাও অনেকেই হতাহত হল।বেলায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে হইচই পড়ে গেল—সেদিন স্বয়ং রাবন এলেন যুদ্ধে ।রাম-লক্ষ্মণ বিভীষনকে সঙ্গে নিয়ে রাবন আর মেঘনাদ ওরফে ইন্দ্রজিতকে দেখতে গেল।বিভীষণ চিনিয়ে দেয় কিন্তু রাবনের চেহারা দেখে তাকে রাজা হিসাবে চেনা যায়।সুপুরুষ,সুগঠিত রাবনরাজা,সীতা ওরই ঘরে আজও...রামের মন খারাপ হয়ে যায়-
বিভীষন রামকে বোঝায়,তার স্ত্রী সরমা সবসময় সীতার সঙ্গে আছে—সীতা যায়নি রাবনের অন্তঃপুরে—রাবনও জোর করেনি।
কিন্তু সীতা সেই অশোকবন থেকে পালিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছে অনেকবার,হনুমানের সঙ্গে,অঙ্গদের সঙ্গে,আজও অশোক বনের অনুচরদের অনেকেই গোপনে সরমা ও ত্রিজটার অনুগামী-পালাতে চাইলে সীতাকে সাহায্য করতেই পারত।কিন্তু স্পষ্ট বোঝা গেছে যে এই যুদ্ধ সীতা চেয়েছে।অনেক অপমানের পরে সেই অগ্নিকন্যা এই যুদ্ধ চেয়েছে—যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত রাম কিছুই করেনি।সেতু-নির্মাণ থেকে যুদ্ধের সমস্ত কাজ করেছে সুগ্রীব ও বিভীষণ—দেখা যাক,হাজার হোক যুদ্ধ কিন্তু রাম-রাবণের কাজেই জয় যে পাবে,ইতিহাস তাকেই মনে রাখবে,সেই হবে রাজা,স্বামী,ঈশ্বর!
লক্ষ্মণ বলে,দাদা,আজ আমি যুদ্ধ করব।সকলে যুদ্ধ করছে আর আমরা দুই ভাই করব না?
রাম বলে,যুদ্ধ ক্ষেত্রেই তো আমরা আছি কিন্তু রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ করবার দরকার নেই,সে অনেক বেশী শক্তিশালী,আগে ক্লান্ত হয়ে পড়ুক তারপরে...
লক্ষ্মণ সে কথা মেনে নিয়ে যুদ্ধের সাজে সেজে অস্ত্র হাতে অপেক্ষা করতে লাগলেন।রাবন কিন্তু রাম-লক্ষ্মনকেই খুঁজছিল চারদিকে।লক্ষ্মণকে দূর থেকে দেখামাত্র তার দিকে ধেয়ে এল রাবণ।রাবনের বিশাল রথ দেখেই লক্ষ্মণ ছুঁড়ল সহস্রা বাণ।ঝাঁকে ঝাঁকে বাণ ছুটতে লাগল—এ খুব মূল্যবাণ বাণ,মুণিদের তপস্যা করে পাওয়া,রাম তাদের সেবা করে জোগার করেছিল।রাবন বাণ দেখেই তার পাথরমুখো শেল ছুঁড়ে দিলেন লক্ষ্মণের দিকে।সেই বাণের এক ঘায়ে লক্ষ্মন অচৈতণ্য হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।রাবন চারিদিকে রামকে দেখতে না পেয়ে ফিরে গেল রাজ অন্তঃপুরে।
রাবণ ফিরে যেতেই বানরসেনারা লক্ষ্মণের অচৈতন্য দেহ ধরাধরি করে এনে ফেললে রামের সামনে—আবার যুদ্ধ-বিরতি।সেনাদের অনেকেই মনে মনে অসন্তুষ্ট,এরা দুই ভাই যত না যুদ্ধ করে তার চেউএ আহত বেশি হয়।বাড়ি-ঘর ফেলে এসে এদের শুশ্রষা করতে করতেই দিন কেটে যায়—
রাবন বাড়ি ফিরেই জরুরী সভায় মন্ত্রীদের সংগে পরামর্শে বসল,যুদ্ধ চলছে,প্রচুর লোকক্ষয় হচ্ছে।রাবন জানায় দেবতাদের অর্থ আসে যার কাছ থেকে সেই কুবেরের সঙ্গেই রাবনের বচসা হয়েছিল,মহাদেবের সঙ্গী নন্দীর সঙ্গেও ঝামেলা হয়েছিল-এরা এতদিন রাগ পুষে রেখেছিল,আজ সব জায়গায় বোঝা যাচ্ছে দেবতারা সাহায্য করছে রাম-লক্ষ্মনকে,কাজেই যুদ্ধ থামানো মুশকিল।শুধু রাম ও লক্ষ্মণকে বাঁচিয়ে রেখে ,অলক্ষ্যে থেকে দেবতারা এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।যেভাবেই হোক রাম-লক্ষ্মনের কাছে পৌঁছে তাদের মারা বা বন্দী করা দরকার।মন্ত্রীরা পরামর্শ দিল সমস্ত লঞকার বীরেরা বিভক্ত হয়ে একযোগে আক্রমন করতে হবে।রাবন,ইন্দ্রজিৎ ছাড়া কুম্ভকর্ণকে তলব করা দরকার। কুম্ভকর্ণ রাবনের মেজভাই।সে মদ্যপ ও বিলাসী।বছরের দু-একটি বিশেষ দিন ছাড়া তাকে দেখাই যায় না।এখনও সে বেহুঁস হয়ে ঘুমচ্ছে-রাবন আদেশ দিল ,তাকে জাগাতে।
কুম্ভকর্ণের ঘরের সামনে বহু বাজনা বাজানো হল কিন্তু তার ঘুম ভাঙল নহা।অনেক রমনীকে পাঠান হল,সে তাদের সঙ্গে নিয়ে পাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।এরপরে ভালো ভালো খাবার গরম গরম অবস্থায় কুম্ভকর্ণের ঘরের খাটের চারপাশে সাজানো হল।খাবারের গন্ধে খাদ্য রসিকের ঘুম ভেঙে গেল।
দূত এসে খবর দিল যে রাবণ ডেকে পাঠিয়েছে তাকে।কুম্ভকর্ণ তৈরি হয়ে গেলেন রাবনের সঙ্গে দেখা করতে।যুদ্ধের খবরই তিনি জানেন না।সব শুনে তো তার চোখ কপালে।দেবতাদের সাহায্য পেয়ে এই সব সামান্য লোকেরা তার বিশ্বজয়ী দাদাকে বিরক্ত করছে! যুদ্ধের পোশাক পরে তৈরি হল কুম্ভকর্ণ!এখনই যাবে সে যুদ্ধে! কোন যোদ্ধ,কোন সেনাপতি কখন কীভাবে যুদ্ধ করবে,সেই সব কোনও প্রিকল্পনাই সে শুনল না তখন।
লক্ষ্মনকে বহু যত্ন করে সুস্থ করে তোলার পরে রাম জানালেন এবার যুদ্ধে তিনি নিজেই যাবেন।সুগ্রীব ,হনুমানের পরামর্শের পর ঠিক হল কুম্ভকর্ণকে রামই মারবেন ,যদি আগে তাকে সকলে আহত করে ফেলতে পারে—কুম্ভকর্ণকে সামলানো খুবই কঠিন কিন্তু সুগ্রীব পিছন থেকে বাণ মেরে কুম্ভকর্ণে কান কেটে দিল।অনেক বানর সেনা আহত হলেও কুম্ভকর্ণ বানরসেনাদের মধ্যে ঢুকে পড়ল অজান্তেই যুদ্ধ করতে করতে।নানান বানে,পাথরের আঘাতে সকলে মিলে তাকে আহত করার পর হাত দুটিও বাণ দিয়ে কেটে ফেলল ,এরপর রাম এক মহামূল্যবাণ বাণে কুম্ভকর্ণের মাথা কেটে ফেলতেই চারিদিকে সোল্লাসে সকলে চিৎকার করে উঠল—জয় শ্রী রাম!
রাবণ খবর পেয়ে ভেঙে পড়ল তখনই।হায় মেজভাই! সে বরাবরই এমন,রগচটা ছেলে।তাকে এভাবে একা একা যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে দেওয়াই ঠিক হয়নি।দাদার প্রতি ভালোবাসা থেকেই সে নিজের প্রাণ দিয়ে ফেলল।মায়ের সামনে আর মুখ তুলে দাঁড়াবে কীভাবে রাবন! ভাগ্য যখন বিরূপ হয় তখন কি এমন ভাবেই হয়! হায় ঈশ্বর!
ইন্দ্রজিৎ ঘটনা দেখে বাবাকে সান্তনা দিয়ে বলে,মেজকাকার উচিত হয়নি এভাবে একা একা যুদ্ধে যাওয়া,তুমি দঃখ কোরো না বাবা,আমি যুদ্ধ আজই শেষ করে আসছি। ইন্দ্রজিৎ এতদিন নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন অনুভব করেনি।আজ যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে সসোইন্যে সে আক্রমন করল ও কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে হতাহত হরে যুদ্ধ ক্ষেত্র ফাঁকা করে জয় সুনিশ্চিত করে ফিরে এল।
তখন সন্ধ্যা নামছে,যুদ্ধ বিরতি ঘোষিত হবার সময় হয়ে গেছে—মাঠে পড়ে আছে রাম,লক্ষ্মন সহ সমস্ত সেনারা—একমাত্র বৃদ্ধ জাম্ববাণ,হনুমান ও বিভীষন তখনও বেঁচে!
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×