somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ রামায়ণ-লঙ্কা কান্ড(৫)

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্দ্রজিতের কাছে বার বার পরাস্ত হয়ে রাম তখন হতাশ।রাবনের ছেলে বীরবাহু মৃত,মৃত কুম্ভকর্ণ ।কাজেই এবার আর নাগপাশ টাসের ধার দিয়ে যাবে না ইন্দ্রজিৎ,একেবারে মেরে রেখে যাবে।দেবতারাও আসলে রাবনকে ভয় পায় কাজেই প্রত্যক্ষ সাহায্য তাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়।শোনা যাচ্ছে,সব খবরই আজকাল চলে আসে রামের শিবিড়ে,ইন্দ্রজিৎ এবার আবারও সেনাপতি হয়ে যুদ্ধে আসবে।সর্বশক্তি দিয়ে আগে রাম-লক্ষ্মণকে মারবে সে,এমনই ঘোষণা করেছে।কাজেই তিনবার পরাজয়ের পরে এটা বলবার অপেক্ষা রাখে না যে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধে এলে কেউ বাঁচবে না।

বিভীষণ রামের মন খারাপ দেখে প্রমাদ গোণে—এখন রাম না জিতলে সবচেয়ে সমস্যা তারই—না ঘর কা না ঘাটকা হয়ে কাটাতে হবে।দুই ভাইকে ডেকে আনে বিভীষণ।ভালোভাবে বুঝিয়ে বলে সে-দেখো রাম-লক্ষ্মণ,ভাই,এটা এতদিনে পরিস্কার যে আমার ভাইপোটি যুদ্ধে আসলে আর চান্স নেই তোমাদের।সীতাকে ভুলে যাও।বালীবধের পাপ নিয়ে বাড়ি যাও।আমার কথা তো ছেড়েই দাও।



রাম আগেই জানত এসব।বিরক্ত বোধ করে সে—উপায় কিছু জানা থাকলে বলো।মরে যাওয়ার কথা আর ভেবে লাভ কি!

বিভীষণ জানায় স্বাভাবিকভাবে উপায় কিছু নেই তবে ইন্দ্রজিৎ খুব ভক্ত লোক।রাজবাড়ি থেকে খবর এসেছে বড় যুদ্ধের আগে সে তার যজ্ঞাগারে বসে পুজো করবে।নিকুম্ভিলা যজ্ঞের খবর পেয়েছি।এই যজ্ঞ গোপন যজ্ঞশালায় হয় আর তার যজ্ঞাগারে যাওয়া যার তার কাজ নয়।কিন্তু আমি রাজবাড়ির সমস্ত অন্ধি সন্ধি জানি...



রাম কিছুটা অবাক হয়ে যায়,আপনি অন্ধি সন্ধি জানলে আমাদের লাভ কি? তাছাড়া আপনাকেও তো রাজবাড়ি থেকে মেরে তাড়ায়ে দিয়েছে

বিভীষণ বলে,রাম,লক্ষ্মণকে আমার সঙ্গে পাঠাও।নিরস্ত্র ইন্দ্রজিৎকে আচমকা পিছন থেকে মেরে দেওয়ার ব্যবস্থা আমি করব...আসল পথের কাঁটা সরে গেলে জয় অনিবার্য।ইন্দ্রজিৎ রাবনের সবচেয়ে প্রিয় ছেলে।তার মৃত্যু রাবন সহ্য করতে পারবে না।

রাম বলে,লক্ষ্মণকে আমি সেই বিপদে পাঠাতে পারব না।ইন্দ্রজিৎ মারাত্মক বীর !



তখন স্থির হল আটজন প্রধান বানরসেনা যাবে লক্ষ্মণকে ঘিরে-হনুমান,সম্পাতি,দেবেন্দ্র,মহেন্দ্র,গবাক্ষ,নল ,নীল ও গন্ধমাদন।নিরস্ত্র ইন্দ্রজিতের পক্ষে এই আটজনকে নিশ্চয়ই ঘায়েল করা সম্ভব হবে না।

বিভীষণ পথ চিনিয়ে নিয়ে যায় সেই গোপন যজ্ঞাগারে।আধা অন্ধকারে যজ্ঞের আগুনে দেখা যায় ইন্দ্রজিতের বীর দেহ।শক্তিশালী কাঁধের দুপাশে দুই বাহুতে ধরা যজ্ঞাহুতি।ঘি বেলপাতার পোড়া গন্ধে ঘরের ভিতরটায় রহস্য ঘনীভূত।পায়ের শব্দে মেঘনাদ তাকায় পিছনে।লক্ষ্মন অস্ত্রহাতে এগোচ্ছে তখন।

বিস্মিত ইন্দ্রজিৎ উঠে দাঁড়িয়ে কাকা বিভীষণকে দেখে সব বুঝে নেয়।লক্ষ্মণকে কিছু না বলে সে বিভীষণকে বলে—এক বাবার দুই ছেলে তোমরা,রাবন ও বিভীষণ,আমরা ছোটবেলা থেকে বাবা-কাকাকে কখনও আলাদা দেখিনি,সেই তুমি এ কাজ করলে? আমার কষ্ট হপচ্ছে এই ভেবে যুদ্ধের মাঠে লড়াই করে নয়,তোমার মত পাপী এক মানুষের চোখের সামনে আমাকে মরতে হবে!

সমস্ত বানর সেনারা ততক্ষণে ঘিরে ফেলেছে ইন্দ্রজিৎকে।লক্ষ্মণ বাণ নিয়ে এগোয়,ইন্দ্রজিৎ বন্দী অবস্থায় বাণ ছুঁড়ে লক্ষ্মণকে ঘায়েল করে দেন।লক্ষ্মণ ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে এক কোপে তার ধরের থেকে মুণ্ড আলাদা করে ফেলে।সেই কর্তিত মুন্ডূ আর ছিন্ন দেহের উপরে উল্লাসে নাচতে থাকে বানর বীরেরা।অসুস্থ লক্ষ্মণ এই প্রথম সাফল্যে আনন্দিত ফিরে আসে রামের কাছে।রাম খবর শুনে আনন্দিত হয়ে আগে ডেকে পাঠান সুষেণ বৈদ্যকে।লক্ষ্মণের আরোগ্যের পরে হবে বিজয় উল্লাস!



রাবণের কাছে এই নিদারুণ সংবাদ কেউ জানাতে সাহস পায় না।কিন্তু যুদ্ধের সময় হয়ে যাচ্ছে ,ইন্দ্রজিৎই সেদিনের সেনাপতি।সকলেই জানত নিকুম্ভিলার পরে সর্বশক্তি প্রয়োগে মরবে এই বিদেশী সৈন্যের দল।এক দূতকে পাঠাল মন্ত্রীরা ,রাবণ প্রথমে নিজ কানকে বিশ্বাস করতে পারে না,এরপরে মুর্চ্ছিত হয়ে মাটিতেই পড়ে যায় ত্রিভূবণজয়ী রাজা রাবণ।

খবর যায় অন্তঃপুরে,রানী মন্দোদরী শোকে স্পন্দহীন মরার মত অসার দেহে পড়ে থাকেন ,তার কান্নার ভাষা হারিয়েছে,শোকের কূল নেই—হায় পুত্র ইন্দ্রজিৎ!



রাবণ যুদ্ধের সাজে সেজে ওঠেন।যুদ্ধ শেষ হয়নি,যতদিন একজনও সেনা বেঁচে থাকবে,থাকবে রাবণ রাজা,ততদিন যুদ্ধ হবে।মন্দোদরীকে রাবন বলে,আজই আমি সীতাকে কেটে ফেলে যুদ্ধে যাব।কত ক্ষতি আর সহ্য করা সম্ভব ঐ এক নারীর জন্য!

মন্দোদরী বলে,না রাজা,নারী হত্যার পাপ তুমি কোরো না।যা হবার হয়ে গেছে।এখন শোচনীয় ফলাফলের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করবার নেই।এই ভেঙে পড়া মন নিয়ে তুমি কতটা যুদ্ধ করবে,তা নিয়েও আমার চিন্তা হয়—কিন্তু আর পিছিয়ে আসার উপায় নেই আমাদের!
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×